The luxury of death for the looters!
বাংলাদেশের অসৎ লোকজন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের ভেন্যুতে মরে মৃত্যুকে গৌরবান্বিত করে
বঙ্গবন্ধুর গলব্লাডারে সমস্যা দেখা দিলে সবাই তাকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে অনুরোধ করেন। তিনি রাজি হননি। একপ্রকার জোর করেই তাকে লন্ডনে নেওয়া হয়। সেখানে গিয়েও তিনি প্রথমেই খোঁজ করেন, কোনো বাঙালি ডাক্তার আছে কিনা। এই গল্পের সত্যতা নিশ্চিত নয়, কারণ রাজনীতিতে অন্ধ অনুসারীরা নেতাদের নিয়ে নানা মুখরোচক কাহিনি রচনা করে, যার কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা তা বলা কঠিন। আবার এমন গল্পও প্রচলিত আছে যে আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক মাহাথির মোহাম্মদ নিজ দেশে উন্নত হাসপাতাল নির্মাণ করে সেখানেই চিকিৎসা নিয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশে একটি প্রচলিত বাস্তবতা হলো, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আমলা, লুটেরা ও অসৎ মানুষদের মৃত্যুর ভেন্যু হিসেবে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড বেশ জনপ্রিয়, কারণ দেশের হাসপাতালে তাদের শরীর সায় দেয় না।
জনাব ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক অসুস্থতা অনেকের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে – বাংলাদেশের মানুষ আর কতদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাবে? তিনি রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আমি চাই তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসার জন্য এই বিদেশ নির্ভরতা আর কতদিন চলবে?
সত্যি বলতে, চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের আস্থার সম্পর্ক অত্যন্ত নাজুক। দেশে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব রয়েছে। শিশুদের জন্য কার্ডিয়াক সার্জন হাতে গোনা মাত্র ২/৩ জন, তাও সাম্প্রতিক সময়ে। এখনো যাদু, টোনা, বান, জ্যোতিষ, ফকির, কবিরাজের উপর এক বড় অংশের মানুষের আস্থা রয়েছে। আবার তার চেয়েও বেশি অনাস্থা রয়েছে দেশের ডাক্তার ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর। দু’পক্ষেরই এখানে দায় আছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ও নৈতিকতার মানদণ্ড আমাদের জাতীয় চরিত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। জাতি হিসেবে নাগরিক দায়িত্বে আমরা সচেতন হলে সব ব্যবস্থাই স্বাভাবিকভাবে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু সততা ও নৈতিকতার জায়গা উন্নত না হলে আমরা কীভাবে আশা করি আমাদের সিস্টেম উন্নত হবে?
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গিয়ে কতজনের মৃত্যু হয়, সে পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু জানি যারা সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন, অথচ দেশে সেই পরিবেশ নেই। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের খরচ বহন করার সামর্থ্য আমাদের দেশের কয়জনের আছে? ভারতের সঙ্গে খরচের তুলনা করলে আমরা এগিয়ে থাকি, কিন্তু চিকিৎসার মান ভারতেই ভালো – এটা সবাই একমত হবেন।
কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্কয়ার হাসপাতালকে একটি প্রশংসাপত্র দিয়েছেন। তিনি সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ডাক্তার, নার্সসহ সবার আন্তরিক ব্যবহার তাকে মুগ্ধ করেছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। তবে অনেকেই তাকে সমালোচনা করেছেন। আবার অনেক ডাক্তার বলেছেন, তার চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্র কোনো সরকারি হাসপাতালে নেই। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেটের দেশে একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম বিএসএমএমইউ-তে নেই, অথচ বেসরকারি স্কয়ারে আছে!
বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং বার্ষিক বাজেটের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের কি সত্যিই সামর্থ্য নেই কিছু হাসপাতালকে বিশ্বমানের করার? চিকিৎসা বাজেটে যে পরিমাণ অপচয় ও দুর্নীতি হয়, তাতে কয়েকটি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা সম্ভব। দুর্নীতির একটি উদাহরণ তো সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে – কর্মচারী আফজাল, যার নাকি হাজার কোটি টাকা রয়েছে!
আমাদের সময় এসেছে, নিজের টাকায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারার দাবী করতে পারলে শত কোটি টাকা দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে মাউন্ট এলিজাবেথের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কিংবা নতুন একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা কঠিন কিছু না, যেখানে সবাই সমান সুযোগে চিকিৎসা পাবে, শুধু দরকার একটু স্বদিচ্ছা, যোগ্য, দক্ষ কাউকে দায়িত্ব দেয়া। চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগও দেখতে হবে। আমরা দেশের একজন প্রফেসরের কথায় ভরসা করতে পারি না, কিন্তু বিদেশের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের সার্টিফিকেটে ভরসা পাই। এই অবস্থা তৈরির জন্য যারা দায়ী বা যে ব্যবস্থা দায়ী, তা চিহ্নিত করে সেখানে উন্নতি করার সময় এসেছে। আর কত বিদেশ নির্ভরতা?
বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। হার্ট অ্যাটাকে প্রথম এক ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় না, মারা যায় পরবর্তীতে হওয়া কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে। ওবায়দুল কাদেরের জন্য ভাগ্য ভালো ছিল – তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় হাসপাতালে যাওয়ার পরে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, ঢাকা শহরে কারো হার্ট অ্যাটাক হলে এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে হাসপাতালে নেওয়া কত বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকা শহরের রাস্তায় বাস ও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য একটি আলাদা লেন করা এখন খুবই জরুরি।
Related Posts
In the Shadow of Famine: Bengali Food Habits – History, Practice, and Bodily Burden
About 10-12 days ago.I went to a large wholesale store, where products are usually soldRead More
দূর্ভিক্ষের ছায়ায় বাঙালির খাদ্যাভ্যাসঃ ইতিহাস, অভ্যাস ও শরীরের দায়
প্রায় ১০-১২ দিন আগের ঘটনা। একটি বড় বিপণিবিতানে গিয়েছিলাম, যেখানে সাধারণত বক্স ধরে পণ্য কিনতেRead More
Are religion, country, race, patriotism, and nationalism all racist concepts?
The only uncontacted human tribe left in the world today are the Sentinelese of NorthRead More

Comments are Closed