Moon Landing
Armstrong's Moon Landing

Moon landing conspiracy theories

সত্যি কি মানুষ গিয়েছিলো চাঁদে ? নাকি পড়েছিলো আমেরিকার ফাঁদে ?

এই প্রশ্ন কোন বাঙালি তুলবে এটা ভেবে বসবেন না। বাঙালি তুলতে পারে তবে তাকে কোন উন্নত ও সভ্য দেশে যেতে হবে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনা হয়, রাজনীতি চর্চার নামে অসভ্যতা চলে না। যাক, বাংলাদেশে একবার ২০০৬/৭ সালের দিকে রহস্য পত্রিকা একটা প্রতিবেদন করে এ নিয়ে যেটা মূলত ছিল বিদেশী প্রতিবেদন। এরপর থেকে সবকিছুতে ষড়যন্ত্র খোঁজা অনেক বাঙালির মাথায় চেঁপে বসে এটা। বিজ্ঞান বিমূখ বাঙালি হয়ত আরো এক শতাব্দী ধরে শ্যাওড়া গাছে পেত্নী খুঁজবে, স্যাটেলাইট পাঠানোর আর্থিক লাভ ক্ষতি হিসাব করবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন থেকে আর্থিকভাবে সরাসরি লাভ না হলেও আমরা যদি ঢাক ঢোল পিটিয়ে এটা সব জায়গায় প্রচার করতে পারি তবে এর সূদূরপ্রসারী একটা প্রভাব পড়বে বাঙালির বিজ্ঞান চেতনায়, যার আর্থিক মূল্য স্যটেলাইটের মূল্যেরও অনেকগুণ বেশী। যাক সে কথা। ফিরে আসি চাঁদে মানুষ যাওয়ার ব্যাপারে।

চাঁদে মানুষ যায়নি, এরকম দাবি করার মতো পাগল ছাগল বাংলাদেশে যেমন আছে, আমেরিকাতে তার চাইতেও বেশি। হয়তো তারা এটাও অবিশ্বাস করে যে, পৃথিবীর চারপাশে অসংখ্য স্যাটেলাইট চলছে, বা স্পেস স্টেশন বলে কিছু একটা আছে। তারা শ্যাওড়া গাছে পেত্নী দেখে সত্যি কিন্তু এসব দেখে না। ইন্টারনেট কন্সপিরেসি থিওরিতে ভর্তি। এক্স-ফাইল দেখা বিপুল মানুষ এই ধরণের কন্সপিরেসি থিওরিতে বিশ্বাস করে ফেলে সহজেই। কিন্তু সিউডো-সায়েন্স বা অপবিজ্ঞান মাথার পেছনে হাত ঘুরিয়ে কান দেখানোর মতোই সহজ জিনিষের জটিল ব্যাখ্যা বের করতে সচেষ্ট। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারগুলোকে ভেবে দেখুন। প্রোপাগান্ডা ছড়ানোরা যে প্রশ্নগুলো তোলে তা অনেকটা এমনঃ

১: চাদেঁর মাটিতে পতপত করে উড়ছে আমেরিকার পতাকা কিন্তু আমরা তো জানি চাদেঁ বাতাস নেই, তবে ?
২: সামনে ছায়া তার মানে পেছনে আলোক উতস সূর্য তাহলে সামনের অংশের(চিন্হিত) আলোর উতস কি ? (ফ্লাডলাইট!!!) কুচকুচে ছায়ার পাশে উজ্জ্বল আলো কিন্তু সূর্যের কাছাকাছি অন্ধকার!
৩: চাঁদের উপর তোলা এই ছবিতে চাঁদের আকাশে তারার চিন্হ নেই কিন্তু চাঁদে বাতাস ও মেঘ না থাকায় চাঁদের আকাশে অবশ্যই তারা দেখা যাওয়ার কথা।
৪: ছবিতে পায়ের চিন্হটি মনে হচ্ছে নরম ও কর্দমাক্ত মাটিতে তৈরী কিন্তু চাঁদে পানি বাতাস না থাকায় তো মাটি সবসময় শুকনো হওয়ার কথা!!! আর শুকনো মাটিতে এই ঢরনের গভীর পদচিন্হ অসম্ভব।
৫: চাঁদের মাটিতে অবতরণ করা অবস্হায় মহাকাশযানের ছবি অবশ্যই চাঁদে দাঁড়িয়ে তুলতে হবে কিন্তু চাঁদে দিনে ১৭০ ও রাতে ১৫৩ ডিগ্রী তাপমাত্ড়ায় কেমনে সম্ভব!!
৬: চাঁদের পৃষ্ঠে এই অদ্ভূত ছায়া কিসের ? নাসা বলেছিলো এটা নাকি ৯৫ কি:মি: উপর দিয়ে উড়ন্ত রকেটের ছায়া!!তাহলে তার চেয়ে নিচ দিয়ে গমনকারী উড়োজাহাজের ছায়া ভূ পৃষ্ঠে পড়ে না কেনো?

………………….
এই কুযুক্তিগুলোর উত্তর এখানে পড়ে নিবেনঃ
উইকি লিংক ০১
উইকি লিংক ০২
………………….

