Valentine
Different Valentine Day

Different Valentine Day

অন্যরকম ভ্যালেন্টাইন ডে ! এটা কি ঠিক নাকি বেঠিক ?

ভ্যালেন্টাইন ডে, নিউ ইয়ার, বাংলা নববর্ষ এসব হারাম ঘোষনা করা একটা দেশে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা অকারনে মায়ের পা ধুয়ে দিচ্ছে ভ্যালেন্টাইনে – এমন উদ্ভট ও হাস্যকর আয়োজন খুব জনপ্রিয়তা পায়। একটা বাচ্চা অকারনে একজন মানুষের পা ধুয়ে দিচ্ছে, এতে মহত্ত্বের কি আছে, এতে শেখার কি আছে, এতে গর্বের কি আছে ? বরং এগুলো বাচ্চাদের সুষ্ঠ বৃদ্ধির অন্তরায়, তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় বাবা-মা তার প্রভু, তার চেয়ে অনেক বেশী অধিকারপ্রাপ্ত। বরং বাচ্চাদের শেখানো দরকার কিভাবে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে হবে, কিভাবে জং ধরা সমাজের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও প্রথাকে সরিয়ে দিয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানমুখী সমাজ নির্মান করতে হবে। বাচ্চারা যেনো সেই সাহস ও শুদ্ধতা সঞ্চয় করতে পারে যাতে তারা তাদের জন্মদাতা বাবা মা’কেও প্রশ্ন করতে পারে তার আয়ের উৎস সম্পর্কে।

মানুষের শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ, সবগুলোই পবিত্র। হাত, পা, মাথা, পাছা সব সমান পবিত্র। সবার কাজ নির্দিষ্ট। কারো পা’য়ে হাত দিয়ে বা পা ছুঁয়ে সালাম করে বোঝানো হয় তার পা’কে সে মাথায় তুলে রাখে। আমাদের ছোট থেকেই শেখানো হয় কাগজে, বইয়ে, কলমে, টাকায়, খাবারে, কোন মানুষকে ভুল করেও পা দিয়ে স্পর্শ করতে নেই। স্পর্শ হয়ে গেলেও কাগজ, বই, কলম, মানুষের কাছে এ্যাপোলজি চাওয়া হয়। কি বুলশীট ! আপনি বাম হাত দিয়ে কিছু নিতে পারবেন না, আপনার ডান হাতে কোন ভারী বস্ত থাকলেও না, আর বয়সে বড় কারো কাছ থেকে তো প্রশই উঠেনা। এ সমস্ত বুলশীট অচলায়তন ভাংতে হবে।

এই সমস্ত বাল-ছাল কে নৈতিক শিক্ষা হিসাবে পরিচিত করিয়ে বাচ্চাদের মূল নৈতিক শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। যে শিশুটি আজ অনুষ্ঠানের স্বার্থে অপ্রয়োজনে তার মা’য়ের পা ধুয়ে দিচ্ছে সে হয়তো বড় হয়ে কোন এক মা’য়ের পায়ের ঘা দেখে নাক সিটকাবে। বাবার সমপদে কর্মরত এক কলিগের ছেলে সাইকেল চেপে স্কুলে আসে, সে আসে গাড়িতে, তার বাবা এটা কিভাবে সম্ভব করলো এই প্রশ্ন মনে জাগার সুযোগ তার হবেনা কোনদিন। তাকে শেখানো হবে কলম নীচে পড়ে গেলে পা দিয়ে তোলা যাবেনা, এগুলোই নৈতিকতা, এগুলোই ভদ্রতা। একটি শিশু তার বিশ্বাস, তার দেশ, তার জাতি নিয়ে খুবই সংকীর্ণমনা হয়ে তৈরি হয় এই সমাজের কারনে। তার ধারনা হয় তার বিশ্বাসই শ্রেষ্ঠ, তার দেশ শ্রেষ্ঠ, তার জাতিই বিশ্বের সেরা। বিশ্বের সকল মানুষকে সমান চোখে দেখা তার আর হয়ে উঠেনা।

[ Image Source: Bangla Tribune ]

এদেশের বাবা-মায়েরা সন্তান জন্ম দিয়ে ভাবে তারা ঐ সন্তানদের প্রভু। সন্তান জন্ম দিয়ে তারা খুবই শ্রেষ্ঠ কাজ করেছেন। এখন সারাজীবন ঐ সন্তান তার খেয়াল খুশী অনুযায়ী চলবে, তার হুকুম তামিল করবে, শেষ বয়সে সন্তানের উপর ভর করে চলবে। এজন্য ঠিকমতো দাঁড়াতে শেখার আগেই শরীরের ওজনের চেয়ে বেশী ওজনের বইয়ের ব্যাগ চাপে শিশুর কাঁধে, শিশু কখন স্কুলে যাবে, কখন গানের ক্লাসে, কখন নাচে, কখন ড্রয়িং সব ঠিক করে দেয় বাবা-মা। সাইন্স নাকি আর্টস, ডাক্তার নাকি ইঞ্জিনিয়ার সব হয় চাপিয়ে দেয়া। প্রেম করা যাবেনা, বিয়েও বাবা-মা’য়ের সিদ্ধান্তে। বাবা-মা সন্তান জন্ম দেন, এখানে তাদের স্বার্থটাই বেশী। যে সন্তান পৃথিবীতে আসে সে তার জন্মের জন্য, তার বড় হওয়ার জন্য বাবা মায়ের উপর নির্ভর করে থাকবে, কারন এটা তার অধিকার। বাবা-মা ও রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানদের বড় করা। এই বড় করার জন্য সন্তানকে সারাজীবন বাবা-মায়ের পা মাথায় নিয়ে ঘুরতে হবে ? এই সেকেলে মানসিকতা আর কতদিন ? সন্তানও মানুষ, শিশুরও অনেক ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে।

একটি শিশু প্রয়োজনে তার মা’য়ের পা পরিষ্কার করে দিতে পারে, সে বড় হয়েও তার বৃদ্ধা মা’য়ের পা ধুয়ে মুছে ছাপ করে দিতে পারে মা’য়ের অক্ষমতায়। তাই বলে এই সমস্ত কাজে একটি শিশুকে আয়োজন করে বাধ্য করা শিশুদের সুন্দর শৈশব পাওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধার সামিল। এই সমস্ত উদ্ভট নৈতিক শিক্ষাকে লাথি দিয়ে বিদায়ের সময় চলে যাচ্ছে।

Related Posts

Religious Fanaticism Examples

এই ধর্মীয় উন্মাদনা এখনি থামাতে হবে, সভ্যতার পথে হাঁটুন

বাংলাদেশের সমাজটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে বিগত ২০/৩০ বছরে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে জঘন্য অনুঘটক ছিলRead More

india pakistan bangladesh

Under the cover of development, the real image of India, Pakistan, and Bangladesh

India has sent a spacecraft to the moon and successfully landed there. There is noRead More

india pakistan bangladesh

উন্নয়নের আড়ালে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের প্রকৃত করুন চিত্র

ভারত চাঁদে নভোযান পাঠিয়েছে এবং সেটা সেখানে সফল অবতরণও করেছে। ভারতের এতে গর্বের সীমা নেই,Read More

Comments are Closed