Save a Teacher from the Extremists
অবিলম্বে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তি চাই। শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারের বিনিময়ে হাতে বেড়ি নয় !
অবিলম্বে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তি চাই।
ধর্ম আর বিজ্ঞান দুইটা দুই জিনিস। কোনটার সঙ্গে কোনটার মিল নেই। ধর্মের অনেক কথা যেমন বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলবে না তেমনি বিজ্ঞানের অনেক কথা ধর্মের সঙ্গে মিলবে না। ধর্ম হলো বিশ্বাসের বিষয়। তথ্য, প্রমান, যুক্তি, শর্ত থাকলে তা আর বিশ্বাস থাকে না। বিশ্বাস জিনিসটাই এমন যেখানে কোন প্রশ্ন করা চলবে না। অন্যদিকে বিজ্ঞান হলো পুরোটাই তথ্য, উপাত্ত, প্রমান, পরীক্ষা, নিরিক্ষা, গ্রহন/বাতিলের বিষয়। কেউ মুখে কিছু বলে দিলেই তা বিজ্ঞান হয় না।
ধরেন আপনি মিস্টার এক্সকে কখনোই চেনেন না। মিস্টার এক্স এসে আপনাকে জানালো সে খুব ভাল মানুষ, তাকে ৫০০ টাকা ধার দিতে হবে। আপনি দিলেন, আপনি মিস্টার এক্সকে বিশ্বাস করলেন। আবার আপনি মিস্টার ওয়াইকেও টাকা ধার দিলেন, কারন আপনি জানেন সে প্রায়ই আপনার ও অন্যদের কাছ থেকে ধার নেয় ও ঠিকঠাক ফেরৎও দেয়। এটা আস্থা। বিশ্বাস ও আস্থা এক নয়। আবার আপনার একটা রোবট আছে। আপনি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে নির্দেশ দিলেন দোকান থেকে একটা কিছু আনতে। পথে কোন বাঁধা না পেলে ও সিস্টেমে কোন ভুল না থাকলে সে আপনাকে জিনিসটি এনে দিবেই, এতে কোন ভুল হবে না। এটা বিজ্ঞান। বিশ্বাস ইটসেলফ অন্ধ, প্রমান চাইলে, শর্ত যুক্ত হলে সেটা আর বিশ্বাস থাকে না।
বিজ্ঞানের ক্লাসে ধর্মের বিষয় আসলে সেটাকে বিজ্ঞানের আলোকে দেখতে হবে আবার ধর্মের ক্লাসে বিজ্ঞানের বিষয় আসলে সেটাকে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। যেমন ধরুন জীববিজ্ঞানের অবিচ্ছেদ্য অংশ প্রানীর বিবর্তন, ধর্ম এটা সাপোর্ট করে না। এখন জীববিজ্ঞানের শিক্ষক যদি বিবর্তন পড়ান সেখানে ছাত্র যদি ধর্মীয় দৃষ্টিতে সেটাকে মিথ্যা প্রমান করার চেষ্টা করে সেটা অবান্তর কর্মকান্ড।
গত ২০ বছরে বাংলাদেশে অনেক মানুষ ধর্মান্ধ হয়ে গেছে। তাদের কাছে বিজ্ঞানের প্রমানিত বিষয়কে সঠিক মনে হয় না যদি সেটা ধর্মের সঙ্গে না মেলে। মুন্সিগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মন্ডল বিজ্ঞান পড়ান, বিজ্ঞান শিক্ষক হিসাবে তিনি ভাল ও সফল বলেই মনে হয়েছে। ছাত্ররা বয়সের দোষে ও সামাজিক ভাইরাসের কারনে তাকে প্ররোচিত করে কিছু বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেটা রেকর্ডও করেছে। শ্রেনীকক্ষে ছাত্রের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষক তার জানা জ্ঞান বর্ননা করতেই পারেন, সেটা কারো মতের বাইরে গেলে তো কিছু করার নেই। অথচ ছাত্র ও মানুষের জঙ্গি দাবীর মুখে জেলে ভরা হলো শিক্ষক হৃদয় মন্ডল কে, খুবই অনুচিত ও অপরিনামদর্শী একটি কাজ হয়েছে সেটা। খুবই দুঃখজনক ও হতাশাজনক একটা ব্যাপার রাষ্ট্রের জন্য। যার প্রশংসা পাওয়ার কথা সে এখন জেলে। এটাই বর্তমান বাংলাদেশ।
