Farming
The Sad Reality of Bangladeshi Farming

The Sad Reality of Bangladeshi Farming.

বাংলাদেশের কৃষকের কান্না থামানোর মতো কেউ নেই, সবাই শুধু তাদের ব্যবহারই করে !

বাংলাদেশে কৃষকদের কান্না কখনোই থামে না। এর নানাবিধ কারন আছে। প্রয়োজনের তুলনায় অত্যধিক জনসংখ্যা সবচেয়ে বড় কারন। এরপরের কারন কৃষকদের জন্য ভাবার মতো মানুষ দেশের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে কেউ নেই। শুধু কৃষক নয়, আমরাও কাঁদি, আমাদেরও অসম ব্যবস্থাপনায় টিকে থাকার যুদ্ধ করতে হয় প্রতিদিন।

দুইমাস আগেও ঢাকায় ১ কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ১২০-১৮০ টাকায়। সেই ১ কেজি টমেটো এখন ১০ টাকা কেজিতে নেওয়ার জন্য গতকাল আমাকে একজন সাধল। তাহলে এই টোমেটো কৃষক বিক্রি করেছে কত করে ? সর্বোচ্চ ২/৩ টাকা দামে।

পেঁয়াজ, আলু চাষে কৃষক লোকসান দিচ্ছে। এগুলো সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই। সরকার দেশের উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্ধ রাখে ঢাকা শহরের জন্য ! ২/৩ গুণ বেশী খরচ করে অপরিকল্পিত উড়ালসড়ক, হ্যান, ত্যান সব ঢাকাতে। অথচ এই খরচের বেশীরভগই মেটাচ্ছে দেশের কৃষকরা।

কৃষি উৎপাদনে কোন সঠিক পরিকল্পনা নেই। জাত উন্নয়নের গবেষণা থাকলেও মাঠের উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোন গবেষণা নেই। কৃষি বিভাগ ফসল চাষ ও উৎপাদনের যে পরিসংখ্যান দেয় তা মনগড়া। গ্রামে কৃষি বিভাগের কর্মীদের তেমন কারো সক্রিয় দেখা যায় না, তথ্য, উপাত্ত, পরিসংখ্যান বানায় ঘরে বসে। এজন্য কোন ফসল কতটা দরকার, কোন ঋতুতে দরকার এসবের কোন দিকনির্দেশনা নেই। এই দেশে অকর্মা শত শত প্রশাসক তৈরি হলেও নেই কোন গবেষক। গবেষক ও গবেষণা ছাড়া একটি দেশের মানুষ ভাল থাকতে পারে না। এজন্য দেখবেন, ইউরোপ আমেরিকা বড় বড় স্কলারশীপ দিয়ে আমদের মতো দেশ থেকে স্কলারদের নিয়ে যায় স্রেফ তাদের দেশের কাজে লাগবে এমন গবেষণা করার জন্য। এই দেশে নিয়োগ, বদলী, মাথার উপরে ছড়ি ঘোরানো, স্যার ডাক শোনাকেই সবাই চাকুরি ও কাজ হিসাবে মনে করে। নেই কোন সৃজনশীলনা, নেই কোন গঠনমূলক কাজ।

ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ফসল উৎপাদনের গবেষণা যেমন অপ্রতুল তেমনি যেটুকু সফলতা এসেছে তাকে কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এজন্য সবজির প্রায় সব শীতকালীন। একসঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টমেটো, মূলা, আলু উৎপাদন হয় প্রায় প্রতিবছর। এজন্য কৃষক নায্য মূল্য পান না। অথচ বছরব্যাপী এগুলো চাষের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষকও নায্য দাম পেতো, আমদেরও অন্য ঋতুতে গলাকাটা দামে কেনা লাগতো না।

