
A Real Life Hero
একজন বাস্তব জীবনের হিরো
প্রিয় পাঠক, আসুন আজকের প্রধান কিছু পত্রিকার কিছু সংবাদ শিরোনাম দেখি
‘প্রেম করছেন কারিশমা !’
‘অবশেষে নতুন ছবিতে শাবনূর’
পশ্চিমবঙ্গের অখ্যাত সিরিয়াল ‘বালিকা বধু’ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনও খুঁজে পাবেন।
আপনি কারিশমা, শাবনূর, শাহররুখ খান, সাকিব খান এদের সংবাদ পড়তে পছন্দ করেন বলেই এই সমস্ত সংবাদ আসে। কারন ওরা নায়ক, নায়িকা। ওরা পর্দায় অনেক দুঃসাহসিক অভিযান করে। আমরা এতই অকৃতজ্ঞ যে, আমরা পর্দার নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু বাস্তবের নায়ক নায়িকাদের নিয়ে চিন্তা করি না। ফেসবুকের পাতায় একদিন, দুদিন ‘বাল ফালানো’ স্যালুট দিয়ে আমরা আমাদের চরম স্বার্থপর মনের পরিচয় দেই।
‘ইজাজ উদ্দিন কায়কোবাদ’ নামে ইন্টারনেটে সার্চ দিন। আজ ২৮ এপ্রিল কোন নিউজ পাবেন না। অথচ ২০১৩ সালের এই দিনে আপনারা ‘স্যালুট’ দিতে দিতে ফেসবুকের সার্ভার ভরে ফেলেছিলেন। মনে আছে সেই কায়কোবাদের কথা? আমি জানি, অধিকাংশেরই মনে নেই। তাহলে কেন বলেন ‘মানুষের জন্য যারা জীবন দেয় তারা অমর, কেউ তাদের কখনো ভোলে না’ ? এই সমস্ত বাল ফালানি কথা বলবেন আর অন্তরে পুষে রাখবেন চরম স্বার্থপরতা, আশা করবেন মানুষ ছুটে যাবে মানুষের জন্য, নিজে কিছু না করে অপেক্ষা করবেন অসহায়ের সেবা করবে অন্য মানুষ।
ঢাকার উত্তরায় সেক্টর ১০-এর ১২ নম্বর রোডের ২৮ নম্বর বাড়ির বাড়ির সপ্তম তলার ভাড়া বাসায় স্ত্রী এবং দুই সন্তান মারিয়া আক্তার তিথি (৬) ও তিহাদ চৌধুরীকে (৩) নিয়ে কায়কোবাদের সংসার চলছিল। কায়কোবাদ ঝাঁপিয়ে পড়েন রানা প্লাজার হতাহতদের উদ্ধারের দুঃসাহসী অভিযানে। শেষতক কায়কোবাদ কথা রাখতে পারেননি। সবাইকে উদ্ধার করার কথা ছিল তাঁর। সেই কথাটি তিনি পুরোপুরি রেখে যেতে পারেননি। কথা ছিল সবাইকে উদ্ধার করে প্রিয় স্ত্রী, দুটি শিশুসন্তানের কাছে ফিরবেন তিনি। কিন্তু সেই কথা তিনি রাখতে পারেননি।
সেই উদ্ধার অভিযানের একটি মুহূর্ত ছিল ‘সেই রুদ্ধশ্বাস ১১ ঘণ্টা’। দিনটি ছিল ২৮ এপ্রিল, রোববার। উদ্ধারকর্মীরা তখন জীবন বাজি রেখে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই খবর মেলে শাহীনা নামের এক পোশাককর্মী ধ্বংসস্তূপের নিচে ১০০ ঘণ্টা ধরে লড়ছেন বাঁচার জন্য। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া পোশাকশ্রমিক শাহীনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে রানা প্লাজার আটতলা থেকে সুড়ঙ্গ করে তৃতীয় তলা পর্যন্ত নেমেছিলেন তিনি। সেখানে আটকে পোশাকশ্রমিক শাহীনাকে বোন ডেকেছিলেন। বাঁচানোর ওয়াদা দিয়ে এসেছিলেন তাঁকে। বোনের চলে যাওয়াটা যেন মেনে নিতে পারেননি এই মহাপ্রাণ (ব্রেভহার্ট) ইজাজ উদ্দিন কায়কোবাদ। উদ্ধারে গিয়ে নিজেও দগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন তিনি। ৩০–৩৫ জনকে তিনি একাই উদ্ধার করতে পারলেও শাহীনাকে বাঁচাতে পারেনিনি। শাহীনা ড্রিল মেশিনে সৃষ্ট আগুনে পুড়ে মারা যান। সেই শোকে, কথা দিয়েও কথা না রাখতে পেরে মারা যান কায়কবাদও। না এট শাহরুখ খানের কোন সিনেমার দৃশ্য নয়, এটা সাকিব খানের মত মিথ্যা দুনিয়ার নায়ক নয়। এটা এক বাস্তব নায়কের গল্প।