বেশ কয়েক বছর ধরে ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ নামের একটা বই তরুণরা খুব পড়ছে। বইমেলায় সেটা বেস্টসেলারও হয়। দেশের পাঠকের মান বোঝার জন্য এটা যথেষ্ট। খুব নিম্নমানের লজিক্যাল ফ্যালাসিতে পরিপূর্ণ একটা বই। তরুণরা এই বই পড়ে মনে করা শুরু করেছে কি না কি জেনে গেলাম। অথচ তারা যা জানছে সেটা সিউডো সাইন্স বা অপবিজ্ঞান। দিনশেষে তাদের শিক্ষা ও জ্ঞান অপরিনত থেকে যাচ্ছে। যেই বই বাসে ট্রেনে রাস্তাঘাটে ফেরিওয়ালাদের হাতে পাওয়ার কথা সেইটা যদি বাংলা একাডেমীর বই মেলায় স্থান পায় এবং তারপর আবার গত কয়েক বছর বেস্ট সেলার হয় শুনেছি সেই দিনই বুঝেছিলাম এইরকম দিন আসছে যেদিন বিজ্ঞান শিক্ষাকে পাশ মার্ক দিবে ধর্মান্ধরা। দেশে ইন্টারনেটে ধর্মান্ধ ওয়াজের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ও সাম্প্রদায়িক শক্তির লেখনিতে বিভ্রান্ত হয়ে একটা শ্রেনি ভাবা শুরু করেছে তারা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ, অন্যরা নিকৃষ্ট। তাদের কাছেই সব জ্ঞানের ভান্ডার। অথচ তারা বিজ্ঞানের বিচারে মূর্খ। এই মূর্খ শ্রেনীর সংখ্যাই বাংলাদেশে বাড়ছে দিন দিন।
বিজ্ঞানকে সবসময় প্রচলিত অনেক বিশ্বাস, ধর্ম বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করেই এগিয়ে যেতে হয়েছে। গ্যালিলিও যখন বলেছিল পৃথিবী গোল এবং সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। তখন ভোটাভূটি হলে উনি হয়তো কোন ভোটই পেতেন না। তাই বলে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত সঠিক হয়ে যেতো ? যারা বিজ্ঞানের কর্মপদ্ধতি বোঝেন তারা জানবেন বিজ্ঞানে সহজে যেমন কিছু প্রতিষ্ঠা করা যায় না আবার সহজে কোন প্রতিষ্ঠিত ও প্রমানিত ব্যাপারকে ভুলও প্রমান করা যায় না। বিজ্ঞানের গতিপথ দিতে হবে বিজ্ঞানের মতো করে। ধর্মীয় মতবাদ বিজ্ঞানের গতিপথ ঠিক করে দিতে পারে না। সভ্যতা চাইলে, উন্নয়ন চাইলে, মানবিক বোধের জাগরণ চাইলে বিজ্ঞানকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
দেশের শিক্ষক সমাজ কোথায় ? ক্লাসে আলোচনার জন্য তাদের এক সহকর্মীকে জেলে পুরে দেয়া হলো, হাজার হাজার উন্মত্ত মানুষ তাকে নির্যাতন করার জন্য উদ্যত হলো, শিক্ষক সমাজ কি করছে ? এই দেশে নাকি অর্ধশতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সাথে আছে ততোধিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ। এত শিক্ষক থাকতে একজন হৃদয় মন্ডলের মত এত ভালো একজনের হেনস্থা দেখেও সবাই কেমন চুপ হয়ে আছে। এই চুপ থাকার জন্য আরো বড় আকারের মাসুল দিতে হবে আমাদের। অবিলম্বে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তি চাই। শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারের বিনিময়ে হাতে বেড়ি নয় !
