
Learning Evolution is Important
বিবর্তনবাদের প্রাথমিক পাঠ না থাকলে মানুষের মানবিক হওয়া সহজ হবে না
১৯০০ সালের শুরুতেও পৃথিবীর জঙ্গলে বাঘ ছিল প্রায় ১ লক্ষ। ১৯ শতাব্দীর পুরোটা ও এখনকার রায় বাহাদূর, খন বাহাদুরদের দাপটে বাঘের সংখ্যা এখন সব মিলিয়ে ২৫০০ থেকে ৪০০০। পশুর রাজা সিংহ বললেও বনের প্রকৃত রাজা কিন্তু বাঘ। শারীরিক গঠন, ক্ষিপ্রতা, আকার, পেশীর শক্তি সব কিছু মিলে একটা পূর্ণবয়স্ক বেঙ্গল টাইগার আফ্রিকার যে কোন আলফা পুরুষ সিংহকে পরাজিত করতে পারে।
এককালের তুরস্ক, ইরান, ইরাক, কাজাখস্থান দাপিয়ে বেড়ানো কাস্পিয়ান টাইগার এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। চীনের যৌন কামুকদের শক্তি বৃদ্ধির চাহিদা মেটাতে গিয়ে সাউথ চায়না টাইগার এখন বিস্মৃতি। জাভা টাইগারও এখন নেই। প্রকৃতিতে টিকে আছে কেবল বেঙ্গল টাইগার, আমুর টাইগার ও সুমাত্রা টাইগারের মতো কিছু উপপ্রজাতি।
বাসার যে বিড়াল, সিংহ, বাঘ, চিতা, বনবিড়াল, জাগুয়ার, লেপার্ড সব কিন্তু কয়েক মিলিয়ন বছর আগে একই প্রজাতি ছিল। প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিতে তাদের বিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তাদের সেই একটা অভ্যাস রয়ে গেছে, মাংস খাওয়া। বাসার কুকুরকে আপনি ১০ দিন মাংস না দিলেও সে কিছু বলবে না কিন্তু বাসার বিড়ালকে ১ দিন মাংস বা মাছ না দিলে সে ঠিকই আপনার হাঁড়িতে হানা দিবে।
গত ১৫/২০ বছর আগে চায়নার চিড়িয়াখানা থেকে কয়েকটি বাঘ নিয়ে সাউথ আফ্রিকায় শুরু হয়েছিল এক প্রকল্প। প্রকল্পের এখনকার অবস্থা জানি না। সেখানে লক্ষ্য ছিল সাউথ চায়না ক্যাপটিভ বাঘগুলোকে বন্য পরিবেশে রেখে শিকারের উপযোগী করে আবার সাউথ চায়নার বনে ছেড়ে দেয়া। প্রকল্পের এক ভিডিও দেখছিলাম কাল। ২০০৭ সালের ভিডিও। এখনো অনেকে দেখে ও কমেন্ট করে। কমেন্টগুলো সব ইংরেজিতে। সেখানে নানা রকম আলোচনা। কেউ অবতারনা করছেন এগুলো সাউথ আফ্রিকায় থাকলে বিবর্তিত হয়ে তার গায়ের রঙ পাল্টে যাবে। অন্য একজন সেখানে জানাচ্ছেন সে হতে পারে কিন্তু তার জন্য দরকার লক্ষ বছর। কাউকে লিখতে দেখলাম না সব অদৃষ্ঠের ফল বা রহমত। অদৃষ্ট কত বড় এটাও কেউ লেখেনি। বিবর্তনের সেই আলাপের বিরোধিতাও কেউ করছে না সেখানে।
বিজ্ঞানের যে সমস্ত বিষয়গুলো থিউরি থেকে ফ্যাক্টে পরিনত হয়েছে তার একটি হলো এই বিবর্তনবাদ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাতেই এই বিবর্তনবাদকে এখন পিওর বায়োলজি হিসাবে পড়ানো হয়। অধিকাংশ মানুষ মেনেও নেয় সেটা। আর আমাদের মতো দেশের মানুষগুলো এখনো এই সমস্ত আলোচনার উপযোগীই না। লক্ষ লক্ষ বছর আগের মানুষের ফসিল পাওয়া গেলেও তারা এখনো বিশ্বাস করে মানুষ টুপ করে পৃথিবীতে এসেছে, তাও মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার বছর আগে। অথচ মানুষের লিখিত ইতিহাসও পাওয়া যায় এর অনেক আগের।
