
Israel, Palestine and Islam
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও ইসলামের অমানবিকতা
একজন মোটামুটি সম্পদশালী আমেরিকানের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হয়, ব্রিটিশ অরিজিন। ভদ্রলোকের অনেক বয়স, যদিও এখনো শারিরীকভাবে ফিট। ভিয়েৎনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকার সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছেন, নাম জন। আমার সঙ্গে হাসি ঠাট্টা করেন মাঝে মাঝে, কিছুটা এডাল্ট টাইপের আড্ডাও দেন, উনিই বলেন মূলত।
সপ্তাহ দুই আগে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন যুদ্ধের কি অবস্থা। আমি বললাম যুদ্ধ বন্ধ হওয়া দরকার, কোন নিরাপরাধ মানুষকে হত্য করার অধিকার কারো নেই। ফিলিস্তিনেরও নেই ইসরায়েলে হত্য করার, ইসরায়েলেরও নেই ফিলিস্তিনে হত্য করার। প্রথমে হত্যা শুরু করেছিলো ফিলিস্তিনি হামাস, একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। ভদ্রলোক, একটু রেগে গিয়ে বললেন সব দোষ ইসরায়েলের, তার দৃষ্টিতে জিউসরা যতো নষ্টের মূল। আমি বললাম সব জিউসরা কেন দোষী হবে, হয়তো অনেকেই দোষী, তবে সবাই নয়; তোমার দেশ আমেরিকাও তো ইসরায়েলের সাপোর্টে থাকে। সে তখন তার নিজের দেশ আমেরিকাকে গালিগালাজ করে আমাকে তার ভিয়েৎনাম যুদ্ধের আইডি কার্ড দেখালো বের করে, আমাকে বোঝাতে চাইলেন তিনি অনেক অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ।
শুনি আমেরিকাতেও মানুষ রাস্তায় নেমেছে প্রতিবাদে, ইসরায়েল যে নিরীহ ফিলিস্তিনী নারী, পুরুষ, শিশুদের হত্য করছে তার প্রতিবাদে। সেখানে সকল ধর্ম, মতাদর্শের মানুষও নাকি গিয়েছে। খোদ ইসরায়েলেও মানুষ প্রতিবাদ করছে। ব্রিটেন, ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে। মানবিক মানুষ যে কোন অন্যায়, যে কোন হত্যার প্রতিবাদ জানাবে এটাই স্বাভাবিক। ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, ইহুদী, নিধার্মিক যে কোন মানুষের কষ্টে, হত্যায় যার হৃদয় কাঁদে না, প্রতিবাদী হয় না তারা কিসের মানুষ? কিন্তু হিসাব করে দেখুন, এখন এমন অনেক মুসলিম প্রতিবাদ করছে, ক্ষোভ জানাচ্ছে যারা হামাস যখন ইসরায়েলে আক্রমন চালিয়ে নিরীহ নারী, পুরুষ, শিশুকে হত্যা করেছিলো তখন তারা আলহামদুলিল্লাহ বলে উল্লাস করেছিলো। এদের কাছে প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ, ক্ষোভ শুধুই মুসলমানদের জন্য বরাদ্ধ।
আমেরিকা, ব্রিটেনের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ চাইছেন এই হত্যাকান্ড শেষ হোক। তারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ব্রিটেনের লেবার পার্টির প্রভাবশালী নেতা জেরেমি করবিন তাদের একজন। কয়েকদিন আগে প্রতিবাদ জানিয়েছে খ্রিস্টান বংশোদ্ভূত এ্যাডাল্ট সিনেমার নায়িকা মিয়া খলিফা। আরো উল্লেখযোগ্য যে ইউরোপের সমকামী অনেক গ্রুপ ফিলিস্তিনিদের স্বপক্ষে ইসরায়েলের বিপক্ষে পথে নেমেছে। ওদিকে এখনো কিন্তু ফিলিস্তিনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের হাতে নিরীহ ২০০ ইসরায়েলী বন্ধী যাদেরকে হামাস প্রথমে ধরে নিয়ে আটক করেছে পণ হিসাবে।

