
Education, Science and Technology - No Alternative !
গায়ের জোরে এখন কিছু হয় না। পারলে শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে উন্নতি করে দেখান
আমি ইসরায়েলের রাজনৈতিক চর্চার ঘোরতর সমালোচক, বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে, তাদের মানবতা বিরুদ্ধ অপরাধের শাস্তিও চাই, যদিও সেটা তারা পাবে কিনা তা এক বড় প্রশ্ন। ফিলিস্তিনের মানুষের সঙ্গে তারা শিয়ালের মতো আচরন করলেও নিজদের দেশের ভিতরে সব গোত্রের মানুষের সমান অধিকার। তাদের শিক্ষা, গবেষণা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার আমি গুণমুগ্ধ ভক্ত। মেডিক্যাল গবেষণায় তারা বিশ্বের শীর্ষে। বিশ্বের প্রায় সব শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সেখানে। শিক্ষা ও জ্ঞানের বিকাশের মাধ্যমে তাদের দেশের মানুষকে তারা সেই স্তরে নিতে পেরেছে যে মানের কারনে বিশ্বের প্রায় সব পরাশক্তি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান, বড় বড় কোম্পানি কারা নেই তাদের উপর নির্ভরশীল ?
আগে দেশের অনেক পরিবারে ১২-১৫ জন ছেলেমেয়ে থাকতো। অন্য অনেক কারনের পাশাপাশি তাদের ধারনা ছিল বেশী ছেলে-মেয়ে হলে এলাকায় প্রভাব বাড়বে, কাজের পরিমান বাড়বে। প্রভাব কেন বাড়তো ? কারন তাদের লাঠির সংখ্যা ও জোর বেশী ছিল। কিন্তু এই যুগে এমন অনেক পরিবার সমাজে মাতবারি করে তাদের পরিবারের সদস্যসংখ্যা ২-৫ জন। কিভাবে সম্বব ? এখানেই বুদ্ধির প্রবাব, শিক্ষার শক্তি। সুকৌশল বা কুট-কৌশল যেটাকেই আমলে নেন না কেন শিক্ষা ও জ্ঞান ছাড়া সেটা সম্ভব নয়।
এই যে কিম জং উন ও তার উত্তর কোরিয়া মানুষের মুখে খাবার দিতে পারে না, অথচ তাদের আছে পারমানবিক বোমা। তাদের শক্তিকে সবাই ভয় পায়, এমনকি আমেরিকার মতো পরাশক্তিও তাদের সমঝে চলে। কিন্তু, বিশ্বে তাদের প্রভাব নেই, কোনই প্রভাব নেই, তারা বিশ্বের কোন নীতি নির্ধারনে ভূমিকা রাখতে পারে না। কারন কি ? কারন তাদের শিক্ষা, জ্ঞান, আপোষকামী মনোভাব ও সঠিক কূটনৈতিক দক্ষতা নেই।
ওদিকে ছোট্ট দেশ ইসরায়েল, যাদের লোকসংখ্যা ১ কোটিরও নীচে তারা বিশ্বের নেপথ্য নিয়ন্ত্রক। শুধুমাত্র তাদের শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক দক্ষতার কারনে। এই যুগে গায়ের শক্তি, সামরিক শক্তি তেমন কোন কাজে লাগে না। পাকিস্তান পারমানবিক বোমা নিয়েও দক্ষিন কোরিয়া, জাপান, জার্মানির মতো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কখনো দেখাতে পারবে না। কারন তাদের প্রযুক্তি কেউ ব্যবহার করে না, তাদের দক্ষিন কোরিয়ার মতো একটা স্যামসাং নেই যা বিশ্বের বেশীরভাগ মানুষের হাতে হাতে থাকে, মানুষের প্রত্যেক দিনের অপরিহার্য সঙ্গী।
এতোকিছু বলার একটাই অর্থ এই যে, যারা আমাদের দেশে কথায় কথায় এই বয়কট করেন, সেই বয়কট করেন, লাখে লাখে পঙ্গপালের মতো রাস্তায় নেমে যান ফ্রান্সের বিরুদ্ধে, অন্যের উপাসনালয়, ঘর-বাড়ি-দোকান ভাংচুরে লেগে যান; আপনাদের পাল পাল মানুষ আছে, লাঠি আছে, আগুণ আছে কিন্তু নেই সেই প্রভাব যা একটি দেশ, সমাজ, বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারে আলোর পথে, জ্ঞানের পথে, সমৃদ্ধির পথে। ইংরেজ আমল থেকেই আপনারা আধুনিক শিক্ষার বিরোধিতা করে আসছেন, অথচ আপনাদের পছন্দনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের মানে অচল। ভারতে ‘টোল’ কে সরকার কোন ভর্তুকি দেয় না, সরকারী কোন ‘টোল’ তো নেইই। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেই ‘টোলে’র বিস্তার ঠেকিয়েছে। কেউ ‘টোল’ রাখার জন্য রাস্তায় নামেনি। ‘টোল’ কি জিনিস, জানতে হলে গুগলে সার্চ দেন। সেই ভারতের লোকেরা এখন বিশ্বের সব বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে ঐ একই মানের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের পরিকল্পনা নিলে আপনারা পালে পালে রাস্তায় নেমে অরাজকতা তৈরি করবেন। এটাই বাস্তবতা।
