
BCS Mania
বিসিএস ম্যানিয়া এবং একটি জাতির জ্ঞানভিত্তিক সমাজ থেকে পিছিয়ে পড়ার কিছু কথা
কয়েকদিন আগে বি সি এস পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল। পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন ডা. সুবর্ণা। এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিসিএস পরীক্ষার পদ্ধতিগত ত্রুটি। ডাক্তার নিজেদের ক্যাডারে যাবেন, যেমন যাবেন ইঞ্জিনিয়াররা। অন্যান্য বিশেষ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা যাবেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে। তাহলেই রাষ্ট্রের খরচে শিক্ষা নেয়া মেধাবীরা যার যার দক্ষতার জায়গা থেকে মানুষকে সেবা দিতে পারবেন। কেন একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার প্রশাসন, পররাষ্ট্র, পুলিশে যায় সেটা আর কবে ভেবে দেখবে রাষ্ট্র ? ছেলে-মেয়েদের এই অসম দৌঁড়ে কেন শামিল করছে যুগের পর যুগ এদেশের শিক্ষা ও পি এস সি’র পরীক্ষা পদ্ধতি ?
প্রশ্নটি হচ্ছে, সঠিক ব্যক্তি তার সঠিক কাজটি করছেন কিনা। শিক্ষা জীবনের শুরুতেই তো সুবর্ণা ডাক্তারি পড়ে মানবসেবা করবেন বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।২০১৩ সালে সুবর্ণা ডাক্তার হয়েছেন, তারপর এফসিপিএস পার্ট ১ সম্পন্ন করেছেন। প্রায় অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে ডাক্তারি বিদ্যা পড়তে পড়তে কি তাহলে সুবর্ণার মানবসেবার স্বপ্ন ভঙ্গের বাস্তবতা তৈরি হয়েছিলো যে তাকে ২০১৫ সালে এসে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পররাষ্ট্র ক্যাডারে ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে হলো?
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আরো একটি বড় দুর্বলতা সময় ক্ষেপণ। ৩৬ তম বিসিএস-এর পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হয়েছে ১৭ অক্টোবর কিন্তু পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিলো ৩১ মে ২০১৫ সালে। সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) এমন এক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছে যার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আড়াই বছর লেগে যায়। পৃথিবীতে এতো দীর্ঘ মেয়াদি পরীক্ষার নজির আর কোনো দেশে আছে কিনা জানা নেই!
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষে উঠলেই বিসিএস’র জন্য পড়াশোনা শুরু করে দেয়। গাইড বই কিনে দরজা বন্ধ করে সাধারণ জ্ঞান আর ভোকাবিউলারি মুখস্থ করে। শিক্ষার্থীরা ওই বই মুখস্থ করলেই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রিলিতে টিকে যাবে। এসব বইতে লেখা আছে কত কত অজানা তথ্য। ঘোড়াশালে সার কারখানা কবে স্থাপিত হয়েছিলো, বাংলাদেশে পাটকল কয়টি, ইরি আর বিরির এব্রিভিয়েশনসহ নানা অজানা প্রশ্ন। এভারেস্টের উচ্চতা দিয়ে একজন সরকারী কর্মচারীর কাজ কি সেটা বোধগম্য নয়। অবাধ তথ্য প্রবাহের এ যুগে এগুলো মাথায় কেন গেঁথে রাখতে হবে ? সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) এর কর্তাব্যক্তিরা মনে করেন এমন সাধারণ জ্ঞান যাদের রয়েছে তারাই দেশের প্রকৃত মেধাবী। মেধা মূল্যায়নের এমন অলৌকিক পদ্ধতি শুধু বাংলাদেশেই দেখা যায়।
শুধু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি নিরসনেই প্রকৃত সমাধান নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে পড়ছে। যে ছেলেটি পড়তে চেয়েছিলো আইন বা সাংবাদিকতা, সে হয়তো ভর্তি পরীক্ষায় ৫ নাম্বার কম পেয়েছে তাই তার মেধা তালিকায় আইন বা সাংবাদিকতা বিষয়টি বেছে নেওয়ার সুযোগ হয়নি। তাকে পড়তে হচ্ছে রাজনীতি, বিজ্ঞান কিংবা ইতিহাস। এখন ৫/৬ বছর ওই শিক্ষার্থী তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ইতিহাস পড়ে গেলো, আর যিনি আইন বা সাংবাদিকতায় ভর্তি হয়েছিলেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কোনো একটা ব্যাংকে চাকরি নিয়ে নিলেন। ব্যাংকই যদি তার গন্তব্য হবে তবে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের যে ৫/৬ বছর আইন আর সাংবাদিকতায় কেন পড়লো? রাষ্ট্র যে তার পেছনে অর্থ ব্যয় করলো তার কি হবে? এভাবেই এক দুষ্টচক্রে আটকে গেছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।
এ বছর মেডিক্যালে ভর্তিযুদ্ধে প্রথম হয়েছেন মাহমুদ। ৮৩ হাজার ৭৮৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাহমুদুল হাসান প্রথম হয়েছেন। মাহমুদ নিঃসন্দেহে দেশের সেরা মেধাবীদের একজন। সেনাবাহিনীতে চাকরি করার ইচ্ছা ছিলো মাহমুদের। ইন্টার সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড ( আই এস এস বি ) মাহমুদকে যোগ্য মনে করেনি, তাই মাহমুদ এখন ডাক্তার হবার স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছেন। তারই প্রাথমিক সাফল্য মাহমুদের মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ। পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম ডা. সুবর্ণা হয়তো মাহমুদের রোল মডেল, কেননা ডাক্তারি পড়েই তো সুবর্ণা পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন।
আমি জানিনা, শেষ পর্যন্ত মাহমুদের গন্তব্য কোথায় হবে। মাহমুদের মতো হাজারো তরুণ যারা আজ ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য মেডিক্যাল কিংবা বুয়েটে ভর্তি হয়েছে তারা হয়তো দিনশেষে সুবর্ণাদের মতো সুযোগ পেলে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্স, কাস্টমস ক্যাডারেকে বেছে নেবেন। তবে শিক্ষা ব্যবস্থা ও বি সি এস পরীক্ষা পদ্ধতির এই অসঙ্গতি আর ত্রুটি ঠেকানো না গেলে প্রকৃত মেধাবীদের সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে আমরা ব্যর্থ হবো।
[ কৃতজ্ঞতাঃ তানভীর আহমেদ ]
Related Posts

কোরান কি আসলেই নির্ভুল? বৈজ্ঞানিকরা কি কোরান নিয়ে গবেষণা করেন?
পাকিস্তানের এক তথাকথিত স্কলার একবার জীন দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন নাকি! মোল্লা তারিকRead More

ইসলামের স্বার্থে মিথ্যা, প্রতারনা তথা তাকিয়াবাজি বৈধ !
গবাদিকূল পারেও। জান্নাত জুবাইর নামের এই মেয়ে নাকি বলিউডে অভিনয় করে, আমি জানিনা। ধূর্ত গবাদগুলোRead More

“লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে”
“লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে” তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।Read More
Comments are Closed