
Bye Bye Orkut!
বিদায় অর্কুট! সোস্যাল নেটওয়ার্কিং বিপ্লবের এক সুযোগ্য যোদ্ধা
আজ ই-মেইলে গুগল আনুষ্ঠানিক ভাবে জানালো তাদের অর্কুট সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদিও বিষয়টা আগেই জেনেছিলাম। গত জুন ৩০, ২০১৪ গুগল ঘোষনা দিয়েছে তাদের অরকুট সার্ভিস ( www.orkut.com ) আনুষ্ঠানিক ভাবে শাট ডাউন হয়ে যাচ্ছে সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৪। বর্তমানের ফেসবুক প্রজন্মের অনেকেই জানে না একসময় অর্কুটের কাছে ফেসবুক কিছুই ছিল না। অর্কুটের জন্ম জানুয়ারী ২০০৪ আর ফেসবুকের জন্ম ফেব্রুয়ারী ২০০৪। অবশ্য সোসাল নেটওয়ার্কিং জগতে ফেসবুকের আগমন সবার পরে। অর্কুট ও প্রথম নয়। যে ফেসবুক বা সোস্যাল মিডিয়ার জন্য বিশ্বে অনেক বিপ্লব পর্যন্ত সংঘটিত হয়ে গেল, আমাদের নিত্যদিনের অনুষঙ্গ যে সোস্যাল মিডিয়া বা নেটওয়ার্কিং তার শুরুর ইতিহাস টা একটু দেখি। ফেসবুকের পরে যারা এসেছে সেগুলোর তথ্য এই তালিকায় নেই।

কম্পিউটার নির্ভর সোস্যাল মিডিয়ার ধারনা আসে সেই ১৯৭৯ সালে ইউসারনেটস এর মাধ্যমে। এর পর আরো এমন কিছু উদ্যোগ সফল হয়। প্রথম বুলেটিন বোর্ড আসে ঐ একই বছরে। মজার ব্যাপার হল ঐ সিস্টেমে একই সময়ে মাত্র একজন মানুষ একসেস পেত।
এরপর ১৯৮৮ সালের দিক থেকে চ্যাট, মেসেজিং এসবের জন্য আসে আই আর সি, আই সি কিউ এসব।
এরপর সোস্যাল নেটওয়ার্কিং ধারনার পরিচয় হয় ১৯৯৭ সালে। তবে সেটি ছিল ডেটিং সাইট হিসাবে, এখনকার মত বহুমাত্রিক চিন্তার নয়।
সিক্স ডিগ্রিস প্রথম মডার্ণ সোস্যাল নেটওয়ার্ক যা ব্যাবহারকারীদের নিজস্ব প্রোফাইল ও বন্ধুত্ব করার সুযোগ দেয় ১৯৯৭ সালে।
এরপর এশিয়ান এ্যাভিন্যু, ব্ল্যাক প্লানেট এসবের আগমন ঘটে।
আধুনিক ডিজাইনের ব্লগ টাইপ লাইভ জার্নাল আসে ১৯৯৯ সালে। প্রথম কোন সাইট যা কমিউনিটি ব্লগের সুযোগ করে দেয়।
ওয়ার্ন্ড অফ ওয়্যারক্রাফট ২০০০ সালে।
ফ্রেন্ডস্টর ( friendster.com ) আসে ২০০২ সালে যা আধুনিক অনেক সুবিধা যোগ করে এবং প্রথম জেনারেল কোন সোস্যাল নেটওয়ার্ক। এটি এখনো অনেক জনপ্রিয়।
জুন ২০০৩ এ হাই ফাইভ ( hi5.com ) জন্ম দেয় এক নতুন ইতিহাস। প্রোফাইল প্রাইভেসীর বহুমাত্রিক অপশন নিয়ে আসে হাই ফাইভ।
২০০৩ সালে জন্ম নেয়া বিজনেস সম্পর্কিত সোস্যাল নেটওয়ার্ক লিংকড ইন ( linkedin.com )
জুলাই ২০০৩ এ জন্ম নেয়া মাইস্পেস ( myspace.com ) ২০০৬ সাল নাগাদ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পরিনত হয়।
ফেব্রুয়ারী ২০০৪ সালে শুধুমাত্র হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে চালু হয় ফেসবুক ( facebook.com )। পরবর্তীতে এটি আশে পাশের স্কুল কলেজে ছড়িয়ে পড়ে।

