
Uncontrolled Traffic in Dhaka
এর শেষ কোথায় ? রাস্তায় মানুষের মৃত্যুর মিছিল কবে শেষ হবে এ দেশে ?
নির্দিষ্ট কোন পেশাকে ছোট করে দেখা ঠিক না এবং আমার নীতির সঙ্গেও এটি যায় না। তবুও কয়েকটি পেশার লোকজনের উপরে আমার বিশ্বাস, শ্রদ্ধা প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। রাজমিস্ত্রী, ড্রাইভার, গাড়ির মিস্ত্রী এমন আরো কিছু। এই যেমন গত একমাসের কথাই যদি বলি ২/৩ জন ড্রাইভার তাদের মুখের কথার কোন দামই দিলো না। একজন বাড়ি বরিশাল, আমাকে ১৬/১৭ হাজার টাকা খরচ করিয়ে ২ দিন পরে হাওয়া। অন্য একজন সদ্য নতুন রঙ করা গাড়ির অনেক ক্ষতি করে পরের দিন থেকে লাপাত্তা। এর আগে একজন তার শিশু কন্যা হাসপাতালে বলে টাকা নিয়ে হাওয়া। প্রাইভেট চালানো ড্রাইভারেরা যদি এমন হয় তবে বাস, ট্রাক, লেগুনা চালানো ড্রাইভারদের মানবিক বোধ, কমিটমেন্ট এর মূল্য ও সামাজিক শিক্ষার কি দূরাবস্থা একবার ভাবুন।
এইযে এই ভিডিও আমি করেছিলাম গাবতলীর পাশে মাযার রোডের মুখে। দেখুন, ট্রাফিক সিগন্যাল দিলেও কেউ গাড়ি থামায় না। জেব্রা ক্রসিং কে মানে ? মানুষ রাস্তা পারাপার হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ফুটপাতে মোটরসাইকেল, গাড়ি উঠিয়ে দেয়া তো রীতিমত সাধারন ব্যাপার। আমার হাতে ২ টা বড় লাগেজ। রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল পেয়ে রাস্তা পার হতে উদ্যত হলাম। একেবারে বামে যেটি দেখা যাচ্ছিল না সে পাশ দিয়ে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে একটি বাস সগর্বে চলে গেলো উচ্চগতিতে, একটুর জন্য বেঁচেছিলাম আমরা। সত্যি এ শহরে জীবনটা হাতে নিয়ে চলতে হয় আমাদের।
শ্যামলী একবার ৮ নাম্বারের একটি বাস মূল রাস্তা থেকে ফুটপাতে ৪/৫ ফুট উঠে এসে আমাদের প্রায় শেষ করে দিচ্ছিলো। আমি প্রতিদিন রাস্তায় হাঁটি আর চিন্তা করি এ শহরে হাঁটার কোন জায়গা নেই। শ্যামলী মোড়ে ২/৩ সারি লেগুনা রিং রোডের ওপাশে থাকে। তাও বিচ্ছিন্নভাবে। ফুটপাথ সব ফেরিওয়ালা, দোকানদারের দখলে। কিভাবে কোথা দিয়ে হাঁটবেন ? শ্যামলী ও জাপান গার্ডেনের সামনে ২ টি প্রিন্সের আউটলেটের সামনে ২/৩ সারিতে গাড়ি দাঁড় করানো থাকে ফুটপাত থেকে শুরু করে মূল রাস্তার ২/৩ ভাগ। হাঁটার সময়ও চিন্তা করতে হয় পিছনে কোন গাড়ি এসে মেরে দিবে। একদিন দেখি পুলিশের শ’খানিক মোটরসাইকেল ও গাড়ি। কি ব্যাপার ? বলে বড় এক কর্মকর্তার পারিবারিক অনুষ্ঠান চলছে। এই যে রাস্তা ২/৩ ভাগ দখল করে শত শত গাড়ি থাকে, কেনো থাকে, কিভাবে থাকে, কিসের বলে থাকে তা সবাই বুঝবেন। গত সম্পাহেও আমার ড্রাইভার কোথায় যেন মূল রাস্তায় ২ মিনিট গাড়ি রেখে জরিমানা দিলো, আর শ্যামলী থেকে শিয়া মসজিদের সামনে এই গাড়িগুলো মাসের পর মাস বিনা বাঁধায় থাকে রাস্তা দখল করে। সত্যি, সেলুকাস, বিচিত্র এ শহর, বিচিত্র এ দেশ !
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে রাস্তা পারাপারের সময় দেখি সব গাড়িগুলো ২০/৩০ হাত দূরে এসে দাঁড়িয়ে গেলো। আমরা অপেক্ষা করছিলাম কখন রাস্তা ফাঁকা হবে। আর ড্রাইভারগুলো গাড়ি থামিয়ে আমাদের ইশারা দিলো চলে যাওয়ার জন্য। থাইল্যান্ডের মত দেশে এই অবস্থা হলে উন্নত দেশের কি অবস্থা সেটা তো আর বলা লাগে না। রাস্তায় হেঁটে চলা পথচারীকে সবাই গুরুত্ব দেয়। সেখানে জেব্রা ক্রসিং থাকে। ওভারব্রীজ থাকে না। পথচারী, যে দেশের কোন সম্পদ নষ্ট করছে না, বরং স্বাস্থ্য ঠিক রেখে দেশের উপকার করছে তাকে ৩ তলা সমান ভাঙ্গা ওভারব্রিজে উঠে রাস্তা পার হতে হয় যেখানে ময়লা, আবর্জনা ও হকারদের দখল থাকে বেশী। ওভারব্রীজতো মাঝে মধ্যে ভেঙ্গেও পড়ে। গর্ভবতী মহিলা, হার্টের রোগী, সদ্য অপারেশন করা রোগীর নিজে নিজে রাস্তা পার হওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। হুইল চেয়ার যাত্রীর জন্য তো এ শহর অভিশাপ !
