
Public DNS
পাবলিক ডি এন এস কি ও কেন ব্যবহার করবেন?
ডি এন এস এর অর্থ হল ডোমেইন নেম সিস্টেম। ধরুন আপনি ব্রাউজারের এ্যাড্রেস বারে টাইপ করলেন facebook.com এবং এন্টার প্রেস করলেন। আপনার সঙ্গী ফেসবুক ওপেন হল যে ফেসবুক একদিন না দেখলে হয়ত আপনার মাথা গরম হয়ে যাবে। আপনি টাইপ করলেন, এন্টার প্রেস করলেন এবং এক সেকেন্ড সময়ের ভিতর ফেসবুক ওপেন হয়ে গেল। কিন্তু এই এক সেকেন্ড সময়ের ভিতর অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আপনার ব্রাউজার ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন এক নেমসার্ভারে আপনার টাইপকৃত facebook.com পাঠিয়ে বলল দেখ এই এ্যাড্রেস এর সাইটটা টা কোন সার্ভারে হোস্ট করা আছে। ব্রাউজার, মাঝের সকল সিস্টেম চেনে আই পি এ্যাড্রেস। যেমন ফেসবুকের আই পি 173.252.110.27 একই আই পি তে একাধিক সাইট ও থাকতে পারে। ডি এন এসের কাজ হল অক্ষরযুক্ত ডোমেইনকে সংখ্যাযুক্ত আইপি তে কনভার্ট করা এবং আপনার ব্রাউজারের সঙ্গে সেই সংখ্যাযুক্ত আই পি যে সার্ভারে আছে সেই সার্ভারের সংযোগ ঘটানো।
এই ডি এন এস ও কোন না কোন সার্ভারের সেবায় পরিচালিত হয়। আমরা এটার খোঁজও রাখি না। সাধারনত যে আই এস পি ( ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ) ইন্টারনেট সংযোগ দেয় তাদের ডি এন এস সার্ভার এই কাজগুলো করে দেয়। কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম, বিশেষ করে উইন্ডোজের লোকাল এরিয়া কানেকশান, ওয়ারলেস এরিয়া কানেকশান এসব স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই আই এস পি’র ডি এন এস খুঁজে নেয় । এই জন্য নতুন ডোমেইন কিনলে তার তথ্য লোকাল আই এস পি’র সার্ভার পর্যন্ত আসতে কয়েক ঘন্টা থেকে দিন লেগে যায়।
এই আই এস পি’র ডি এন এস সার্ভারের বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিনামূল্যে বা মূল্যের বিনিময়ে ডি এন এস সেবা দেয়। এদেরকেই বলা হয় পাবলিক ডি এন এস। গুগল এই সেবা দেয় তাদের 4.4.4.4 ও 8.8.8.8 নেম সার্ভার আইপি’র মাধ্যমে। ওপেন ডিএন এস এমন একটি সেবা। তো যেখানে আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডার গ্রামীনফোন, বাংলালায়ন বা লিংক থ্রি যেখানে ডি এন এস সার্ভিস দিচ্ছে ফ্রি সেখানে আপনি কেন ফ্রি বা মূল্যের বিনিময়ে এই সেবা নিবেন?
স্পীড/গতিঃ
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনি ব্রাইজিং এর স্পীড বেশী পাবেন পাবলিক ডি এন এস ব্যবহারে। একবার ভাবুন একটা সাইট আপনার লোকাল আই এস পি’র সার্ভারে যোগ হতে বা আপনার কাছে সার্ভ করতে যে সময় দরকার তার চেয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটা সেবার সময় কম হবে না? তবে এটা নির্ভর করে অনেক বিষয়ের উপর। আপনার ভৌগলিক অবস্থান এবং অন্য কিছু কারনে সব সময় এ স্পীড বেশীর সুবিধা আপনি নাও পেতে পারেন।
নিরাপত্তাঃ
পৃথিবীতে কোটি কোটি ওয়েবসাইট। তাদের অনেকগুলো ভাল ভাল কাজ করে, ভাল ভাল কন্টেন্টে ভরপুর। কিন্তু অনেক সাইট আছে যেগুলো আপনার কম্পিউটারে ম্যালাওয়ার, ভাইরাস, স্পাইওয়্যার এসব ছড়িয়ে দিতে পারে আপনার অজান্তেই। আপনার ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংকে তথ্য জেনে নিয়ে আপনাকে করে দিতে পারে সর্বশান্ত। আপনার ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা কেড়ে নিতে পারে নিমিষেই। গুগল বা অন্য পাবলিক ডি এন এস গুলোর নিজস্ব কিছু সিস্টেম আছে এই সমস্ত ক্ষতিকর সাইটগুলোকে ব্লক করে রাখার। এবং আপনার কম্পিউটারে সেই সাইটগুলো প্রদর্শন করতে দেয় না। এখন বলুন আপনার আই এস পি কি এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবে ?
নির্ভরতাঃ
