Peace
For a Peaceful World

For a Peaceful World !

একটি শান্তিকামী পৃথিবীর জন্য – যেখানে থাকবে না রাষ্ট্রীয় বা ধর্মীয় কোন সন্ত্রাস

২০১৩ সালের দিকে আমি প্রতিবছর ঈদের পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঈদ উদযাপনের ছবি এ্যালবাম প্রকাশ করতাম। এই ছবিগুলো ছিল ২০১৩ সালের ঈদুল ফিতরের পরে। অনেক ছবি থেকে সামান্য কিছু ছবি দিলাম। পাঠকের মিশ্র অনুভূতি দেয়ার জন্যই সুখের ও দুঃখের ছবিগুলো দিলাম।

প্রথম ছবিতে দেখছেন রোমানিয়ার এক মেয়ের ছবি। ঈদ উৎসবে সে ফটোশেসান করে জানান দিচ্ছে উৎসবের সৌন্দর্য। আবারও বলে রাখি এটা এবং এগুলো ২০১৩ সালের ছবি। দ্বিতীয় ছবিতে দেখছেন করাচীর এক মেয়ে পরম মমতায় পা মেহেদীতে রাঙ্গাচ্ছেন। তৃতীয় ছবিতে দেখছেন ইসরায়েলের তেলাবিবের একটি সী-বিচে এক কাপল ঈদের দিন ঘুরতে গিয়েছেন, পাশেই দেখা যাচ্ছে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান চতুর্থ ছবিতে দেখুন মরোক্কোর এক ঈদ জামাত। পঞ্চম ছবিতে ভারতের কাষ্মীরের শ্রীনগরে মায়ের মুখের পর্দার কাপড় সরে গিয়ে পড়েছে শিশুর মুখে। ষষ্ট ছবিতে নিউ ইয়র্কের দুই শিশু ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছে। এগুলো একটা উৎসবের স্বাভাবিক চিত্র। গত বছর ও এ বছর বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস অতিমারীর কারনে (এপিডেমিক – মহামারী, প্যান্ডেমিক – অতিমারী) বিশ্বের আনন্দ-উৎসব স্বাভাবিক হওয়ার কথা নয়। তবে, অন্য স্বাভাবিক সময়েও কি বিশ্বের উৎসবগুলো সবার জন্য আনন্দের উপলক্ষ হয় ? বাদ দিলাম ক্ষুধা, দারিদ্রের মত প্রাত্যহিক বিষয়গুলো। কিন্তু মানব হত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, এগুলো কি এই সময়ে স্থগিত হয়েছে কোন কালে ? দেখি না তেমন কিছুই।

সপ্তম ছবিতে ঈদের দিন নয়াদিল্লীর এক মসজিদের সামনে হাজার হাজার বুভুক্ষু মানুষের জটলা একটুখানি মাংস রুটির জন্য। (জ্ঞান দেখার থাকলে দিয়ে যাইয়েন ভাই, ‘মাংস’ না বলে ‘গোশত’ বলতে হবে কিনা !) এটা কিন্তু ২০১৩ সালের ছবি। কেউ কি বলতে পারবেন এই কয় বছরে ভারতের সামরিক শক্তি যে পরিমান বেড়েছে সেই পরিমান কি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে ? সেই পরিমান কি আইসিইউ, ভেন্টিলেটর বেড়েছে ? অষ্টম ছবিতে দেখছেন শ্রীনগর, কাশ্মীর, ভারতের আর একটি ছবি। হিন্দু উগ্রপন্থীরা প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। এর আগে তারা কিছু দোকান পাট ভাংচুর করে। হাজার হাজার হিন্দু পন্ডিতকে একসময় কাষ্মীর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। নবম ছবিটিও শ্রীনগরের, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে এক মৃতপ্রায় নারীকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। পুলিশ বা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জাতি (যদিও জাতি নয়) দাবীদার অথচ জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবিক মূল্যবোধে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা গ্রুপ কেউই ঈদের দিনটিকেও রক্তপাত থেকে ছাড় দেয় না।

দশম ছবিতে দেখছেন ফিলিস্তিনের এক শিশু খেলনা বন্দুক নিয়ে পোজ দিচ্ছে। সেখানে সবাই ছোট থেকেই বন্দুক, যুদ্ধ, হিংসা, হানাহানি এসব দেখে, শিখে বড় হয়। যুগের পর যুগ ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব টিকে আছে। বিশ্ব রাজনীতি ও অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থে এগুলো টিকিয়ে রাখা হয়। এইতো দুইদিন আগেও ফিলিস্তিনে এক হামলায় ইসরায়েল শিশু সহ অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। পরে হামাস ইসরায়েলের শহরে রকেট হামলা চালায়, বাংলাদেশসহ বহু অঞ্চলের মানুষ হামাসের জিহাদ জয়ী হচ্ছে মনে করে সুখনিদ্রা দেয়, মনে করেছিল ইসরায়েল শেষ এবার! ৩৪ ঘণ্টায় হামাসের চালানো ১৭০ টির বেশি রকেটে প্রাণ গেছে মাত্র ২ জন নিরাপরাধ ইসরায়েলীর, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই মূর্খদের। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমরশক্তিতে উন্নতি না করে মূর্খতায় দিন দিন ক্রমোন্নতি এদের! এই খেলনা রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েলের অত্যাধুনিক অস্ত্রের আঘাতে এখন মারা পড়ছে শত শত ফিলিস্তিনীর জীবন। শিশু, নারীসহ ঈদের দিনেও ঝরেছে নিরীহ তাজা মানুষের প্রাণ। যা ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী মনোভাব ও হামাসের মতো সন্ত্রাসী ও অথর্ব, অপদার্থ গ্রুপের মূর্খতার ফল। পৃথিবীর সব প্রান্তের প্রতিটা জীবনই মূল্যবান। কিন্তু ইসরায়েলের সন্ত্রাসে বিশ্ব নির্বিকার, চেয়ে চেয়ে দেখে!

