
Backdated bureaucratic system of Bangladesh
বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো ! এই দেশের সেকেলে সিস্টেম ‘শক্তের ভক্ত, নরমের জম’
আমার ইস্টার্ণ ব্যাংকের একটা প্রিপেইড এ্যাকোয়া মাস্টারকার্ড আছে যেটা দিয়ে একজন মানুষের বছরে ভ্রমনের জন্য অনুমোদিত ১২০০০ ডলার এনডোর্স দেখিয়ে খরচ করার সুযোগ আছে। কিন্তু এই খরচ আবার এমন সব ফালতু নিয়মের যাতাকলে পিষ্ট যে আপনি এইভাবে খরচ না করে হুন্ডি বা অন্যকোন অবৈধ পথ বেছে নিতে উৎসাহিত হবেন। দেখেন আমাকে ব্যাংক থেকে ই-মেইল পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার মনে করিয়ে দিলো। ৩০০ ডলার নিতান্ত প্রয়োজনে খরচ করতে হলেও সরকারকে কত কি দিতে হবে তা দেখেন। মানে, আপনার কষ্টে উপার্জিত টাকা, আপনার প্রয়োজনে আপনি তা স্বাধীনভাবে খরচ করতে পারবেন না।
পৃথিবী চলছে গ্লোবালাইজেশনের মডেলে যেখানে আপনার টাকা মানে সেটা আপনার সম্পদ, আপনি আপনার প্রয়োজনে সেটা খরচ করবেন যেখানে ইচ্ছা সেখানে। সবখানে হয়তো সিম্পল একটা ডিক্লারেশন দেয়া লাগতে পারে কিন্তু এখানে আপনাকে এমনভাবে বেঁধে ফেলা হবে যে আপনি ঐ পথ আর মাড়াবেন না। সত্যায়ন, এক রেজিস্ট্রেশন আপডেটের নামে বার বার করা এমন অনেক অথর্ব ও অনুৎপাদনশীল চিন্তা এখানকার কর্তারা করেন যেনো তাদের হাতে দৃশ্যমান কিছু কাজ থাকে, তাদের যে কতো প্রয়োজন মানুষ তা তাদের দুয়ারে (অকারনে) বার বার গিয়ে বোঝে, তাদের বাম হাতে নিত্য নতুন ফন্দিতে টাকা ঢোকে।
এই ৩০০ ডলারের চেয়ে বেশী অর্থ এক একজন সরকারী কর্মকর্তা প্রতিদিন ঘুষ বাবদ ট্রানজেকশান করেন। সেখানে কারো কোন তদারকি নেই, কোন ডকুমেন্টসও লাগে না। প্রতিবছর দেশ থেকে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা, সেগুলো আটকাতে পারে না, বরং যারা পাচার করে তারাই দেশের নীতি তৈরি করে। আমি দেশে বসে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা মানের ডলার নিয়ে আসলেও সেই টাকা আর আমার নিতান্ত প্রয়োজনেও বিদেশে নিতে পারবো না। অদ্ভুত, সেকেলে, পশ্চাৎপদ সব নিয়ম এখানে।

