
যে কারনে একজন দিনমজুর দশরথ সম্রাট শাহজাহানের চেয়ে বেশী সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য
মানুষ তার ভালবাসার মানুষের জন্য কত কিই না করে। সম্রাট শাহজাহান যেমন তার প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য তৈরি করেছিলেন তাজমহল। তাজমহল আজ বিশ্বের অন্যতম সপ্তাশ্চার্য। এই ভারত উপমহাদেশেই আর একজন আছেন যার কীর্তিও অমর। তিনি একজন সাধারন অখ্যাত মানুষ। তিনিও করেছিলেন তার স্ত্রীর জন্য। প্রিয় পাঠক এখন পড়ার পরে বিচারের ভার আপনার। স্ত্রীর প্রতি কে বেশী ভালবাসা দেখিয়েছে? কে বেশী অনুকরনীয় মানবতার প্রয়োজনে? একজন জনগনের ট্যাক্সের টাকায় বানিয়েছেন তাজমহল আর অন্যজন একজন দিনমজুর। তার ছিল কেবল তার কায়িক শ্রম ও স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি করেছেন মানুষের জন্য।

একজন মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। যারা কোন কিছু করার জন্য অন্যের ভরসায় বসে থাকে তাদের জন্য দশরথ হতে পারে এক অনন্য শিক্ষক।
একজন মানুষের পক্ষে কি পর্বতসম পরিবর্তন আনা সম্ভব এই পৃথিবীতে?
অবশ্যই। আর এর বড় প্রমাণ হলেন দশরথ মানঝি। নিজের গ্রামের মানুষের অশেষ দুর্ভোগের নিরসন করতে খালি হাতে একাই যিনি একটি পর্বত খুঁড়ে তৈরী করেছিলেন রাস্তা।
দশরথের জন্ম বিহারের গয়া শহরের কাছের এক গ্রামে। পেশায় দিনমজুর। “কাছে” বললে ভুল করা হবে, ম্যাপে কাছে মনে হলেও তাঁর গ্রাম আর গয়া শহরের মাঝে এক বিশাল পর্বতের অবস্থান। আকাশদূরত্ব খুব অল্প হলেও পুরা পর্বতটাকে ঘুরে যেতে হয়, ফলে ১৫ কিলোমিটারের বদলে ৭০ কিলোমিটার পথ পেরুতে হয়। (ছবিতে দেখুন)।
১৯৬০ সালে দশরথের স্ত্রী ফাল্গুনী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে গয়া শহরে রওনা হন দশরথ, কিন্তু ৭০ কিমি পথ পেরিয়ে যেতে গিয়ে ফাল্গুনী বিনা চিকিৎসায় এক সময় মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন দশরথ, তাঁর মনে হয়, কেবল তিনি নন, গ্রামের অসংখ্য মানুষ এই অল্প কয়েক কিলোমিটার পর্বতের বাধার কারণেই ৭০ কিমি পথ কয়েক ঘণ্টায় পার হতে বাধ্য হচ্ছে, আর ফাল্গুনীর মতো অনেকে যাচ্ছে হারিয়ে।
সরকারী বা অন্য কারো সাহায্যের অপেক্ষায় না থেকে দশরথ নিজেই পড়লেন নেমে, হাতে কেবল হাতুড়ি আর বাটালি। পর্বতের পাথর একাই এবং কোনো ভারী যন্ত্রপাতি ছাড়া ভেঙে গড়তে শুরু করলেন রাস্তা। লোকে হাসলো, আর বললো, একজন মানুষের পক্ষে এটা করা অসম্ভব!
কারো কথায় শুনে হাল ছেড়ে দিলে কি ভালো কাজ হয়? দশরথ কাজ করে চললেন, একাই, হাতুড়ি বাটালি দিয়ে। দীর্ঘ ২২ বছর কাজ করার পরে অবশেষে অসম্ভব হলো সম্ভব, পাহাড়ের পাথর কেটে ৩৬০ ফুট দীর্ঘ আর ৩০ ফুট চওড়া একটা পথ তৈরী করতে পারলেন। ৭০ কিলোমিটারের রাস্তা কমে দাড়ালো মাত্র ১৫ কিলোমিটার, দশরথের গ্রামের লোকদের আর অপেক্ষা করতে হলোনা অনেক সময় শহরে পৌছাতে। পাল্টে গেলো সে গ্রামের মানুষের জীবনধারা।
দশরথ এই রাস্তা বানানোর জন্য কারো কাছ থেকে ১ পয়সাও পাননি। সরকারের দপ্তরে দপ্তরে বহুবার গিয়েছেন রাস্তা বানানোর জন্য, কিন্তু তারা যখন সাহায্য করেনি, দশরথ নিজেই এগিয়ে এসেছেন। অসম্ভবকে করেছেন সম্ভব।
সম্রাট শাহজাহান ২২ বছর ধরে ২০ হাজার শ্রমিক খাটিয়ে জনগণের পয়সায় বানিয়েছেন তাজমহল, আর দশরথ কাজ করেছেন একাকী, জনগণের স্বার্থে পর্বত চূর্ণ করে বানিয়েছেন এই রাস্তা। শখের তাজমহলের চাইতে তাই দরকারের এই রাস্তাটিই সপ্তাশ্চার্যে যুক্ত হবার মতো অসাধারণ একটা কাজ, আর এই অসাধারণ মানুষটি পরম শ্রদ্ধার পাত্র।
সমাজের, দুনিয়ার পরিবর্তন আনতে তাই অন্যদের সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকার দরকার নাই, আসুন নিজেরাই এগিয়ে আসি, নিজেদের সমস্যার সমাধানে।মানুষ, মানুষের জন্য …
[ তথ্যসূত্রঃ Ragib Hasan, Assistant Professor at University of Alabama at Birmingham, USA. Ex Lecturer, CSE, BUET – facebook.com/ragibhasan | http://www.indianexpress.com/news/the-man-who-made-way-for-progress/968751/0 | http://en.wikipedia.org/wiki/Dashrath_Manjhi ]
Related Posts

অপেশাদার মানুষের মাধ্যমে তৈরি অরক্ষিত বিদ্যুৎ লাইনের জন্য আর কত প্রাণ যাবে ?
সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি সংবাদ শিরোনামঃ “ভাত খেতে রান্নাঘরে ঢুকতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু”“চাটমোহরে ফ্যান চালুRead More

বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো ! এই দেশের সেকেলে সিস্টেম ‘শক্তের ভক্ত, নরমের জম’
আমার ইস্টার্ণ ব্যাংকের একটা প্রিপেইড এ্যাকোয়া মাস্টারকার্ড আছে যেটা দিয়ে একজন মানুষের বছরে ভ্রমনের জন্যRead More

চারপাশে দুর্নীতির মেলা বসছে – তা নিয়ে ওনাদের সমস্যা নাই, যতো সমস্যা মেয়েদের ড্রেস নিয়ে
কে কি পোশাক পরবে, কার সঙ্গে ঘুরবে, কার সঙ্গে বিয়ে করবে, কার সঙ্গে শোবে এগুলোRead More
Comments are Closed