একাদশ ছবিটি কোন দেশের? ঠিকই ধরেছেন, পাকিস্তান! আহত পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ২০১৩ সালে ঈদের দিন এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩৮ জন নিহত ও ৫০ এর অধিক আহত হয়। এই হামলা কিন্তু ইসরায়েল করেনি, করেছিল স্বজাতি দাবীদার সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী বা শিয়া-সুন্নী সন্ত্রাসীরা। এমন হামলা সেখানে প্রায়ই হয়, এমনকি ঈদের জামাতে একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষকে পেয়ে জঙ্গি সন্ত্রাসীরা লালায়িত হয়ে উঠে হত্যার উৎসব করার জন্য।

দ্বাদশ ও শেষ ছবিটি আফগানিস্তানের। ২০১৩ সালের ঈদুল ফিতর। এক হামলায় প্রায় ১৪ জন মহিলা নিহত হয়। এ মৃত্যু উপত্যকায় ঈদের দিনটিও নিরাপদ নয় কখনো। কয়দিন আগেই তো ৭০+ কন্যাশিশুকে বোমায় ঝলসে দিলো আফগানের জঙ্গিরা। শত শত শিশুকে করেছে চিরদিনের জন্য পঙ্গু। শত শত শিশু সারাজীবন মানসিক ট্রমা নিয়ে দিন কাটাবে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলায় নির্দিষ্ট কোন টার্গেট গ্রুপ নেই। সেখানে নারী, শিশুসহ মানুষ মারা যাচ্ছে। আফগানিস্তানের হামলাটা সুনির্দিষ্ট, সেখানে শিয়া কন্যা শিশুদের হত্যার টার্গেট নিয়েই বোমা মেরেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। কোনটিকে বেশী ঘৃনিত অপরাধ মনে হয় ? দেখবেন তথাকথিত ফেসবুক ও ময়দানের জেহাদীরা ইসরায়েলের সমালোচনায় সোচ্চার, কিন্তু তাদের স্বগোত্রীয় আফগান সন্ত্রাসীদের বেলা মুখে কুলুপ এটে বসে থাকবে। তাদের প্রোফাইলগুলো ঘেটে দেখবেন, আফগানিস্তানের এতোগুলো শিয়া কন্যাশিশুর টার্গেটেড হত্যাকান্ড তাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়, যদিও মুখে কিছু বলে না লোকলজ্জার ভয়ে।

আজ দেখলাম দূর থেকে মাইকে ভেসে আসছে এক হুজুরের মোনাজাত। তিনি মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করলেন, ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করলেন, কিন্তু আফগানিস্তানের এই জ্বলজ্যান্ত সন্ত্রাসীদের নামই নিলেন না। কেন ? সব সন্ত্রাসীর সমালোচনা করলে ও বিশ্বের সকল মানুষের মঙ্গল কামনা কি করা যায় না ? ইরান, তুরস্কের করোনা রোগীদের সুস্থতা কামনা করলে ভারতেরটা করা যাবে না কেন ? এ কেমন প্রার্থনা যা শুধুমাত্র সমগোত্রীয়দের সুখ, সমৃদ্ধি নিরাপত্তা কামনা করে করা হয় ? এতো বড় একটি উৎসবে বিশ্বের সবার জন্য শান্তি কামনা করলে সেটাতে বরং উদারতা, মহত্ত্ব প্রকাশ হয়। প্রার্থনাতে শুধুই দেখি নরকের কষ্টের বর্ননা করা হয়, পৃথিবীকে যারা নরক বানিয়ে রেখেছে তাদের ধ্বংস কামনা বা মুক্তির কৌশল বলা হয় না !

একটি মানবিক পৃথিবীর জন্য আমদের প্রচেষ্টা হোক সম্মিলিত। সবার প্রথমে ‘আমি শ্রেষ্ঠ’ এই মিথ্যা দাবী দূরে সরে যাক, ঘৃনা নিপাত যাক। ভালবাসা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতিতে ভরে উঠুক সমগ্র মানব প্রজাতি।

Related Posts

Hero Alom

A Hero Alom: A Real Bangladeshi Hero

A Hero Alom: One Man’s Dream-Fulfilling Power Can Be an Inspiration for All While theRead More

Hero Alom

হিরো আলমঃ এক উনমানবের স্বপ্ন পূরনের শক্তি সবার জন্য অনুপ্রেরনা হতে পারে

সেবার যখন সাউথ এশিয়ায় বলিউডের শীর্ষ নায়ক সালমান খানের নাম পিছনে ফেলে নেটিজেনরা হিরো আলমেরRead More

Think about things differently

মুক্ত জীবনে আপনাকে স্বাগতম, শিশুদের নিরপেক্ষ শিক্ষা নিশ্চিত করুন

অভিনন্দন! আপনি জন্ম থেকে শুনে আসা, জেনে আসা বিশ্বাসের বাইরে চিন্তা করতে পেরেছেন। এটা খুবRead More

Comments are Closed