
Child and Human Development
জাতীয় শিশু দিবস, শিশুদের মানবিক উন্নয়নের কোন প্রস্তুতি নেই কেন কোথাও ?
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ জন্মদিন। সরকার এই দিনটিকে শিশু দিবস ঘোষনা করেছে আরো বেশ কয়েক বছর আগে। ব্যাপারটা চমৎকার। শ্রেষ্ঠ বাঙালির জীবন থেকে শিশুদের শেখার আছে অনেক কিছু। বর্তমানের বস্তাপঁচা রাজনীতিজীবিরা তো তার জীবনী থেকে কিছুই শেখেনি, তার আদর্শও ধারন করে না। সেখানে এখনকার শিশু কিশোরদের যদি সেই মহাজীবনের দীক্ষা দেয়া যায় তবে একদিন ঠিকই সোনার বাংলা বাস্তব হবে।
আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে একটা বই প্রকাশ করি। ‘ছন্দে ছড়ায় বঙ্গবন্ধু’ নামে। এই বইতে স্থান পায় বাংলাদেশ, ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাভাষী শিশু-কিশোরদের ছড়া যা তারা লেখে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। খুব অবাক হয়ে লক্ষ করি ছড়াগুলো এতো বৈচিত্রময় ও প্রাঞ্জল যে তা কাঁটাছেঁড়া করার দরকার পড়ে না। শিশুরা এতো ভালবাসে বঙ্গবন্ধুকে তা অতুলনীয়। আমি, আবু রায়হান মিকাঈল (Abu Raihan Mekail) ও আমাদের কালের বটবৃক্ষ কবি, লেখক, শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, কথাসাহিত্যিক ও সরাকারের প্রশাসনযন্ত্রের শীর্ষ অলংকার (সাবেক), প্রথম প্রধান তথ্য কমিশনার (প্রতিমন্ত্রী) আজিজুর রহমান আজিজ (Azizur Rahman Aziz) স্যার – আমাদের তিনজনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও পরের দিকে এসে নিখিল প্রকাশনীর বদান্যতায় আমরা এই বইটি বের করি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে এটা প্রতিবছর বের করার আশাবাদ নিয়ে আমরা আগাই। আমাদের উদ্দেশ্য শিশু-কিশোর মানসে বঙ্গবঙ্গুর জীবন নিয়ে অনুসন্ধিৎসা জাগ্রত করা যেন তারা অন্তরে এই মহামানবকে ধারন করতে পারে।
কিন্তু বাংলাদেশে আমদের এই সমস্ত সরল, সহজ উদ্যোগকেও অনেকে সুনজরে দেখেনা। এর কারনও আছে, প্রায় সবাই কোন না কোন দুরভিসন্ধি থেকে অনেক কাজ করেন যা প্রকারন্তরে অন্য কোন বড় উদ্দেশ্য সাধন করতে তোষামোদ হিসাবে সক্রিয় থাকে। এখন এমন অনেক বঙ্গবন্ধুপ্রেমী দেখবেন যারা অন্তরে বিদ্বেষ পুষে রেখে মুখে প্রশংসার স্তুতি গড়েন। আমাদের বইটি অনেক কর্মকর্তা, বিশিষ্টজনকে দিলেও তারা কৌশলে তাদের অভিব্যক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেন তারা ধারনা করেন আমরাও কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করি অন্য প্রায় সবার মতো। কিন্তু না, আমাদের কোন কিছু পাওয়ার চিন্তাই নেই।