সেদিন ক্লাসে শিক্ষক হৃদয় মন্ডল ও ছাত্রদের সেই কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপ্টঃ
এটা বিজ্ঞানের ক্লাস, ধর্মের ক্লাস নয়। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত। আর ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস।
মুন্সীগঞ্জের রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস টেনের ছাত্রদের সাথে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপ্ট। প্রায় ১৩ মিনিটের এই টেপটি ওই ক্লাসের ছাত্রদেরই রেকর্ড করা, যেটা পরে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। ছাত্র-শিক্ষকের এই আলাপটির বড় একটা অংশই মুন্সীগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় ছিলো, তাই ট্রান্সক্রিপশনের ক্ষেত্রে মুন্সীগঞ্জের লোকজনের সাহায্য নিয়ে প্রমিত বাংলায় এডিট করা হয়েছে। হৃদয় মণ্ডলকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক ও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
[00:00]
স্যার: কেউ দেখেছে? কোন কিছুইতো কেউ দেখেনি। এটা তারা বিশ্বাসের উপর রেখেছে। তোমরা যখন বিজ্ঞান আরো পড়বে তখন দেখবে বিজ্ঞানে আরো কতকিছু আসছে। আসলে আমরা বুঝে উঠতে পারি না বা চাই না সত্য জানতে। দেখো উন্নত বিশ্ব ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে। আর আমরা ধর্মান্ধ হচ্ছি।
[00:35]
ছাত্র: বহু ধরনের কথা ও থিওরিতো ধর্ম থেকেই এসেছে। বিজ্ঞানীরা ধর্ম থেকে এসব আবিস্কার খুঁজে পেয়েছেন।
স্যার: কোন কথা ধর্ম থেকে নেয়া হয়নি। কোনভাবেই না। বরং বিজ্ঞান থেকে নিয়ে ধর্ম চলছে, ধর্ম বানানো হয়েছে।
[01:10]
ছাত্র: আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) বহু বিজ্ঞানের সকল উৎস দিয়ে গেছেন। সাড়ে চার হাজার বছর আগে আমাদের হযরত মোহাম্মদ (স:) এসব বিজ্ঞানের কথা বলে গেছেন।
স্যার: সাড়ে চার হাজার বছর আগে কীভাবে? হযরত মোহাম্মদ তো ছিলেন সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগে। বিজ্ঞানীরা আবিস্কার শুরু করেছেন বহু আগে থেকে। মানে হযরত মোহাম্মদের আমল থেকেই বিজ্ঞান শুরু হয়েছে এমনটা তো নয়।
[01:30]
ছাত্র: হ্যাঁ স্যার, হযরত মোহাম্মদ (স:) এর পূর্বে যারা বলে গিয়েছেন তাদেরটায় কোন যুক্তি পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) যা বলে গেছেন তা সব যুক্তিপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছে৷
স্যার: হযরত মোহাম্মদ এমন কী বলে গেছেন যার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা তার কাছ থেকেই পেয়েছেন? এমন কোন আবিস্কার ছিলো যা বিজ্ঞানীরা আগে করতে পারেননি? এটা বিজ্ঞানের ক্লাস, ধর্মের ক্লাস নয়। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত। আর ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস।