উদ্ধারকর্মী কায়কোবাদ মানবতার জন্য যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কোনো উপমাতেই, কোনো পুরস্কারেই তার সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তিনি জীবন দিয়ে মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন। দেশব্যাপী আমরা যখন হানাহানি, খুনোখুনি, নোংরা রাজনীতির পঙ্কিলতায় বারবার নিমজ্জিত হচ্ছি, ঠিক তখনই কায়কোবাদ যেন পথ দেখিয়ে গেলেন। হানাহানি নয়, মানুষের জন্যই মানুষ- সেই সত্যটা আবারও প্রতিষ্ঠা করে গেলেন তিনি।
আজ সেই ২৮ এপ্রিল। মিডিয়া কোন কাভারেজ দেয়নি। শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলো তাঁকে নিয়ে দু-কলম লেখাও লেখেনি। অথচ আজ যখন পত্রিকার পাতা খুলি, দেখি, কারিশমার সংবাদ, শাবনূরের সংবাদ, পশ্চিমবঙ্গের কোনো এক অখ্যাত সিরিয়াল ‘বালিকা বধূ’ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন, তখন খুব কষ্ট লাগে। তাদের কাছে কায়কোবাদ আজ বড় নয়, বড় বাণিজ্যিক সিরিয়াল ‘বালিকা বধূ’ , মিথ্যা দুনিয়ার নায়ক-নায়িকারাই তাদের কাছে বড়। বাস্তব দুনিয়ার একজন কায়কোবাদ তাদের কাছে এক হারিয়ে যাওয়া শেষ অধ্যায়।
বাংলা মায়ের বীরসন্তান কায়কোবাদ আপনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, আপনার আত্মা শান্তিতে থাকুক। আপনি আমাদের রানা প্লাজার গহ্বর থেকে উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন, সবাইকে হয়তো আপনি উদ্ধার করতে পারেননি। কিন্তু নিজের প্রাণ দিয়ে অনেককেই উদ্ধার করে গেছেন। এই দেশ যতদিন থাকবে, এ দেশে মানবতা যতদিন থাকবে, কেউ না কেউ আপনাকে স্মরণ করবেই। এ দেশের মিডিয়া আপনাকে স্মরণ করুক আর না করুক।
কেমন আছেন তার স্ত্রী সন্তারেরা ? এ স্বার্থপর দুনিয়ায় মানবতার জন্য কাজ করে যাওয়ারাই বড় অবহেলিত। তবুও কেউ না কেউ মানবতার জন্য কাজ করে যাবে, হয়ত বংশগত কারনে বা মানুষকে সেবার করার এক উন্মাদ নেশা থেকে। কায়কোবাদকে আপনারা মনে রাখুন বা না রাখুন জয় হোক মানবতার। ব্রেভহার্ট কায়কোবাদ, আপনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন।
Related Posts

কোরান কি আসলেই নির্ভুল? বৈজ্ঞানিকরা কি কোরান নিয়ে গবেষণা করেন?
পাকিস্তানের এক তথাকথিত স্কলার একবার জীন দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন নাকি! মোল্লা তারিকRead More

ইসলামের স্বার্থে মিথ্যা, প্রতারনা তথা তাকিয়াবাজি বৈধ !
গবাদিকূল পারেও। জান্নাত জুবাইর নামের এই মেয়ে নাকি বলিউডে অভিনয় করে, আমি জানিনা। ধূর্ত গবাদগুলোRead More

“লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে”
“লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে” তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।Read More
Comments are Closed