
North Sentinelese!
ধর্ম, দেশ, জাতি, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ সবই কি বর্ণবাদী কনসেপ্ট?
পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত একমাত্র আন কন্টাক্টেড মনুষ্য প্রজাতি আমাদের বঙ্গোপসাগরের নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপের সেন্টিনেলীরা। তারা খুবই হোস্টাইল, সেখানে কাউকে তারা এ্যালাউ করে না, গেলেই হত্যা করে। ব্রিটিশরা সেখান থেকে কয়েক জনকে পোর্ট ব্লেয়ারে ধরে এনেছিল শিক্ষা দেয়ার জন্য, কিন্তু তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একে একে সবাই মারা যায়। কারণ তাদের দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, আমাদের শরীর যেভাবে অনেক কমন জীবানুর বিরুদ্ধে হেসে খেলে প্রতি সেকেন্ডে যুদ্ধ করে – সেখানে তারা মৃত্যুমুখে চলে যায়। তাদের শরীর এই সমস্ত সাধারণ জীবানু চেনে না। যেমনটা ইউরোপীয়রা প্লেগের মতো মহামারী বয়ে নিয়ে আমেরিকার হাজার হাজার আদিবাসীর মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। ইন্ডিয়ার সরকার নর্থ সেন্টিনেলে কারো যাওয়া আইন করে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এই ইমিউন সিস্টেমের উদাহরণটা বিবর্তনের একটা চাক্ষুস প্রমাণ। সেন্টিনেলিরা গত প্রায় ৬০/৭০ হাজার বছর ধরে একই বৃত্তে পড়ে আছে, একই জীবনে আছে। পাশের আন্দামানের জাড়োয়ারাও তাদের সমগোত্রীয় যদিও তারা কয়েক দশক ধরে কণ্টাকে আছে, তারা সাধারন মানুষকে চেনে।
ধারণা করি, আমাদের এই ভূখন্ডের আদি মানবরা ঠিক এমনই ছিল এক সময়। যদি পারস্য থেকে আর্যরা, আরবরা, মঙ্গোলীয়রা, মধ্য এশীয়রা, ইউরোপীয়রা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে বা কৌতুহলী হয়ে এই অঞ্চল দখল করতে না আসতো তবে হয়তো আমাদের মানুষগুলোও এখনকার সভ্যতার নিরিখে শত শত বছর বা হাজার বছর পিছিয়েই থাকতো। বিদেশ থেকে এসে তারা সবাই জোর-জবরদস্তি করে এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে না মিশলে আমাদের গায়ের রঙের এত ভিন্নতাও থাকতো না, এই কথিত সভ্য সময়ও আসতো না। সাম্প্রতিক অতীতে ভারতে যে গাণিতিক পদ্ধতির উন্মেষ ঘটেছিল তাও ঘটতো না এই জেনেটিক্স ও সভ্যতার সংমিশ্রণ না হলে। ধর্মগুলো টিকে আছেই বিশ্বাসের উপরে। অন্ধ বিশ্বাস? না, বিশ্বাস জিনিসটাই অন্ধ। এখানে কোন যুক্তি, বিজ্ঞান, যদি, কিন্তু, তবে এসবের স্থান নেই।
যুক্তি দিয়ে হিসাব করলে, বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করলে সনাতন, খ্রিস্টান, ইহুদি, ইসলাম সব ধর্মের উৎপত্তির কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, নিরপেক্ষ কোন প্রামাণ্য দলিল নেই, কোন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নেই, কার্বন ডেটিং করা কোন জীবাশ্ম প্রমাণ নেই। এমনকি নবীন ধর্ম ইসলাম, যা বলা হয় ১৪০০ বছর আগে এসেছে তারও কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই একমাত্র ২০০/৩০০ বছর পরের হাজার মাইল দূরের পারস্যের মানুষদের রচনা করা কিছু বই ছাড়া। যেখানে যিশু, জিহোবা, মুহাম্মদ সবই ফিকশন ক্যারক্টার হয়ে যায় সেখানে কৃষ্ণ, রাম, রাবন, দুর্গা, মহিষাসুর তো আরো অনেক আগের ফিকশন। এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো এর সবগুলোর উদ্ভব মধ্যপ্রাচ্যে। আর্যরাও তো পারস্য থেকেই প্যাগানিজম বয়ে নিয়ে এসেছিল। আমাদের এই অঞ্চলের উদ্ভব বৌদ্ধ ধর্ম যতোটা না ধর্ম, তার চেয়ে বেশি দর্শন।
