
Evolution, Darwin and a Iraqi Philosopher
ডারউইনেরও ১০০০ বছর আগে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব দিয়েছিলেন ইরাকের একজন দার্শনিক
বিবিসি ইরাকের উক্ত দার্শনিক কে মুসলিম দার্শনিক বললেও আমি তাকে ধর্মীয় পরিচয়ে নয়, শুধুই একজন মহান দার্শনিক হিসাবেই দেখতে চাই। আইনস্টাইন, নিউটন, কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, রামানুজন, এডিসন, হ্যালি, কুরি কাউকেই তো ধর্মীয় পরিচয়ে ডাকা হয় না। বিজ্ঞানি, লেখক, শিল্পী এদের কোন দেশ, ধর্ম, জাতি হয় না, এরা সমগ্র বিশ্বের। যাই হোক মূল কথায় আসি।
আধুনিক বিজ্ঞানের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তার অন্যতম বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব। তার এই তত্ত্বে দেখানো হয়েছে প্রাণীরা সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তনবাদের এই তত্ত্বটি আমাদের পৃথিবীর পশুপাখি ও উদ্ভিদ জগৎ সম্পর্কে বুঝতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। তার এই প্রক্রিয়াকে ইংরেজিতে বলা হয় ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন যার মাধ্যমে একটি প্রাণীর জনগোষ্ঠী থেকে নতুন প্রজাতির উদয় ঘটে। এই থিওরি বিজ্ঞানের জগতে বৈপ্লবিক তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত। অন দ্য অরিজিন অফ স্পেশিস নামে চার্লস ডারউইনের এই বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে। তার এই গ্রন্থে তিনি বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়।
কিন্তু চার্লস ডারউইনেরও অনেক আগে, তার থেকেও ১০০০ বছর পূর্বে ইরাকে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের আরো একজন প্রবক্তা ছিলেন। তিনি ডারউইনের মত এতটা বিস্তারিত না বললেও যা কিছু বলেছিলেন তা ঐ যুগে বলাটা অনেক বড় ব্যাপার। তিনি প্রাকৃতিক নিয়মে প্রাণীকুলের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে তার উপর একটি বই লিখেছিলেন। এই দার্শনিকের নাম ছিল আল-জাহিজ। যে পদ্ধতিতে এই পরিবর্তন ঘটে তিনি তার নাম দিয়েছিলেন প্রাকৃতিক নির্বাচন। তার আসল নাম ছিল আবু উসমান আমর বাহার আলকানানি আল-বাসরি, তবে ইতিহাসে তিনি আল জাহিজ নামেই বেশি পরিচিত।
তার জন্ম হয়েছিল ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে, দক্ষিণ ইরাকের বাসরা শহরে, মুতাজিলাহ আন্দোলনের সময়। এসময় ধর্মতাত্ত্বিক কিছু মতবাদ জনপ্রিয় হচ্ছিল যেখানে মানুষের যুক্তির চর্চার উপর জোর দেওয়া হচ্ছিল। তখন ছিল আব্বাসীয় খেলাফত বা শাসনের চরম সময়। সেসময় জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেক বই গ্রিক ভাষা থেকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হতো। জোরালো বিতর্ক হতো ধর্ম, বিজ্ঞান এবং দর্শন বিষয়ে। এসবের কেন্দ্র ছিল বাসরা শহর। এসব আলোচনা থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল আল-জাহিজের চিন্তাধারা।
চীনা বনিকেরা ততদিনে ইরাকে কাগজের ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন তত্ত্ব লিখিত আকারে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। তরুণ আল-জাহিজ তখন নানা বিষয়ে লেখালেখি করতে শুরু করেন। যেসব বিষয়ে তার খুব বেশি আগ্রহী ছিল সেগুলোর মধ্যে ছিল বিজ্ঞান, ভূগোল, দর্শন, আরবি ব্যাকরণ এবং সাহিত্য। ধারণা করা হয় তার জীবদ্দশাতেই তিনি দুশোর মতো বই প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ এই আধুনিক কাল পর্যন্তও টিকে রয়েছে।
তার বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে দ্যা বুক অফ অ্যানিমেলস বা প্রাণী বিষয়ক বইটি। এটি একটি এনসাইক্লোপিডিয়ার মতো যাতে সাড়ে তিনশো প্রাণীর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এই বইটিতে তিনি এমন কিছু ধারণা তুলে ধরেছেন যার সাথে আধুনিক কালের বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদে তত্ত্বের চমকপ্রদ অনেক মিল পাওয়া যায়।
