Love Story
love story

Love Story

যে বৃষ্টি কখনো থামবে না আর

ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামের অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে।
শিমুল ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছে। আধা ঘন্টার রাস্তা অথচ জ্যামের কারণে ঘন্টা দুই এরই মধ্যে কেটে গেছে। আকাশে মেঘ ডাকছে। বৃষ্টি আসবে হয়তো। আসুক, কতদিন বৃষ্টির গন্ধ নেওয়া হয় না।

ছোট্ট একটা মেয়ে গাড়ির জানালার কাছে এসে বলল, স্যার ফুল নিবেন, গোলাপ ফুল, বেলি ফুল। শিমুল জানালা খুলে দেয়।

– কত দাম?
– বিশ টাকা
– কয়টা আছে তোমার কাছে?

মেয়েটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। তোতলাতে তোতলাতে বলে,
– বারোটা
– সবগুলো নেবো

মেয়েটির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। মায়াভরা হাসি।

নিশি অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, ফোন ঢুকছে না শিমুলের মোবাইলে। এটা বিরক্তিকর, অপেক্ষা করতে ভালোলাগে না, যাওয়ার তাড়া আছে এমনিতে। তাছাড়া বৃষ্টিও পড়ছে খুব করে। অবশেষে লাল রঙের একটা গাড়ি এসে থামলো নিশির সামনে। কিন্তু শিমুলের গাড়ির রং তো কালো। আশ্চর্য। কালো গ্লাসটা খুলতেই চমকে উঠে নিশি, আকাশ ! ভার্সিটি লাইফে ভালো বন্ধু ছিলো দু’জন। অবশ্য নিশির একটু দুর্বলতা ছিলো, ছিল আকাশেরও । কিন্তু কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারতো না কিছু, পিছে যদি ভাল বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে! প্রতিদিন একটি করে গোলাপ দিতো আকাশ। তার বিনিময়ে নিশি মিষ্টি একটা হাসি দিতো। নিশির জন্য সে যে একটা পুরো গোলাপের বাগান করেছে সেটা হয়ত নিশি কখনো জানবে না। বাইরে থেকে দু’জনকে দেখলে মনে হতো একে অন্যকে বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারে না। অথচ ভেতরে জ্বলে পুড়ে একাকার। কতবছর পর দেখা দু’জনের। আকাশ মাথাটা বের করে বলে

– আরে নি তুই এখানে কি করছিস?

নিশি মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে যায় গাড়িটার দিকে।
– শিমুলের জন্য অপেক্ষা করছি
– শিমুল?
– হুম আমার স্বামী
– আরে বাহ্ একেবারে সংসারী হয়ে গেছিস, কিন্তু তোকে দেখলে বুঝা যায় না রে
– তা তোর খবর কি?
– এই তো আছি, ব্যবসা নিয়ে
– বিয়ে করিসনি?
– আরে নাহ্। ভালো মেয়ে কি হাতের মোয়া নাকি যে যখন ইচ্ছে পাওয়া যাবে
– আমি খুঁজে দেবো?
– তা হলে তো উপকার হয়
– কেমন মেয়ে খুঁজবো বল?
– তোর ফটোকপি
– আগে চাইলে অরজিনাল কপিটাই পেয়ে যেতি

আকাশ চুপ হয়ে গেলো নিশির কথায়
– ওহ তোর জন্য একটা গোলাপ আছে
– বলেই গাড়ি থেকে হাত বাড়িয়ে গোলাপটা দিলো আকাশ
– তুই গোলাপ সাথে করেই ঘুরিস
– হুম
– কেন?
– জানতাম তোর সাথে এভাবে হুটহাট দেখা হবে তাই
– পাগল। আগে ছিলাম এখনো আছি। আচ্ছা যাই, আবার দেখা হবে

এতোক্ষণ ভালই লাগছিলো নিশির। হুট করে আকাশ চলে যাওয়াতে কেমন যেন খারাপ লাগছে। মানুষটা কিছু পাল্টালেও ভালোলাগাটা তো আগের মতোই আছে। শিমুলের গাড়ি এসে থামে

– স্যরি লেট হয়ে গেলো, চলো

নিশি শিমুলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
– আজ যাবো না
– কেন?
– শরীরটা ভালোলাগছে না
– আমি এতো কষ্টে করে এলাম আর তুমি….

হঠাৎ চোখ চলে যায় হাতের গোলাপটার দিকে। নিশি এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে ছুটে যায় উপরের দিকে। শিমুল মার্বেলের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। বৃষ্টি বড় বড় ফোটা আকারে পড়তে শুরু করেছে, আজ আর বৃষ্টি থামবে না

Related Posts

999 emergency number

বুগান্ডার জরুরী সেবা 999 নাম্বারের গল্প এটা ! অবিশ্বাস্য সেবার উদাহরণ !

অনেক গল্প আছে, তবে এটা সেগুলোর একটি মাত্র। জরুরী সেবা যে কতভাবে, আন্তরিকভাবে মানুষের সমস্যাRead More

bangabondhu-zia

‘একটি জাতির জন্ম’ – জেলারেল জিয়াউর রহমানের লেখা প্রবন্ধ

‘একটি জাতির জন্ম’ নামে জেনারেল জিয়া ‘দৈনিক বাংলা’ পত্রিকার ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ সংখ্যায় একটিRead More

Are all Books Good

সব বই মানুষকে আলোকিত করে না, আলোকিত করে আলোকিত মানুষ

প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কারের পরে ইউরোপের সেই সময়ের সর্বাধিক পঠিত বই ছিল কিভাবে “উইচ হান্ট” করে-Read More

Comments are Closed