গ্রামে এখন কৃষি শ্রমিকের তীব্র সংকট। দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রবাসী যাদের বেশীরভাগই একসময় কৃষিতে কাজ করতেন। বাকী যারা কৃষিতে নিয়োজিত ছিলেন তারা দিনের পর দিন লোকসান গুনতে গুনতে আয়ের নানান অবৈধ পথ বেছে নিয়েছেন। গ্রামে এখন প্রচুর রাজনৈতিক নেতা, কর্মী যারা কোন কাজই করে না। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা-গোতাদের সঙ্গে দালালি করে, চাঁদাবাজি করে তারা চলে, আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। কৃষিতে চড়া মূল্য দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশের কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেশী। কৃষি শ্রমিকের সংকটের কারনে শ্রমিকের চড়া মূল্য প্রধান কারন। এজন্য উন্নত জাত ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে উৎপাদন করা না গেলে উৎপাদন খরচ কমবে না। আবার আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারও খুব বেশী সম্ভব না। অধিক জনসংখ্যার কারনে কৃষি জমি ভাগ হতে হতে এখন কারো কারো ভাগে জুটেছে ১ কাঠা, ২ কাঠার মতো প্লট। একটা বড় কৃষি যন্ত্র সেখানে চালানো যেমন সম্বভ না তেমনি সেটা লাভজনকও হবে না। এখানে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে সমবায় সমিতি করে সব ছোট ছোট প্লট ভেঙে বড় জমির সৃষ্টি করে আধুনিক পদ্ধতিতে, উন্নত জাত ও যন্ত্রের ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে হবে। এর বিকল্প নেই।

বলা হচ্ছে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করে দিলে কৃষক নায্য দাম পাবে। কিন্তু ক্রেতাকে তো আবার অনায্য দামে কিনতে হবে। ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকায় পেলে তিনি কেন ২০ টাকা বেশী দিয়ে দেশী পিঁয়াজ কিনবেন ? সবারই তো জীবনযুদ্ধ আছে, হিসাব করে চলতে হয়। মানুষ যেটা কমে পাবে সেটাই কিনবে। দেশী-বিদেশী কেউ হিসাব করবে না। যেটা কম দামে পাবে সেটাই কিনবে। সেজন্য যেটা দেশে উৎপাদন খরচ বেশী সেটা চাষ কমিয়ে দিতে হবে বা বাদ দিতে হবে। বিশ্বে অনেক দেশ আছে যারা নিজদের শত শত বর্গ কিলোমিটার কৃষি জমি ফেলে রেখে বিদেশ থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করে। তারা কি না ভেবে, না বুঝেই এটা করে ? তাদের দেশে উৎপাদন খরচ বেশী পড়বে বলেই তারা তা উৎপাদন করে না। তেমনিভাবে ভারতে কোন জিনিস কমে পাওয়া গেলে ক্রেতা কেন সেটা কিনতে চাইবে না ? দেশে উৎপাদন খরচ কমিয়ে ভারতের সমান করতে হবে। ভারতের মাটি তো আমদের চেয়ে বেশী উর্বর বলে মনে হয় না। তারা পারলে আমরা পারি না কেন ? কারন এখানে নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে কারো সদিচ্ছা নেই। টয়লেট বানানো শিখতে কর্মচারীরা বিদেশ যেতে পারলে কৃষি উৎপাদনের কৌশল জানতে কেন যায় না ? কৃষককে নিজের ভাগ্য নিয়ে ভাবতে হবে। তার জন্য দেশ ভাবে না, সে কেন মিথ্যা দেশপ্রেমের মোহে আবিষ্ট হয়ে লোকসান দিয়ে দিনের পর দিন দিয়েই যাবে ? সেজন্য যে ফসলে কৃষক নায্য দাম পাবে না সেটার উৎপাদন বাদ দিয়ে অন্যকিছু চাষে ঝুঁকতে হবে। দেশপ্রেম, দেশীয় জাত রক্ষার বুলি আওড়াতে বলবে অনেকে কিন্তু কৃষক শেষ জীবনে চিকিৎসার অভাবে মারা গেলে কেউ তার চিকিৎসা করিয়ে দিবে না।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিঘার পর বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর কেটে কৃষক মাছ চাষ করা শুরু করছে বা মাছ চাষের জন্য লীজ দিচ্ছে। এটাই অর্থনীতি। ফসলের দাম নেই, কি করবে ? তবে ফসলের দাম নেই বলতে চাই না আমি, আমি বলতে চাই উৎপাদন খরচ বেশী। বাঁচতে হলে নিজেকেই নিজের পথ করে নিতে হবে। কৃষকের কান্না দেখে অনেকেই সহানুভূতি দেখাবে, মায়াকান্না কাঁদবে কিন্তু দিনশেষে মধ্যসত্ত্বভোগীদের ২/৩ গুণ বেশী দিয়ে সস্তা মূলাই সবাই কিনবে। এটা বাস্তবতা। রংপুরে এক কৃষক মূলার নায্য দাম না পেয়ে, ভ্যান ভাড়া দেওয়ার ভয়ে সব ফেলে পালিয়ে যাবে, অন্যদিকে ঢাকায় কৃষি সম্প্রসারনের এক বড় কর্তা বা বাণিজ্যের এক বড় কর্তা পাঁচ তারকা হোটেলে ছেলে-মেয়ের জন্মদিনে খরচ করবে লক্ষ টাকা। আপনি, আমি তো এই নিয়ম বদলাতে পারবো না, সেজন্য যা করার নিজেকেই করতে হবে নিজের স্বার্থে। যেটা লাভজনক সৎপথে থেকে সেটাই খুঁজে নিতে হবে। এর বিকল্প নেই।

