
Does Clothing Affect Men's Perception ?
চারপাশে দুর্নীতির মেলা বসছে – তা নিয়ে ওনাদের সমস্যা নাই, যতো সমস্যা মেয়েদের ড্রেস নিয়ে
কে কি পোশাক পরবে, কার সঙ্গে ঘুরবে, কার সঙ্গে বিয়ে করবে, কার সঙ্গে শোবে এগুলো একান্তই মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপার। এটা যে সেই স্বাধীনতা নয়, একেবারে মৌলিক মানবাধিকার। স্ব-ধর্মের কাউকে বিয়ে করবে নাকি ভিন্ন ধর্মের কাউকে সেটাও যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বাংলাদেশের সমাজে অনেক গাড়ল এই খুব সহজ কথাটা বোঝেনা। এই গাড়লগুলো আর কিছু পারুক বা না পারুক মেয়েদের ও মেয়েদের পরিবারের পিছনে লাগতে খুবই পটু।
চারপাশে দুর্নীতির মেলা বসছে – তা নিয়ে ওনাদের সমস্যা নাই, যতো সমস্যা মেয়েদের ড্রেস নিয়ে
মেয়েটির নাম নুরুননাহার চৌধুরী ঝর্ণা। বাড়ী মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কৃষ্ণপুর গ্রামে।


ঝর্ণা সিলেট নগরের মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ঝর্ণা। তো আমেরিকা আসার পর ঝর্ণার শিক্ষক জয়তূর্য চৌধুরী বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। এবং সে যে আমেরিকায় এসেছে পৌঁছেছে সেজন্য কিছু ছবি পোস্ট করেন। এইসব ছবি দেখে ঝর্ণার গ্রামের লোকজন আপত্তিকর মন্তব্য করেন। শুধু তাই নয়, তার বাবাকে ভাটেরা বাজার জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির কিছু লোক ডেকে বলে মেয়ে কেন এমন পোশাক পরেছে। সেজন্য ঝর্ণার বাবাকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেওয়া হয় ।

এই তথাকথিত পঞ্চায়েত কমিটির এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার কে দিয়েছে ? এহসান গ্রুপ ১৭ হাজার কোটি টাকা মেরে দিল ধর্মের দোহাই দিয়ে, সেটা নিয়ে কিছু বলে না। একজন দুর্নীতিবাজ দুর্নীতি করে, সেটা নিয়ে কিছু বলে না। এখন ঘুষখোর হরহামেশা ঘুষ খায়, সেটা নিয়ে কিছু বলে না।
মাদ্রাসায় বলাৎকার হচ্ছে শিশুরা, সেটা নিয়ে কিছু বলে না। মেয়ে কেন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গেল, এমন পোশাক পরল, তা নিয়ে বাবাকে সমাজচ্যুত করে? আজব। আমরা কি সামনে যাচ্ছি না পেছনে হাটছি ? আর কি হলে বলা যায় যে অন্ধকারের পথে হাঁটছি ! আমরা আমেরিকার মত উন্নত দেশ চাই কিন্তু মেয়ের উচ্চ শিক্ষা চাই না। আইন কোথায় ? ঝর্নার বাবাকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছি।
আর আপনারা যারা ঝর্নার পোশাক নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ তাদের বলছি, আপনারা মেয়েদের শরীর, পোশাক, চলাফেরা, প্রেম, বিয়ে এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে সেই ভাবনা মেয়েদের উপরই ছেড়ে দিন। কি পোশাক পরবে, কে কার সঙ্গে যাবে, ঘুরবে, শোবে সেই ভাবনা আপনি না নিয়ে হালকা হোন। কেন শুধু শুধু অন্যের চিন্তা করে নিজের সময় নষ্ট করেন ? সেই সময়টুকু কিছু শিখে বা কাজ করে উপার্জন করুন। পাপ হলে তার হবে, শাস্তি হলে তার হবে। আপনার বা অন্য কারো তো কোন ক্ষতি করছে না তারা, তাদের জন্য তো আপনাকে শাস্তি পেতে হবে না। তাহলে আপনার এত মাথা ব্যাথা কেন ?
এই সমাজে একটা ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। সেটা হলো মেয়েদের পোশক পরার শিক্ষা দেয়া, মেয়েদের কারনে যুবসমাজ অধঃপতনে যাচ্ছে এই সবক দেয়া। এই ব্যাপারে তিনিও কথা বলেন যিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন দুর্বিনীত দুর্নীতি করে, লোক ঠকিয়ে, ভেজাল দিয়ে। এই এক জায়গায় তিনিও স্বোচ্চার যিনি আত্নীয় স্বজনের জমি-জায়গা গিলেও পেট খালি থাকায় শেষে প্রতিবেশী ভিক্ষুকের ভিটেমাটিও গিলেছেন। সেই মানুষটিও বড় গলায় মেয়েদের শিক্ষা দেন যিনি শিক্ষক থাকাকালীন তার শিশু ছাত্র/ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। সেই মডারেটও কথা বলতে ছাড়েন না যিনি তার পরিবারে, সমাজে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। লোক ঠকানো যার নেশা ও পেশা সেই মানুষটিও এক হয়ে যায় মেয়েদের শিক্ষা দেয়ার সময়ে।

