Arabic World Turned Away from Science

Golden Age of Arab in Science

আরব ও মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিমুখ কেন ? তারা এতো পিছিয়ে পড়ছে কেন দিন দিন ?

ধর্মীয় পরিচয়ে আমি বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারকদের ব্রাকেটবন্দী করতে চাই না। তারা সারা বিশ্বের। তবে যেহেতু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ এই বিজ্ঞানীদের সময়কালকে ইসলামিক বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ বলেন সেহেতু এখন এই আলোচনায় মেনে নিচ্ছি সেটা। যাদের দেখছেন তারা সেই ইসলামিক স্বর্ণযুগ বলে খ্যাত ৮০০ থেকে ১২৫৮ সালের বিজ্ঞানী দার্শনিক ছিলেন। এদের ভিতরে অধিকাংশ ছিলেন পিওর বিজ্ঞানের সেবক, তাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেক প্রচলিত বিশ্বাস সম্পর্কে। ধর্মবেত্তাদের চাপে তাদের অনেককে জেলও দিয়েছিলেন শাসকেরা। তবে এটা অনস্বীকার্য যে তৎকালীন বাগদাদ অঞ্চলের শাসকেরা গ্রীক ও ইউরোপীয় সভ্যতা থেকে জ্ঞান আহরনের পথ প্রশস্থ করেন। এক পর্যায়ে বাগদাদের জ্ঞান ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ধারনা করেন ১২০০ সালের দিকে বাগদাদ অঞ্চলে একটা রেঁনেসার সূত্রপাত ঘটাতে চেয়েছিলেন এই পন্ডিত ব্যক্তিরা। তবে সেটা সফল হয়নি তাদের কারনে যারা আশংকা করেছিলেন এতে তাদের অনেক কিছু; যেমন প্রভাব, ক্ষমতা আর থাকবে না বা অনেক কমে যাবে। অনেকে আবার এও মনে করেন ইউরোপের রেঁনেসা ছিল সেই রেঁনেসা থেকে উৎসাহিত। ইউরোপ পেরেছিল, এশিয়ার মধ্যভাগ পারেনি। সেদিন পারলে আজ বিশ্বের ইতিহাস ও জ্ঞান বিজ্ঞান অন্যরকম হতে পারতো। বিশ্ব হয়ত এখন এগিয়ে থাকতো ২০০ বছর, অনেক বর্তমান স্থাপনা কে আমরা দেখতাম জাদুঘর হিসাবে। যাকে সেই জ্ঞান বিজ্ঞান প্রসার স্তব্ধ করার জন্য দায়ী করা হয় তার নাম নাইবা বললাম, অনুসন্ধিৎসু পাঠক খুঁজে বের করতে পারেন সেই নাম।

এই স্বর্ণযুগ বলে পরিচিত যুগের পরে আর মুসলিম বিশ্বে শিক্ষা ও জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি তেমন প্রসার লাভ করেনি। মূলত প্রসার লাভ করতে দেয়া হয়নি, তাতে অনেক কিছু প্রশ্নের মুখে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতো। সেই পশ্চাৎমূখীতা এখনো চলমান। আজ, মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞানের চেতনা মরুভূমির মতো শুকনো। পাকিস্তানের পদার্থবিজ্ঞানী পারভেজ আমিরালি ২০০৭ সালের ফিজিক্স টুডে নিবন্ধে মারাত্মক এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন: মুসলিম দেশগুলিতে প্রতি হাজার মানুষে মাত্র ৯ জন বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদ রয়েছেন যেখানে বিশ্বের গড় ৪১। এই দেশগুলিতে প্রায় ১,৮০০ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে মাত্র ৩১২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলার রয়েছে যারা জার্নাল নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সর্বাধিক প্রকাশিত আর্টিকেলের প্রথম পঞ্চাশটির মধ্যে ছাব্বিশটি তুরস্কে, নয়টি ইরানে, তিনটি মালয়েশিয়া ও মিশরে, পাকিস্তানের দুটি রয়েছে এবং উগান্ডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, লেবানন, কুয়েত, জর্ডান এবং আজারবাইজান প্রত্যেকের একটি করে রয়েছে।