এখন এই যে ইহুদী, খ্রিস্টান, নাস্তিক, মানববাদী, সাধারন বিধর্মী, এ্যাডাল্ট নায়িকা, সমকামী গ্রুপ তারা যদি ভবিষ্যতের স্বাধীন ফিলিস্তিনে বেড়াতে যায় ফিলিস্তিনিরা, বিশেষ করে হামাস কি তাদের বিপদের বন্ধু হিসাবে সমাদর করবে? হামাস কট্টর ইসলামী বিধান মেনে চলে। ইসলামে বলা আছে সমকামীদের হত্যা করতে হবে। তারা কি ফিলিস্তিন ভূখন্ডে তাদের আগমন, তাদের অবস্থান, তাদের বন্ধুত্বের হাত মেনে নিবে? ইউরোপের এই সমকামী গ্রুপগুলোকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো ইসলামে ও ফিলিস্তিনে যে সমকামীতা নিষিদ্ধ, হত্যা করার বিধান আছে, তারা কি তা জানে! তারা বিস্ময়ের সাথে উত্তর দিয়েছে – যারা এত যুগ ধরে নিপীড়িত, তারা কি সমকামীতার জন্য নিজেদের মানুষকে শাস্তি দিতে পারে?
প্রশ্নের উত্তর আপনারাই খুঁজে বের করুন।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, সমকামীদের অধিকারের পক্ষে লেখার কারনে আমাকে এক জঙ্গি ভয়ংকর আক্রমন করেছিলো যার কুফল আমি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি, হয়তো আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আমি লিখেছিলাম প্রকৃতিতে সমকামীতা একটি স্বাভাবিক ব্যতিক্রম। শুধু মানুষ নয়, অন্য অনেক প্রাণী প্রজাতিতেও সমকামীতার নজির দেখা যায়। এটা অন্য অনেক ব্যতিক্রমের মতো প্রকৃতির একটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু ইসলাম এটাকে হারাম ঘোষনা করেছে, সমকামীদের হত্যার কথা বলেছে। একটা নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষকে তার স্বাভাবিক অধিকার ইসলাম দেয় না, বরং তার জীবন কেড়ে নেয়ার কথা বলে। উক্ত জঙ্গি আমাকে আরো হুমকি দিয়েছিলো পরদিন মসজিদ থেকে শত শত ইসলামিস্টকে ডেকে নিয়ে আমাকে আমার বাড়ি থেকে টেনে বের করে পিটাবে, আমি যেখানেই থাকি সেখান থেকেই খুঁজে নিয়ে আসবে, আমি একা, তারা শত শত, আমার কিছুই করার থাকবে না। এমন পাবলিক মব কত ভয়ংকর হতে পারে সে তো সংবাদেই দেখি, জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া, পিটিয়ে মেরে ফেলা। ২০১৭ সালেও আমার বাসার সামনে এমন এক পাবলিক মবের শিকার হয়েছিলাম এই ইসলামের ভুল, ত্রুটি, অমানবিকতা নিয়ে লেখার কারনে; বাড়ির গেইট লক করা ছিলো বিধায় ও পুলিশের হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলাম। ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছে ইসলামের বিধান কঠোরভাবে মেনে চলতে, সেজন্য জঙ্গিরা সেগুলো মেনে চলে। আপনি ইসলামের সমস্যার মূলে হাত না দিয়ে, সেখানে সংস্কার না করে শুধু কিছু ইসলামিস্টকে শাস্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না।
Related Posts

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন – বি এন পি যেভাবে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছিল
২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভভুত্থানের আগে ১৯৯০ সালে ছাত্র জনতার ত্যাগের বিনিময়ে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের যেRead More

This Religious Frenzy Must End Now – Walk the Path of Civilization
Bangladesh’s society has changed dramatically over the past 20–30 years. One of the most destructiveRead More

স্বৈরাচার যখন দানব হয়ে যায় তখন মানুষের লাশের গন্ধ তাদের কাছে প্রিয় হয়
আমি আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের কমিটির কখনোই কেউ ছিলাম না, এখনো নেই। আওয়ামী লীগ বাRead More
Comments are Closed