Armstrong
Armstrong's Moon Landing

Armstrong's Moon Landing

নীল আর্মস্ট্রং কি পৃথিবীতে ফিরে ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন ?

নীল আর্মস্ট্রং কি চাঁদে কোন সুমধুর সঙ্গীত শুনেছিলেন বা পৃথিবীতে ফিরে ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন ?

নীল আর্মস্ট্রং, চাঁদের বুকে পা দেওয়া প্রথম মানুষ। বাংলাদেশে লক্ষ মানুষের সামনে মঞ্চে বসে কিছু মানুষ এখন পর্যন্ত এই ২০২০ সালে এসেও তার সম্পর্কে মিথ্যাচার করে – তিনি চাঁদে ধর্মীয় সুমধুর শব্দ শুনেছেন এবং পরে তার ধর্ম পরিবর্তন করেছেন। লক্ষ মানুষ সেটা বিশ্বাস করে তৃপ্তির ঢেকুর নিয়ে বাড়ি ফেরে। কি দরকার এই সমস্ত মিথ্যাচারের ?

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা সাঈদী, আজহারী, তারেক মনোয়ার প্রমুখ বিভিন্ন সময়ে ইসলামী সভায় হাজার হাজার মানুষের সামনে দাবী করেছেন নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে আযান শুনেছিলেন, চাঁদের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ফাটল দেখেছেন এবং পৃথিবীতে ফিরে মুসলমান হয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মুসলমান এই মিথ্যা, ভ্রান্ত দাবীটি করেন। এই দাবী করে তাদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতে তারা সচেষ্ট হন। এমনকি অনেক বই, বিশেষ করে হাদীসের অনেক অনুবাদে উদাহরণ হিসাবে এই গালগল্প বেশ রসিয়ে লেখা হয় বাংলাদেশে; যেমন, দেখতে পারেন –
নবীদের কাহিনী-৩ – সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, হাদীস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ১১৮-১১৯,
বোখারী শরীফ, বাংলা তর্জমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা, হামিদিয়া লাইব্রেরি লিঃ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪২, ৩৪৩
এখানে লেখকেরা দাবী করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা ১৪০০ বছর আগে নবী মোহাম্মদের হাতের ইশারায় চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিষয়ে প্রমান পেয়েছেন, নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে আযান শুনেছেন, তিনি পৃথিবীতে ফিরে মুসলমান হয়েছেন। এই জ্ঞান নিয়ে এরা স্কলার সাজে, বইও লেখে, সে বইসমূহ আবার অনেক জনপ্রিয়ও হয়ে যায়।

চাঁদে কোন বাতাস নেই। সুতরাং চাঁদে কোন শব্দ শোনা অসম্ভব। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেখুনঃ
Can People Hear Sound on the Moon? : Audio & Sound –

না, নীল আর্মস্ট্রং পৃথিবীতে ফিরে ধর্ম পরিবর্তন করেননি। তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে অনেক গুজব ছড়িয়েছে – বিশেষ করে ইসলাম গ্রহণ সংক্রান্ত একটি ভ্রান্ত দাবি, যা তিনি নিজেই অস্বীকার করেছিলেন। মালয়েশিয়ায় এক অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে তিনি কখনো চাঁদে বা অন্য কোথাও আযান শুনে ইসলাম গ্রহণ করেননি। নীল আর্মস্ট্রং নিজেও এই মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছেন অনেকবার। তার জীবনীগ্রন্থ, প্রশ্ন-উত্তর সবখানে তিনি এই ভন্ডদের এই দাবী অস্বীকার করেছেন। মালয়েশিয়াতে হওয়া গ্লোবাল লিডারশিপ ফোরাম ২০০৫ এ সেপ্টেম্বর মাসে নীল আর্মষ্ট্রং অংশগ্রহণ করেন। ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে মালয়েশিয়ার সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজী দৈনিক “স্টার মালয়েশিয়া” তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় ৭ ই সেপ্টেম্বর ২০০৫ তারিখে। স্টার মালয়েশিয়ার আর্কাইভ লিংকে সেই নিউজটি পাবেন এখানেঃ https://www.thestar.com.my/news/nation/2005/09/07/armstrong-recalls-moon-landing

নীচ থেকে ২য় প্যারাটা পড়ুন। তিনি তার সম্পর্কে এই শব্দ শোনা ও পরে ধর্ম পরিবর্তনের কথা স্পস্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্যাপারটা এমন, তার নিজের সম্পর্কে তার চেয়ে বেশী জানে বাংলাদেশের বক্তারা !



সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হচ্ছে, ২০০৫ সালে প্রকাশিত First Man: The Life of Neil A. Armstrong গ্রন্থে, যেটি উঁনার অফিশিয়াল জীবনীগ্রন্থ, তিনি সেখানে আবারও পরিষ্কার করেছেন যে, তার ইসলাম গ্রহণের খবরটি মিথ্যা।

আমারিকা সরকারের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বক্তব্যও আছে এই প্রপাগান্ডাকে মিথ্যা বলে। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট হতে ইসলামিক বিশ্বের সকল দূতাবাসে নিচের এই চিঠিটি প্রেরন করা হয়েছিল। আগ্রহী পাঠক একটু খোঁজ খবর করলেই এই চিঠিটি পেয়ে যাবেন।

P 04085 0Z MAR 83 ZEX
FM SECSTATE WASHD C

TO ALL DIPLOMATIC AND CONSULAR POSTS PRIORITY
BI

UNCLAS STATE 056309
FOLLOWING REPEAT SENT ACTION ALL EAST ASIAN AND PACIFIC DIPLOMATIC POSTS DID MAR 02.