সরকারের বড় বড় কর্তাদের মুখেও বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা শুনবেন আজ ও অন্যান্য দিনকে উপলক্ষ করে। কিন্তু তাদের অন্তরে বঙ্গবন্ধুর স্থান নেই। তা থাকলে তারা সর্বদা নিবেদিত থাকতেন দেশ, মানুষ ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত; ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, খারাপ আচরন, অদক্ষতা, ফাঁকিবাজি, বিলাসিতা তাদের চরিত্রে স্থান পেতো না। বঙ্গবন্ধুর মতো সাদামাটা নির্লোভ জীবন কয়জন বড় কর্তা ও রাজনীতিবিদের আছে ?
বাংলাদেশ হয়তো অর্থনীতিতে আরো এগিয়ে যাবে। বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের নাভিশ্বাস ভুলে গিয়েও হয়তো এগিয়ে যাবে অর্থনীতি। কিন্তু মানবিক উন্নয়ন কতটা হবে ? আদৌ কি হবে নাকি সেখানে অবনয়ন হবে ? এখন যারা কর্মক্ষম বা কর্মক্ষমদের উপরে ফাঁপড়বাজি করে চলছে তাদের দিয়ে কি মানবিক উন্নয়ন ও সভ্যতা এগোবে ? না, কখনোই না। কারন এদের শৈশব, কৈশর, পাবিবারিক আবহ, সামাজিক পরিমন্ডল এদের মানবিক বোধ উন্নয়নের সহায়ক ছিল না। এজন্য এরা শিশুদের মানবিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়ও। এরা পকেট ভারী হওয়া প্রকল্পে যতটা তৎপর ঠিক ততটা উদাসীন শিশুদের নিয়ে। শিশুদের নিয়ে কোন প্রকল্প তারা নিতে চায় না, সেখানে নগদ নারায়ন ঘরে ঢোকে কম।
এই মূহুর্ত্তে এই দেশে সবচেয়ে বেশী মনোযোগী হওয়া দরকার শিশুদের প্রতি। দুই, চারটা পদ্মাব্রীজ পরে হলেও সমস্য নেই, কিন্তু শিশুদের মানবিক ও মানসিক সুষ্ঠু বিকাশ এখনই দরকার। এই সমাজের ভয়ংকর বিষবাষ্প থেকে শিশুদের মুক্ত করতে হবে। দরকার মানসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা যেখানে শিশু তার নিজের বাবাকেও প্রশ্ন করতে দ্বিধা করবে না, বাবার অসততাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার সাহস অর্জন করবে। এই দেশে কোটি কোটি অমানুষ ঘুরে বেড়ায়, এই অমানুষগুলো থেকে শিশুদের জন্য সুরক্ষাবলয় তৈরি করে তাদের শিক্ষায়তনকে করতে হবে অনন্দময়। শিশুরা যেনো আনন্দের জন্য শেখে, ভয়ে ভয়ে নয়। মানসম্মত ও মানবিক শিক্ষক যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন। কিন্তু এদিকে সবার মনোযোগ কম। কর্তারা খিঁচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ যায় (আসলে তা প্রমোদ ভ্রমন, সরকারী অর্থ তছরুপ করার একটা কাগুজে বাহানা মাত্র) কিন্তু তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে শেখে না, চেষ্টাও করে না। এই যুগে শেখার জন্য যাওয়ারও দরকার পড়ে না, টেক্সট, অডিও, ভিডিওতেও শেখা যায়।
সুন্দর, মানসম্মত, মানবিক শিশু শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের টাকার অভাব নেই। অভাব আছে সদিচ্ছার, সঠিক পরিকল্পনার, বাস্তবায়ন করার মতো দক্ষ মানুষের। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রথম শিশু আইন করেছিলেন, কারন তিনি অনুধাবন করেছিলেন শিশুদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আইন থাকা বাঞ্চনীয়। তার দূরদর্শী পরিকল্পনাগুলো তিনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি, সেই সুযোগ কেড়ে নেয়া হয় ৭৫ এর ১৫ই আগস্টে। কিন্তু বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারগুলো কি করেছে ? আসলে শিশুদের জন্য তেমন কিছুই করেনি, করলে এদেশের সিস্টেমগুলো আজ অধঃপতিত না হয়ে উপরে উঠে বিশ্বকে দেখাতো।
Related Posts

বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র! উন্নয়নের বুলিতে তা ঢাকা যাবে না
বিশ্বের কোন জাতি কতটা সভ্য তা নির্নয়ের একটা মাপকাঠি হলো তারা তাদের প্রতিবন্ধী ও দুর্বলRead More

A Hero Alom: A Real Bangladeshi Hero
A Hero Alom: One Man’s Dream-Fulfilling Power Can Be an Inspiration for All While theRead More

হিরো আলমঃ এক উনমানবের স্বপ্ন পূরনের শক্তি সবার জন্য অনুপ্রেরনা হতে পারে
সেবার যখন সাউথ এশিয়ায় বলিউডের শীর্ষ নায়ক সালমান খানের নাম পিছনে ফেলে নেটিজেনরা হিরো আলমেরRead More
Comments are Closed