একটা ডি এন এস সার্ভার নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন করতে হয়। ভাল মানের যন্ত্রপাতি দিয়ে, দক্ষ লোক দিয়ে পরিচালনা করতে হয়। বাংলাদেশের সার্ভিসের যে অবস্থা তাতে এই নিশ্চয়তা কি আপনার আই এস পি দিতে পারবে? মাঝে মাঝেই দেখবেন ২/৪ টা সাইট লোড হচ্ছে না। কারন তাদের ডি এন এস সার্ভার লোড টেনে পারছে না বা দূর্বল পরিচালনার কারনে সময়মত ডি এন এস রিসল্ভ করতে পারছে না। এক্ষেত্রে পাবলিক ডি এন এস গুলো নির্ভরযোগ্য।
উন্মুক্ত ওয়েবঃ
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের সরকার অনেক ওয়েব সাইট ব্লক করে রাখে। এবং বেশীরভাগ সময়ই সেগুলো আই এস পি লেভেলে ডি এন এস সার্ভারে ব্লক করে রাখা হয়। পাবলিক ডি এন এস যেহেতু আপনার আই এস পি’র ধার ধারে না সেহেতু আপনার ঐ সমস্ত ব্লকড সাইট দেখতে সমস্যা হওয়ার কথা না। ৩ বছর আগে যখন বাংলাদেশে ফেসবুক ব্লক করা হয় তখন এ রমক পাবলিক ডি এন এস এক্টিভ থাকলে ফেসবুক চালানো যেত কোন সমস্যা, প্রক্সি সার্ভার বা টানেলিং ছাড়াই।
ফিশিং থেকে মুক্তিঃ
ফিশিং মানে মাছ ধরা। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এটা ঘোলা জলে মাছ ধরা। ধরুন আপনি ফেসবুক এর ল্যান্ডিং পেজে আছেন। পাসওয়ার্ড দিলেন। পরের দিন দেখলেন আপনার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে। অনেক সময় হ্যাকাররা বা অন্য কোন গোষ্ঠী ঠিক হুবুহু একই রকম দেখতে কোন সাইট আপনার সামনে তুলে ধরল। আপনি সেখানে আপনার নাম, পাসওয়ার্ড দিলেন এবং তারা আপনার ঐ অতি গোপনীয় তথ্য জেনে গেল। এভাবেই আপনি শিকার হলেন। পাবলিক ডি এন এস গুলো এই ফিশিং সাইটকে ফিল্টার করে এবং আপনার ব্রাউজারে প্রবেশ করতে দেয় না সাধারনত।
এবার বলি কেন এতকিছু লিখলাম। গত কয়েকদিন ধরে আমার ইন্টারনেট কানেকশান ব্রাউজিং এ বেশ ঝামেলা করছে। স্পীড টেস্ট নিয়ে দেখলাম ডাউনলোড স্পীড ১.৬৭ মেগাবিট পার সেকেন্ড। ভালই আছে। ইউটিউবের ভিডিও ১০২০ রেজুলেশনে বাফার ছাড়াই চলছে। কিন্তু কিছু কিছু সাইট ওপেন হতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় ওপেন ও হচ্ছে না। পিং টেস্ট করলাম। রুট ট্রেস করলাম। সমস্যা পেলাম না। পরে বুঝলাম ডি এন এসের সমস্যা। অবশ্য আমার অনেক আগে থেকেই গুগল ডি এন এস চালু ছিল। গুগল ডি এন এস ও মাঝে মাঝে ঝামেলা করে। সেটা উঠিয়ে আই এস পি’র ডি এন এস দিলে আরো সমস্যা হয় ব্রাউজিং এ। পরে ওপেন ডি এন এসের সার্ভিস অন করাই মোটামুটি ভাল ব্রাউজিং করা যাচ্ছে।
তো ওপেন ডি এন এস কিভাবে চালু করতে হয়? কিছুই বললাম না, নীচে কিছু ছবি দিলাম। এগুলো করে সবশেষে কম্পিউটার রিস্টার্ট দিবেন। এরপর দেখেন ব্রাউজিং এক্সপিরিয়েন্সে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা। না হলে অটমেটিক ডি এন এস সার্ভার সিলেক্ট করে আই এস পি’র সার্ভার ব্যবহার করতে থাকুন।





গুগল ডি এন এস ও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এক এক আই এস পি বা ইন্টারনেট কানেকশানের জন্য এক একটি ভাল কাজ করতে পারে, কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। গুগল ডি এন এসের ক্ষেত্রে সংখ্যা দুইটা হবে যথাক্রমে 4.4.4.4 ও 8.8.8.8
[Pic, CC BY-SA 4.0]
Related Posts

ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !
ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More

ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার পশ্চাৎযাত্রা
বাংলাদেশে সাইন্সের স্টুডেন্টদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সারাবছর বিজ্ঞানের জাহাজ মাথায় নিয়ে ঘুরবে, কিন্তু বিশ্বাস করবেRead More

সি সেকশান বা সিজারিয়ান প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্মদানে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ছে
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চরে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বন-মানুষেরা অনেকRead More
Comments are Closed