Environment
Limit your everyday consumption Save the Environment

Limit your everyday consumption | Save the Environment

কম কিনুন, প্রয়োজনে খান । মানুষ, পরিবেশ ও পৃথিবীকে বাঁচান

কলকাতায় হাওড়া ব্রীজে উঠার ঠিক আগে ফুটপাতে এক ফল বিক্রেতা মহিলাকে দাম জিজ্ঞেস করলাম। উনি ১০/২০ টাকা কত যেনো বলেছিল। একটু অবাক হয়েছিলাম ১ কেজি আপেল/আঙ্গুর/বেদানার দাম শুনে। পরে অবশ্য ভুল ভেঙ্গেছিল যখন শুনেছিলাম সেটা ছিল ১০০ গ্রাম না ২০০ গ্রামের দাম যেনো। তারপরেও দাম অনেক কম। মানে ওখানে ১০০/২০০ গ্রাম ফল কেনা স্ট্যান্ডার্ড। সেখানে আপনি ১০/২০/৩০ টাকায় ফ্রেস জুস কিনতে পারবেন যা আপনার সামনেই তৈরি করে আপনাকে দিবে; বাংলাদেশে আপনি ১০০ টাকাতেও আইস ছাড়া এক গ্লাস ফ্রেস জুস পাবেন না।

গত পরশু সন্ধ্যায় বেদানা কেনার জন্য দাম জিজ্ঞেস করলাম। একদাম বলে ৩৮০ টাকা। ঢাকার দাম, বুঝতেই পারছেন কেজিতে। আমার দরকার ১ টা, কিন্তু সংকোচ লাগছিল একটার কথা বলতে। বাধ্য হয়ে ২ টার কথা বললাম। দোকানদার ৫০০ গ্রাম মেলানোর জন্য আরো ১ টা তুলে নিলো। আমি ২ টা তেই সীমাবদ্ধ থাকলাম যদিও। এখানে ১/২ টা বা ২০০/৫০০ গ্রাম কিছু কিনতে চাওয়া মানেও বিরাট মান সম্মানের বিষয়। দোকানদার ১ কেজি বা ২ কেজি মেলানোর জন্য চাপ দিয়ে আরো ২ টা দিয়ে দেয়, ১০০/১০০০ টাকা মেলানোর জন্য বাড়তি দেয় যা আপনার প্রয়োজন না।

কলকাতায় ৩৬ টাকার ট্যাক্সি ভাড়া ৪০ টাকা দেয়াতে ড্রাইভার বুঝে গিয়েছিলেন আমরা কলকাতার মানুষ না। এইযে ঢাকার মানুষ, এমনকি রিক্সাওয়ালারাও ৫/১০ টাকা ছেড়ে দেয় ভাংতি না থাকলে বা কেউ বখশিস চাইলে ৫০ টাকা না দিলে গ্রহীতা ও দাতা ২ জনেরই সম্মান থাকে না – এটা কি খুব ভাল ? না, এটা অসুস্থ সমাজের লক্ষন। অসুস্থ সমাজে মানুষের নিজের কষ্টার্জিত উপার্জনের উপর দরদ থাকেনা। কারন এখানে একটা বিরাট সংখ্যক মানুষের উপার্জনটা তার প্রাপ্য পাওনার চেয়ে বেশী।

যে লোকটি ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরি করে ২ লক্ষ টাকার কোরবানির গরু কেনে, যে লোকটি ৫০০ টাকার ইলিশ মাছ ২০০০ টাকা দিয়ে কিনে নিজের সামাজিক উচ্চতার প্রদর্শন করে, যে মানুষটি অন্যের ১৫ হাজার টাকার ড্রাইভার হয়ে নিজে ৩০ হাজার টাকা বেতনের ড্রাইভার রেখে কোটি টাকার পাজেরো চড়ে সেই মানুষদের সমাজকে আপনি সুস্থ সমাজ বলবেন ? এদের কাছে ৫ টাকা নায্য দামের জিনিস ৫০ টাকা দিয়ে কিনতেও গায়ে লাগবে না। এখানে একটা বেদানা কেনা, ১০০ গ্রাম আঙ্গুর কেনা, ইলিশ মাছের টুকরা কেনা, ১০০ গ্রাম মাংস কেনা লজ্জার বিষয় কারন এই দেশে অসৎ আয়ের মানুষ এতো বেশী যে তাদের গায়ে লাগে না অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে। এরা আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য অভিশাপ হয়ে আছে।

কোন জাপানী দোকানে আপনি ১ ইয়েন পেলেও দোকানী সেটি আপনাকে ফিরিয়ে দিবে, উল্লেখ্য যে ইয়েনের মূল্য টাকার চেয়ে অনেক কম। তার কাছে ভাংতি না থাকলে সে জিনিটটি বিক্রিই করবে না। জাপান তো অন্যতম সৎ মানুষদের দেশ, তাইনা ? ভারতেও এখনো দূর্নীতি, ঘুষের ব্যাপকতা বাংলাদেশের মতো বাড়েনি বা সেখানে এখনো ঘুষের পরিমান অনেক কম। যার কারনে এই অসুস্থ বাজার সংস্কৃতি সেখানে এখনো ব্যাপক হয়নি যা বাংলাদেশে বর্তমান। এই খারাপ সংস্কৃতিটাও অন্য অনেককে দূর্নীতি ও অসৎ পথে যেতে প্ররোচিত করছে।