আপনি একটু কষ্ট করে গুগলে সার্চ দিন। ফুটওভারব্রীজ ইন অমুক দেশ লিখে। দেখেন না, কোন দেশে কয়টি ফুট ওভারব্রীজ পান ! কলকাতাতেও এত ফুট ওভারব্রীজ নেই আমাদের ঢাকার মত। ফুটওভার ব্রীজ কেন ? জেব্রা ক্রসিং না কেন ? পথচারী কেন কষ্ট করে ফুটওভার ব্রীজে উঠবে ?
যা বলছিলাম। ড্রাইভার। আমাদের দেশে ড্রাইভার হয় কারা ? তাদের সামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি ? কোন ভদ্র মানুষ, স্ব-শিক্ষিত বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ কি ড্রাইভার হবে বাস ট্রাকের ? কারন আমদের এখানে এসব পেশাকে সমান চোখে দেখা হয় না। মেথরের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি না করা গেলেও মেথরের বউ-মেয়ের সঙ্গে শুতে আপত্তি থাকে না। ড্রাইভার, মিস্ত্রী, সুইপার এমন অনেক পেশার নাম শুনলে অনেকে নাক সিটকায়, তাদের সামাজিক মর্যাদাও কম। তাহলে কিভাবে আশা করবেন এসব পেশায় ভদ্র, মার্জিত, মানবিক মানুষজন আসবে যারা নিজের স্বার্থের চেয়ে অন্যকে গুরুত্ব দিবে ? রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং দেখে দাঁড়ানোর মত প্রজ্ঞা কিভাবে পাবেন লেগুনা চালানো ছোট ছোট টোকাইদের ভিতরে ? ভদ্র মানুষ কেন আসতে চাইবে ড্রাইভিং পেশায় ? আমাদের দেশের পরিবহন ব্যাবসা কাদের দখলে ? তারা কারা ? তাদের মানবিক জ্ঞান কতটুকু ? আইন না মেনে চলার সংস্কৃতি কোথায় নেই এদেশে ? সবখানে সবাই চলবে আইন না মেনে চলার সংস্কৃতিতে আর ড্রাইভার, হেল্পাদের চাইবেন তারা আইন মেনে চলুক ? সবকিছু আইন দিয়ে হয় না। সমাজে ভাল কিছু আশা করতে হলে সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে আগে। সবাই যদি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় একদিন দেশেরও সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
পুলিশ পোস্টের পাশেই অবৈধ লেগুনার সারি, লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদের দাপট – আপনি কাকে অভিযোগ দিবেন ? কে আপনাকে সমর্থন দিবে ? আপনার টাকায় পোষা পুলিশ কি আপনার কথা শুনবে মনে হয় ? তবে আর কত ? এর শেষ কোথায় ? রাস্তায় মানুষের মৃত্যুর মিছিল কবে শেষ হবে এ দেশে ?
Related Posts

অপেশাদার মানুষের মাধ্যমে তৈরি অরক্ষিত বিদ্যুৎ লাইনের জন্য আর কত প্রাণ যাবে ?
সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি সংবাদ শিরোনামঃ “ভাত খেতে রান্নাঘরে ঢুকতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু”“চাটমোহরে ফ্যান চালুRead More

বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো ! এই দেশের সেকেলে সিস্টেম ‘শক্তের ভক্ত, নরমের জম’
আমার ইস্টার্ণ ব্যাংকের একটা প্রিপেইড এ্যাকোয়া মাস্টারকার্ড আছে যেটা দিয়ে একজন মানুষের বছরে ভ্রমনের জন্যRead More

চারপাশে দুর্নীতির মেলা বসছে – তা নিয়ে ওনাদের সমস্যা নাই, যতো সমস্যা মেয়েদের ড্রেস নিয়ে
কে কি পোশাক পরবে, কার সঙ্গে ঘুরবে, কার সঙ্গে বিয়ে করবে, কার সঙ্গে শোবে এগুলোRead More
Comments are Closed