[02:00]
ছাত্র: স্যার আছে, অনেক প্রমাণ আছে যে ধর্মই বিজ্ঞানসম্মত।
স্যার: ধর্মের কোন প্রমাণ নেই। শেষমেশ ধর্মের ব্যখ্যা কোথায় যায় জানো? শেষমেশ ওই ঈশ্বর দেখে, ঈশ্বর সমাধান দেবেন, পরকালে বিচার হবে। এসব বিশ্বাসের বিষয়। কোন প্রমাণ নেই৷
[02:15]
ছাত্র: একটি বই আছে, পড়বেন। নাম হচ্ছে ‘থিওরি অব এভরিথিং’। পাবেন ডিমের ভেতর কুসুম কীভাবে আছে তা আল্লাহ আগেই বলে দিয়েছে৷
স্যার: আমি সব পড়েছি। না পড়লে কি বিজ্ঞান পড়ানোর শিক্ষক এমনিই হয়েছি? এগুলো সব গোঁজামিল দাবী। ওই বইয়ে এমন কিছুই লেখা নেই। বস্তুত ধর্ম মানুষের লেখা৷ সব ধর্ম মানুষের লেখা।
[02:45]
ছাত্র: স্যার বিজ্ঞানও তো মানুষের লেখা৷
স্যার: হ্যাঁ বিজ্ঞান অবশ্যই মানুষের লেখা।
[02:55]
ছাত্র: স্যার, ধর্মের প্রমাণ আছে।
স্যার: ধর্মের কী প্রমাণ আছে আমাকে দেখাও।
[02:04]
ছাত্র: কী যে বলেন স্যার! সারা বিশ্বে মুসলিমদের নিয়ে গবেষণা হয়েছে। সবাই দেখে ইসলামই সত্য। এটাই সত্য ধর্ম আর বাকি সব মিথ্যা। এটা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছে।
স্যার: কোরআন যদি বিজ্ঞানের উৎস হয়ে থাকে তবে দেখাও কোরআন পড়ে কতজন বিজ্ঞানী হয়েছেন? পৃথিবীর ৯০% বিজ্ঞানী খ্রিষ্টান বা খ্রিষ্টান পরিবার থেকে আসা।
[03:24]
ছাত্র: স্যার আমরা যেটাকে ধর্ম বলছি, এটাকে যদি আমরা [বিজ্ঞানের] দিকে নিয়ে যাই তবে সেটাই বিজ্ঞান। আর যদি বিজ্ঞানকে ধর্মের দিকে নিয়ে যাই তবে ওটাই বিজ্ঞান। মূল কথা হচ্ছে দুটোই এক জিনিস।
স্যার: এই যে খ্রিষ্টানরা এতোকিছু আবিস্কার করে, তাদের ধর্মের নিয়ম সেভাবে কেউই মানে না। তারা কি ধর্ম ব্যবসা করতে পারে না? অবশ্যই পারে। তারা ধর্ম ব্যবসা করছে কি? তারা ধর্মের ধারেকাছেও নেই। তারা আছে আবিস্কার নিয়ে৷ এই মুসলমানরা এগিয়ে যেতে হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকতে হবে৷ ধর্মান্ধতা বাড়লে সেটা সম্ভব নয়৷ এই চৌদ্দ শত বছর আগে ইসলাম এসেছে। বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ বছরে৷ তাহলে এতোদিন হুজুররা কী করেছেন? কী আবিস্কার করেছেন তারা?
[04:40]
ছাত্র: শুরু থেকেই হুজুররা যা বলতেন তাই বিজ্ঞান হিসেবে মেনে নেয়া হতো।
স্যার: তোমাদের হুজুররা বিজ্ঞানের কী পড়েছেন? কী জানেন? তারাতো বিজ্ঞান পড়েইনি সে অর্থে। এই যে ডারউইনের কথা বললাম, ডারউইন কি ধর্ম পড়ে বিজ্ঞানী হয়েছেন?
[05:08]
ছাত্র: স্যার, ডারউইন যে ধর্ম পুস্তক পড়েনি তার প্রমাণ কী স্যার?
