Civilization
Future of the Civilization

Future of the Civilization

মানুষ একদিন ইউনিভার্স এ রাজত্ব করবে

কক্ষপথে থাকা কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ এর কথা আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন। মহাবিশ্ব গবেষনায় কেপলারের ভূমিকা বিশাল।

১৮৯০ সালে প্রথম বিজ্ঞানীরা আকাশে একটি বিশেষ নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করেন ও লিপিবদ্ধ করেন। এর নাম হচ্ছে ট্যাবি’স স্টার বা আমাদের নাসার ভাষায় কেআইসি ৮৪৬২৮৫২। নক্ষত্রটি একটি এফ টাইপ মেইন সিকুয়েন্স স্টার যা কন্সটেলেশন সিগনাসে অবস্থিত। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব হচ্ছে ১২৮০ আলোকবর্ষ বা ৩৯০ পারসেক। অর্থাৎ আলো আমাদের থেকে যেতে বা ঐ নক্ষত্র থেকে আসতে ১২৮০ বছর লাগে ( আলোর গতিবেগ সেকেন্ডে ৩ লাখ কিমি )। এফ টাইপ মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রগুলো আকারে আমাদের সূর্যের সমান হলেও সূর্য থেকে অনেক কম আলো ও তাপ উৎপন্ন করে। আমাদের সূর্যের মতো কমলা আলোর বদলে হালকা হলুদ ও সাদার মিশ্রিত আলো বিকিরণ করে।

আমরা এই নক্ষত্রকে মাঝে মাঝে হোয়াট দ্যা ফাক স্টারও বলে থাকি কারন এই নক্ষত্র থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের বিস্মিত করে তুলেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণে নক্ষত্রটির আলো অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ও কমছে যা হবার কথা নয়। পুরো পৃথিবীর সায়েন্স কমিউনিটিতে সাড়া পড়ে যায়। অনেক থিওরি আসা শুরু করে এই নক্ষত্রটি ঘিরে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ডাইসন স্ফিয়ার।

ডাইসন স্ফিয়ার হচ্ছে ব্রিটিশ থিওরেটিকাল পদার্থবিজ্ঞানী স্যার ফ্রিম্যান জন ডাইসনের একটি থিওরি। ডাইসন স্ফিয়ার হচ্ছে এমন একটি কৃত্রিম মেগাস্ট্রাকচার যা একটি নক্ষত্রকে সম্পূর্ণ ভাবে ঘিরে ফেলে একটি নক্ষত্রের সম্পূর্ণ শক্তিকে শোষণ করার জন্য। একটি ডাইসন স্ফিয়ার একটি সভ্যতাকে দিতে পারে অসীম শক্তি। তাহলে এখানে প্রশ্ন আসছে, যদি টবি’স স্টারে কেউ ডাইসন স্ফিয়ার তৈরি করে থাকে, তাঁরা কারা ? আর এটা বোঝার জন্য আমাদের বুঝতে হবে কারদাশেভ স্কেল।

১৯৬৪ সালে রাশিয়ান থিওরেটিকাল পদার্থবিজ্ঞানী নিকোলাই কারদাশেভ একটি সভ্যতার উন্নতি পরিমাপ করার জন্য একটা স্কেল তৈরি করেন যার নাম কারদাশেভ স্কেল। এই স্কেলের মধ্যে রয়েছেঃ

টাইপ ১ – প্ল্যানেটারি সভ্যতাঃ

এমন একটি সভ্যতা যেটি নিজের সৌর জগতের সকল গ্রহকে কলোনাইজ করেছে। এই সভ্যতা তাঁর কেন্দ্রিয় নক্ষত্র বা সূর্য থেকে 7×10^17 ওয়াট শক্তি আহরণ করতে সক্ষম। নিজের গ্রহের সমস্ত এনার্জি হারনেস করার ক্ষমতা যার রয়েছে – যেমন, ভূমিকম্প, টর্নেডো, অগ্ন্যুৎপাত ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারা।

