বর কনের খোঁজ নেই, পাড়াপড়শীর ঘুম নেই
এই কথাটি বাঙালিদের জন্য খুবই প্রযোজ্য। ক্রিকেট বিশ্বকাপ হয়ত আমরা জিততে পারবো না। ফুটবল বিশ্বকাপে হয়ত আমরা খেলতেই পারবো না। কিন্তু, আমরা ক্রিকেটকে “মুক্তিযুদ্ধ”, আর ফুটবলকে “বিশ্বযুদ্ধ” বানিয়ে ছাড়তে পেরেছি – যা বিশ্বের অন্য কোনো জাতি পারেনি।
প্রতিবারই বিশ্বকাপ ফুটবল এলে বাংলাদেশে অনেক মানুষের প্রাণ যায়। পতাকা লাগাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃশ্য হয়ে, গাছ থেকে পড়ে গিয়ে, ২ গ্রুপ মারামারি করে অনেকভাবে প্রাণ হারানোর অসংখ্য রেকর্ড আছে এ দেশে। ঢাকার আমিনবাজারের আকাশ তো ছেয়ে যায় রঙ বেরঙের ভিনদেশী পতাকায়। ফেসবুকে ট্রল তো একটা কমন ব্যাপার এখন। এবারে বিশ্বকাপ নিয়ে ট্রল এত বাজে রকম হচ্ছে যার প্রভাব আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে পড়ছে।
খেলার সৌন্দর্য্য হলো এর নির্মল বিনোদন। এখানে একপক্ষ জিতবে অন্যটা হারবে, কিন্তু দিনশেষে সবাই খেলোয়ার। খেলার ছন্দ নিয়ে মানুষ আনন্দ পাবে। একটু অর্ধেক ঠাট্টা মশকরা হয়ত করা যায়। তাই বলে একে প্রাত্যহিক জীবনের অংশ করে পরিবারে, সমাজে, বন্ধুত্বে ভেদাভেদ তৈরি করা খুবই অসুস্থতার লক্ষন।
আপনি কি জানেন বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের র্যাংকিং কত ? শুনে রাখুন মাত্র ১৯৪ তম। ফুটবল বিশ্বকাপের এই উন্মাদনা কাজে লাগিয়ে যদি মাঠে গিয়ে ফুটবলে ২ টা ঘা দিতেন তবে হয়ত এই র্যাংকিং এর লজ্জা থেকে আমরা মুক্তি পেতাম। আপনি কি জানেন এই নেইমার, কাকা, রোনালদোদের হারিয়ে গত নব্বই দশকের শুরুর দিকে ( বা ১৯৮৯ সালে, সঠিক সালটা মনে পড়ছে না ) বাংলাদেশের কিশোরেরা ডানা কাপ, গোথিয়া কাপ জিতেছিল। অথচ সেই সব কিশোরদের কেউ হয়ত আজ পানের দোকানদার আর রোনালদো, নেইমাররা বিশ্বনায়ক।
আমার ফ্রেন্ড লিস্টে ব্রাজিলের কয়েকজন বন্ধু আছেন। অন্য ফুটবল খেলুড়ে দেশেরও আছেন অনেকে। আমি এ মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের ফেসবুক টাইমলাইন দেখলাম। ছবি, জামা, জুতো, স্যান্ডেল অনেক কিছুই আছে কিন্তু না, কেউ বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে কোন স্ট্যাটাসই দেননি। তাদের ফ্রেন্ডলিস্টও দেখলাম র্যান্ডমলি। কোথাও পাইনি কোন স্ট্যাটাস। ট্রল তো দূরে থাক, নিজের দেশের পতাকাও ফেসবুকে দেননি। তারা সময় পেলে টেলিভিশনে খেলা দেখেই তাদের সমর্থন জানান হয়ত। অথচ হাজার হজার মাইল দূরের দেশ বাংলাদেশে কি উন্মাদনা যারা আবার ফুটবল র্যাংকিং এর একেবারে তলানিতে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার ৯৯% মানুষ বাংলাদেশের নামই শোনেনি যেমন আপনি জানেন না ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা যে মহাদেশে সেই মহাদেশে আরুবা নামের একটি দেশ আছে। বিশ্বের মানুষ সিঙ্গাপুরকেই ঠিকভাবে চেনেনা এখনো। গত কয়েকদিন আগে সিঙ্গাপুরে ২ পাগলার যে মিটিং হলো তখন আমেরিকার মানুষ সিঙ্গাপুরের অবস্থান, সিঙ্গাপুর জাপানের কোন অংশ কিনা এসব জানার জন্য গুগলে সবচেয়ে বেশী সার্চ দিয়েছে। আর তো বাংলাদেশ ! বাংলাদেশকে থাইল্যান্ডে গিয়েও পরিচিত করতে হয় ইন্ডিয়ার পাশের দেশ বলে।
যে দেশে কর্মীর চেয়ে নেতার সংখ্যা বেশী, যেখানে বিজ্ঞানপ্রেমীর চেয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্নের সংখ্যা বেশী, যেখানে ধার্মিকের চেয়ে ধর্মান্ধের সংখ্যা বেশী, যেখানে জাহানারা ইমামের চেয়ে গোলাম আযমের জনপ্রিয়তা বেশী, যেখানে সততার চেয়ে অসততার কদর বেশী সেখানের মানুষ দেশকে নিয়ে ভাবার চেয়ে বিদেশের পতাকা বানানোর প্রতিযোগীতা করবে এতে অবাক হওয়ার কি আছে !
ফুটবল খেলা নিয়ে এত সিরিয়াস হবার কিছুই নেই। ভাবেন, এই ফুটবলাররা খেলে কোটি কোটি টাকা কামাই করছে। আর আমি আপনি একে অন্যকে ট্রল করে আবুল-বাবুলই থেকে যাচ্ছি। রোনালদো, টনি ক্রুস, রয়েস, মেসি, নেইমার – এরা কোনদিন জানতেই পারবে না তাদের জন্য কেঁদে কেটে আমরা নিজের ঘরেই আগুন দিচ্ছি, ভাইয়ে-ভাইয়ে, বন্ধুতে-বন্ধুতে মারামারি করছি, জীবন দিচ্ছি, নিজের ভিটেমাটি বিক্রি করে ৫ কিলোমিটার লম্বা পতাকা বানাচ্ছি। আমি ফুটবল খেলা দেখে তার ফলাফল নিয়ে জুয়া খেলি না। নিছক বিনোদন পাওয়ার জন্যই দেখি। এত উন্মাদনা দিয়ে কি হবে ? আমাকে তো প্রতিদিন সকাল হলে সেই কামলাই দিতে হবে
Related Posts
What is the main purpose of people coming to Earth?
Many people are confused by this question. In the swing of this wandering, they tryRead More
নবী মোহাম্মদ কি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ?
Is Prophet Muhammad the Best Person in the World? কিছু মুমিন দাবী করে বিধর্মী বড়Read More
কোরান কি আসলেই নির্ভুল? বৈজ্ঞানিকরা কি কোরান নিয়ে গবেষণা করেন?
পাকিস্তানের এক তথাকথিত স্কলার একবার জীন দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন নাকি! মোল্লা তারিকRead More
Comments are Closed