যদি করার মতো কোন কাজ খুঁজে না পান, যদি সত্যিই কিছু করতে চান তবে তবে এমন কিছু করুন যা সমাজের জন্য কাজে লাগবে। আশপাশে কে না খেয়ে আছে, কে অসুস্থ আছে, কার রক্ত লাগবে, কার দেখার কেউ নেই, কে অসহায় দিন কাটাচ্ছে, কে একটু সাহায্যের হাতের জন্য অপেক্ষায় আছে সেগুলোর খোঁজ করুন। কম বয়সী কাউকে কেউ ফুসলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিনা, জোর করে কেউ কিছু করছে কিনা, কেউ দুর্নীতি করছে কিনা, খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে কিনা, কেউ বউ পেটাচ্ছে কিনা, শিশুকে মারধোর করছে কিনা, অন্যের সম্পদ লুটে নিচ্ছে কিনা, কেউ আইন অমান্য করছে কিনা, মিথ্যা বলে কারো ক্ষতি করছে কিনা এসবে চোখ রাখুন, প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ করুন।
কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে দয়া করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখবেন। দেখবেন আপনার নিজের প্রতিই আপনি সন্তুষ্ট না। সেই অপূর্ণতাগুলো পুরন করার চেষ্টা করুন। মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় কেটে যায় যোগ্যতা প্রমাণ করতে করতে আর বাকিটা সময় কেটে যায় অন্য মানুষের মন রক্ষা ও অনিশ্চয়তায়। এর মাঝে আপনারা মেয়েদের শরীরের নিরাপত্তা, মেয়েদের পোশাক, কার সঙ্গে যাবে, কার সঙ্গে ঘুরবে, কার সঙ্গে কিভাবে শোবে, কার সঙ্গে ছবি তুলবে, সেই ছবি কোথায় কাকে দিবে এত কিছু নিয়ে গবেষণা করার সময় কিভাবে পান ?
মেয়েদের ওয়েস্টার্ণ কালচারে না যাওয়ার সবক যারা দেন তারা কি জানেন ওয়েস্টার্ণ দেশগুলোতে একটা ড্রাংক মেয়ে নগ্ন হয়ে মাঝরাতে রাস্তা দিয়ে হাঁটলেও তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। হাফ প্যান্ট ও বিকিনি পরে বাসে চড়লেও কেউ ইচ্ছাকরে তাকে কনুইয়ের গুতা দিবে না, তাকিয়েও দেখবে না। মেয়েদের পোশাকের কারনে সমাজে অধঃপতন আসে না। সমাজের অধঃপতন আসে তখন যখন সমাজের বড় অংশ অমানবিক ও অসৎ হয়ে যায়, অন্যরাও সুযোগ খোঁজে। এর সঙ্গে মেয়েদের পোশাকের কোন সম্পর্ক নেই। অন্তত পৃথিবীর মানবিক ও সভ্য সমাজগুলোর উদাহরন তাই বলে। বিজ্ঞান, অর্থনীতি, শিক্ষা সবক্ষেত্রে তাদের ফলো করে শুধু মেয়েদের পোশাকের বেলায়, সততা, মানবিকতার বেলায় ভিন্নতা ! নাস্তিক, মুরতাদ, বিধর্মী ট্যাগ দিয়ে কি করবেন ? অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না। মানবিক পৃথিবীর বাস্তবতাকে মেনে না নিলে শুধু পিছিয়েই যাবে আমাদের সময় ! হিপোক্রেট পিপল !

পোশাক কারো সুরক্ষা দিতে পারে না, এই ছোট্ট মেয়েটি তার প্রমান। ধর্ষনকামী সমাজে যেখানে মেয়েদের মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয়না সেখানে এই পুরুষ নামের নরপশুগুলো তো পোশাক চিনে না, তারা খোঁজে একখন্ড মাংসপিন্ড। মেয়েটির শত কাকুতি, মিনতি, হাতে পায়ে ধরার পরেও সে শ্লীলতাহানি থেকে রেহাই পেল না। এই ছেলেটির শাস্তি হলেও ছোট্ট মেয়েটির সারাজীবনের জন্য মানসিক ক্ষতি হয়ে গেল যা আর সহজে পূরন হবে না। এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, প্রতিনিয়ত ঘটে, এইটার ভিডিও প্রকাশ হয়েছে বলে মানুষ জেনেছে। এখন পোশাকের ফেরিওয়ালারা বলবে – মেয়েটি কাশবনে কেন বেড়াতে গিয়েছিল ! যাই ঘটুক না কেন তাদের কাছে প্যাঁচিয়ে মেয়েটির দোষ বের করার অনেক ত্যানা আছে।
ভিডিওঃ http://fb.com/3511288795594257
Related Posts

কোরান কি আসলেই নির্ভুল? বৈজ্ঞানিকরা কি কোরান নিয়ে গবেষণা করেন?
পাকিস্তানের এক তথাকথিত স্কলার একবার জীন দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন নাকি! মোল্লা তারিকRead More

ইসলামের স্বার্থে মিথ্যা, প্রতারনা তথা তাকিয়াবাজি বৈধ !
গবাদিকূল পারেও। জান্নাত জুবাইর নামের এই মেয়ে নাকি বলিউডে অভিনয় করে, আমি জানিনা। ধূর্ত গবাদগুলোRead More

“লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে”
“লাকুম দিনুকুম ওয়ালিইয়াদিন”- “যার যার ধর্ম তার তার কাছে” তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।Read More
Comments are Closed