Islamic injustice to women
শরীয়া আইনের এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত, নারীর প্রতি ইসলামের অবিচার!
মর্মান্তিক আর হৃদয়বিদারক একটা ঘটনা ২০০৪ সালের, এবং এটা ঘটেছিল ইরানে।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর পরই সেখানে শরীয়া আইন চালু হয়। ২০০১-এর কথা। ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী আতেফেহ সাহালে । শৈশবে মাকে হারায়, কয়েক বছর পর ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। বাবা আর দাদা-দাদীর সঙ্গে থাকতো রজবী। বাবা নেশাখোরে পরিণত হয়, ফলে দাদা-দাদীর দেখভালসহ সংসারের দায়িত্ব একরকম রজবীর কাঁধে এসে পড়ে। তাদের এক প্রতিবেশী ছিল আলী দারাবী। পেশায় ট্রাক ড্রাইভার, আগে ইরানি রেভোলুশন গার্ডের কর্মী ছিল। বয়স পঞ্চাশেক, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতো। একদিন সুযোগ পেয়ে সে রজবীকে ধর্ষণ করে। বাবা নেশাগ্রস্ত, পরিবার নিয়ে উদাসীন, রজবী তাই তার দাদীকে জানায়। দেশে শরীয়া আইন চালু, ধর্ষণের আইন, বিচার সম্পর্কে দাদীও ভালোভাবে অবগত ছিল। তিনি রজবীকে এটা কাউকে জানাতে মানা করেন। প্রায় দুই-তিন বছর রজবীর ওপর ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন চলতে থাকে। এরপর রজবী আর সইতে না পেরে তার বাবার কাছে এসে চিৎকার করে জানায়। তার বাবা এবার একটু সচেতন হন, রজবীকে নিয়ে পুলিশ থানায় যান এবং দারাবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পুলিশের দায়িত্ব হলো পীড়িতের অভিযোগ গ্রহণ করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, এখানে ঘটে উল্টো। তারা দারাবীকে ধরার বদলে রজবীকেই গ্রেফতার করে হাজতে বন্দি করে। তার বিরুদ্ধে ‘crime against chastity’, সহজ ভাষায় ব্যাভিচারিতার মামলা দায়ের করা হয়। রজবী প্রতিবাদ করতে থাকে, কিন্তু তার কোনো কথাই শোনে না পুলিশ। ইসলামী শরীয়া আইন অনুযায়ী কোনো নারী যদি ধর্ষণের অভিযোগ করে, সেক্ষেত্র চারজন সাক্ষী যোগাড় করে তাকেই প্রমাণ করতে হয় যে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।
রজবী চাক্ষুষ সাক্ষী যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু রজবীর ওপর নির্যাতন এখানেই শেষ হয় না। পুলিশ হাজতেই পুলিশের কয়েকজন লোকও তাকে পাশবিকভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে।
মাসখানেক চলে এভাবে।
রজবীর বাবা আর দাদীর অনেক প্রচেষ্টার পর মামলাটি আদালতে যায় এবং ট্রায়াল শুরু হয়। কিন্তু আদালতের চিত্রও এমন, যেন রজবীই অপরাধী।
এরকমভাবেই একদিন শুনানি চলাকালীন বিতর্ক চলছিল। যিনি বিচারক ছিলেন, তিনি রজবীর বিপক্ষেই কিছু মন্তব্য করেন। রজবীও টের পেতে শুরু করে, পুলিশের মতো আদালতও তার বিপক্ষে যাবে। সে রেগে যায়।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গায়ের বোরখা খুলে প্রতিবাদ শুরু করে বলে, আপনারা দয়া করে আমার ওপর জুলুম করবেন না। আমি নিপীড়িত, বিচারপ্রক্রিয়া ওই লোকটির বিরুদ্ধে হওয়া উচিৎ, আমার বিরুদ্ধে নয়। এখানেই ভুল হয় তার।