স্যার: আরেহ ধর্ম পুস্তক পড়েই না ওরা বেশিরভাগ।
[05:10]
ছাত্র: স্যার, নাস্তিক ঠিক আছে। কিন্তু ওরা ধর্মের পুস্তক পড়েই এসব আবিস্কার করেছে। ধর্মের প্রমাণ পেয়েছে ওরা।
স্যার: আরেহ আবিস্কারগুলো ধর্ম পুস্তক থেকে আসেইনি। কোন সুরা কোন হাদিসে আছে আবিস্কারের কথা? আবিস্কারের সূত্র? ধর্মটাতো কাল্পনিক বিশ্বাস। বাস্তবতার সাথে ওর সম্পর্ক কী? হ্যাঁ স্রষ্টা আছেই। স্রষ্টা না থাকলে গাছপালা কোথা থেকে এলো? এই গাছপালাগুলো তো মানুষ সৃষ্টি করেনি। মাটি মানুষ তৈরি করতে পারে না। মায়ের পেটে বাচ্চা মানুষ তৈরি করতে পারে না, ডিম থেকে বাচ্চা হওয়া। পাওয়ারতো থাকতে পারে। পাওয়ার থাকলে সেটা কার? সেটাই আল্লাহ, সেটাই ঈশ্বর। এই যে হযরত মোহাম্মদ। এরা কী? এরা হইলো মহাপুরুষ। এরা কেউ ঈশ্বর নন।
[06:15]
ছাত্র: এরা আমাদের জ্ঞান দিয়েছেন।
স্যার: নৈতিক জ্ঞান হয়ত। ধর্ম মানুষকে জীবনযাপন এর কিছু নিয়ম বলে দেয়। মানুষ সেটা পালন করে। এর বাহিরে কি কিছু নেই? অবশ্যই ধর্ম পুস্তকের বাহিরে অনেক কিছুই আছে৷ ধর্ম এসেছেই মানুষকে শৃঙ্খলায় রাখার জন্য। আর কোন কিছুর জন্য নয়।
এই যে স্রষ্টা আছে বলা হয়, আমরাতো দেখিনি। যে জিনিস দেখিনি সে জিনিস নিয়ে মারামারি কাটাকাটির কোন মানে আছে? তোমার বিশ্বাস তোমার বিশ্বাসের জায়গাতেই রাখো। বিজ্ঞান হচ্ছে প্রমাণ সাপেক্ষ। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়৷ আর ধর্মে অন্ধ হলে যা হয়, এই গরমে জোব্বা পরে থাকে। এটাতো বিজ্ঞানসম্মত নয়৷
এই যে তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাস হয়ে বাতি জ্বলে এটা বিজ্ঞান। এই যে A+B হোলস্কয়ারের সূত্র, এগুলো হিসেব করে মেলানো। এটাই বিজ্ঞান যা প্রমাণ সাপেক্ষ। এগুলো কি ধর্মগ্রন্থে আছে? আমরা অনেক সময় বিজ্ঞানকে ধর্মের সাথে মিলাই যা ঠিক নয়। হ্যাঁ ধর্ম মানুষকে সুশৃঙ্খল রাখে। বিজ্ঞান আলাদা কথা। বিজ্ঞান বিজ্ঞানই।
[08:27]
ছাত্র: ‘প্যারাডক্সিকাল সাজিদ’ বইটা পইড়েন স্যার। গুগল প্লে স্টোরে পাবেন।
স্যার: আমি পড়েছি। প্রতিনিয়ত আমি বিজ্ঞানের বই পড়ি। এসব গোঁজামিলের বইও আমার পড়া আছে। ওই বই থেকে বিজ্ঞান শিখতে হবেনা আমার৷ এই যে মুসলমানরা মুসলমানের মত ধর্ম প্রচার করে, হিন্দুরা হিন্দুদের মত আর খ্রিষ্টানরা তাদের মত করেই ধর্মের ব্যখ্যা করে। এই জাত আর ধর্ম নিয়েই দ্বন্দ্ব।
[09:00]
ছাত্র: আমরা যদি বলি, ধর্মের বিভিন্ন জিনিস যুক্ত করে বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের ক্রেডিট নিচ্ছে?
স্যার: আরেহ বিজ্ঞান তো প্রমাণ দিয়েই আসছে। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক কী? নেয়া দেয়ার প্রয়োজন কেন আসবে? বিজ্ঞান তো কোন বিশ্বাস নয়।
[09:12]
ছাত্র: আমরা যদি ১৪০০ বছর পেছনে যেতে পারতাম তবে তো আমরা দেখতেই পেতাম আমদের সামনে সব প্রমাণ চলে আসতো।
স্যার: ধর্ম পুস্তক ১৪০০ বছর আগের লেখা৷ তার আগে কোথায় ছিলো? এর আগে মানুষ ছিল না? সভ্যতা ছিল না? তবে?
