New Year
New Year and Some Sad Moments

New Year and Some Sad Moments

বর্ষবরণ কেন আগুনের উৎসবে রুপ নিল বা কোথায় যাবে মানুষ উৎসব করতে ?

বাংলাদেশে এবার ইংরেজী বর্ষবরণে ফানুসের আগুনে কিছু জায়গায় ক্ষতি হয়েছে, এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর স্বপ্ন পুড়ে গেছে, বাজির শব্দে এক ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুকে জীবন দিয়ে হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে খবরগুলো খুবই দুঃখজনক। অন্যদিকে মানুষের জীবনে আনন্দ উৎসবেরও দরকার, তবে অন্য মানুষের ক্ষতির কারন হয়ে নয়। বিশ্বজুড়েই নতুন বছরকে মানুষ বরণ করে নেয় নানান রঙে, নানান আয়োজনে। ঢাকার মতো জায়গায় যে কোন উৎসব, আয়োজনই এমনকি প্রতিদিনের বসবাসও বিপজ্জনক। ঢাকা শহরের কিছু এলাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ, যেমন – নারিন্দা, লালবাগ। মেগাসিটির স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রতি একর জায়গায় সর্বোচ্চ ১২০ জন মানুষ বসবাস করতে পারে, কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সেটা ৭৫০+, ঢাকার সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছে দুবাই এর কিছু অঞ্চল আছে যেখানে সংখ্যটা ৪০০+। বুঝতেই পারছেন, শুধু আতশবাজি না, শুধু ফানুস না, শুধু উচ্চ শব্দে গান বাজনা না – এখানে বসবাসটাই প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ।

New Year and Some Sad Moments

আগে এ সমস্ত উৎসব করা হতো ফাঁকা জায়গাতে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে আনন্দ-উল্লাস করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতো। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর কি হলো ? বাংলাদেশে ঠিক বাইশ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাঁধন নামের একজন নারী প্রকাশ্যে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন। ছাত্র রাজনীতির গুণ্ডা-পান্ডারা তার শরীরের জামাকাপড় ছিড়ে নিয়ে উল্লাস করেছিল। বাঁধন মামলা করেছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দীর্ঘ এক দশক পরে মামলার ফলাফলে সব অভিযুক্তই খালাস পেয়েছিল। সে যাই হোক, তার পরের বছর থেকেই বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে নানা রকম কড়াকড়ি আরোপ শুরু হয়। যা ক্রমে বাড়তে বাড়তে এখন বছর বাড়ির ছাদেও কোনো উৎসব আয়োজনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে পুলিশ। কিন্তু মানুষ যাবে কোথায় ? চোর, বদমাশ, লম্পটদের বাইরে রেখে মানুষকে ঘরের খাঁচায় বন্দি করে রাখলে মানুষ কি সেটা থাকতে চায় ?

পহেলা বৈশাখেও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে কতবার নারীর যৌন হয়রানির খবর হলো। শাস্তি হয়নি কারো। আমার নিজের চোখে দেখেছি ২০১৪ সালের পহেলা বৈশাখে চন্দ্রিমা উদ্যানে নারীদের ওড়না, শাড়ি, কাপড় টেনে নিয়ে, ছিঁড়ে দিয়ে কিছু মাস্তান প্রকাশ্যে উল্লাস করছে। আমি একটু দূরে দাঁড়ানো পুলিশকে অনুরোধ করলাম ঐখানে যেয়ে ব্যবস্থা নিতে। তারা উত্তরে জানালো আমরা কেন ওখানে যাই, আমরা কেন আসি। এই হলো দেশের আইন শৃঙ্খলার অবস্থা। চোর, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, লম্পট প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর মানুষ থাকবে ঘরে বন্দি। এ অবস্থায় আনন্দ উল্লাস করতে তাদের একটাই বিকল্প বাড়ির ছাদ। সেখানেও আবার মানুষে ঠাসা। তখন আকাশে ফানুস উড়িয়ে, আতশবাজি পুড়িয়ে বিশাল আকাশের সঙ্গে নিজদের বদ্ধ আনন্দকে ছিটিয়ে দেয়া ছাড়া আর কিই বা মানুষের করার আছে ?

কিছু উগ্র গ্রুপ আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নববর্ষ উৎযাপন করাকে হারাম ঘোষনা দিয়ে বসে থাকে। তাদের আছে বোমা, চাপাতি। মানুষের জমায়েতে তারা বোমা মেরে, পিছন থেকে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা এসব বন্ধ করে দিতে চায়। সকল গান-বাজনা, শিল্প, সাহিত্যকে তারা হত্যা করে মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে দিতে তাদের তৎপরতারও প্রভাব পড়ে সবখানে। এই তৎপরতার কারনেও মানুষ ছাদে চলে যায়, আগুন নিয়ে খেলে। অথচ তাদের যাওয়ার কথা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পার্কে, উদ্যানে, খোলা ময়দানে। সেই পরিবেশ নেই। বিকাল হলেই সবাইকে ঘরে ঢুকতে হবে, চৌহর্দ্দির মধ্যে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা ! মানুষের স্বাধীন চেতনা সেটা মেনে নিতে পারে না। আইন করে, চোখ রাঙানি দিয়ে ফানুস, আতশবাজি এজন্য বন্ধ করা সম্ভব না। নিরাপত্তা দিলে, সুযোগ করে দিলে মানুষ আবার আগের মতো উৎসব করতে বাইরে যাবে, প্রানে প্রান মিলাবে, বিলিয়ে দিবে ভালবাসা ও বিশালতার প্রতিজ্ঞা। দরকার অন্ধকারের অপশক্তিগুলোর বিনাশ, দরকার সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চার অবারিত সুযোগ।

মানুষকেও সচেতন হতে হবে। আবাসিক এলাকায় উচ্চশব্দের যে কোন কিছু ক্ষতিকর। সেটা আতশবাজি হোক আর বিয়ে, জন্মদিন, গায়ে হলুদের গান-বাজনা হোক কিংবা সিরিয়াল ধরে কিলোমিটারব্যাপী ধর্মীয়/রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের মাইক হোক – সবটাই ক্ষতিকর। যানবাহনের হর্ণ, বাড়ি নির্মান যন্ত্রের নির্মম শন্দ তাও ক্ষতিকর। আইন যারা মানাবে তাদের নিজেদের আইন মানানোর মতো নৈতিক ভিত্তি নেই বলে তারাও পারে না, আর মানুষেরও রয়েছে প্রচন্ড সচেতনতার অভাব।

Related Posts

Religious Fanaticism Examples

এই ধর্মীয় উন্মাদনা এখনি থামাতে হবে, সভ্যতার পথে হাঁটুন

বাংলাদেশের সমাজটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে বিগত ২০/৩০ বছরে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে জঘন্য অনুঘটক ছিলRead More

india pakistan bangladesh

Under the cover of development, the real image of India, Pakistan, and Bangladesh

India has sent a spacecraft to the moon and successfully landed there. There is noRead More

india pakistan bangladesh

উন্নয়নের আড়ালে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের প্রকৃত করুন চিত্র

ভারত চাঁদে নভোযান পাঠিয়েছে এবং সেটা সেখানে সফল অবতরণও করেছে। ভারতের এতে গর্বের সীমা নেই,Read More

Comments are Closed