ঘাটে ঘাটে আছে চাঁদাবাজি। তিন, চার হাত ঘুরে, তিন, চার পর্যায়ে চাঁদা দিয়ে কৃষিপণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে। এই চাঁদাবাজ, মাস্তাননদের পোষে কারে ? রাজনৈতিক নেতারা। আর এই চাঁদাবাজ মাস্তানদের কারনে ২/৩ ভাবে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ে। কৃষক মূল্য পায় না, কিন্তু ক্রেতা কেনে ৩/৪ গুণ বেশী দামে। চাঁদাবাজি, দালালি, মাস্তানিতে লোক জড়িত হয়ে যাওয়ার কারনে কৃষি শ্রমিক কমছে, আবার অন্যদিকে চাঁদাবাজির কারনে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ছে ক্রেতার কাছে। এজন্য রাজনীতির লোকজন যতদিন কৃষকের ভাল না চাইবে ততদিন এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

বাংলাদেশে জীবন যাপনের ব্যয় অনেক বেশী। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে বেশী তো বটেই! অকারনে এখানে অনেক কিছুতে বাড়তি অর্থ গুণতে হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এজন্য দায়ী। এই অভিশাপের শিকার শহর, গ্রামের সব মানুষ। কৃষকও এর বাইরে নয়। এজন্য কৃষককেও এখন বাড়তি আয়ের চিন্তা করতে হয়। তিনি যেহেতু কৃষি কাজ ছাড়া অন্যকিছুতে দক্ষ নন সেহেতু তার ফসলের দাম দিয়েই সেই খরচ তোলার চেষ্টা করতে হয়। বাড়তি জীবনযাত্রার ব্যয়ের প্রধান কারন সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, আইনের শাসনের অভাব। রাষ্ট্র যদি এই বিষয়গুলোর উন্নয়নে তার দক্ষতা দেখাতে পারে তবে কৃষকের কান্না কমে যাবে সহসাই, আমাদের কান্নাও চলে যাবে।

সংশ্লিষ্ঠ একটি সংবাদঃ https://tinyurl.com/2db9arth

Related Posts

Islamic Injustice to Women

শরীয়া আইনের এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত, নারীর প্রতি ইসলামের অবিচার!

মর্মান্তিক আর হৃদয়বিদারক একটা ঘটনা ২০০৪ সালের, এবং এটা ঘটেছিল ইরানে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামীRead More

Meaning of Life

মানুষের পৃথিবীতে আসার মূল উদ্দেশ্য কি ?

অনেক মানুষই এই প্রশ্নে ঘুরপাক খায়। এই ঘুরপাক খাওয়ার দোলাচলে তারা একপর্যায়ে তাদের মাথায় পরিবারRead More

LGTBQIA2S+ Rights

Thinking about that evening still gives me goosebumps

From the beginning of this month, metro trains are full of passengers after 10/11 pm.Read More

Comments are Closed