টাইপ ২ – আন্তঃনাক্ষত্রিয় সভ্যতাঃ

এমন একটি সভ্যতা যা একটি ডাইসন স্ফিয়ার তৈরি করে তাঁর নিজের সূর্যের সম্পূর্ণ শক্তি আহরন করতে সক্ষম। ইন্টারস্টেলার সভ্যতা। মানে নিজের তারা, অর্থাৎ আমাদের ক্ষেত্রে যা সূর্য, তার যাবতীয় শক্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। এই সভ্যতা নিজের সৌর জগত ছাড়িয়ে শত অথব সহস্র আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে অন্য সৌর জগতের গ্রহ কলোনাইজ করতে সক্ষম।

টাইপ ৩ – মহাবৈশ্বিক সভ্যতাঃ

গ্যালাক্টিক সভ্যতা। মানে আমাদের ক্ষেত্রে আমাদের গ্যালাক্সির যাবতীয় শক্তি আহরণের ক্ষমত। এমন একটি সভ্যতা যা আমাদের মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্যালাক্সি বা তারকাপুঞ্জে যেতে সক্ষম। এরা সময় এবং স্থান (টাইম এন্ড স্পেস) সম্পর্কে অসীম জ্ঞান রাখে।

টাইপ ৪ থেকে টাইপ ওমেগাঃ

ইউনিভার্সাল সভ্যতা। মানে পুরো ইউনিভার্সের যেকোন জায়গায় গিয়ে শক্তি আহরণ করার ক্ষমতা। এটি হচ্ছে ঐশ্বরিক ক্ষমতা সম্পন্ন বিভিন্ন সভ্যতা যারা এতোটাই উন্নত যে তাঁদের বর্ণনা করা আমাদের সীমিত বিজ্ঞান ও মেধা দিয়ে সম্ভব নয়।

টাইপ ৫ হলো মাল্টিপল ইউনিভার্সের ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা।

বলে রাখা ভালো আমরা মানুষরা এই মুহূর্তে টাইপ ০ তে বা ০.৭৩ এ আছি। টাইপ ১ এ পৌঁছাতে আমাদের লাগবে কমপক্ষে পাঁচশ বছর। টাইপ ১ সভ্যতা গড়ার জন্য সবচেয়ে প্রথম প্রচলিত অপ্রমানিত বিশ্বাস আর জাতীয়তাবাদের বিলুপ্তির প্রয়োজন। আর টাইপ ২ এ পৌঁছাতে লাগবে লক্ষাধিক বছর। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী কার্ল সেগানের মতে “মানুষ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এখনো নবজাতক, যা ধীরে ধীরে টাইপ ১ সভ্যতা গড়ার দিকে যাচ্ছে”।

যদি টবি’স স্টারে আমরা যা দেখছি তা যদি ডাইসন স্ফিয়ার হয়ে থাকে তাহলে এটা এমন এক সভ্যতা তৈরি করেছে যারা জ্ঞান ও বিজ্ঞানে আমাদের থেকে কমপক্ষে এক লক্ষ বছর এগিয়ে আছে। এঁরা এতোটাই উন্নত যে আমরা তাঁদের সাথে চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করতে পারবো না। তাঁদের সাথে যোগাযোগ করাটা হবে অনেকটা পিঁপড়ার মানুষের সাথে কথা বলার মতো।

K = log10 ^ P-6/10
এখানে K হচ্ছে কারদাশেভ স্কেলে একটি সভ্যতার রেটিং, P হচ্ছে তাঁর শক্তির ব্যাবহার। ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী সারা পৃথিবী শক্তি খরচ করছে 550.451 exajoules (550×10^18 J=13147.3 million BBL), যা হচ্ছে 17.35 TW বা কার্ল সেগানের মতে আমরা ০.৭২৩৯ টাইপ সভ্যতা। আমি ১ এর নিচে যা আছে সেটাকে আমি ০ হিসেবেই ধরি। সুতরাং আমার হিসেবে মানুষ এখন টাইপ ০ সভ্যতায় রয়েছে। কারন কার্ল সেগানের গনিত পশ্চিমা এবং উন্নত বিশ্বকে ঘিরে তৈরি হয়েছে, আমাদের দেশের অনুভূতি প্রবন মানুষদের নিয়ে তৈরি হয় নি।