২০০৮ সাল পর্যন্ত অর্কুট ফেসবুকের চেয়ে এগিয়ে ছিল। বিশেষ করে বড় জনসংখ্যার দেশ ভারত ও ব্রাজিলে ছিল একচেটিয়া আধিপত্য। ২০০৮ সালের পরে ফেসবুক এগিয়ে যেতে থাকে বিশ্বে। একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় মাইস্পেস, হাই ফাইভ আগেই পিছিয়ে পড়তে থাকে। ফেসবুকের চেহারা, নীতি, বিষয় বিন্যাসে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসলে অর্কুট পিছিয়ে পড়তে থাকে। অর্কুটের আর এক প্রতিবন্ধকতা ছিল প্রাইভেসী। ২০০৯ সালে প্রাইভেসীর অনেক পরিবর্তন করলেও সেই হারানো অতীত ফিরে পায়নি। পরবর্তীতে ফেসবুকের সঙ্গে না পেরে গুগল এক এক করে গুগল বাজ, গুগল ওয়েভস নিয়ে আসে। সেগুলোও এক সময় ডেড প্রোডাক্ট হয়ে যায়। পরে গুগল প্লাস মোটামুটি জনিপ্রিয় হয়। মাইক্রোসফটের লাইভ নেটওয়ার্কের দূরাবস্থার কথা আর নাইবা বললাম। ইয়াহুর ৩৬০ ডিগ্রী তো হিসাবেই ছিল না।
অর্কুটের ডেভেলপারের আকস্মিক মৃত্যুর কয়েক বছর পর তার সৃষ্টিও মারা যাচ্ছে এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর। আমার জীবনের প্রথম সোস্যাল নেটওয়ার্ক অর্কুট। ২০০৬ সালের শেষের দিকে মাত্র যখন সাইব্যার ক্যাফে ছেড়ে ইন্টারনেট নিজের হাতে আসল তখন কিভাবে যেন একদিন অর্কুটের সন্ধান পেয়েছিলাম। ২০০৭ সাল তখন আমি মার্স্টার্সের ছাত্র প্লাস চাকুরী করি। সেই দিনগুলোতে অর্কুটের ব্যাবহার ছিল সর্বক্ষন। আমার অনেক ভাল নেট বন্ধু পেয়েছিলাম অর্কুটের মাধ্যমে। ডিসেম্বর রেইন তার মধ্যে অন্যতম। জেরিপু তখন ভারত থাকার সুবাদে সেখানকার সর্বোচ্চ ব্যবহৃত নেটওয়ার্কের আওতায় পড়েছিলেন।ফেসবুকের ম্যাড়মেড়ে চেহারার কারনে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ফেসবুক দেখতাম কালে ভদ্রে। ২০০৮ সাল থেকে অন্য অনেকের মত আমিও অর্কুট থেকে আস্তে আস্তে দূরে চলে আসলাম। তবে অর্কুটের অনেক স্মৃতি এখনো মনে পড়লে নস্টালজিক হয়ে যাই।
বিদায় অর্কুট!
Related Posts

ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !
ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More

ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার পশ্চাৎযাত্রা
বাংলাদেশে সাইন্সের স্টুডেন্টদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সারাবছর বিজ্ঞানের জাহাজ মাথায় নিয়ে ঘুরবে, কিন্তু বিশ্বাস করবেRead More

সি সেকশান বা সিজারিয়ান প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্মদানে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ছে
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চরে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বন-মানুষেরা অনেকRead More
Comments are Closed