[09:26]
ছাত্র: কোরানের আগেও ৩ টি বই ছিলো।
স্যার: যবুর ছিলো, ইঞ্জিল তো ২৫০০ বছর আগের। আর বৌদ্ধদের ছিলো। আমাদের হিন্দু ধর্মের বেদ ছিলো বড়জোর সাত হাজার বছর আগের। তাতে লাভ কী ? মানুষ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে। তখন এসব পুস্তক কোথায় ছিলো? তাহলে? এখন আমরা যতটুকু পাই সেটুকু নিয়েই ধর্মের কথা বলি৷ আমরা এখন ধর্ম নিয়ে গ্যাঞ্জাম করি! কেন করি? আমরা গ্যাঞ্জাম করব না। শিখব, জানব। কোনপ্রকার ঝামেলা করব না ধর্ম নিয়ে। অর্থাৎ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোন মানে নেই। জিনিসটা হচ্ছে তোমরা বুঝে কাজ করবে৷ ধর্ম একটা কথা বললেই ঝাঁপিয়ে পড়বে না। ধর্ম বলল কান নিয়েছে চিলে আর চিলের পেছনে দৌড়াতে হবে ব্যপারটা এমন নয়।
হনুমান নাকি সূর্যটাকে কানের ভেতর রেখেছে। আমাদের হিন্দু ধর্মের যারা বয়স্ক তারা খুব বিশ্বাস করে যে এই হনুমানের কানের মধ্যে সূর্য থাকে, এখন প্রশ্ন হচ্ছে হনুমান যদি কানের ভেতর সূর্য রাখে তবে পৃথিবীর ১৩ লক্ষ গুন বড় হচ্ছে সূর্য। এই পৃথিবী সূর্যের ১৩ লক্ষ গুন ছোট! এই ছোট পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে হনুমান কিভাবে তার কানের ভেতর সূর্য রাখে?
এই রকম গাঁজাখুরি গল্প যারা করে তাদের গল্প বিশ্বাস করতেই হবে? কেন আমরা এসব বিশ্বাস করব? কমবেশি সব ধর্মের মধ্যেই এরকম গাঁজাখুরি গল্প আছে। আমরা সচেতন থাকবো। এসব বলতে গেলেই বিতর্ক। যাক তোমাদের পড়ানো শুরু করি। এসব বিতর্কে যেয়ে লাভ নেই।
ধর্মের ভালো দিকও আছে খারাপ দিকও আছে। ভালো না থাকলে খারাপ এলো কোথা থেকে? এই যে দিন দেখতে পাচ্ছো, এই দিন কীভাবে এলো? রাত আছে বলেই তো আমরা দিন বলতে পারি।
এই যে কালো ব্যাগ, এটা কালো তুমি বুঝলে কীভাবে? এই যে লাল ব্যাগ, তোমরা সবাই কেন লাল দেখতে পাচ্ছো?
এই যে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান এরকমই স্পষ্ট বিষয়। বিজ্ঞান হচ্ছে বাস্তবতা।
এই গাঁজাখুরি গল্প করে, এসব কারা করে? খারাপ মানুষেরা করে।
এই গাঁজাখুরি গল্প খারাপ মানুষগুলো করে তাদের ব্যবসা টেকানোর জন্য।
এই যে হনুমানের গল্প, হিন্দুদের মধ্যে যারা পড়াশোনা করে তারা কিন্তু এসব বিশ্বাস করে না। যারা মূর্খ লোক আছে তারাই এসব বিশ্বাস করে। কিছু লোক আছে ঘুরেফিরে খায়। সারাদিন কাজ করে না। এরে ওরে এটা সেটা বলে বাটপারি করে অন্ন যোগায়। ওরাই এই মূর্খদের শিষ্য বানায়। এরপর বসে বসে খায়। তারাই বলে হনুমানের কানে সূর্য আছে আর এসব শুনে মূর্খ লোকেরা তাদের টাকাপয়সা দেয়।
এই যে তোমরা লেখাপড়া শিখেছো, তোমরা ধর্মের পুস্তক পড়বে। অন্যের কথা শুনে লাফাবে কেন? তোমরা তো মূর্খ নও।
[12:50]
ছাত্র: স্যার আমরা তো কোরআন পড়েই এসব পাচ্ছি। তাছাড়া ওয়াজ শুনি, ওয়াজ শুনেও অনেক কিছুই শিখছি।
স্যার: ওয়াজ যে শোন, ওয়াজে কত ধরনের কথাই বকে, ভেবে দেখেছো? মানুষকে হত্যা করতে বলে, বাজে কথা বলে। হিংসা ছড়ানো হয় খেয়াল করেছো? শুনে ধর্ম মানতে হবে কেন? নিজে পড়েই ধর্ম মানো।
[ ট্রান্সক্রিপ্ট সোর্সঃ ফেসবুক ]
দেশের কি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরন ঘটবে ?