ইরানে নিয়ম আছে যে, পরপুরুষের সামনে বা ‘পাবলিক প্লেসে’ নারীরা হিজাব ছাড়া থাকতে পারবে না। যিনি বিচারক ছিলেন, তিনি রজবীর এই কাণ্ডে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। বলেন, তোমার মোকাদ্দমার কথা জানি না। কিন্তু তোমার এই ধৃষ্টতার জন্য তোমার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। এবার রজবীও একদম ভেঙে পড়ে। ধর্ষণের বিচার চাইতে আসায় উল্টো তাকেই অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাকেই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। সে বুঝলো, ন্যায়বিচারের শেষ আশাটুকুও তার জন্য শেষ হয়ে গিয়েছে,ক্ষোভে দুঃখে রাগে সে তার পরনের জুতা খুলে বিচারকের দিকে ছুঁড়ে মারে, এতো রকম শারীরিক ও মানসিক টর্চারের পর ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ের এই রকম বহিঃপ্রকাশ খুব কি অস্বাভাবিক ছিল? আপনার কাছে যাই মনে হোক শরীয়া আদালতের বিচারক এবার রাগে অন্ধ হয়ে পড়লেন। তিনি ফুঁসতে ফুঁসতে রজবীকে বললেন, তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। এই বিচার শেষ।
এরপর মাত্র এক সপ্তাহ পর, ১৫ আগস্ট ২০০৪ তারিখের সকালে ইরানের নেকা শহরের রাস্তায় একটা ক্রেন আনা হলো। তাতে একটা ফাঁসির দড়ি ঝোলানো। চারদিকে মানুষের ভীড়। হাত ও চোখ বাঁধা রজবীকে আনা হলো। বিচারক হাজী রেজাই একই সঙ্গে একজন মৌলভী ও শহরের প্রশাসক ছিলেন। তিনি নিজ হাতে রজবীর গলায় ফাঁসের দড়ি পরালেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে একজন বিচারক জল্লাদের রূপ নিলেন। এরপর হাজারো মানুষের সামনে রজবীকে ফাঁসি দেয়া,,,, হলো! হ্যাঁ, ঠিক ই পড়ছেন ফাঁসি দেওয়া হলো,,,!
প্রায় এক ঘণ্টা রজবীর মৃতদেহ শহরের রাস্তায় ঝোলার পর তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু তার পরদিনই, রজবীর বাবা আর দাদী তার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন।
তারা দেখলেন যে রজবীর কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে, তার লাশ নেই। তারপর সেই লাশ আর কখনোই পাওয়া যায়নি। এরপর ইরানের গণমাধ্যমে এ ঘটনা প্রকাশিত হয়। জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ইরানে ১৮ বছরের কম বয়সী কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু বিচারক হাজী রেজাই আইন লঙ্ঘন করে রজবীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে যায়। আদালত মৃত রজবীকে নির্দোষ ঘোষণা করেন। বিচারক হাজী রেজাই ও মামলার সাথে জড়িত আরো কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু এতো কিছুর পরও, তার ধর্ষকের বিচার কখনো হয়নি।
এই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক মামলা।
এটাই ইসলামী সায়েন্স
Related Posts
এই ধর্মীয় উন্মাদনা এখনি থামাতে হবে, সভ্যতার পথে হাঁটুন
বাংলাদেশের সমাজটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে বিগত ২০/৩০ বছরে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে জঘন্য অনুঘটক ছিলRead More
Under the cover of development, the real image of India, Pakistan, and Bangladesh
India has sent a spacecraft to the moon and successfully landed there. There is noRead More
উন্নয়নের আড়ালে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের প্রকৃত করুন চিত্র
ভারত চাঁদে নভোযান পাঠিয়েছে এবং সেটা সেখানে সফল অবতরণও করেছে। ভারতের এতে গর্বের সীমা নেই,Read More
Comments are Closed