An Inhuman Megacity
এই শহরকে যদি কেউ তার প্রাণের শহর বলে থাকেন তবে বুঝবেন তিনি ধান্দাবাজ, ধড়িবাজ
অনেকের ধারনা আমি মনে হয় খুব বড়লোক। বিনয়ের সাথে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আমি একজন সাধারন খেটে খাওয়া ছা-পোষা মানুষ যারা চাহিদা খুব সীমিত। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে কারো কাছে আমার কোন প্রত্যাশা নেই, আমি আমার নিজের শক্তিতেই আত্মবিশ্বাসী। যাই হোক, আমি ঢাকা শহরে সচারচার পাবলিক বাসে চড়ি, প্রয়োজনে রিক্সা, লেগুনায় উঠি, বেশীরভাগ সময়ে হাঁটি।
গণমানুষের প্রতিদিনের জীবন সংগ্রাম, কাজকর্ম দেখে আমি অনুপ্রানিত হই, অনেক কিছু শিখি। আজ সকালে শ্যামলী থেকে একটু ইস্টার্ণ প্লাজা যাওয়ার দরকার ছিল। শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডে অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে। যাওয়ার দুইটা রুট আছে। একটি হলো শ্যামলী-ফার্মগেট-বাংলামোটর হয়ে হেঁটে যাওয়া, অন্যটি শ্যামলী-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-কাঁটাবন হয়ে হাঁটা। দ্বিতীয় রুটটি আমার পছন্দের হলেও যে বাসগুলো আসছে তাতে তিন ধারনের জায়গা নেই। আমি ও আমার দুইপাশে দুই ভদ্রমহিলা দীর্ঘ প্রায় ৩৫ মিনিট দাঁড়িয়ে। অবশেষে ৮ নাম্বার বাসে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম যা যাবে ফার্মগেট হয়ে। খামার বাড়ির সামনে পাক্কা ২ ঘন্টা ৯ মিনিট লাগলো ফার্মগেট ক্রসিং পার হতে ! বিশ্বাস না হলেও সত্য, বাসের মানুষ দেশের প্রশাসক নামের অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ ইতরদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধারে ব্যস্ত। বয়স্ক মহিলা, ছাত্রীসহ অনেকে আগেই সংসদ ভবনের সামনে থাকতে হেঁটে রওয়ান দিয়েছে।
ঢাকা শহর একটি মেগাসিটি। এখানে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট খুবই জঘন্য টাইপের। রাস্তার ট্রাফিক পুলিশ থেকে সচিবালয়ের শীর্ষ কর্তা সবাই অদক্ষ, কারো সদিচ্ছা নেই। ব্যবস্থাপকেরা ব্যস্ত গতানুগতিক ‘স্যার, স্যার’ বলে মুখে ফেনা তুলতে তুলতে চামচামির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে। সরকার ব্যস্ত অপরিকল্পিত নামকাওয়াস্তের ২/৩ গুণ বেশি ব্যয়ের ফিরিস্তি দিয়ে জনগণকে ঘুমপাড়ানি গানে তন্দ্রাচ্ছন্ন রেখে সমস্যা বোঝার ক্ষমতা কেড়ে নেয়ায়। জনগণ দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রাস্তায় সময় হারাচ্ছে, জীবন হারাচ্ছে, যৌবন হারাচ্ছে, সংসার হারাচ্ছে, হারিয়ে ফেলছে প্রিয়জন, সন্তান।
কয়েকদিন আগে মিরপুর ১ নাম্বার থেকে শ্যামলী ফেরার সময় পথে এক নারী উঠলেন, কোলে ৩ মাসের বাচ্চা, সঙ্গে দুইটি স্কুল পড়ুয়া শিশু, স্কুল ড্রেস পরা। আমরা যারা পাবলিক বাসে চড়ি তারা জানি বাস চলা অবস্থায় উঠতে হয়, চলা অবস্থায় নামতে হয়, প্রচন্ড ভীড়ের মাঝে নামা খুবই দূরুহ, বিশেষ করে নারীদের জন্য তো আরো বেশী। এই শহর নারীবান্ধব নয় মোটেই। কিছুক্ষন ৩ মাসের শিশু কোলে দাঁড়িয়ে থাকার পরে এক ভদ্রলোক দয়া দেখিয়ে নিজের ছিট ছেড়ে বসতে দেন। দারুস সালাম এসে একে একে ২ স্কুলপড়ুয়া শিশু ও মা-বাচ্চা নামলেন। এই শহরে সব স্কুলের মান সমান নয়, এতে কারো মাথাব্যাথাও নেই, বাড়ির পাশের স্কুলে কেন বাচ্চা ভর্তি করা যায় না ?
এই ভিডিওটি দেখুন। এক বাবা তার স্কুল পড়ুয়া শিশুকে নিয়ে শ্যামলী থেকে স্কুলে যাবেন। অন্য কোন বাসে ছিট নেই, ডাবল ডেকারের সামনের দরজায় শিশুকে দুই হাত ধরে তুলে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন, পরে নিজে ঝুলে শিশুকে প্রটেকশন দিবেন। পারলেন না, অন্য যাত্রীদের চাপে শিশু ও বাবার স্থান সংকুলান হলো না। মোবাইল ক্যামেরা চালু করতে করতেই দেখি তিনি পিছনের দরজায় গেলেন, শিশুকে কোনমতে দাঁড় করালেন, কোন কিছু না ধরেই শিশু দাঁড়িয়ে গেলো। পরে তিনি নিজে ঝুলে শিশুকে প্রটেকশন দিলেন। কি অমানবিক এই শহরের ব্যবস্থাপনা! মানুষ জীবন হাতে নিয়ে চলে। স্কুলগুলোতে স্কুলবাস নেই, পাবলিক বাসে ছিট নেই, বাসের অসম প্রতিযোগীতা, রাস্তায় কোন শৃঙ্খলা নেই। এক অমানবিক শহর, এই শহর কোন মানুষের প্রাণের শহর হতে পারে না কখনো। এই শহরকে যদি কেউ তার প্রাণের শহর বলে থাকেন তবে বুঝবেন তিনি ধান্দাবাজ, ধড়িবাজ। মানুষের জীবনের মূল্য এখানে সবচেয়ে কম, আরামদায়ক যাত্রা তো দূরে থাক, কষ্টকর যাত্রাও এখানে পুলসিরাত সমতূল্য। এই শহরের প্রতিটি কোনে লুকানো মানুষের জন্য বঞ্চনা, নিগ্রহ, অধিকারহীনতা, রোগ ও মৃত্যু !
Related Posts
শরীয়া আইনের এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত, নারীর প্রতি ইসলামের অবিচার!
মর্মান্তিক আর হৃদয়বিদারক একটা ঘটনা ২০০৪ সালের, এবং এটা ঘটেছিল ইরানে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামীRead More
মানুষের পৃথিবীতে আসার মূল উদ্দেশ্য কি ?
অনেক মানুষই এই প্রশ্নে ঘুরপাক খায়। এই ঘুরপাক খাওয়ার দোলাচলে তারা একপর্যায়ে তাদের মাথায় পরিবারRead More
Thinking about that evening still gives me goosebumps
From the beginning of this month, metro trains are full of passengers after 10/11 pm.Read More
Comments are Closed