Privacy
No more Private Question

No more Private Question

কাউকে কতটুকু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যায় এই বোধ শেখা বা অর্জন করাটা খুব জরুরী

কাউকে কতটুকু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যায় এই বোধ আমাদের দেশে অনেকের নেই। কারো কাছে আপনি তার যৌন জীবনের তথ্যও জানতে চাইতে পারেন যদি তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক তেমন পর্যায়ের ঘনিষ্ট থাকে। সবার ক্ষেত্রেই মাত্রা মানতে হয়। আপনার মানসিকতা যদি থাকে আপনার পেশার সঙ্গে কারো পেশাকে তুলনা করে ছোট করা তবে আপনি এটাও জানতে চাইতে পারেন না সে কি করে। এমনকি সমাজে যদি কারো ডিসক্রিমেশনের সম্ভাবনা থাকে তবে তার দেশ, গ্রাম, ভাষা এসবও জানতে চাওয়া অশালীন। কার ধর্ম কি, কেউ ধর্ম বিশ্বাস করে কিনা, গরু খায় নাকি, শুকর খায় নাকি, বিয়ে করেছে কিনা, বিয়ে কেন করছে না, বাচ্চা-কাচ্চা আছে কিনা, বাচ্চা কেন নিচ্ছে না, তার সঙ্গে অন্য একজনের সম্পর্ক কেমন, বেতন কত, খরচ কত, ইত্যাদি জানতে চাওয়া খুবই অভদ্রতা। অন্যের এসব জানার তেমন কোন প্রয়োজনই আপনার নেই। অন্যের এই পরিচয় বা অবস্থা দিয়ে আপনার জীবন, জীবিকা, বিশ্বাসের কিছু আসবে যাবে না। যদি একান্তই জানতে চাওয়ার প্রয়োজন হয় তবে কৌশলে জানতে হয় অথবা উপযুক্ত কারন ব্যাখ্যা করে সে যদি জানতে চাওয়ার অনুমতি দেয় তবে জানা যেতে পারে। নীচে লুক্স ভাইয়ের একটা প্রাসঙ্গিক লেখা দিলাম।
…………………………
আমার জীবনের অসংখ্য মূল্যবান জ্ঞান আমি অর্জন করেছি ইয়োরোপের শিশুদের কাছ থেকে। স্থায়ী চাকরীতে ঢোকার আগে আমি শিশুদের সঙ্গে আর্ট প্রজেক্ট করতাম। এখানকার শিশুরা পরিচয় হবার পর আমার সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করতো। কিন্তু তারা কখনো আমাকে কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন করতো না। আমি একজন অভিবাসী নাগরিক বুঝতে পারার পর তারা আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করতো, কিন্তু প্রশ্নগুলো করতো খুবই টেকনিক্যালি এবং ঘুরিয়ে পেচিয়ে।

যেমন, আমি কোন্ দেশ থেকে এসেছি, এটা শিশুরা সরাসরি প্রশ্ন করতো না। তারা জিজ্ঞেস করতো- তুমি কি কি ভাষায় কথা বলতে পারো? আমি বলতাম- ইংরেজি আর বাঙলা। তবে বাঙলা আমার মাতৃভাষা। ওরা এতেই বুঝে ফেলতো আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।

আমি মুসলমান কি না- এটা জানার জন্য শিশুরা খাবার সময় আমাকে সাহায্য করতো এই বলে,- এখানে সব ধরনের মাংস আছে, কিন্তু তোমার যদি কোনো ধরনের মাংসে এলার্জি থাকে, তাহলে সেটা ইগনোর করতে পারো। আমি বলতাম,- আমি গরু আর শুকর- সব ধরনের মাংসই খাই। খাবারের ব্যাপারে আমার কোনো এলার্জি নেই। ওরা নিশ্চিত হতো- আমি ধর্মের ধার ধারি না।

আমি বিয়ে করেছি কিনা, আমার বাচ্চাকাচ্চা আছে কিনা, এটা জানার জন্যেও শিশুরা কখনো সরাসরি প্রশ্ন করতো না। তারা জানতে চাইতো এভাবে,- tell us something nice about you. আমি তখন তাদেরকে আমার সুন্দর পরিবার সম্পর্কে বলতাম।

এটাই উন্নত সংস্কৃতি। এটা আধুনিক আর ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার সুফল। অথচ, এই সভ্য সময়ে এসে আমাদের দেশের শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যমে পরিনত হয়েছে তথাকথিত শিক্ষা যা এখন রাত জেগে সারাদেশে শিক্ষা দেয়া হয় কিছু তথাকথিত জ্ঞানীর মাধ্যমে (সবাই নয়)। তথাকথিত শিক্ষায় শিশুরা শেখে- কিভাবে মধ্যযুগীয় নৈতিকতায় আর আদর্শে জীবন গড়তে হবে। কিভাবে স্বর্গে যেতে হবে। কেন বিধর্মীরা নরকে যাবে। নরক যন্ত্রণা কেমন। কিভাবে সারা বিশ্বে নিজেদের দখল কায়েম করতে হবে। কিভাবে ভিন্ন মতাদর্শী আর সমালোচনাকারীকে হত্যা করতে হবে। ইত্যাদি।

তাই বলছিলাম, যে শিশুটি আজ আপনাকে বিধর্মী বা ভিন্ন সম্প্রদায় বলে ঘৃণা করছে, বিদ্বেষ প্রকাশ করছে, সে নির্দোষ। সে আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার শিকার। আপনার শিশুকে একজন আধুনিক আর মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক আর ধর্মনিরপেক্ষ করে গড়ে তোলার আওয়াজ তুলুন। তথাকথিত শিক্ষার নামে উগ্র ও পশ্চাৎপদ শিক্ষা বন্ধ করুন। নইলে ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকার।
…………….
[ মাঝের লেখাটা আমার নিজের নয়। মূল লেখা ‘ওমর ফারুক লুক্স’ এর থেকে কিছু শব্দ ও বাক্য বাধ্য হয়ে পরিবর্তন করা লাগছে তথাকথিত শিক্ষিত মূর্খ কিছু মানুষ থেকে রক্ষা পেতে ]

Related Posts

Religious Fanaticism Examples

এই ধর্মীয় উন্মাদনা এখনি থামাতে হবে, সভ্যতার পথে হাঁটুন

বাংলাদেশের সমাজটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে বিগত ২০/৩০ বছরে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে জঘন্য অনুঘটক ছিলRead More

india pakistan bangladesh

Under the cover of development, the real image of India, Pakistan, and Bangladesh

India has sent a spacecraft to the moon and successfully landed there. There is noRead More

india pakistan bangladesh

উন্নয়নের আড়ালে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের প্রকৃত করুন চিত্র

ভারত চাঁদে নভোযান পাঠিয়েছে এবং সেটা সেখানে সফল অবতরণও করেছে। ভারতের এতে গর্বের সীমা নেই,Read More

Comments are Closed