
Scientific Procedures
ফেসবুকে বা ওয়েবসাইটে কেউ লিখলেই সেটা বিজ্ঞান হয়ে যায় ?
কেউ একজন ঘাটে মাঠে পথে বলে দিল এটা বৈজ্ঞানিক, বিজ্ঞানে আছে এটা। কেউ বললেই বা একটা সাইটে কোন কিছু প্রকাশ হয়ে গেলেই সেটা বিজ্ঞানসম্মত কিছু হয়ে যায় না। ফেসবুক, ভূইফোঁড় অনলাইন তো দূরে থাক, বিবিসির মতো সাইটে কোন কিছু প্রকাশ পেলেও সেটা বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। বিজ্ঞানের আর্টিকেল Peer Reviewed কোন জার্নালে প্রকাশিত হতে হয়। কোন সাইটের প্রকাশিত তথ্য রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করা যাবে আর কোনটি যাবে না সেটা যারা না বোঝে তাদের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বয়ান না দেয়াটাই ভাল।
প্রফেসর স্টিফেন হকিং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ট বিজ্ঞানী, এতে কেউ দ্বিমত করবে না। কিন্তু আপনি কি জানেন, তিনি কখনো নোবেল প্রাইজ পাননি ? হকিং যে ব্ল্যাক হোল থিউরির প্রবক্তা তা এখনো বিজ্ঞানীরা নির্ভুলভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রামান করতে পারেননি। তারা ধরে নিয়েছেন এটা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশী কিন্তু এখনো যেহেতু প্রামান করতে পারেননি তাই এই তত্ত্ব ১০০% বৈজ্ঞানিক নয়। এই তত্ত্ব তিনি দিয়েছেন ৪৬ বছর আগে ১৯৭৪ সালে। বুঝুন অবস্থা, বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি বা কোন কিছুর আগে বৈজ্ঞানিক লাগানো কতটা শক্ত কাজ।
অথচ আমাদের দেশে কত শত বিজ্ঞানী পথে প্রান্তরে ঘোরে, প্রতিনিয়ত তারা বিজ্ঞানের সবক দেয়, বৈজ্ঞানিক বলে অনেক আজগুবি, মিথ্যা, গাঁজাখুরি অনেক কিছুকে তারা মূর্খ মানবকুলের সামনে তুলে ধরে। আকাট মূর্খরা সেগুলো গোগ্রাসে গেলে, ফেসবুকে প্রচার করে, তর্ক বতর্কেও জড়ায়। এই তালিকা আরো দীর্ঘ। আমরা হরহামেশা বইয়ের নামের আগে লাগিয়ে দেই বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ। হাতুড়ে, হোমিও, আয়ুর্বেদ চিকিৎসার আগে লাগিয়ে দেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ১০০% গ্যারান্টি সরকারে রোগ নির্নয় এমন আরো কত কি ! রাস্তাঘাটে আপনার চোখে পড়বে এমন সব জিনিস। বিভ্রান্ত হয়ে কেউ কেউ সব হারান। আবার মানুষ অনেক অন্ধ, ভ্রান্ত বা সু-বিশ্বাস কেও বৈজ্ঞানিক লেবেল লাগিয়ে দেয় জেনে বা না জেনে। মহাশয় বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতির যে ধাপগুলো পার হয়ে এই শব্দটা লাগানো যায় সেই ধাপের প্রথম স্তরের ধারের কাছেও হয়ত যায়নি আপনার বৈজ্ঞানিক অমুক, তমুক।
বহুদিন আগে আমার নবম শ্রেনীর বিজ্ঞান বইতে প্রথম অধ্যায়ে ( যেখান থেকে কোন প্রশ্ন আসত না বলে কেউ পড়ত না ) বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে কিছু লেখা ছিল। সেখানে হাইপোথিসিস থেকে রেজাল্ট পর্যন্ত ধাপ গুলো লেখা ছিল। পরবর্তীতে জানলাম এই শেষ নয়, আরো আছে Reproducibility অর্থাৎ আমেরিকার ল্যাবে প্রমানিত জিনিস জাপানের ল্যাবেও একই ফলাফল দিতে হবে। এর পর আছে Statistical Significance অর্থাৎ পরীক্ষার ফলাফল এমন ভাল হতে হবে, যা কাজে লাগবে। এরপর আছে Review and Meta analysis সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষন করে একটি সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এই ব্যাপার গুলো জানেনা বলেই অনেকের কাছে কোয়ান্টাম মেথড – বিজ্ঞান, এ্যাস্ট্রোলজি বিজ্ঞান, অনেক আচার অনুষ্ঠান বিজ্ঞান, অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি বিজ্ঞান, অনেক বিশ্বাস বিজ্ঞান ।
আপনি আপনার বিশ্বাস নিয়ে অবশ্যই অহংকার করতে পারেন, বলতে পারেন, “হ্যাঁ, আমি দেখেছি ব্যাপারটা কাজ করে”,
কিন্তু বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতির সঠিক অনুসরণ ছাড়া আপনি কখনই সেই বিশ্বাস কে বিজ্ঞান বলতে পারেন না। বিজ্ঞান মানুষেরই তৈরী একটি Set of Rules. সেটি আপনি ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন করতে পারেন না।
আমার ছোটবেলার একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। একবার একটা প্লাস্টিকের মগ পুরো পানিতে ভরে সেটিকে পানির বালতিতে ডুবিয়ে দিলাম, দেখলাম মগটি পানির উপরিতলের সাথে লাগোয়া হয়ে ভাসছে। আমার হাইপোথিসিস হল: কোন পাত্রে কোন তরলে ভর্তি করে সেই পাত্রকে একই তরলের মধ্যে ডুবিয়ে দিলে তা তরলের উপরিতলের সাথে লাগোয়া হয়ে ভাসবে। এবার এক্সপেরিমেন্টের পালা, নিলাম একটা লোহার পাত্র। বিধিবাম সেটি একেবারে ডুবে গেল। কিছু হাইপোথিসিস বা বিশ্বাস বিজ্ঞানের সঙ্গে আংশিক বা পুরোটা মিলে গেলেও কিন্তু সবগুলোকে বা সেগুলোকে বিজ্ঞান বলে চালানো এই ২০২০ সালে বেমানান !
Related Posts

Protecting women is a man’s responsibility – this is a lesson rooted in evolutionary psychology
A common tendency across all societies is to take extra care of women. This isRead More

নারীকে সুরক্ষা দেয়াটা পুরুষের কর্তব্য, এটা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের শিক্ষা
সব সমাজের একটা কমন টেন্ডেন্সি হলো নারীকে এক্সট্রা কেয়ার নেয়া। এটা প্রকৃতির একটা নিয়ম। মাইটোকন্ড্রিয়ালRead More

Evolution through mutation: Nature’s perfect strategy
Evolution is the gradual process of change in the living world through which species adaptRead More
Comments are Closed