Stop Violence Against Women

Stop Violence Against Women

এ মৃতুপূরী আমার দেশ নয়, এ ধর্ষণ রাজ্য আমার হতে পারে না

বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট পড়ার সময় একটা বিষয় প্রায়ই শুনতাম। তা হলো, আপনি যদি প্রকৃতিকে আঘাত করেন প্রকৃতি কয়েকগুণ বেশী শক্তি নিয়ে প্রত্যাঘাত করবে। ঢাকা শহরের মাত্রাতিরিক্ত দূষনের কারনে প্রকৃতি কোন মহামারী দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন নিতে পারে যে কোন সময়। দূর্নীতিবাজ, সৎ কেউ বাদ যাবে না। ম্যান মেইড ডিজাস্টারে অনেক মানুষ মারা যায়। সেখানে কে প্রকৃত অপরাধী আর কে নির্দোষ সেটা দেখা হয় না। মানুষের উপরই তার প্রতিশোধ ! প্রকৃতি বাদ দেন, নির্মানশিল্পের দিকে তাকান। ঢাকায় বড় বড় ২ টি অগ্নি দূর্ঘটনায় কত মানুষ মারা গেলো ! এগুলো কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সীমাহীন দূর্নীতি, অনিয়মের ফল। অবহেলা, ঔদাসীন্যও দূর্নীতি। এই যে আমাদের নুসরাত মারা গেলো। প্রতিবাদী মেয়েটি মারা গেলো কিন্তু এই প্রশাসনের ঔদাসীন্য ও দূর্নীতির কারনে। আগে ব্যবস্থা নিলে তাকে বাঁচানো যেতো।

এই দেশ ও দেশের রুটিনমাফিক মানুষেরা এখন দীর্ঘ যন্ত্রণাময় লড়াই শেষে জীবনকে বিদায় জানানো আমার বোন নুসরাতকে নিয়ে হা-হুতাশ করছেন। এটা চলবে হয়তো আরও কিছুদিন। যথাযথ প্রতিস্থাপনের আগ পর্যন্ত, পরের নুসরাতের দেখা মেলার আগ পর্যন্ত। নতুন আরেকটি ঘটনা সবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবে। রিমোটের মালিকানা বুঝে নেওয়া মানুষেরা নির্দ্বিধায় চ্যানেল বদলে নেবে।

এইতো গতকাল। চলন্ত বাসে ‘শ্লীলতাহানি’ থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। না, এটাও শেষ না গতকাল। সোনাইমুড়িতে ২ সন্তানের জননীকে রাতভর গণধর্ষণ। এটাও কি শেষ ? না …

এই নুসরাত যখন হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, আর মানুষেরা সময়ের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে সব চ্যানেল একদিকে ঘুরিয়ে বসে আছে, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার এক গ্রামে সারা রাত আটকে রেখে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর তাকে তার বাড়ির পাশেই ফেলে রাখা হয়। ষষ্ঠ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে ফেরার সময় তুলে নেওয়া হয়েছিল। এই সমাজে শুধুমাত্র মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারনে এই পরিনতি !

নুসরাত যখন অন্তিম লড়াইটা করছেন, তখন আরেক ষাটোর্ধ্ব বাবা তাঁর প্রয়াত মেয়ের ছবিসংবলিত একটি ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে। সেখানে লেখা, ‘আমার একমাত্র কন্যা কামরুন নাহার তুর্ণা হত্যার বিচার চাই এবং আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই ।’ তাঁর নাম মফিজুল হক। তুর্ণার লাশ দুই বছর আগে তাঁর শ্বশুরবাড়ির পরিত্যক্ত পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় মৃত পড়ে থাকা তুর্ণা ছিলেন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দুই বছরে তুর্ণা হত্যার বিচার না হলেও মফিজুল হকের জীবনের নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়েছে। মফিজুল হক দুই-ই চাইতে হাজির হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে।

নুসরাত যেদিন চলে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেই ১০ এপ্রিল খবর এল, ৮ বছর বয়সী আরেক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর অপহরণ ও মৃত্যুর কারণ তারই শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ।

ঠিক একই সময়ে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এই নারায়ণগঞ্জেই বাড়ি ভেঙে দেওয়া হলো এক দম্পতির। একই দিনে মাদারীপুরে গোসল করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হলো প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। আর ফরিদপুরে আড়াই বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল।

