
Religious Riots
নরেন্দ্র মদী গুজরাটের কসাই ! বাংলাদেশের মৌলবাদীরা কি তাহলে ?
নরেন্দ্র মোদী সাম্প্রদায়িক মনোভাব লালন করেন, তিনি সাম্প্রদায়িক শক্তির উপর ভর করে নির্বাচিত হয়েছেন এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আবার অন্যদিকে রাষ্ট্র হিসাবে ভারত যত স্বার্থপরই হোক তার বিশাল জনসংখ্যা ও বিশ্বে ক্রমবর্ধমান প্রভাব কে অস্বীকার করারও উপায় নেই। নরেন্দ্র মোদী তথা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কে না চেষ্টা করছে ? সৌদি আরব, তুরস্ক, পাকিস্তান, আমেরিকা কে নেই লিস্টে? এমনকি বাংলাদেশের বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী তারাও পারলে নরেন্দ্র মোদীর চরনে ফুল দিবে সুযোগ পেলে। ২০১৫ সালে তার প্রথম বাংলাদেশ সফরে সেটা দেখা গিয়েছিল।
নরেন্দ্র মোদী যত খারাপই হোক ভারতের জনগণ তাকে নির্বাচিত করেছেন। তিনি ও তার টিমই রাষ্ট্র ভারতের একমাত্র ও বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী। তার বিরোধীতা করা মানে ভারতের বিরোধীতা করা। বাংলাদেশে অকারনে ভারত বিরোধীতা করা একটা রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। এই যেমন, নরেন্দ্র মোদীকে বলা হয় গুজরাটের কসাই। যে ১৮/২০(?) জন মারা গেল গত কয়েকদিনে তারা কি জানে কেন নরেন্দ্র মোদীকে গুজরাটের কসাই নামে ডাকা হয় ? আমার জানা মতে তাদের কেউই জানতেন না। বড় হুজুর বলেছেন নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আসা প্রতিহত করতে হবে, তারাও নেমে পড়েছেন রাস্তায়। ২০০২ সালের সবরমতি এক্সপ্রেসে অগ্নিকান্ডে ৯ জন পুরুষ, ২৫ জন মহিলা এবং ২৫ শিশু নিহত হয় যারা ছিলেন হিন্দু তীর্থযাত্রী। এরপরে আরো কিছু কনসিকোয়েন্স ঘটে যেটা স্পটত ধর্মীয় দাঙ্গা হিসাবে পরিগনিত হয়। কিন্তু কয়জন জানেন সেই ইতিহাস বা কয়জন পড়ে দেখার চেষ্টা করেছেন ?

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করলেও ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ও স্বাধীন তদন্ত কমিশন নরেন্দ্র মোদীকে দায়মুক্তি দিয়েছে। তবুও যেহেতু নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িক কানেকশান স্পষ্ট আমরা তাকে কখনই আদর্শ হিসাবে নিতে পারি না। তবে এটা ঠিক যে বাইরের দেশে তার যত সমালোচনা করা হয় খোদ ভারতেই তারচেয়ে অনেক বেশী, কঠিন, চাঁছাছোলা সমালোচনা হয়। এমনটা শোনা যায় না তিনি তার সমালোচনাকারীদের হুমকি ধামকি দিয়েছেন, হত্যা করেছেন, বাঁধা দিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলদেশে কেউ কি স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন ? ১৯৯৪ সালে এক তসলিমা নাসরিন কে হত্যার জন্য ৪/৫ লক্ষ ধর্মান্ধ, উন্মাদ ঢাকার রাস্তায় সমবেত হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে এক কবিতার মাত্র ২ টি লাইনের জন্য মৌলবাদীদের হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধু সরকার কবি দাউদ হায়দারকে এক প্লেনে এক যাত্রী করে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে জীবন রক্ষা করেছিলেন। এরপর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কত লেখক, ব্লগার, সাংবাদিক হত্যার শিকার হলো, দেশছাড়া হলো। কাদের জন্য ? সেই মৌলবাদী গোষ্ঠীর জন্য যারা এখন তাদের নিজেদের বাক-স্বাধীনতার জন্য নাকিকান্না কাঁদছেন। তারা এখন নরেন্দ্র মোদীকে বলছেন সাম্প্রদায়িক।
ভারতবর্ষে কি গুজরাট দাঙ্গাই প্রথম কোন ঘটনা যেখানে ধর্মীয় কারনে হাজার হাজার মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হয় ? আরো অনেক দাঙ্গা হয়েছে ভারতে। তারা মনে হয় ১৯৪৭ সালের নোয়াখালি দাঙ্গার কথা জানেন না। গুজরাট দাঙ্গার চেয়ে ৩০০০ মানুষ বেশী মারা গিয়েছিল নোয়াখালি দাঙ্গায়। শত শত হিন্দু গ্রাম উজাড় হয়ে গিয়েছিল, বিতাড়িত হয়েছিল জন্মভূমি থেকে। এগুলো বাস্তবতা। অনেকের কাছে বীর খেতাবপ্রাপ্ত তৈমুর লং মোট ১৭ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছিলেন যা সেই সময়ের হিসাবে সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫-৭%। তিনি ভারতবর্ষে এসে ধর্মীয় কারনে এক দিনে এক লক্ষ হিন্দুকে হত্যা করেন দিল্লীতে। সোর্স ? খুঁজে নেন, অনেক সোর্স আছে। সুতরাং ধর্মীয় হত্যাকান্ড ভারত ও পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন নয়, এই ভারতেই হিন্দুরা তুলনামূলক বেশী নিগৃহীত হয়েছে যুগে যুগে। এই নির্যাতন, নিগৃহীত হওয়ার কারনে তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠলে সেটার দায় অন্যরাও এড়াতে পারেন না যাদের মোকাবিলা করার জন্য তাদের এই পরিবর্তন।

