Politics
Teachers and Students Politics

Teachers and Students Politics

শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি কি দেশের কোন কাজে লাগছে ? এগুলো কি থাকা উচিৎ ?

দেশের সচেতন, প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হিসাবে ছাত্ররা রাজনীতি করলে করতে পারে। তবে সেটা ক্যাম্পাসের বাইরে। ক্যাম্পাসে কোন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি থাকা উচিৎ না। ছাত্ররা তাদের দাবী আদায়ে, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম করতে পারে, খুবির ছাত্ররা সেটা বিভিন্ন সময়ে করেও দেখিয়েছে। দুর্নীতি বাংলাদেশের সবখানে বিস্তৃত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দেশেরই মানুষ ও সিস্টেমের অংশ। সুতরাং সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন ছাড়া দুর্নীতির চিত্র বদলানো কঠিন। তবে দেশের বিবেক হিসাবে পরিচিত শিক্ষকদের দ্বারা দুর্নীতি সংগঠিত হলে তা তুলনামূলক অধিক অন্যায় ও খারাপ উদারহন তৈরি করে।


বাংলাদেশ এখন স্বাধীন দেশ। একসময় যখন পরাধীন ছিল তখন দেশের শিক্ষিত, সচেতন নাগরিক বলতে ছাত্ররাই ছিল সবচেয়ে বেশী, সেজন্য সময়ের প্রয়োজনে অবশ্যম্ভাবীভাবে তারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু পরবর্তীতে ছাত্র রাজনীতি তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে বিপথগামী হয়েছে। এখন ছাত্র রাজনীতির এতো বেশী খারাপ দৃষ্টান্ত দেখা যায় যে এটাকে শিক্ষার বিকাশে ক্যান্সারের সমতূল্য মনে করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি সেই ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জীবানু। যেহেতু ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষের ট্রিটমেন্ট নাই সেহেতু কোষ কেটে ফেলা ছাড়া বাঁচার উপায় নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপকর্মের শুরুটা হয় ভিসি নিয়োগের মাধ্যমে। শিক্ষক নামধারী রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি করে পাঠানো হয়। শিক্ষা, মেধা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা এসবের মূল্যায়ন খুব কমই হয়। সেজন্য শিক্ষকেরাও জেনে যান ভিসি হতে হলে নোংরা শিক্ষক রাজনীতি, প্রয়োজনে কামড়াকামড়িও করতে হবে। ভিসি পোস্টে কি এমন মধু আছে ? শুধু নিয়োগ, বদলী, আধিপত্ত, দুর্নীতি এসব ছাড়া কি এমন মধু আছে ? বাংলাদেশে ক্ষমতা বলতে সবাই বোঝে আইন ভেঙ্গেও পার পেয়ে যাওয়া, সেটা সবখানে। প্রকৃত গবেষক ও শিক্ষাবিদদের ভিসি’র মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্ববহুল পদে যাওয়ার চেয়ে তাদের শিক্ষা, গবেষণার মতো বিষয়ে বেশী মনোনিবেশ করার কথা ছিল। আমরা বিশ্বের নামকরা প্রফেসরদের চিনি তাদের কর্মে। যতজন প্রফেসর নোবেল পেয়েছেন, মানব সভ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের কতজন ভিসি, ডীন এসব ছিলেন? একজন শিক্ষকের সফলতা ও সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার কথা ছিল তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও গবেষণায় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে। সেটা কি হয় আমাদের দেশে ? হয় না। আপাতত এই অবস্থা থেকে পরিত্রানও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ছাত্র রাজনীতিমুক্ত থাকাটা জরুরী। সেক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সেই বিরল দৃষ্টান্ত। কোন প্রকৃত গবেষক কখনো গবেষণা করে দেখলে তিনি নিশ্চিতভাবেই খুবি’র ছাত্র রাজনীতি না থাকার সুবিধা ও সুযোগগুলো তুলে ধরতে পারবেন। শিক্ষক রাজনীতি না থাকলে খুবি নিশ্চিতভাবেই দেশে শ্রেষ্ঠ হতো। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়কে দীর্ঘদিন ধরে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম ভয়ের পরিবেশে ছিলাম, জোর করে মিছিল-মিটিং এ নিয়ে যাওয়া দেখেছি, মাঝ রাতে কারো ঠ্যাঙ ভেঙে দেয়ার আর্তনাদ শুনে দূর্বল প্রকৃতির কত ছাত্রকে কুকড়ে যাওয়া দেখেছি কত। সেই তুলনায় খুবি’র অবস্থা অনেকগুণ ভাল। আমি আমার সাবেক অফিসে অনেক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত থেকে, ইন্টারভিউ নিয়ে এটারও প্রমান পেয়েছি তথাকথিত অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে খুবি’র ছাত্ররা অনেক টেলেন্টেড, চৌকস, করিৎকর্মা। দেশে পাবলিক সার্ভিসে খুবি’র যারা আছেন তাদের অধিকাংশই তুলনামূলক ভাল করছেন, দুর্নীতির সঙ্গে অধিকাংশের সংশ্লিষ্ঠতা কম। এগুলো ছাত্র রাজনীতি না থাকারই ফল বলে আমার মনে হয়।

একটা সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্র যে কলেজ পর্যন্ত পড়াশুনায় ধ্যান-জ্ঞান নিয়ে থাকে – বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যেলে ভর্তি হয়ে ছাত্র রাজনীতির সংস্পর্শে এসে হঠাৎ খুনি, ছিনতাইকারী, দূর্বৃত্ত হয়ে যায়। কত প্রমান আছে এর ? কি এমন প্রক্রিয়া ছাত্র রাজনীতির যা একজন মেধাবী, নিরীহ ছাত্রকে এভাবে ধ্বংস করে দিয়ে তার ও তার পরিবারের স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিনত করে ? কত শত ছেলে-মেয়ে হারিয়ে গেছে শিক্ষা নিতে গিয়ে তার হিসাব আছে কোথাও ?

বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনসংখ্যা বহুল একটি দেশ। কোটি কোটি মানুষের এই দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই, যেটি পৃথিবীর ইউনিভার্সিটিগুলোর র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পাঁচশ’র মধ্যে আছে। মাত্র দুই লাখ মানুষের দেশ আইসল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ তালিকায় আছে। মাত্র ১১ লাখ জনসংখ্যার দেশ এস্তোনিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় আছে। পাকিস্তান, ভারত, নেপালের মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। তুলনা করলে দেখা যাবে ঐসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নেই। তারা শিক্ষা ও গবেষোণায় শ্রেষ্ঠ হতে চায়, ভিসি/ডীন হয়ে ক্ষমতা দেখাতে চায় না।

Related Posts

Purpose of life

What is the main purpose of people coming to Earth?

Many people are confused by this question. In the swing of this wandering, they tryRead More

Prophet Muhammad

নবী মোহাম্মদ কি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ?

Is Prophet Muhammad the Best Person in the World? কিছু মুমিন দাবী করে বিধর্মী বড়Read More

Scientific Errors in the Quran

কোরান কি আসলেই নির্ভুল? বৈজ্ঞানিকরা কি কোরান নিয়ে গবেষণা করেন?

পাকিস্তানের এক তথাকথিত স্কলার একবার জীন দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন নাকি! মোল্লা তারিকRead More

Comments are Closed