নুসরাতের লড়াইটা যেন কত দীর্ঘ সময় ধরে চলল। আর এর মধ্যেই চিকিৎসা চাইতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ধর্ষণের শিকার হলেন এক গৃহবধূ। নুসরাতের হাসপাতালের যন্ত্রনাময় দিনগুলোতে আরো কত নুসরাত দেশের আনাচে কানাচে নির্যাতিত হয়েছে। কেউ মুখ খোলেনি, কেউ খুলেছে। পুলিশ মামলা নেয়নি বা নিয়েছে কোনটার ! এই কিন্তু বাস্তবতা। এই সমাজে নারীরা বয়সের বিবেচনাহীনভাবে অনিরাপদ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা, গণপরিবহন এমনকি নিজের ঘর – যেকোনো জায়গায় সে নির্যাতিত হতে পারে। তাকে হত্যা করা হতে পারে। তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হতে পারে। তার সঙ্গে যা ইচ্ছা তা-ই করা হতে পারে। এমনকি আড়াই বছরের শিশু হলেও তার কোনো নিস্তার নেই। শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার কারনে। কত বাবা, মা, ভাই, সচেতন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে শুধুমাত্র নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করায়, মনে আছে ?

নুসরাত মারা গেছেন, জীবনের দিকে তীব্র প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েই। কলের পুতুলের মতো প্রতিবাদ করা, প্রতিবাদ না করা, যেকোনো ঘটনায় তরমুজের ফালির মতো বিভাজিত হয়ে যাওয়া, সত্যজিতের ‘যন্তর-মন্তর’ থেকে বের হওয়া মানুষের দিকে তাক করা তির্যক চাহনিটি অবশেষে বুজেছে সে। এই তির্যক চাহনি হয়তো কিছুকাল কিছু মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াবে, হয়তো কিছু রাত ঘুমের ভেতরে কেউ কেউ তীব্র আগুন দেখে চিৎকার দিয়ে জেগে উঠবে; কিন্তু ওই পর্যন্তই। ওই পর্যন্তই যে, তার প্রমাণ হচ্ছে যেদিন নুসরাত চোখ বুজলেন, সেই একই দিন রেললাইনের পাশে গলায় গামছার ফাঁস প্যাঁচানো আরেক মাদ্রাসাছাত্রের লাশ পাওয়া গেল। ১০ বছরের শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু কেউ কিছু বলেননি। খবরটি নাগরিকেরা দারুণ দক্ষতায় গিলে ফেলেছেন।

অপরাধী বা নিপীড়কদের হাত থেকে আমরা বেঁচে আছি কীভাবে? কারণ তারা দয়া করে আমাদের রেহাই দিচ্ছে। অফিসে যাওয়ার সময় কোনো গাড়ি আপনার ওপর উঠে না যাওয়ার অর্থ হলো – সঠিক প্রশিক্ষণ না পাওয়া কোনো গাড়ির চালক আপনাকে রেহাই দিয়েছে। আপনার স্ত্রী বা বোন রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় উত্ত্যক্তের শিকার হয়নি – এর অর্থ কিছু বিকৃত মনোভাবের পুরুষ তাঁদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে অপমান করেনি। রাতে বাড়ি ফেরার পথে আপনার বাবা বা ভাইকে কেউ বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়নি বা পেটে ছুরি মেরে টাকা ছিনিয়ে নেয়নি – এর অর্থ হলো চালকের সহকারী বা কোনো মাদকাসক্ত সন্ত্রাসী তাঁদের দয়া করে ছেড়ে দিয়েছে।

এমন অসংখ্য অপরাধী ও নিপীড়কের দয়ায় এখন আমরা বেঁচে আছি, নিজেদের ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছি। তারপরও বলবেন এই সমাজ ঠিক ? সামাজিক ব্যবস্থা ঠিক ? যা ঘটছে তা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সীমাহীন দূর্নীতি, অনিয়ম ও অমানবিক সমাজ ব্যবস্থার ফল মাত্র। এটা এ্যাভয়েট করা যেতো না। প্লিজ নিজে মানবিক হোন, সমাজটাকেও মানবিক করুন। না হলে পরবর্তী ভিক্টিম আপনি বা আমি।

Related Posts

DUCSU election 2025

Was this unexpected victory of Shibir in the DUCSU election actually expected?

At Dhaka University, Shibir is winning simply by securing votes – that’s the reality. AcrossRead More

DUCSU Election 2025 and Shibir

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের এই অপ্রত্যাশিত বিজয় কি প্রত্যাশিতই ছিল?

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শিবির ভোট পেয়েই জিতছে, এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট কিছু না কিছু ভুলRead More

15 February 1996 Election

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন – বি এন পি যেভাবে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছিল

২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভভুত্থানের আগে ১৯৯০ সালে ছাত্র জনতার ত্যাগের বিনিময়ে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের যেRead More

Comments are Closed