
Nusrat Jahan Rafi
কোন আইন, কোন ধর্মীয় শাস্তির ভয় কিছুই রুখতে পারবে না এই অমানবিক মানুষগুলোকে
নুসরাত মেয়েটি চলেই গেলো। আমাদের বিশৃঙ্খল সমাজের প্রতিচ্ছবি নুসরাতের উপর এই বর্বরতা। মেয়েটির চলে যাওয়াতে খুব কষ্ট পাচ্ছি। একটা মানুষ শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার কারনে, তার আলাদা কিছু শারিরীক বৈশিষ্টের কারনে এই বর্বরতার শিকার হলো। নুসরাতের লিখে যাওয়া চিঠি বলে সে অনেক প্রতিবাদী ছিলো। তার উপর ঘটে যাওয়া জঘন্য যৌন নির্যাতনের শেষ দেখতে চেয়েছিলো মেয়েটি।
মানুষ কত জঘন্য হলে শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার কারনে অন্য একটা মানুষকে ভোগের সামগ্রী ভাবতে পারে। এদেশে এমন অনেক শিক্ষক আছে স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা তাদের ছাত্রীদের ( অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রদের সঙ্গেও ) সঙ্গে এমন আচরন করে। অধিকাংশ ভূক্তভোগী ছাত্রী হয় বিনিময়ে কোন সুযোগ নেয় অথবা আমাদের সমাজের বিশৃঙ্খল ব্যবস্থার কবলে পড়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করে না, মানসিক শারিরীক আঘাতের ক্ষত বয়ে বেড়ায় সারা জীবন। কেউবা বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। নুসরাত তেমনটি ভাবেনি। সে প্রতিবাদ করেছিলো, মামলা করেছিলো। আমাদের অন্ধকার সমাজের এক চিলতে আশার আলো এই প্রতিবাদীরা।
দুঃখজনক বিষয় হলো, যে মানুষটি এই আপরাধের জন্য অভিযুক্ত সেই মাদ্রাসা প্রিন্সিপ্যালের মুক্তির জন্য নাকি অনেক ছাত্রী, মানুষ মিছিলও করছে। এই সমাজে অনেক ধর্ষকের পক্ষে দাঁড়ানোর লোকেরও অভাব হয় না। ইনিয়ে বিনিয়ে পোষাক, মেয়েদের চলাফেরা এসব কে দায়ী করে ধর্ষকের পক্ষে সাফাই গায় তারা। তাকিয়ে দেখে না নিজের মনের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা পশুকে। সেই পশুত্বকে দূর করতে চায় না, সমাজে দূর্বল করে রাখা মেয়েদের দোষ খোঁজে। চারিদিকে শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ তাদের লোলুপ পশুত্ব থেকে বাদ যায় না।
যতদিন মানুষ মানবিক বোধের পরিচয় দিতে পারবে না ততদিন সমাজের এই কদাকার চিত্র থেকেই যাবে। কোন আইন, কোন ধর্মীয় শাস্তির ভয় কিছুই রুখতে পারবে না এই অমানবিক মানুষগুলোকে। বিশ্বের অনেক দেশে মৃত্যূদন্ডের আইন নেই, সেখানে মানুষ, মেয়েরা শরীরের ৭০ ভাগ খোলা রেখে ঘুরলেও কোন অঘটন ঘটে না। মানবিক মানুষ হওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। ধর্মীয় ভীতি, আইনের কঠোরতা এসব মূখ্য নয় মানবিক মানুষ হওয়ার জন্য। যদি আইনের কঠোরতায়, ধর্মীয় শাস্তির ভয়ে আপনি অন্যায় থেকে দূরে থাকেন তবে বুঝবেন আপনিও একজন পটেনশিয়াল ক্রিমিনাল, যে সুযোগ পেলেই বিষধর সাপের মত ফনা তুলবে। আর মানবিক মানুষের সামনে শত সুযোগ আসলেও সে তার মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিবে না।
মনের মধ্যে পশুত্ব পুষে রাখা পটেনশিয়াল ক্রিমিনাল, অমানবিক মানুষ যারা তারা আজই মৃত নুসরাতের ব্যান্ডেজ বাঁধা পোড়া পা দুটো ছুঁয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন। তা না হলে ইতিহাস আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। শত বছর পরে হলেও একদিন সভ্য হবে সবাই। সেদিন আপনাদের মুখে সবাই প্রস্রাব করবে।
Related Posts

একটি অর্ধ শতক পার করা দেশ ও ভাতের অধিকার
বাড়িতে এক নারী তার দুই ছোট শিশুকে নিয়ে প্রহর গুনছে কখন শিশুদের বাবা রাতে টিউশুনিRead More

কোন কাজই ছোট না, সব কাজকেই সম্মান করতে শিখুন
আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন নয় বছর বয়সে তার মাকে হারান। খুব অল্প বয়সেই দরিদ্রRead More

ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও পুতিনের নৈতিক পরাজয়
গতকাল ঢাকার এক লোকাল বাসে যাচ্ছিলাম পল্টন। আমার পাশে বসা এক তরুণ। সে রাজনৈতিক আলাপRead More
Comments are Closed