QUOTE: UNCLAS STATE 056309

E.O. 12356: N/A
TAGS: PREL, PGOV, US, ID

SUBJECT: ALLEGED CONVERSION OF ENIL ARMSTRONG TO ISLAM

REF: JAKARTA 3081 AND 2374 (NOT ..)
1. FORMER ASTRONAUT NEIL ARMSTRONG, NOW IN PRIVATE BUSINESS, HAS BEEN THE SUBJECT OF PRESS REPORTS IN EGYPT, MALAYSIA AND INDONESIA (AND PERHAPS ELSEWHERE) ALLEGING HIS CONVERSION TO ISLAM DURING HIS LANDING ON THE MOON IN 1969. AS A RESULT OF SUCH REPORTS, ARMSTRONG HAS RECEIVED COMMUNICATIONS FROM INDIVIDUALS AND RELIGIOUS ORGANIZATIONS, AND A FEELER FROM AT LEAST ONE GOVERNMENT, ABOUT HIS POSSIBLE PARTICIPATION IN ISLAMIC ACTIVITIES.

2. WHILE STRESSING HIS STRONG DESIRE NOT TO OFFEND ANYONE OR SHOW DISRESPECT FOR ANY RELIGION, ARMSTRONG HAS ADVISED DEPARTMENT THAT REPORTS OF HIS CONVERSION TO ISLAM ARE INACCURATE.

3. IF POST RECEIVE QUERIES ON THIS MATTER, ARMSTRONG REQUESTS THAT THEY POLITELY BUT FIRMLY INFORM QUERYING PARTY THAT HE HAS NOT CONVERTED TO ISLAM AND HAS NO CURRENT PLANS OR DESIRE TO TRAVEL OVERSEAS TO PARTICIPATE IN ISLAMIC RELIGOUS ACTIVITIES.

আর্মস্ট্রং নিজেকে “no religious preference” বলে উল্লেখ করেছিলেন NASA-তে আবেদন করার সময়। অর্থাৎ, তিনি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর, নীল আর্মস্ট্রং-এর ধর্মীয় বিশ্বাস মূলত ব্যক্তিগতই রয়ে যায়। তিনি “ডিইস্ট” হিসেবে পরিচিত ছিলেন – অর্থাৎ, তিনি একটি উচ্চতর শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু কোনো সংগঠিত ধর্মীয় ব্যবস্থার অনুসারী ছিলেন না। যেখানে কিছু মহাকাশচারী, যেমন বাজ অলড্রিন, চাঁদের মিশনের সময় ধর্মীয় আচার পালন করেছিলেন (যেমন কমিউনিয়ন), সেখানে আর্মস্ট্রং এমন কোনো ধর্মীয় রীতিতে অংশ নেননি। চাঁদে তাঁর অভিজ্ঞতার মধ্যে আযান শোনার মতো ঘটনাগুলোর কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই, এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ বা ধর্মীয় বিশ্বাসে কোনো বড় পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করেছেন। সামগ্রিকভাবে, আর্মস্ট্রং-এর বিশ্বাস ছিল বিস্ময় ও অন্তর্দর্শনের গভীর অনুভূতিতে পরিপূর্ণ, প্রকাশ্য ধর্মীয় অনুশীলনের চেয়ে অনেক বেশি ব্যক্তিগত ও চিন্তাশীল।

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাও প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিল চাঁদের ফাটল বা দ্বিখন্ডনের কোন বৈজ্ঞানিক প্রমান তাদের জানা নেই। তারা এও জানিয়েছিল কারো কথা নয়, বৈজ্ঞানিক কিছু জানতে হলে পিয়ার রিভিউড জার্নাল থেকেই জানা উচিৎ।

নীল আর্মস্ট্রং এর মিশন বা পরবর্তী মিশনগুলোতে চাঁদে পদচারণা করা অন্য ১১ জন মহাকাশচারীর কেউই সেখানে কোনো ইসলামিক প্রার্থনা, আযান, ডাক, সংগীত ইত্যাদি শুনেছেন বলে দাবি করেননি, এবং চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে – এমন কোনো চিহ্নও দেখেননি। এবং চাঁদের মিশন শেষ করে পৃথিবীতে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন, এমন কোন প্রমান নেই।

এখন বলুন বাংলাদেশের স্টার বক্তারা আর কতদিন এই মিথ্যা গল্প ফাঁদবে ? এই গল্পের মতো শত শত মিথ্যা গল্প তারা ফাঁদে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে। কি দরকার এই মিথ্যাগুলো বলে তাদেরকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করা মানুষকে বোকা বানানোর ?

Related Posts

Evolutionary Biology and Women

Protecting women is a man’s responsibility – this is a lesson rooted in evolutionary psychology

A common tendency across all societies is to take extra care of women. This isRead More

Mitochondrial Eve

নারীকে সুরক্ষা দেয়াটা পুরুষের কর্তব্য, এটা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের শিক্ষা

সব সমাজের একটা কমন টেন্ডেন্সি হলো নারীকে এক্সট্রা কেয়ার নেয়া। এটা প্রকৃতির একটা নিয়ম। মাইটোকন্ড্রিয়ালRead More

Evolution through mutation

Evolution through mutation: Nature’s perfect strategy

Evolution is the gradual process of change in the living world through which species adaptRead More

Comments are Closed