ইউরোপেও এক সময় সবখানে চার্চের প্রভাব ছিল। অনেক বিজ্ঞানী, দার্শনিক কে হত্যা করা হয়েছে চার্চের কারনে। রেঁনেসা বিপ্লবের পরে তারা সমাজ ও রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাবকে আস্তাকুঁড়ে ফেলেছে। এরপর ইউরোপের এতো সমৃদ্ধি ও সভ্যতা, মানবতার পথে যাত্রা। এই একবিংশ শতাব্দীতেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ ধর্মীয় পরিচয়কে বড় করে দেখে রাষ্ট্র, সমাজ সবখানে ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দূর্বত্তায়নে ভরা রাজনীতিবিদরাও তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে নিজদের স্বার্থ উদ্ধার করে। পরে যখন দেখে তাদের শক্তি সামর্থ্য বাড়তে বাড়তে সেই রাজনীতিকে গিলে খেতে চায় তখন আর কিছু করার থাকে না। এরই একটি রুপ দেখা গেল বাংলাদেশে। আগে সরকার তাদের কথায় পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এনেছে, নারীনীতি পরিবর্তন করেছে, আরো কত সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। এখন তারাই ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে সরকারের ঘাড় মটকে দিতে চায়। দেশের অর্থনীতি, নতুন জ্ঞান সৃজনে তাদের কোন অবদান নেই। দেশের কোন উৎপাদনমূখী কাজে তাদের সস্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এটা অবশ্য সরকারের ব্যার্থতা, এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নমুখী করতে পারেনি, তাদের অন্যদের কষ্টের উপার্জনের উপর নির্ভরশীল করে রেখেছে। এখন তারা তাদের রুটি-রুজির যোগান ঠিক রাখতে মাঝে মাঝে তাদের শক্তির জানান দিবে, মানুষের মূল্যবান জীবন নিয়ে খেলবে এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে ?
Related Posts

একটি অর্ধ শতক পার করা দেশ ও ভাতের অধিকার
বাড়িতে এক নারী তার দুই ছোট শিশুকে নিয়ে প্রহর গুনছে কখন শিশুদের বাবা রাতে টিউশুনিRead More

কোন কাজই ছোট না, সব কাজকেই সম্মান করতে শিখুন
আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন নয় বছর বয়সে তার মাকে হারান। খুব অল্প বয়সেই দরিদ্রRead More

ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও পুতিনের নৈতিক পরাজয়
গতকাল ঢাকার এক লোকাল বাসে যাচ্ছিলাম পল্টন। আমার পাশে বসা এক তরুণ। সে রাজনৈতিক আলাপRead More
Comments are Closed