Are all Books Good

Are all Books Good ?

সব বই মানুষকে আলোকিত করে না, আলোকিত করে আলোকিত মানুষ

প্রিন্টিং প্রেসের আবিষ্কার মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৫ শতকের মাঝামাঝি গুটেনবার্গের ছাপাখানা ইউরোপে জ্ঞানের বিপ্লব ঘটালেও তার প্রাথমিক ফলাফল ছিল অন্ধবিশ্বাস ও সহিংসতার বিস্তার। সেই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় বই ছিল উইচ হান্ট সংক্রান্ত নির্দেশিকা, যেখানে “জাদুকরী” নারীদের চিহ্নিত করে হত্যা করার পদ্ধতি বর্ণিত ছিল। Malleus Maleficarum নামক বইটি ১৪৮৭ সালে প্রকাশিত হয় এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইউরোপে নারীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই বইটি এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে, আইন, ধর্ম ও সমাজ একত্রে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাতে শুরু করে। অথচ এই ইউরোপই পরবর্তীতে আলোকিত মানুষের নেতৃত্বে রেনেসাঁ, এনলাইটেনমেন্ট ও বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের পথে এগিয়ে যায়।

অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে হিটলারের “মাইন ক্যাম্ফ” বইটি একাধিকবার আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সময় তা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ১৯৩৩ সালে ইরাকে প্রথম অনুবাদ প্রকাশিত হয়, এরপর ফিলিস্তিন, মিশর, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে বইটি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে লন্ডনে প্রকাশিত একটি আরবি সংস্করণও ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। এই বইয়ে ইহুদি জাতির বিরুদ্ধে ঘৃণা, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা প্রচার করা হয়। আরব বিশ্বের কিছু অংশে এই বইয়ের জনপ্রিয়তা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উগ্রতার সঙ্গে যুক্ত ছিল, যা মানবিকতা ও সহনশীলতার পরিপন্থী।

এই দুই ঐতিহাসিক উদাহরণ আমাদের শেখায় যে সব বই মানুষকে আলোকিত করে না। বই যদি অন্ধকারের বীজ বপন করে, তবে তা সমাজে ঘৃণা, সহিংসতা ও পশ্চাৎপদতা ডেকে আনে। আলোকিত মানুষই কেবল আলোকিত বই লিখতে পারেন, যা অন্যকে জ্ঞানের পথে পরিচালিত করে।

বাংলাদেশের বই ও পাঠক সমাজ এই দুই ঐতিহাসিক ধারার সঙ্গে তুলনীয়। দেশের বেস্টসেলার বইগুলোর তালিকা দেখলে হতাশ হতে হয়। রান্না শেখার বই, বাসী মোটিভেশন, “১০ দিনে সফলতা”, “কিভাবে ধনী হবেন” জাতীয় বইগুলোই বাজারে রাজত্ব করছে। এগুলোতে নেই কোনো গভীরতা, নেই কোনো মানবিক বা বৈজ্ঞানিক চিন্তার অনুপ্রেরণা। বরং এগুলো মানুষকে অলস, অলৌকিক ও অযৌক্তিক চিন্তার দিকে ঠেলে দেয়। অপবিজ্ঞান ও কুযুক্তির বইগুলো তরুণদের বিভ্রান্ত করছে, যেখানে যুক্তি ও প্রমাণের চেয়ে বিশ্বাস ও আবেগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

আরও ভয়ংকর বিষয় হলো, কিছু বই ঘৃণা চাষে ব্যস্ত। ধর্মীয়, জাতিগত বা রাজনৈতিক বিভাজনকে উসকে দিয়ে এসব বই মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। “আমরাই শ্রেষ্ঠ”, “পৃথিবীকে শাসন করতে হবে”, “অন্যদের ঘৃণা করো” – এই জাতীয় বার্তা দিয়ে বইগুলো অন্ধকারের শক্তিকে শক্তিশালী করছে। অথচ এই জাতিগুলো শিক্ষা ও বিজ্ঞানে শত বছরের পশ্চাৎপদ। তারপরও তারা শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করে, যা একধরনের আত্মপ্রবঞ্চনা।

এই ট্রেন্ড দিন দিন বাড়ছে। বইমেলা, অনলাইন মার্কেটপ্লেস, স্টল – সব জায়গায় একই চিত্র। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বইগুলো কোণঠাসা, আর সস্তা মোটিভেশন বা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বইগুলো বেস্টসেলার। এর ফলে দেশের পাঠক সমাজ পশ্চাৎমুখী হয়ে পড়ছে, যেখানে পৃথিবী এগোচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক্স, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা, আন্তঃনাক্ষত্রিক গবেষণার দিকে।

বিগত কয়েক বছরে, বিশেষ করে করোনাকালে, ৭০ উর্ধ্ব অনেক প্রগতিশীল কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী মারা গেছেন। তাদের মৃত্যু শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং একটি যুগের অবসান। তারা ছিলেন মানবিকতা, যুক্তিবাদ, প্রগতিশীলতার প্রতিনিধি। এখনকার লেখক-শিল্পীদের অনেকেই জনপ্রিয়তার লোভে অন্ধকারের শক্তির সঙ্গে আপস করে চলেছেন। তারা জানেন, যুক্তিবাদী বা মানবিক বার্তা দিলে বিক্রি কম হবে। তাই তারা ঘৃণা, বিভাজন, অলৌকিকতা ও আবেগের উপর ভর করে লিখছেন।

এখন আলোর সংজ্ঞা বদলে গেছে। আধুনিক বিজ্ঞান, মানবিকতা, যুক্তিবাদ – এসব এখন সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে “আলো” নয়। বরং যারা ঘৃণা ছড়ায়, বিভাজন ঘটায়, অলৌকিক গল্প বলে, তারাই জনপ্রিয়। এই প্রবণতা শুধু সাহিত্য নয়, সমাজের মনন ও মূল্যবোধের সংকটকে তুলে ধরে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো আলোকিত মানুষের উত্থান। যারা যুক্তিবাদী, মানবিক, বৈজ্ঞানিক চিন্তায় বিশ্বাসী, তাদেরই বই লিখতে হবে। পাঠকদেরও সচেতন হতে হবে, কোন বই তাদের আলোকিত করছে আর কোন বই অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। বই শুধু বিনোদন নয়, তা মনন গঠনের হাতিয়ার। তাই বই নির্বাচন ও পাঠে সচেতনতা জরুরি।

Related Posts

999 emergency number

বুগান্ডার জরুরী সেবা 999 নাম্বারের গল্প এটা ! অবিশ্বাস্য সেবার উদাহরণ !

অনেক গল্প আছে, তবে এটা সেগুলোর একটি মাত্র। জরুরী সেবা যে কতভাবে, আন্তরিকভাবে মানুষের সমস্যাRead More

bangabondhu-zia

‘একটি জাতির জন্ম’ – জেলারেল জিয়াউর রহমানের লেখা প্রবন্ধ

‘একটি জাতির জন্ম’ নামে জেনারেল জিয়া ‘দৈনিক বাংলা’ পত্রিকার ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ সংখ্যায় একটিRead More

Satire: Mr Katemul

লাঠিয়াল সরদার কাতেমুল সাহেবের সব স্ত্রীর একটাই নাম মাহিমা খাইয়েতা

লাঠিয়াল সরদার কাতেমুল সাহেবের আজ জেল থেকে মুক্তির দিন। জেলার জিজ্ঞেস করলেন ‘যিনি আপনাকে রিসিভRead More

Comments are Closed