চোর, ডাকাত, দুর্বৃত্তদের ধরতে পারে না, যারা সৎভাবে চলতে চায় তাদের জন্য নিয়মের ঝুড়ি ! এয়ারলাইনের টিকিট কিনতে, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য, চিকিৎসার জন্য, ভ্রমনের জন্য দেশের মানুষের অনেক টাকা অপচয়/লস হয়। বৈধভাবে নিজের কার্ড দিয়ে এসব পেমেন্ট করতে পারলে অনেক সাশ্রয় হয়, প্রায়ই বড় অংকের ডিসকাউন্ড পাওয়া যায়, কিন্তু সে উপায় কই ? আশ্রয় নিতে হয় এজেন্টের যারা বাংলাদেশী টাকা নিয়ে সেলারকে ডলারে পেমেন্ট করে। এই ডলার বিদেশে কিভাবে যায় সেটা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।
গ্রাম বাংলায় একটা কথা আছে – ‘সামনে থেকে কুটু সরতে দেয় না, পিছন থেকে পলগাদা উধাও হয়ে যায়।’ গ্রামে পুকুরঘাটে বসে মানুষ আগে বিচুলি, খড়ের টুকরা দিয়ে তাতে ছাই মিশিয়ে থালা-বাসন মাজতো। এই বিচুলির টুকরাকে বলে কুটু। কিপ্টা গৃহস্তের কাছে কেউ একটুখানি কু্টু চাইলে দিতো না, কিন্তু তার বউ-ছেলে-মেয়ে ওদিক থেকে নিজদের হাতখরচ চালানোর জন্য পুরো বিচুলিগাদা, পলগাদা বিক্রি করে দিতো অন্যের কাছে। এটা গ্রামাঞ্চলের একটা বাস্তবতা ছিল। দেশের নীতিনির্ধারকরাও ঠিক এমন।
বিগত এক দশকে কোটি কোটি টাকা রেমিট্যান্স নিয়ে এসেছি দেশে। দেশের কোন সম্পদ ব্যবহার না করে, কোন সেবার ধারেকাছেও না ঘেঁষে, কোন কর্তার কাছে কোনদিন কোনকিছুর জন্য না গিয়েও, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কোন অংশের সংশ্লেষ ছাড়াই এই রেমিট্যান্স এনেছি। মানে আমার এই রেমিট্যান্স আনার পিছনে দেশের কোন ভূমিকাই নেই, সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ও কর্তৃত্ব আমার। এখন মনে হয় জীবনের বড় বড় ভুল সিদ্ধান্তগুলোর একটি ছিল এই রেমিট্যান্স দেশে নিয়ে আসা। এই রেমিট্যান্স আনার কারনে ট্যাক্সের লম্পট ঘুষখোরদের পাল্লায় পড়ে পুরো একটা বছর জুতার তলা খইয়েছি। তখন দেখেছিলাম তাদের দৌরাত্ব কতটা মারাত্মক, স্বয়ং তাদের সর্বোচ্চ কর্তার নির্দেশও তারা মানে না, মানা লাগে না। তারা ঘুষের কথা বলে প্রকাশ্যে, নেয় প্রকাশ্যে। বুঝেছিলাম ও চরম শিক্ষা পেয়েছিলাম এই দেশে আয় ও আয়ের উৎস ঘোষনা দেয়া, সঠিক ও নায্য ট্যাক্স দিতে চাওয়া কত বড় ভুল কাজ ! যারা ট্যাক্সের ঘুষ চায় তারাও বলেছিল এই দেশে আপনাদের থাকা উচিৎ না, বিদেশ চলে যান।
এই দেশ আপনার সামনে সৎভাবে, ভালভাবে, নিয়মমতো চলার মতো কোন পথ খোলা রাখেনি। একদিন দেশসেবার সপ্ন নিয়ে যারা বড় হয়েছে তারাও এদেশের সিস্টেমের কাছে বলি হয়ে নোংরা, গন্ধযুক্ত স্রোতে মিশে যায়। নিয়মগুলোও সব নিয়ম মেনে চলাদের জন্য, যারা নিয়ম মানে না নিয়মের হাত তাদের ছুঁতে পারে না। বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো !
Related Posts

অপেশাদার মানুষের মাধ্যমে তৈরি অরক্ষিত বিদ্যুৎ লাইনের জন্য আর কত প্রাণ যাবে ?
সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি সংবাদ শিরোনামঃ “ভাত খেতে রান্নাঘরে ঢুকতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু”“চাটমোহরে ফ্যান চালুRead More

চারপাশে দুর্নীতির মেলা বসছে – তা নিয়ে ওনাদের সমস্যা নাই, যতো সমস্যা মেয়েদের ড্রেস নিয়ে
কে কি পোশাক পরবে, কার সঙ্গে ঘুরবে, কার সঙ্গে বিয়ে করবে, কার সঙ্গে শোবে এগুলোRead More

শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি কি দেশের কোন কাজে লাগছে ? এগুলো কি থাকা উচিৎ ?
দেশের সচেতন, প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হিসাবে ছাত্ররা রাজনীতি করলে করতে পারে। তবে সেটা ক্যাম্পাসের বাইরে। ক্যাম্পাসেRead More
Comments are Closed