আল-জাহিজ তার বইতে লিখেছেন, “টিকে থাকার জন্যে প্রাণীদেরকে লড়াই করতে হয়। লড়াই করতে হয় তাদের খাদ্যের জন্যেও, এবং তারা নিজেরাই যাতে অপরের খাদ্য না হয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করার জন্যে। এমনকি, প্রজননের জন্যেও তাদেরকে সংগ্রাম করতে হয়।”
“নিজেদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে গিয়ে পরিবেশের নানা কারণে প্রাণীরা নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং এভাবেই তারা নতুন নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়।”
তিনি আরো লিখেছেন, “যেসব প্রাণী প্রজনন ঘটাতে টিকে থাকতে পারে তারা তাদের সফল বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারে।”
আল-জাহিজের কাছে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার ছিল যে এসব প্রাণীকুলকে টিকে থাকার জন্যে অনবরত সংগ্রাম করতে হয়। এবং একটি প্রজাতি সবসময়ই আরেকটি প্রজাতির চেয়ে শক্তিশালী।
টিকে থাকার জন্যে খাবার সংগ্রহের লড়াই-এ প্রাণীদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়। অন্যের খাবার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সন্তান জন্মদান করতেও তাদের সংগ্রাম করতে হয়। এসব কারণে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে রূপান্তর ঘটাতে বাধ্য হয়।
আল-জাহিজের এসব ধারণা তার পরবর্তী অন্যান্য চিন্তাবিদদেরকেও প্রভাবিত করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আল-ফারাবি, আল-আরাবি, আল বিরুনী এবং ইবনে খালদুন। পাকিস্তানের ‘আধ্যাত্মিক পিতা’ মোহাম্মদ ইকবাল, যিনি আল্লামা ইকবাল নামেই অনেক বেশি পরিচিত তিনিও আল জাহিজের এসব তত্ত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত তার বক্তব্যের একটি সঙ্কলনে তিনি বলেছিলেন, “আল-জাহিজ দেখিয়ে দিয়েছেন অভিবাসন এবং পরিবেশে পরিবর্তনের কারণে প্রাণীদের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে।”
বিবিসি’র প্রতিবেদনঃ https://bbc.com/bengali/news-47426938
বিবর্তন বর্তমানে শুধুমাত্র কোন থিওরি নয়, এটা একটা ফ্যাক্ট। যেসব বিষয়ে পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীদের ভিতরে মতভেদ কম তার অন্যতম হলো এই বিবর্তন। একমাত্র গোঁড়া, অন্ধ, কুযুক্তি প্রবন, লজিক্যাল ফ্যালাসির পৃষ্ঠপোষকেরাই এর বিরোধীতা করে। বাংলাদেশ বিজ্ঞানে খুবই অনগ্রসর একটি দেশ। এদেশে বিজ্ঞানচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে, এদেশের স্কুল কলেজে ঠিকমতো বিজ্ঞান পড়ানোও হয় না। ফলাফল, বিজ্ঞানের খুব সাধারণ বিষয়গুলো সম্পর্কেও এদেশের স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি পাশ করা মানুষেরও ধারণা খুবই অস্বচ্ছ। এর ফলশ্রুতিতে প্রতি বইমেলায় এমন কিছুসংখ্যক বই বেস্টসেলায় হয় যেগুলো পুরোটাই অপবিজ্ঞান! এটাই আমাদের দেশের বাস্তবতা।
Related Posts

ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !
ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More

ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার পশ্চাৎযাত্রা
বাংলাদেশে সাইন্সের স্টুডেন্টদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সারাবছর বিজ্ঞানের জাহাজ মাথায় নিয়ে ঘুরবে, কিন্তু বিশ্বাস করবেRead More

সি সেকশান বা সিজারিয়ান প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্মদানে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ছে
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চরে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বন-মানুষেরা অনেকRead More
Comments are Closed