— কবি রফিক আজাদ।
বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে
বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই…
বালক জানে না তো কতটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই – থাকে না, নিরুপায়।
বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের গ্রেপ্তারে অবাক হবেন না। ‘প্যারাডক্সিকাল সাজিদ’ নামের অপবিজ্ঞানে ঠাসা মূর্খতায় ভরা বইটি পড়ে যারা বিজ্ঞান শেখে, এই ইন্টারনেটের যুগে যাদের ধর্ম আর বিজ্ঞান নিয়ে সংঘর্ষ বাধে সেই জাতি আসলে নিজ দায়িত্বে মূর্খ। এদেরকে উদ্ধার করার ত্রান-সাহায্য আমাদের কারোর হাতে নাই।
ইউরোপ মধ্যযুগে যে সমস্যায় ছিলো ধর্ম আর বিজ্ঞান নিয়ে- সেই সমস্যা আমাদের দেশের সিংহভাগ মূর্খের এখন হচ্ছে! এই সমস্যা কেন হচ্ছে আন্দাজ করতে পারেন? সমস্ত সমস্যা হচ্ছে মূলত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপোষ করার কারণে। বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যাসিকটুকু শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত না করা, বিসিএস নিয়ে ৬৬% তরুণের গাইড বই মুখস্ত করার চল, ধর্মান্ধদের প্রশ্রয় দেওয়া, শৈশবে সবার পাবিবারিক, সামাজিক, ইউটিউবীয় মগজ ধোলাই প্রভৃতিও কারণ ।
কোনো জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে হলে শিক্ষাব্যবস্থা শেষ করে দিতে হয়। বাংলাদেশের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। তাই দেশ নিয়ে আমি আর আশা করিনা। আগামী একশো থেকে দুইশো বছরের আগে আমার দেশের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নাই। যে জাতির এখনো বিবর্তনের মতো একটা প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক মতবাদ পড়ানোর জন্য শিক্ষক গ্রেপ্তার করে জেলে রাখে, যাদের কাছে দুনিয়ার সকল অপকর্মের চেয়ে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ, তারা সেই ধর্মের অধর্মের কারণেই ধ্বংস হবে, আলাদা কিছু লাগবেনা।
হুমায়ুন আজাদ স্যারকে মনে পড়ে। কি বিস্ময়কর নৈপুণ্যে নির্মোহভাবেই না তিনি আমাদের পতনোম্মুখ অবস্থার বর্ণনা করেছেন তার নানা লেখায় এবং রোজকার আড্ডা ও আলাপচারিতায়! আমরা হতভাগারা হুমায়ুন আজাদের কথার গুরুত্ব পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারিনি বা বুঝলেও সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেইনি ঠিক সময়ে।
Related Posts
What can be the problem if someone takes blood from his family member?
This is a frequently asked and very important question about blood donation. If you wantRead More
কেউ তার পরিবারের সদস্য থেকে রক্ত নিলে কি সমস্যা হতে পারে?
ব্লাড ডোনেশন সম্পর্কে এটা বহুল জিজ্ঞাসিত ও অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন একটা প্রশ্ন। ছোট করে উত্তর শুনতেRead More
ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !
ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More
Comments are Closed