Islam
Religious Fanaticism Examples

Religious Fanaticism Examples

এই ধর্মীয় উন্মাদনা এখনি থামাতে হবে, সভ্যতার পথে হাঁটুন

বাংলাদেশের সমাজটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে বিগত ২০/৩০ বছরে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে জঘন্য অনুঘটক ছিল ফ্যাসিস্ট সেকাচিনা ও তার দল লুটেরা আম্লিক। এখন এই যে জেন জি প্রজন্ম বলছি তাদের বেড়ে উঠা, তাদের চিন্তার বিকাশ ঘটা এই স্বৈরাচারদের আমলে। জেন জি ও সাধারন নাগরিক হাজারো প্রাণের বিনিময়ে, বিশ হাজারেরও বেশী মানুষের শরীরে নানান স্থায়ী ও সাময়িক ক্ষতির মূল্যে আগের ফ্যাসিস্ট সরকারকে এক প্রকার ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। অথচ স্বৈরাচার সেকাচিনা যে লক্ষ লক্ষ উন্মাদ, ফ্যাসিস্ট ধর্মান্ধ মানুষকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে পেলে পুষে বড় করেছে তাদের অত্যাচার জাতিকে সইতে হবে অনেকদিন। গ্রাম গঞ্জে, অনলাইনে যে পরিমান র‍্যাডিক্যাল ইসলামের বিস্তার ঘটার সুযোগ করে দিয়েছিলো সেকাচিনা তার মাত্রা কতটা ভয়ংকর হতে পারে এই ভিডিও তার একটি উদাহরণ। সেকাচিনা তার জামানায় অনেক স্যেকুলার ব্লগার, মুক্তচিন্তক, প্রথা বিরোধী লেখক, কার্টুনিস্টকে হত্যা করার সুযোগ দিয়েছে তার ক্ষমতাকে মৌলবাদীদের কাছে জনপ্রিয় করতে। কিন্তু উনি চাইলেই দেশকে দুর্নীতিমুক্ত, শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, গণতন্ত্র, সভ্যতা, প্রগতিতে উন্নতি করতে পারতেন। তাহলে দেশ থেকে এই সমস্ট র‍্যাডিক্যাল চিন্তা চেতনা দূর হয়ে যেতো ক্রমেই। তাকেও দেশ ছেড়ে পালানো লাগতো না, তার দলের লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীদের গর্তে লুকানো লাগতো না।

একটা অসহায় বালক, তার সামনে তাকে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ, অন্যদিকে তাকে ছিঁড়ে খুবলে খাওয়ার জন্য হাজার হাজার ছাত্র জনতা। পুলিশ নির্বিকার, জনতা উন্মত্ত। এই বালকের কী কোন অপরাধ আছে? তাদের ভাষায় সে ইসলামের নবী মোহাম্মদের নামে কটুক্তি করেছে। ধর্মান্ধ, বিশেষ করে মুসলিম ধর্মান্ধদের সমস্যা হলো তারা তাদের নবীর যৌক্তিক সমালোচনাকেও নবীর বিরুদ্ধে কটুক্তি, গালি হিসাবে দেখে। নবী যা করে গেছে, বলে গেছে যা আবার তাদেরই কোরান, হাদীস, সিরাত, তরজমা, তাফসিরে লিপিবদ্ধ সেগুলো তুলে ধরলেও তাদের কাছে মনে হয় কটুক্তি। হাসিনাকেও তাদের অনুসারীরা নবী মনে করতো, তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে হাসিনার ল্যান্সপেন্সাররা একযোগে হামলে পড়তো, গুম, খুন বা আয়নাঘরে বন্ধী করে রাখতো। সেকাচিনার তুলনায় নবী মোহাম্মদ আরো বড় ফ্যাসিস্ট, খুনি, স্বৈরাচার। যেহেতু কোন নিরপেক্ষ ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্ব নিদির্শন দিয়ে নবী মোহাম্মদের সময়কার কিছু জানার সুযোগ নেই সেহেতু ইসলামের বই পুস্তকগুলোই একমাত্র সম্বল। এবং সেগুলো দিয়েই প্রমান করা যায় নবী মোহাম্মদ ছিল একজন অমানবিক, ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার, খুনি, গণহত্যাকারী। সে একই সঙ্গে ছিলো বর্ণবাদী ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিরোধী। আজকের দিনে হলে মানবতাবিরোধী গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতক আদালতে নবী মোহাম্মদের বিচার হতো। যারা নবী মোহাম্মদকে পূত পবিত্র, নিষ্পাপ মনে করেন তারা আসলে ইসলামের নিজেদের বইগুলোই মুক্তমনে কখনো পড়ে দেখেনি।

এখন এই কথাগুলো যদি কেউ বলে তা কী কারো অন্যায়? এই বালক কী লিখেছিলো বা বলেছিলো তা জানিনা। তবে সেকাচিনা বা নবী মোহাম্মদ দুই জনই পাবলিক ফিগার। তাদের সমালোচনা করার অধিকার দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষেরই আছে। এমনকি তাদের নামে মিথ্যা সমালোচনা, গালি দেয়াটাও মানুষের মৌলিক বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে। কল্পিত ঈশ্বরের সমালোচনা করাও মানুষের অধিকার। সমস্যা হলো নবী মোহাম্মদ বলে গেছে আল্লাকে সমালোচনা করে কেউ তওবা করে মাফ চাইলে সে মাফ পাবে কিন্তু তাকে যদি কেউ সামান্যতম সমালোচনাও করে তবে সে হয়ে যাবে শাতিমে রাসূল এবং শাতিমে রাসূলের ইসলামের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।

