Science
Religious Sentiments and Science Education in Bangladesh

Religious Sentiments and Science Education in Bangladesh

ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার পশ্চাৎযাত্রা

বাংলাদেশে সাইন্সের স্টুডেন্টদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সারাবছর বিজ্ঞানের জাহাজ মাথায় নিয়ে ঘুরবে, কিন্তু বিশ্বাস করবে এক নৌকায় হাজার হাজার প্রজাতির পশুর স্থান হয়েছিল! ভূগোলের আদ্যোপন্ত পড়ার পর যদি ওদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, ওমুকের সময় যে পৃথিবী উল্টে গিয়েছিল, সেটা কি তুমি বিশ্বাস করো? সে বলবে, কেন নয়? আগুনের ধর্ম জানার পরও সে বলবে কেউ একজন আগুনে পড়ার পর আগুন শীতল হয়ে গিয়েছিল। বস্তু ও প্রাণের পার্থক্য জানার পরেও বিশ্বাস করবে, কারো লাঠি সাপ হয়ে দৌড়াতো!

প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস মুখস্ত করে ঝাঝরা করে ফেলার পর তাকে জিজ্ঞেস করুন, এই শ্রেণীবিন্যাস যে বিবর্তনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারে তার মত কী? সে চমকে উঠে বলবে, বিবর্তন বলে কিছু নাই, আমরা হুট করেই আসমান থেকে পড়েছি! মশার পক্ষে মানুষের মস্তিষ্কে যাওয়া সম্ভব না হলেও সাইন্সের এই অমায়িক স্টুডেন্টরা বিশ্বাস করে যে, কারো মাথার ভিতরে মশা ঢুকে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছিল! পানি, বায়ু, সমুদ্র ও প্রাণীবিদ্যা সম্পর্কিত বেসিক আইডিয়া নিয়ে এই নির্বোধগুলো বলবে যে, কোন একজন সমুদ্রে মাছের পেটে চল্লিশ দিন বেঁচে ছিলেন। জীবন সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা থাকার পরেও এরা বিশ্বাস করে, একজন মৃত মানুষদের জীবিত করতে পারতেন। মাটির পাখিকে জীবিত পাখিতে রুপান্তরিত করে ফেলতেন। অভিকর্ষের জ্ঞান থাকলেও তারা যখন শুনলো যে, একজন আস্ত সিংহাসন ও তার দরবারের সমস্ত লোকসহ বাতাসে ভেসে বেড়াতো, এক স্থান থেকে আরেক স্থানে, তারা বলবে – ঠিক, ঠিক। উদ্ভিদের গঠন ও কাঠামো সম্পর্কে জানা সাইন্সের ছাত্রটিকে জিজ্ঞেস করুন, কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে জীবিত গাছের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলেন কিনা, সে এটাও বিনাপ্রশ্নে সত্য বলে স্বীকার করবে।

শুধু সাইন্সের স্টুডেন্টদের অবস্থাই এমন, তা নয়। অন্যান্য বিষয়ের ছাত্রদের অবস্থা আরো করুণ। যদি ইতিহাসের কোনো ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেন, কোন এক যুদ্ধে সাহায্য নিয়ে হাজার হাজার দূত হাজির হয়েছিলো কিনা? সে বলেছিলো, হ্যা এসেছিল! কিন্তু পরক্ষণেই তাকে জিজ্ঞেস করুন, ওমুক যুদ্ধের দূতগুলো তাহলে তমুক যুদ্ধে সাহায্য নিয়ে আসলো না কেন? সে নিরব থাকবে। মেন্ডেলের বংশগতি সহ আর সব যৌনবিজ্ঞান সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরেও সাইন্সের কিউট স্টুডেন্টটি যখন শুনবে, অমুক পিতার এক্স ও ওয়াই ক্রোমোজোম ছাড়াই জন্মেছেন, তখন কোনো তর্ক ছাড়াই মেনে নেবে। এই নির্বোধ কি এটাও জানেনা যে, এক্সিডেন্টলি যদি পিতা ছাড়া কোনো সন্তান হয়েও থাকে, তবে সেটা অবশ্যই মেয়ে হবে। কারণ মেয়ের ক্ষেত্রে কেবল মায়ের এক্স ক্রোমোজমই যথেষ্ঠ। কিন্তু ছেলে সন্তান হতে গেলে পিতার ওয়াই ক্রোমোজোম অনিবার্য।

তো, আমরা কী বুঝলাম? দেখতে শুনতে এই মেধাবী স্টুডেন্টরা ভিতর থেকে আসলে কেমন দুর্বল, আর কতটা হাস্যকর পর্যায়ের সেন্স নিয়ে তারা চলে! অবশ্য এই নির্বোধগুলো গাইগুই করে বলতে চাইবে যে, উনি চাইলে সবই সম্ভব। ঠিক আছে। তো, উনি চাইলে যেহেতু সবই সম্ভব, তাহলে আর সাইন্স পড়ছো কেন বাবা? সারাবছর ঘোড়ার জন্য ঘাস কাটলেই পারতে। তোমাদের মহাকাশে যাইতে যেহেতু স্পেসশীপ লাগে না, কি নামের এক পঙ্খিরাজই যথেষ্ট! তাহলে আর এতো গবেষণার কি প্রয়োজন?”

বিজ্ঞান ও এর চর্চা এমন একটা বিষয় যা প্রশ্ন ও সন্দেহ দিয়ে শুরু হয়। এরপর প্রমান করে বের করতে হয় সেই প্রশ্নের উত্তর, সেই সন্দেহ ঠিক না বেঠিক। বিশ্বের প্রায় সব দেশে স্কুল পর্যায়েই ছাত্রদের ধর্ম ও বিজ্ঞান যে আলাদা জিনিস, একটা প্রমান সাপেক্ষে মেনে নেয়ার ব্যাপার, অন্যটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করার বিষয় সেটা শেখানো হয়। ধর্মীয় অনুভূতি আবার কি জিনিস ? ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতই বা পায় কেন ?

এই লিংকে দেখবেন প্রযুক্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশটির স্কুলে পড়ানো বইগুলোঃ https://www.ck12.org এখানে এসব বিষয় আলোচনা করা হয়, বাচ্চারা শিখে যায়। তারা শুধু ধর্ম কেন, তার বাবা-মার’র কোন ভুলের বিষয়েও প্রশ্ন করে।

বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্ম বিষয়টা খুবই সাংঘর্ষিক। ধর্মীয় মানুষগুলো বিজ্ঞানের যাত্রাকে বরাবরই বাধাগ্রস্থ করে। বিজ্ঞান ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামায় না। ইউরোপ যতদিন পর্যন্ত ধর্মীয় মানুষদের নিয়ন্ত্রনে ছিলো ততোদিন তারা অন্ধকারে থেকেছে। ইউরোপ তখনই উন্নত ও সভ্য হয়েছে যখন তারা ধর্মীয় নিয়ন্ত্রনের বাইরে আসতে পেরেছে।

Related Posts

Blood donation from family members and problems

What can be the problem if someone takes blood from his family member?

This is a frequently asked and very important question about blood donation. If you wantRead More

blood donation and close relatives

কেউ তার পরিবারের সদস্য থেকে রক্ত নিলে কি সমস্যা হতে পারে?

ব্লাড ডোনেশন সম্পর্কে এটা বহুল জিজ্ঞাসিত ও অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন একটা প্রশ্ন। ছোট করে উত্তর শুনতেRead More

Splitting of the Moon and Islamic Myth

ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !

ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More

Comments are Closed