ভারতের সর্বত্র বড় মাছের এক/দুই টুকরো আপনি কিনতে পাবেন। আপনার খাওয়ার সাধ হলে ১০০০ টাকা কেজি দামে ২০ কেজির মাছটি সম্পূর্ণ কিনতে হবে না। আপনি চাইলে ১০০/২০০ গ্রাম মাংস কিনতে পাবেন। ১০০ গ্রাম ফল কিনতে পাবেন। বাংলাদেশে দোকানদারকে কতবার মানুষকে বলতে শুনেছি ৫ টাকার জিনিস, ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম বেঁচে না সে। নিলে ১০/২০, ৫০০ গ্রাম, ১ কেজিই নিতে হবে – আপনার প্রয়োজন হোক বা না হোক।

ভারতের আর একটি বিষয় নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেন, সেখানে অনেকে নাকি কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে যে কয়জন মানুষ, গুণে গুণে সে কয়টি মিষ্টি নিয়ে যায়। এটাকে কিপ্টামি মনে করে অনেকে হাসাহাসি করে। তবে আমি দেখেছি আমার বাসায় কেউ মিষ্টি আনলে তার বেশীরভাগই খাওয়ার লোক থাকে না; বুয়া, দারোয়ান এদের দিয়ে দিতে হয়। খরচ যারই হোক, অপ্রয়োজনীয় কিছু কেনাটাও নায্য না।

আপনার সামর্থ্য আছে বলে আপনি ৫০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকায় কিনলেন, আপনার প্রয়োজন না থাকলেও আপনি ২/৩ গুণ বেশী জিনিস কিনলেন বেশী দাম দিয়ে, আপনার ইচ্ছা হলেই আপনি আপনার ফোনের মডেল পাল্টালেন। এগুলো সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আপনার কারনে জিনিসের মূল্য বেড়ে যায়, ভুগতে হয় তাদের। বাধ্য হয়ে তাদেরও কোন অনায্য, অসুস্থ উপার্জনের দারস্ত হতে হয়।

অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা মানেই পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনা। পৃথিবীর যা কিছু ভোগ্য পণ্য তার সবই আসে পরিবেশ থেকে। আপনার অধিক পোশাক কেনা মানে বেশী বেশী তুলা চাষ, পানির অপরচয়, প্রসেসিং এর জন্য অধিক বিদ্যুৎ খরচ, বিদ্যুতের জন্য জীবাষ্ম জ্বালানির সঞ্চয় হ্রাস, এবং অবশেষে পৃথিবীকে অধিক কার্বন দিয়ে পৃথিবীকে বসবাসের অপুপযোগী করার পথকে আরো সম্প্রসারন করা। শুধু পোশাক নয়, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা মানেই সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা, পরিবেশের জন্য হুমকি তৈরি করা। বিদেশে কাজের চাপে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করে। সেখানে বাংলাদেশের মতো দূর্নীতি, অনায্য আয়ের সুযোগ নেই বলে তাদের দিন রাত কাজ করতে হয়। আপনার হিসাব করে চলার মানে এই মানুষগুলোর কাজের চাপ কমিয়ে দেয়া, আপনি বেশী না কিনলে জিনিসের দাম কমে যাবে, তাদের কাজ কমে গিয়ে তাদের জীবনটাও সুন্দর হবে।

মানুষের শরীরের জন্য খুব কম পরিমান সুষম খাবারের প্রয়োজন, মানুষ অভ্যাসের কারনে শুধুই বেশী খায়। কলকাতায় একটা ডিমের অর্ধেক খেয়ে কি কেউ রুগ্ন হয়ে যায় ? তারা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ? অপ্রয়োজনে বেশী খেলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হতে হতে আপনার মৃত্যুকে দ্রুত করে। বেশী খাওয়া একটা মানসিক সমস্যা, আপনি এক সপ্তাহ কম খেয়ে দেখেন, আপনার এই মানসিক সমস্যা চলে যাবে, ক্ষুধাও লাগবে না তখন, এক সপ্তাহ মাত্র এক কাপ করে ভাত খেয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

Related Posts

Blood donation from family members and problems

What can be the problem if someone takes blood from his family member?

This is a frequently asked and very important question about blood donation. If you wantRead More

blood donation and close relatives

কেউ তার পরিবারের সদস্য থেকে রক্ত নিলে কি সমস্যা হতে পারে?

ব্লাড ডোনেশন সম্পর্কে এটা বহুল জিজ্ঞাসিত ও অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন একটা প্রশ্ন। ছোট করে উত্তর শুনতেRead More

Splitting of the Moon and Islamic Myth

ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !

ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More

Comments are Closed