Crossfire
Crossfire - Why do people support this

Crossfire ! Why do people support this ?

ক্রসফায়ার কে সমর্থন করা একটা অসুস্থ ও ব্যর্থ সমাজের লক্ষন

৫০ বছরে ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠে জনগনের জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠন করেছে আর বাংলাদেশ ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা করা শিখিয়েছে। শিখিয়েছে কিভাবে সম্পদ লুন্ঠন করে নিজের আখের গছিয়ে ভিনদেশে পাড়ি দিতে হবে। শিখিয়েছে কিভাবে অন্যকে অসম্মান করে, অপদস্থ করে, লাঞ্চিত করে তার সম্পদ নিজের করে নিতে হবে।

আমার কাজ সমালোচনা করা। সমস্যা খুঁজে বের করা। সমাধান হচ্ছে একটা জাতির বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ আর নীতিনির্ধারকদের হাতে। অবশ্য বাংলাদেশের এই ৩ শ্রেণিরই লোকজনের মাথায় পঁচন ধরেছে বলে সমাধান অসম্ভব।

=================
১. বাংলাদেশের (এমনকি পুরো ভারতীয় উপমহাদেশের) বেশিরভাগ জনগণই ক্রসফায়ারকে সমর্থন করে। আমি নিজে কথা বলে জেনেছি- দেশের বেশীরভাগ (তথাকথিত) শিক্ষিত, প্রগতিশীল আর রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরাই অভিযুক্ত অপরাধীদেকে পুলিশ কর্তৃক বিনাবিচারে হত্যা করে ফেলার পক্ষে অবস্থান করেন। এমনকি দেশের অনেক শিক্ষক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, শিল্পী, আইনজীবী আর আইনপ্রণেতারাও প্রকাশ্যে বিনাবিচারে মানুষ হত্যাকে সমর্থন করেন।

একটা দেশে বা সমাজে বিনাবিচারে মানুষ হত্যার সংস্কৃতি রাতারাতি চালু হয়ে যায়নি, বা জনপ্রিয়তা পায়নি৷ এর জন্য আমাদেরকে গত ৫ দশক ধরেই ধীরে ধীরে আজকের জায়গায় আসতে হয়েছে। আমাদেরকে প্রথমেই ধীরে ধীরে বর্বর আর নিষ্ঠুর হতে হয়েছে। আমাদেরকে অসহিষ্ণু আর উগ্র হতে হয়েছে৷ আমাদেরকে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মমতা আর শ্রদ্ধাবোধ হারাতে হয়েছে। আমাদেরকে দুর্নীতিবাজ হতে হয়েছে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আর বিচার ব্যবস্থাকে সম্পুর্ন ধ্বংস করতে হয়েছে। আর তারজন্য আমাদেরকে সবার আগে ধ্বংস করতে হয়েছিল দেশের জনগণের মস্তিষ্ক, রুচিবোধ, নৈতিকতাবোধ, বিবেচনাবোধ, – আর তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মাধ্যমে।

পরিবারের শিশুদেরকে বেধড়ক পেটানোকে আমরা শাসন করা হিসেবে দেখেছি, এখনো দেখি।

অসহায় রিক্সাচালক, গৃহকর্মী কিংবা দিনমজুরকে কথায় কথায় চড়-থাপ্পর মারাকে আমরা কখনোই অপরাধ বলে মনে করিনি।
দরিদ্র চোর বা পকেটমারকে পিটিয়ে হাড্ডি ভেঙে দিতে আমাদের মনে এতটুকুও মায়া হয়নি।

খুন বা ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিচারের সম্মুখীন না করেই তাকে গণপিটুনি দিয়ে চোখ আর অন্ডকোষ গেলে ফেলাকে আমরা চর্চা করেছি ন্যায় বিচার হিসেবে।

আমরা এতটাই নির্মম, মস্তিষ্কহীন আর হৃদয়হীন হতে পেরেছিলাম। আমরা গণতন্ত্র, মানবতা, মানুষের অধিকার আর বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আধুনিক আর সভ্য-জ্ঞান হারিয়ে আদিম যুগে পৌঁছে গিয়েছিলাম।

২. যে কোনো দেশে ক্রসফায়ার/এনকাউন্টার/ বিনাবিচারের হত্যার মতো জঘন্যতম অপরাধ জনপ্রিয়তা পাবার পেছনে সে দেশের আইনে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি বলবৎ থাকা অনেক ক্ষেত্রেই দায়ী।