বাংলাদেশে যে সমস্ত শিক্ষকেরা এই বিবর্তনবাদ পড়ায় তাদের একটা বড় অংশ নিজেরাই তাকে ভুল মনে করে। বিবর্তনবাদ পড়িয়ে পরদিন হয়তো করোনা সারানোর জন্য কোন অলৌকিক ক্ষমতার দাবীদার ফকিরের পানি পড়া খায়। বিবর্তনবাদকে সবার মাঝে পড়ানো ও শেখানোটা খুব জরুরী। বাংলাদেশের একটা বড় অংশ ছাত্র-ছাত্রী এটাকে একেবারেই পড়ে না। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটা অস্পৃশ্য। কিন্তু মানুষের মানবিক উপলব্ধির জন্য, লক্ষ লক্ষ বছরের ধারাবাহিকতা বোঝাতে, মানুষ যে সামাজিক সুশৃঙ্খল আচরন ছাড়া পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবে না তার মর্ম বুঝতে এই বিবর্তনবাদের প্রাথমিক জ্ঞানটুকু থাকা তার জন্য খুব বেশী জরুরী।
আমাদের বঙ্গোপসাগরের আন্দামানের দ্বীপগুলোতে এখনো জারোয়া, সেন্টিনেলি আদিবাসীরা বাস করে যারা ৭০০০০ বছর আগে আফিকা থেকে এসে এখনো সেই আদিম সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। সভ্য মানুষের সংস্পর্শে এসে জারোয়াদের কয়েকটি বড় মহামারিও হয়েছে। সেন্টিনেলিরা এখনো সভ্য মানুষদের সংস্পর্শেই আসেনি। বৃটিশ সরকার তাদের ৪ শিশু ও ২ জন পূর্নবয়স্ক মানুষকে ধরে এনেছিল। কিন্তু বাইরের মানুষের সংস্পর্শে এসেই তাদের ২ জন মারা যায় ও অন্য ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারন তাদের শরীর মানুশের সামান্য সর্দি কাশির জীবানুর সঙ্গে লড়াই করতেও শেখেনি। এইযে তাদের ইমিউন সিস্টেম দূর্বল এটাও বিবর্তনবাদ। হাম, কলেরা, গুটি বসন্ত, যক্ষার ভ্যাকসিন তৈরি সব এই বিবর্তনবাদের ফর্মুলার উপহার। অথচ একটা গোষ্ঠী এখনো এর বিরোধিতা করে স্কুল কলেজ থেকে তা উঠিয়ে দিতে বলে।
এই ক্ষনিকের পৃথিবী ছাড়া যে মানুষ ও অন্য প্রাণীর আর কিছু নেই, এই এক জীবনকেই সুন্দর করতে হবে – এই বোধ মানুষের তখনি জাগ্রত হবে যখন এই বিবর্তন ও তার কিছু পাঠ মানুষ জানবে। টিকে থাকার জন্য মানুষের স্বার্থপরতা এড়িয়ে, সমাজে পারষ্পারিক সহযোগীতা, সামাজিক আইন মেনে চলা এগুলো মানুষ নিজ থেকে শুধু তখনই বুঝবে যখন সে জানবে এই এক পৃথিবীকেই তাকে স্বর্গ বানাতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়েই বিবর্তনবাদের প্রথম পাঠ দেয়াটা খুব জরুরী, সবাইকে রেশনাল না বানাতে পারলে দেশের কোন প্রকৃত উন্নতি হবে না।
Related Posts

ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !
ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More

ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার পশ্চাৎযাত্রা
বাংলাদেশে সাইন্সের স্টুডেন্টদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সারাবছর বিজ্ঞানের জাহাজ মাথায় নিয়ে ঘুরবে, কিন্তু বিশ্বাস করবেRead More

সি সেকশান বা সিজারিয়ান প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্মদানে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ছে
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চরে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বন-মানুষেরা অনেকRead More
Comments are Closed