কারদাশেভ স্কেলটি অনেক জটিল একটি ফর্মুলা। যেমন একটি টাইপ ৩ ইন্টারগ্যালাক্টিক সভ্যতা শুধু বিভিন্ন গ্যালাক্সিতেই যেতে পারবে না, এঁরা অণুর পারমাণবিক বন্ডকে মেন্যুপিলেট করে এমন সব পদার্থ তৈরি করতে পারবে যা পর্যায় সারণীতে নেই। টাইপ ৪ পরমাণুদের পরিবর্তন এবং সম্পূর্ণ কৃত্রিম বহুকোষী প্রাণী তৈরি করতে সক্ষম হবে। টাইপ ৫ একটি পারমাণবিক নিউক্লিয়াস পরিবর্তন করতে পারবে, এমন কি কৃত্রিম ভাবে নিউক্লিওন তৈরি করতে পারবে যা আমাদের বর্তমান পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় অসম্ভব, কারন এটা শক্তির নিত্যতার সূত্রের সাথে যায় না। টাইপ ৬ হল যাকে বলে ঐশ্বরিক এবং এঁদের চিন্তা অথবা বিজ্ঞানের ধরন আমাদের ত্রিমাত্রিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। এঁরা হবে বহুমাত্রিক জীব। এঁরা মহাবিশ্বের প্রাথমিক কনাগুলো যেমন কোয়ার্ক এবং লেপ্টনকে ব্যাবহার করে একটি কৃত্রিম মহাবিশ্ব তৈরি করতে সক্ষম। আর শেষে আসি টাইপ ওমেগা সভ্যতা, যাদের পক্ষে একাধিক মহাবিশ্ব এবং মাত্রা তৈরি করা সম্ভব। এঁদের কাছে সময় এবং স্থান বলে কিছু নেই। সম্পূর্ণ অমর, অবিনশ্বর এবং সর্বশক্তিমান। ঐশ্বরিক শক্তি বলে যদি কিছু থেকে থাকে সে হবে টাইপ ওমেগা সভ্যতার একটি সত্ত্বা। আমি ওমেগা সভ্যতার কাউকে জীব বলবো না। কারন তাঁরা বিবর্তনের ধারায় জৈবিকতাকে বহু পেছনে ফেলে এসেছে।

কারদাশেভ স্কেল নিয়ে অনেক কিছুই লেখা যায়। তবে বিজ্ঞান নিয়ে অনলাইনে লিখতে গেলে চিন্তা করতে হবে যে পাঠকদের অধিকাংশেরই ব্যাকগ্রাউন্ড পদার্থবিজ্ঞান বা গণিত নয়। সুতরাং যত সহজ ও বোধগম্য করে লেখা যায় ততটাই ভাল।

টাইপ ১ – প্ল্যানেটারি সভ্যতায় যেতে হলেও আমাদের জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম নামক অমানবিক বিষয়গুলো ঝেড়ে ফেলতে হবে। অন্যান্য বিশ্বাসের ভেদাভেদ কে তো ইতিহাস বানাতে হবেই। না হলে বড় বড় পরাশক্তির মাঝে যেমন আমেরিকা, রাশিয়া চীন এরা এক একটা গ্রহ উপগ্রহকে নিজের কলোনী বানাবে। সেই বাস্তবতা হয়ত থাকবেও না। পৃথিবীতে দেশ, জাতি বলে কিছু নাও থাকতে পারে। মানুষ হবে গ্লোবাল সিটিজেন যারা তখন বিশ্ব নিয়ে নয়, চিন্তা করবে সৌরজগৎ নিয়ে।

Related Posts

Sunlight and Human Body

Sunlight: A Natural Medicine, Cultural Wisdom, and the Key to Healthy Longevity

For thousands of years, many civilizations have worshipped the sun as a deity – notRead More

Sunlight and Vitamin-D

সূর্যের আলো: প্রাকৃতিক ঔষধ, সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকর দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি

হাজার হাজার বছর ধরে অনেক সভ্যতা সূর্যকে দেবতা মানে; শুধু বৈদিক, পৌরাণিক, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য,Read More

Evolutionary Biology and Women

Protecting women is a man’s responsibility – this is a lesson rooted in evolutionary psychology

A common tendency across all societies is to take extra care of women. This isRead More

Comments are Closed