এই ভিডিওটিও দেখে নিবেন, সুন্দর করে বাংলায় বর্ননা করা

চাঁদে এ পর্যন্ত কি মাত্র একবারই গেছে মানুষ ? চাঁদে কিন্তু মানুষ অনেকবারই গেছে। অ্যাপোলো ১১ এর পরে ১২, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ পর্যন্ত। এই অভিযানগুলো মোটেও কম খরচের না, তাই চন্দ্রবিজয়ের প্রাথমিক উল্লাস কেটে গেলে নাসার বাজেট কমিয়ে দেয়া হয় সত্তরের দশকে। তাই এই অভিযানেরও সমাপ্তি ঘটে।

বিজ্ঞানে “ওকাম’স রেজর” নামে একটা মূলনীতি আছে। কোনো জিনিসের সহজ ব্যাখ্যা, আর কঠিন ব্যাখ্যা থাকলে সহজটাই ঠিক। চাঁদে যাওয়ার এতো বেশি প্রমাণ আছে, আর অবিশ্বাসীদের প্রতিটা পয়েন্টের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তার পরেও কেউ না মানলে সেটা তার ব্যাপার। আর চাঁদে অভিযানের পুরো ব্যাপারটা কেবল মার্কিনীরা না, সোভিয়েতরা এবং অস্ট্রেলীয়রা পুরাই মনিটর করেছে। তারা কিন্তু সরকারীভাবে সেটা মেনে নিয়েছে, কোন প্রশ্ন করেনি। সোভিয়েতের জন্য তখন সেটা ছিল প্রেস্টিজ ইস্যু। তারা প্রথম মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছিল, ইউরি গ্যাগারিনের কথা নিশ্চয় মনে আছে। তবে চাঁদে তারা মানুষ পাঠাতে পারেনি। চাঁদে যাওয়াটা অনেক ব্যয়বহুল, এজন্যই। চাঁদে যাওয়ার কোনো প্র্যাক্টিকাল ফায়দা তখন ছিলো না। মান ইজ্জ্বতের জন্যই আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন চেষ্টা করছিলো। দৌড়ে যখন হেরে গেছে, তখন আর সোভিয়েতরা বিপুল পয়সা খরচ করে গিয়ে কি করবে?

আর চাঁদে কোথায় কে নেমেছে, তা এখনও পৃথিবী থেকেই টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা সম্ভব। চাঁদে অ্যাপোলো ১১ রেট্রো-রিফ্লেক্টর অ্যারে (প্রতিফলক আয়না) রেখে এসেছিলো, যাতে লেজার রশ্মি প্রতিফলিত করে পৃথিবী হতে চাঁদের দূরত্ব মাপা হয়েছে। সেটা এবং পরের অ্যাপোলো মিশনের রিফ্লেক্টর গুলো এখনও যথাস্থানেই রয়েছে। ভালো টেলিস্কোপ থাকলে আপনিও দেখে নিতে পারবেন। অনেক বিজ্ঞানীই এগুলো পরীক্ষা করে দেখেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মত অনেকেই আছেন পৃথিবীতে। যারা একদল যত ভালো কাজই করুক অন্যদল সেখানে দোষ খোঁজে, তার অসারতা খোঁজে। স্পেস রেসে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দী সোভিয়েত ইউনিয়ন ডজন ডজন টেলিস্কোপ নিয়ে বসেছিলো, চাপাবাজি করলে তারা কি চুপ থাকতো? নীল আর্মস্ট্রং আর অলড্রিন যে আয়না রেখে এসেছেন চাঁদে, তা এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে। উপরে উইকির লিংকের লেখা পড়ে নিবেন।

Moon Landers

বিশ্বাস করা না করা মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই বলে সিউডো-সাইন্সের খপ্পরে পড়ে থাকাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যারা চাঁদে বা মহাশূণ্যে গেছে তারাই শুধু জানে এটা কি সুন্দর অথচ ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। যারা যায় তারা নিশ্চিত করে জানে না তারা আর পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে কি না। অনেকে এই সব অভিযানে প্রাণও দিয়েছে। যারা বলে এটা একটা মুভি, তখন ঐসব মহাশূণ্যের বীরদেরকেই খাঁটো করা হয়। আমরা মানুষের একটা প্রজাতি মনে হয় সেটা করতেই সিদ্ধহস্ত।

Related Posts

Sunlight and Human Body

Sunlight: A Natural Medicine, Cultural Wisdom, and the Key to Healthy Longevity

For thousands of years, many civilizations have worshipped the sun as a deity – notRead More

Sunlight and Vitamin-D

সূর্যের আলো: প্রাকৃতিক ঔষধ, সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকর দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি

হাজার হাজার বছর ধরে অনেক সভ্যতা সূর্যকে দেবতা মানে; শুধু বৈদিক, পৌরাণিক, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য,Read More

Evolutionary Biology and Women

Protecting women is a man’s responsibility – this is a lesson rooted in evolutionary psychology

A common tendency across all societies is to take extra care of women. This isRead More

Comments are Closed