কলকাতার ট্যাক্সি ড্রাইভারদের বেশীরভাগই নন বেংগলি। আমি আবার হিন্দি বুঝি না, ওরা বাংলা বুঝলেও হিন্দিতে কথা বলে। চেহারায় কেমন উগ্রতা, পোশাক আশাক অপরিচ্ছন্ন। মাঝে মধ্যে ২/১ জন পাওয়া যায় ভাল। অবশ্য আমাদের এখানের চিত্রটাও এমনই আচার আচরনে। ৩১ জানুয়ারি কলকাতার শেষ দিনে রাতে মার্কইস স্ট্রীট থেকে বউবাজারে ফেরার সময় মিটারে বিল আসল ৩৬ টাকা, আমি দিলাম ৪০ টাকা। ড্রাইভার ৪ টাকা ফেরৎ দেয়ার জন্য পকেটে হাত ঢুকাল। আমি বললাম, থাক দেয়া লাগবে না। সে হিন্দিতে বলল ‘আপনারা মনে হয় এখানকার না ‘। ৪ টাকা ফেরৎ নিতে চাই না এটা ছিল তার কাছে অপ্রত্যাশিত।
যা খেলুমনা দাদা, একটা ডিমের পুরো আদ্দেকটাই খেয়ে নিলুম
বা, দাদা কি খেয়ে এসেচেন নাকি যেয়ে খাবেন?
এমন অনেক কথাই প্রচলিত আছে। কথাগুলো ভুল নয়। কলকাতার মানুষ অনেক হিসাবি, কৃপন বলাটা মনে হয় ঠিক হবে না। দাওয়াত দিয়ে অর্ধেক কাপ চা ও ২ টা বিস্কুট দেয়ার গল্পটা মিথ্যা নয়। আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় সেই বাড়ির লোকসংখ্যা অনুযায়ী গুনে গুনে মিষ্টি নেয়াটাই সেখানে সংস্কৃতি, এটা শোনা। আমাদের বাড়ি থেকে বর্ডার মাত্র ৪/৫ কিলোমিটার, কলকাতা ৫০ কিলোমিটারের মত হবে। অনেক রিফিউজি আছে আমাদের এলাকায়। আমরা রিফিউজি বলি যদিও শব্দটা হয়ত সঠিক নয়। ৪৭ সালে দেশভাগের সময় যারা ভারত থেকে আমাদের এখানে আসছিল তাদেরকেই আমাদের এলাকায় রিফিউজি বলে। আমার মনে আছে, একবার এক বৃষ্টির দিন আমার বাবা, আমি ও আমার বোনকে শহরের এক ঘনিষ্ট আত্মীয় বাড়ির পাঁচিলের চৌকাঠ থেকে ফিরে আসা লাগছিল। আমরা তখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি। তারা ছিল রিফিউজি। যাইহোক এদিক দিয়ে কলকাতা এলাকার বাঙ্গালিদের দূর্নাম আছে। কলকাতার দোকানদারগুলোও কেমন কাঠখোট্টা টাইপের, ভদ্রতা, বিনয় এগুলো অনুপস্থিত।
তবে পুরো ভারতকে কলকাতা, পশ্চিম বাংলা, আসামের বাঙালি মানুষের সাপেক্ষে তুলনা করলে ভুল করবেন। আমাদের এখানে অনেক মানুষ আছেন যারা অনর্থক ভারত বিদ্বেষী যেটা অনুচিৎ। সমগ্র ভারতের অন্য অনেক জায়গায় আপনি বেশীরভাগ মানুষকেই খুঁজে পাবেন মানবিক, বিনয়ী, ভদ্র হিসাবে। অন্তত আমার দৃষ্টিতে আমাদের চেয়ে ভাল। একটি শিশুর জন্য ট্রেনে সীট ছেড়ে দেয়া, নিজের মোবাইল দিয়ে খেলতে দেয়ার মত বিনয় আমাদের এখানে আমার তেমন চোখে পড়ে না। এগুলো নিয়ে অন্য আরেকদিন লিখব। আজ কলকাতা নিয়েই থাকি।
কলকাতার বাড়ি-ঘর সব পুরানো, টালী/খোলার ঘর আছে প্রচুর। বসবাসও কিছুটা অপরিচ্ছন্ন, পোশাক আশাকও তেমনই। ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে দল বেঁধে গোসলের দৃশ্য, খালি গায়ে বসে থাকা, যেখানে সেখানে ময়লা/থুথু ফেলা এসব চোখে পরে অহরহ।
তবে কলকাতার অনেক ভাল কিছু গুণ আছে। ওরা আইন মেনে চলে রাস্তায়। মাঝ রাতেও ফাঁকা রাস্তায় সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। অহেতুক খরচ করে হামবড়া ভাব দেখায় না। খাওয়া, চলাফেরার খরচ অনেক কম। নিম্নমানের হোটেল ভাড়া অনেক বেশী হলেও সাধারন মানুষের আবাসন ব্যয় অনেক কম বলেই ধারনা করি। ওদের রাস্তার ধারের ফল বিক্রেতারা ফরমালিন মেশায় না, ওদের ফল ঢাকার মত ২ মাস ধরে চকচক করে না, ২ দিনে পঁচে যায়। সবচেয়ে বড় যে গুণটি কলকাতার আছে সেটি হল সহনশীলতা। ওরা ভিন্নমত সহ্য করে, মর্যাদা দেয়। যে কেউ কথা বলতে পারে। সে ধর্ম হোক, সমাজ হোক, রাজনীতি হোক বা অন্য বিষয় ওরা ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করে। কথায় কথায় মারতে উদ্যত হয় না, কল্লা ফেলে দেয় না । আমাদের এখানে মানুষ অনেক বেশী উগ্র ওদের থেকে। বেশী না, আপনি ফেসবুকে ভিন্নমতের বা মানুষের প্রচলিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু লিখে দেখেন। বুঝবেন আমাদের মানুষদের গালিগালাজ, হুমকি ধমকি কোন পর্যায়ের। মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই আমাদের এখানে, এটা সরকার বা প্রসাশনের বিষয় নয়, আমাদের সামাজিক শিক্ষাটাই এর জন্য দায়ী। এই বিষয়গুলো যদি বিবেচনায় নেন তবে কলকাতার মানুষ আমাদের চেয়ে ভাল।
ভিডিওটি গত ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭ এ কলকাতার বউবাজার এলাকায় ধারন করা।
শহর কলকাতায় প্রাণ আছে, ঢাকার মত কৃত্রিমতা কম।
Related Posts
What is the main purpose of people coming to Earth?
Many people are confused by this question. In the swing of this wandering, they tryRead More
নবী মোহাম্মদ কি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ?
Is Prophet Muhammad the Best Person in the World? কিছু মুমিন দাবী করে বিধর্মী বড়Read More
কোরান কি আসলেই নির্ভুল? বৈজ্ঞানিকরা কি কোরান নিয়ে গবেষণা করেন?
পাকিস্তানের এক তথাকথিত স্কলার একবার জীন দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন নাকি! মোল্লা তারিকRead More
Comments are Closed