এই যে এতো র‍্যাডিক্যাল মানুষ চারিদিকে আগে কী এমন ছিলো? এখন দেখা যায় মানুষ মাজার ভাঙ্গে, বয়াতীদের গায়ে হাত তোলে। আমার বোনকে এক অবসরপাপ্ত শিক্ষক পড়াতেন, তিনি ছিলেন হিন্দু পরিবারের। ভদ্রলোক ছিলেন বিজ্ঞান মনস্ক, নাস্তিক। তিনি প্রকাশ্যে ধর্ম, সৃষ্টিকর্তার সমালোচনা করতেন। কাউকে কখনো দেখিনি তাকে অসম্মান করতে। সবাই বরং তার কাছ থেকে বুদ্ধি পরামর্শ নিতেন। কবিগান, জারি সারি গানে আগে অনেক কথা ছিলো যা প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস, ঈশ্বর এসব ধারনাকে চ্যালেঞ্জ করে।

ইউরোপে যে রেনেসাঁ হয়েছিলো তা ছিলো খ্রিস্টান চার্চের প্রভাব থেকে রাষ্ট্র ও সমাজকে মুক্ত করার জন্য। এর মাধ্যমে তারা রাষ্ট্র থেকে ধর্মীয় নিয়ন্ত্রন দূর করেছিলো। ধর্ম হয়ে পড়েছিলো মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এর পরেই ইউরোপ হয়েছে সমৃদ্ধ, এখন যা মানবিক বিশ্বের মডেল। সেজন্য আপনি যদি রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে ধর্মকে দূর করতে না পারেন, যদি মানুষের বাক স্বাধীনতাকে মেনে না নেন তাহলে নতুন বাংলাদেশ কিভাবে বানাবেন? তবে আমি এখনো আশাবাদী, দেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। এবং আমি আশাবাদী এই জেন জি প্রজন্মের জন্যই। তাদের সামনে আসলে ধর্মের বাইরে অন্য চিন্তাগুলোর প্রচার, প্রসার ছিল না বললেই চলে। তারা জন্ম থেকেই দেখে আসছে চারিদিকে ওয়াজ, ধর্ম নিয়ে নসিয়ত। তারা তো মুক্তচিন্তার সুযোগই পায়নি। তবে তাদের যারা মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদেরকে আমার মৌলবাদী চিন্তার মনে হয়নি। কেউ কেউ বলছেন তাদের অনেকে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের। এটা তাদের জন্য প্লাসপয়েন্টও হতে পারে। মাদ্রাসা ব্যকগ্রাউন্ড ও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে তারা দুই জগতের চিন্তার পার্থক্য করতে পারছে সহজে। মাহফুজ আলমের কথাই ধরুন, যাকে বলা হচ্ছে জেন জি বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড, তার সাম্প্রতিক দুইটা বক্তব্য শুনুন। আমার মনে হয়নি উনি বা উনারা কেউ মৌলবাদী চিন্তার মানুষ। তাদের একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, উনারা তেমন একটা ধর্মীয় আচার নিয়ে আসে না তাদের কথা বা আচরনে। কেউ সালাম দিয়ে কথা শুরু করে না, বিসমিল্লাহ, মাশাল্লাহ, ইনশাল্লাহ এগুলো বলতেও দেখিনি। আপনি মাহফুজ আলমের বক্তব্য বা তার টাইমলাইন খেয়াল করুন, এসব পাবেন না।

এই দেশটার এতো অধঃপতন তো একদিনে হয়নি। সেজন্য এই দেশটাকে প্রগতির পথে যাত্রাটাও একদিনে হবে না। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে। এখন যে অনাচারগুলো হচ্ছে এমন না যে এগুলো আগে হয়নি। এগুলো জাতিগতভাবে আমাদের বৈশিষ্ট। সেজন্য সঠিক, জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে জাতির মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে। বেশী না, আপনি যদি মানুষের মৌলক মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা এগুলো নিশ্চিত করতে পারেন দেশ এমনিতেই উন্নতির পথে হাঁটা শুরু করবে। দয়া করে র‍্যাডিক্যাল ধর্মান্ধ উন্মাদদের প্রতিহত করুন, প্রতিরোধ করুন। কারো যেমন বিনা বাঁধায় ধর্ম পালন করার অধিকার আছে, অন্য একজনেরও অধিকার আছে ধর্ম পালন না করার, ধর্মীয় মহাপুরুষ বা ঈশ্বরের সমালোচনা করার। এই সিম্পল সভ্যতার মানদন্ড যদি আপনারা না বোঝেন তবে আপনারাই দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু, ফ্যাসিজমের ল্যান্সপেন্সার।

Related Posts

No Profession is Small

Do not belittle anyone’s profession – ensure their rights instead

Look at the narrative pushed by the so-called elite Bangu media and society! This isRead More

No Profession is Small

কারো পেশাকে ছোট করবেন না, বরং তার অধিকার নিশ্চিত করুন

বাঙ্গু সুশীল মিডিয়া ও সমাজের ন্যারেটিভ দেখেন! এটা বাংলাদেশের মানুষের খুব বড় একটি দৈন্য। এরাRead More

attacks over blasphemy claim in Bangladesh

How much longer will the Muslim extremists in Bangladesh continue to oppress Hindus?

Ever since I became aware of the world around me in Bangladesh, I’ve witnessed violenceRead More

Comments are Closed