একটু সহজ করে বলি।
বাংলাদেশের আইনে অনেক অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড প্রচলিত আছে। তাই বেশীরভাগ মানুষ সমাজের খুন, ধর্ষণ কিংবা মাদক ব্যবসার মতো অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডকে উপযুক্ত শাস্তি হিসেবে মনে করে। অন্যদিকে, দেশে প্রতিদিন সংগঠিত অপরাধের সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় এবং প্রয়োজনের তুলনায় বিচার ব্যবস্থা অপ্রতুল, ধীর গতির আর দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশের মানুষ সার্বিক বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়েছে স্বাধীনতার পর থেকেই। কিন্তু দেশের জনগণ সমাজের অপরাধের মাত্রায় অতিষ্ঠ আর হতাশ হয়ে দ্রুত বিচার কার্য দেখতে চায়। তাই তারা চায়- কোনো অভিযুক্ত অপরাধী গ্রেফতার হবার সঙ্গে সঙ্গেই কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তার তাৎক্ষণিক বিচার করে ফেলুক। অর্থাৎ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর গুলি করে মেরে ফেলা হোক।

অথচ, ক্রসফায়ারের সমর্থক এই বিরাট সংখ্যক জনগণকে আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে যে, অভিযুক্ত অপরাধীর বিচার করা পুলিশের কাজ নয়, রাষ্ট্রের আদালতের কাজ, এবং তা করতে হয় সুনির্দিষ্ট আইন মেনে, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবং বিচার প্রকৃয়ার মাধ্যমে। বিশাল জনগণ এটাও ভাবে না যে, পুলিশের উপর অপরাধীর বিচারের দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে দেশে আর কেনো আইন-আদালত আর বিচার ব্যবস্থারই প্রয়োজন থাকে না। সেক্ষেত্রে দেশের শত শত আদালত, হাজার হাজার বিচারক আর লক্ষ লক্ষ আইনজীবীরা সব মূল্যহীন এবং অপ্রয়োজনীয়। বিনাবিচারে হত্যার সমর্থন দেশের এই বিরাট সংখ্যক জনগণক কখনো ভাবে না- সামান্য মাদক ব্যবসা বা চোরাচালান করার অপরাধে যে মানুষটার ১, ২ বা ৫ বছরের জেল হবার কথা, রাষ্ট্রের এই বর্বর আর নিষ্ঠুরতম সংস্কৃতি তাকে হত্যা করে ফেললো। তার পরিবার আর সন্তানদেরকে পিতৃহারা করে দিলো।

৩. দেশের বর্তমান বিনাবিচারে মানুষ হত্যার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হলে আমাদেরকে আরো মানবিক মানুষ হতে হবে। আমাদের মানবতাবোধ আর মানুষের প্রতি ভালোবাসাকে জাগ্রত করতে হবে। দেশে গনতন্ত্র আর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এই সবকিছুর আগে, এই সবকিছুর মূলে আমাদেরকে প্রথমেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করে তাকে আধুনিক আর মানবিক করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ, উপরের কথাগুলো একটা সভ্য দেশের শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখার বিষয়। তারপর আরো ৫ দশক পরে আমাদের সন্তানেরা হয়তো একটা আধুনিক, সভ্য আর মানবিক রাষ্ট্র এবং সমাজ দেখে যেতে পারবে। বিনাবিচারে মানুষ হত্যার আজকের ঘটনাগুলো সেদিনের প্রজন্ম লজ্জাজনক আর কলঙ্কিত ইতিহাস হিসেবে পড়বে।

[ ওমর ফারুক লুক্স ]

Related Posts

Islamic Injustice to Women

শরীয়া আইনের এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত, নারীর প্রতি ইসলামের অবিচার!

মর্মান্তিক আর হৃদয়বিদারক একটা ঘটনা ২০০৪ সালের, এবং এটা ঘটেছিল ইরানে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামীRead More

Meaning of Life

মানুষের পৃথিবীতে আসার মূল উদ্দেশ্য কি ?

অনেক মানুষই এই প্রশ্নে ঘুরপাক খায়। এই ঘুরপাক খাওয়ার দোলাচলে তারা একপর্যায়ে তাদের মাথায় পরিবারRead More

LGTBQIA2S+ Rights

Thinking about that evening still gives me goosebumps

From the beginning of this month, metro trains are full of passengers after 10/11 pm.Read More

Comments are Closed