লাঠি দিয়ে, শক্তি দিয়ে, সংখ্যা দিয়ে এই যুগে কিছু করা যায় না। পারলে শিক্ষায় শিক্ষিত করুন আপনার স্বজনকে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে-প্রযুক্তিতে দক্ষ করুন আপনার গোত্রের সবাইকে। ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান দেখিয়ে অন্য গোত্রের মানুষকে কাছে ডেকে নেন। দেখবেন, তখন জোর করে আপনার মদাদর্শ প্রচার করা লাগবে না, এমনিতেই অন্যরা আপনার আদর্শ দেখে অনুপ্রানিত হয়ে আপনার কাছে চলে আসবেন। কোন শক্তি প্রয়োগ না করে, অপমৃত্যুর শিকার হওয়ার সম্ভাবনাকে কবর দিয়ে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে আলোকিত হওয়া তো তুলনামূলক সহজ কাজ। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিন, আইন ঠিকমতো কাজ না করলে প্রতিবাদ করুন, অন্যায়ের প্রতিরোধ করুন। কিন্তু যিনি অন্যায় করেননি, যারা আপনার কোন অধিকার হরণ করছে না, তাকে কেন আপনি আক্রমন করতে যাবেন ? বাবা তার ছোট ছেলের সঙ্গে শক্তির খেলায় ইচ্ছে করেই হারে, কারন তার সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়ে, তার নিজের শক্তির উপর তার ভরসা জন্মে। তেমনি আপনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্য মাঝে মাঝে নিজে হেরে অন্যের জন্য স্পেস দিতে হয়। তাতে লাভটা আপনারই হবে।
আপনাকে উগ্র বানিয়ে, আপনাকে মূর্খ রেখে, আপনাকে লেলিয়ে দিয়ে লাভ কার জানেন ? নোংরা রাজনীতির চর্চা করে যারা তাদের, আর যারা ধর্ম ব্যবসা করে খায় তাদের। তারা জানে তারা নিজেরা কোন আয় করে না। কৃষি কাজ করে, ব্যবসা করে, চাকুরি করে আপনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করেন। তারা আপনার সেই কষ্টার্জিত আয়ে ভাগ বসায়, সহজে তো আপনি দিবেন না। এজন্য আপনাকে মূর্খ রাখতে পারলে, আপনাকে উগ্র রাখতে পারলে, আপনাকে অন্ধকারে রাখতে পারলে তাদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। দেখবেন সবখানে কিন্তু তারা আপনাকে লেলিয়ে দেয় না। ভারতের বিরুদ্ধে, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে দিবে কিন্তু চীনের বিরুদ্ধে দিবে না। তারা হিসাব করে, কত সহজে আপনার মূর্খতাকে তার শক্তি হিসাবে কাজে লাগানো যায়।
১ কোটি মানুষের মধ্যে লোবেল প্রাইজ পেয়েছেন শতাধিক, অন্যদিকে দেড়শ কোটি মানুষের মাঝে পেয়েছেন ১০ জনেরও কম। এখন যদি বলেন নোবেল কমিটি পক্ষপাতিত্ব করে, তার কিছুটা সত্য হলেও ঢালাওভাবে বলাটা মূর্খের প্রলাপ ছাড়া কিছু না। এই সমস্ত মূর্খতার বক্তব্যগুলো তারা আপনাদের মাঝে জনপ্রিয় করে রাখে, নিজের মূর্খতাকে এই সমস্ত প্রলাপের স্বান্তনায় ঢেকে দিয়ে রাতে যেনো আপনার ঘুম ভাল হয়, সেজন্য। পরের দিন আবার আপনি কাজ করবেন, আপনার জমানো টাকা থেকে তাদের দিবেন এই নামে, ঐ নামে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আপনার শ্রমের আয়ে ভাগ বসানোই তাদের আল্টিমেট লক্ষ।
আমি জানি আপনি এটা বুঝবেন না। আপনার কাছে মনে হবে আপনি যা করছেন সেটাই সঠিক। আপনাকে এমনভাবে তারা আফিম খাইয়ে রাখে যে আপনি অন্য কারো কথাকেই আমলে নিবেন না। পাত্তা দিবেন না। অথচ নিজে যদি একটু সতর্ক হতেন, শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে সেরা হওয়ার প্রচেষ্টা নিতেন তবে এমনিতেই আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হতো। গায়ের জোরে সব হয়না এ যুগে। এই যুগে শ্রেষ্ঠ হতে হলে আপনাকে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতেই হতে হবে, অন্য কোন বিকল্প নেই।
Related Posts

মায়ের গর্ভে সন্তান ও সেই ছবিটি হতে পারতো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ফটোগ্রাফি কিন্তু এখানে …
কয়েকদিন আগে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোকের কথা জানলাম। তিনি আবার তথাকথিত এক বড় ধর্মীয় রাজনৈতিক দলেরRead More

বুগান্ডার জরুরী সেবা 999 নাম্বারের গল্প এটা ! অবিশ্বাস্য সেবার উদাহরণ !
অনেক গল্প আছে, তবে এটা সেগুলোর একটি মাত্র। জরুরী সেবা যে কতভাবে, আন্তরিকভাবে মানুষের সমস্যাRead More

ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নকে ঘিরে কিছু সাধারণ কল্পকাহিনী ও প্রকৃত বাস্তবতা বা ফ্যাক্ট
মিথ: যে কোন সময় একা বাইরে যাবেন না। গভীর রাতে বাইরে, অন্ধকার গলিপথে মহিলারা সবচেয়েRead More
Comments are Closed