বিশ্বে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মুসলিম রয়েছে, তবে মুসলিম দেশ থেকে মাত্র দুজন বিজ্ঞানী বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন (একটি ১৯৭৯ সালে পদার্থবিদ্যার জন্য, কাদিয়ানী বলে তাকে আবার মুসলিম বলা হয় না, অন্যটি ১৯৯৯ সালে রসায়নের জন্য)। ৪৬ টি মুসলিম দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্বের সমগ্র বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে মাত্র ১ শতাংশ অবদান রাখে যেখানে স্পেন এবং ভারত প্রত্যেকে বিশ্বের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে এই দেশগুলির তুলনায় বেশি অবদান রাখে। প্রকৃতপক্ষে স্পেন বুদ্ধিবৃত্তিক কোন পরাশক্তি নয়, তবুও তারা এক বছরে যত বই অনুবাদ করে সমগ্র আরব বিশ্ব গত হাজার বছরেও তা করেনি। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়েইনবার্গ বলেছেন, “যদিও পশ্চিমে মুসলিম বংশোদ্ভূত গুণী বিজ্ঞানীরা ভাল কাজ করছেন, তবুও চল্লিশ বছর ধরে আমার কর্মজীবনে আমি মুসলিম দেশগুলো থেকে পদার্থবিজ্ঞান বা জ্যোতির্বিজ্ঞানের এমন কোনও প্রবন্ধ পাইনি যা পড়ার মতো ছিল। ”

আরব বিশ্বের তুলনামূলক বিশ্লেষনগুলোও একই কথা বলে। আরবরা বিশ্বের জনসংখ্যার ৫ শতাংশের সমন্বয়ে গঠিত, তবে জাতিসংঘের ২০০৩ সালের আরব মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের মাত্র ১.১ শতাংশ বই তারা নিজেরা প্রকাশ করে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে কোরিয়া ১৬,৩২৮ টি পেটেন্ট রেজিস্ট্রি করেছে, যখন মিশর, সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত সহ নয়টি আরব দেশ সম্মিলিতভাবে মোট ৩২০ টি করেছে যার মধ্যে অনেকগুলি আবার ভিনদেশীদের। ১৯৮৯-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১০,৪৮১ টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিল যেগুলি প্রায়শই রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করা হয় যেখানে পুরো আরব বিশ্ব কেবলমাত্র ৪ টি প্রকাশ করেছে ঐ সময়ে। এটি কৌতুকের মতো শোনা যায় তবে ২০০২ সালে যখন নেচার ম্যাগাজিন আরব বিশ্বে বিজ্ঞানের একটি স্কেচ প্রকাশ করেছিল, তখন তার সাংবাদিকরা কেবলমাত্র তিনটি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছিলেন যেখানে ইসলামিক দেশগুলি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে: বিচ্ছিন্নতা, ফলক উন্মোচন এবং উটের প্রজনন।

স্পষ্টভাবে এখনও অনেক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে ইউরোপ আমেরিকাকে টেক্কা দিতে হলে। বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের রাস্তায় চিৎকার দিয়ে বিশ্বকে কথা শোনাতে গেলে সেটা হাস্যকর অখাদ্য ছাড়া আর কিছু হবে না। এই যুগ বিজ্ঞানের, এই যুগ প্রযুক্তির। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নতির চিন্তা না করে শুধু মানব প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধি করে গেলে সারাজীবন ইসরাইলের ষড়যন্ত্র দেখেই কাটাতে হবে, ষড়যন্ত্র আসলে হয়েছে কিনা সেটা খুঁজে বের করার মুরোদ হবে না।

এই লেখার সঙ্গে সংযুক্ত ছবির সকল বিজ্ঞানীদের প্রতি শ্রদ্ধা। তারা বিজ্ঞানী, দার্শনিক – আর কোন পরিচয় নেই। কোন ধর্মের নয়, সকল মানুষের। বিশ্ব তাদের গবেষণা ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ হয়েছে।

Related Posts

Splitting of the Moon and Islamic Myth

ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !

ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More

Religious Sentiments and Science Education in Bangladesh

ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার পশ্চাৎযাত্রা

বাংলাদেশে সাইন্সের স্টুডেন্টদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সারাবছর বিজ্ঞানের জাহাজ মাথায় নিয়ে ঘুরবে, কিন্তু বিশ্বাস করবেRead More

C-Section and Evolution

সি সেকশান বা সিজারিয়ান প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্মদানে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ছে

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চরে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বন-মানুষেরা অনেকRead More

Comments are Closed