BNP
15 February 1996 Election

15 Feb 1996 BNP Election

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন – বি এন পি যেভাবে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছিল

২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভভুত্থানের আগে ১৯৯০ সালে ছাত্র জনতার ত্যাগের বিনিময়ে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তাকে কবরস্থ করার কফিন তৈরি করেছিল বি এন পি, আওয়ামী লীগ সেটাকে পেরেক মেরে কবরস্ত করেছে। ভুলে গেলে চলবে না। গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি আওয়ামী লীগ একাই এই পথে আসেনি, বি এন পি’র দায়ও কম না, বি এন পি পথ তৈরি করে দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সেই পথে এগিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে।। শেখ হাসিনা ২০০১ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা ছেড়েছিল, এটাও ইতিহাসের অংশ। ২০০৬ সালেও বি এন পি পাতানো নির্বাচনের খেলা খেলতে চেয়েছিল। ২০০১-২০০৬ জামানায় তারাও মাঝারি মানের ফ্যাসিজম কায়েম করেছিল, তাদের কত কুকীর্তি ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যাবে; ২০০৯-২০২৪ এ আওয়ামী লীগ সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রমানিত ফ্যাসিস্ট, গনহত্যাকারী। তবে ২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পরেও বি এন পি চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজিতে সমানে এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য বি এন পি’র আমলনামাও মেলে ধরা জরূরী, তারা কারা, তারা কী করেছিল এবং এখন করছে। জনগণের সামনে সুযোগ এসেছে আওয়ামী লীগ ও বি এন পি’র বাইরে নতুন কিছু ভাবার। এই দুই দলই লুটেরা, বাটপাড়, লুম্পেন, গণতন্ত্রের শত্রু; কেউ মাঝারি আর কেউ চ্যাম্পিয়ন। সেজন্য সাধারন মানুষ আওয়ামী লীগের জামানায় দীর্ঘদিন ধরে সীমাহীন নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হওয়ার পরেও বি এন পি’র ডাকে রাস্তায় নামেনি।

BNP 1996 Election

ফিরে দেখা ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনঃ বিএনপি যেভাবে দলীয় সরকারের অধীনে জোরপূর্বক সব দলকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত ও একতরফা সংসদ নির্বাচন আয়োজন করেছিল!

গতকাল ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৬ সালের এইদিনে তথা ১৫ ফেব্রুয়ারি সকল বিরোধীদলের বর্জন ও প্রতিরোধের মুখে গায়ের জোরে লোক দেখানো নির্বাচন করে বিএনপি। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ৪৮টি আসনে ভোট গ্রহণের আগেই ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে যে কয়েকটি একতরফা এবং বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এই ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলনের আন্দোলনের পটভূমিতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ছিল সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রচলন করা, যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব রকমের সহায়তা দেবে। প্রতিচিন্তা ম্যাগাজিনে ৩রা এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান লিখেছিলেন যে প্রথমবারের মতো অনির্বাচিত ব্যক্তি সমন্বয়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছিল জামায়াতে ইসলামী। দলটির মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামকে উদ্ধৃত করে তিনি লেখেন, ১৯৮৩ সালে জামায়াত এক জনসভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ফর্মুলা দিয়েছিল।

ওই সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। দাবি আগে উঠলেও ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের সকল সংসদ সদস্যরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে তীব্র এক আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন, সংঘাত এবং সহিংসতার ভেতর দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায় তৎকালীন সরকার।

প্রধান সব রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিএনপি সরকারের অধীনে একটি একতরফা এবং বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনটি কেবল একতরফাই ছিল না, সেটি বেশ সহিংসও ছিল। ১৯৯৬ সালের নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের আগের দিন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পাঁচ কোটি ভোটারের মধ্যে বেশিরভাগই ভোট দেননি। নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ১০ শতাংশের কম হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ৪৮টি আসনে ভোট গ্রহণের আগেই ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি পেয়েছিল ২৮৯টি আসন। ওই সংসদে আনুষ্ঠানিক কোন বিরোধীদল ছিল না, কিন্ত একটি আসন পেয়ে বিরোধী নেতার চেয়ারে বসেছিলেন ফ্রিডম পার্টির সৈয়দ ফারুক রহমান। বাকি ১০টি আসন পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে সব সময়েই ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আয়োজনের রাজনৈতিক যুক্তি দেয়া হয়। ২০১২ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দলটির সিনিয়র নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছিলেন, এক রকম ঝুঁকি নিয়েই নির্বাচনের পথে এগিয়েছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে তৎকালীন বিএনপি সরকার ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং সংবিধান রক্ষা’ করেছিল বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপির এই স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় বিরোধীদল বিহীন নির্বাচনের সুযোগে নানা দিক থেকে আন্দোলন তীব্রতর হয়েছিল তখন, এর ফলশ্রুতিতে মাত্র দেড় মাসের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৩০শে মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরামর্শে সংসদ ভেঙ্গে দেন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস। পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। বর্তমান আম্লিক ও সেকাচিনার শত অপকর্ম, সমালোচনা থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে তারাই একমাত্র ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল বা করতে পেরেছিল – এটাও ইতিহাসের অংশ।

Related Posts

Fascist Sheikh Hasina

স্বৈরাচার যখন দানব হয়ে যায় তখন মানুষের লাশের গন্ধ তাদের কাছে প্রিয় হয়

আমি আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের কমিটির কখনোই কেউ ছিলাম না, এখনো নেই। আওয়ামী লীগ বাRead More

Israel, Palestine and Islam

Crimes against humanity in Israel-Palestine and the inhumanity of Islam

I occasionally speak with a fairly wealthy American who is of British origin. The gentlemanRead More

Israel, Palestine and Islam

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও ইসলামের অমানবিকতা

একজন মোটামুটি সম্পদশালী আমেরিকানের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হয়, ব্রিটিশ অরিজিন। ভদ্রলোকের অনেক বয়স, যদিওRead More

Comments are Closed