এবার আসি দুর্গা, মহিষাসুর প্রসঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ও ওড়িশার কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় মহিষাসুরকে ‘হুদুড় দুর্গা’ নামে স্মরণ করেন তাদের হয়ে লড়াই করে শহীদ হওয়া এক মহাবীর হিসাবে। দুর্গা সেখানে দখলদার, আদিবাসীদের দমন করা শত্রু। এটা তো নিঃসন্দেহে বলা যায় এই সমস্ত পিছিয়ে পড়া আদিবাসী, দলিত সম্প্রদায় মজলুম, তারা হাজার বছর ধরে সেটেলারদের দ্বারা নির্যাতিত, তাহলে কি বাড়িয়ে বলা হবে? তাদের যে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি যেটা সেটেলার সুবিধাভোগীদের সম্পূর্ণ বিপরীত সেটাকে অসম্মান করি কিভাবে? সেটেলার, সুবিধাভোগীদের সংস্কৃতিকে সম্মান করলে তাদেরটাকে অসম্মান করা হয়। এখানে আমি মজলুমের পক্ষে, তারা সংখ্যায় কম হলেও। যদিও সেটেলার বলাটাও যুক্তিযুক্ত হবে না, কারন মাইগ্রেশান মানুষের হাজার বছরের কমন বৈশিষ্ট্য, এখনো যা চলমান। তবে উন্নত সভ্যতার মানুষ হয়ে অনুন্নত এলাকায় গিয়ে সেখানকার দখল নিয়ে দমন করার যে ঐতিহাসিক বাস্তবতা দেখা যায় ইতিহাসে তাকে তো অস্বীকার করা যাবে না।
দূর্গাপূজাকে একটা উৎসব হিসাবে দেখলে সেটা দেখাই যায়, আমিও সুযোগ পেলে পূজা দেখতে যেতাম, এখনো যাই। ছোটবেলায় অপেক্ষায় থাকতাম সারাবছর ধরে কখন পাশের পাড়ায় পূজার মেলায় যাবো। সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রয়োজন আছে, কিন্তু তার বিপরীতে যুক্তিগুলো, অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি – সেগুলোকেও সম্মান দিতে হবে আমদের। মুসলমানদের কোরবানির ঈদ একটা অহেতুক অনুষ্ঠান, শুধুমাত্র একটা মিথকে সম্বল করে লক্ষ লক্ষ পশুর জীবন নেয়া হয়, যদিও এর পিছনের অর্থনীতি অনেক বড়। এটা একটা উৎসবে পরিনত হয়েছে, চাইলেও বাদ দেয়া যায় না। আমিও মাংস খাই, কিন্তু যেটা খারাপ সেটাকে তো খারাপ বলাই যায়। কেউ নিজে নেশা করে বলে নেশাকে সে খারাপ বলতে পারবে না, বিষয়টা তো এমন নয়।
ধর্ম, দেশ, জাতি, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ সবই বর্ণবাদী কনসেপ্ট। এমনকি রাজনীতিও। এখানে সবার শত্রুর দরকার হয়, বাউন্ডারি ওয়ালের দরকার হয়। পৃথিবীতে যতো যুদ্ধ হয়েছে, যতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার বেশীরভাগই হয়েছে এগুলোর কারণে। কিন্তু চাইলেও এগুলো বাদ দেয়া যায় না, বাদ দিতে পারলে দুনিয়ায় কোন দেশের সীমানা থাকতো না, আর্মি, অ্যাটম বোমার প্রয়োজন হতো না। মানুষকে সংগঠিত করার, কষ্ট করে উপার্জন করা টাকায় ট্যাক্স বসানো এবং আর্মি পোষা, বোমা বানানোর মতো খরচের পিছনে সম্মতি আদায়, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও এগুলো রক্ষা করতে হবে এই আবেগ উৎপাদনের জন্য এই সমস্ত দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ এসবের বিকল্প কেউ খুঁজে পায়নি। এগুলো মানবতার জন্য ও বর্নবাদ, বৈষম্যহীন পৃথিবীর জন্য বরাবরই ক্ষতিকর; কিন্তু এগুলোর বিকল্পও নেই। প্রাণীর টিকে থাকাটাই যেখানে প্রধান প্রাকৃতিক ইন্সটিংক্ট সেখানে মানুষ সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেবে তার নিজেকে, তারপর পরিবার, এরপর সমাজ, ভাষা, জাতি, দেশ, ধর্ম, সম্প্রদায় – এইতো, এটাই তো প্রাকৃতিক ও সামাজিক সিস্টেম হয়ে গেছে। কিন্তু সমস্যাটা বাঁধে তখন যখন এই ধর্ম, জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম, রাজনৈতিক চেতনা উগ্র হয়ে যায়, নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবার মতো চরম বর্ণবাদী মনোভাব ফুটে উঠে। তখন পরিবেশ, পৃথিবী দূষিত হয়ে পড়ে, মানুষের মানবিক চুক্তিগুলো তখন ধ্বসে পড়ে।
Related Posts

Are religion, country, race, patriotism, and nationalism all racist concepts?
The only uncontacted human tribe left in the world today are the Sentinelese of NorthRead More

Durga or Mahishasura – who is the true hero of the mythological legend?
Bhagura (Indian extremist goat – Indian Shit) have, in 2025, created a Mahishasura effigy inRead More

দূর্গা নাকি মহিষাসুর – পৌরানিক মিথের আসল নায়ক কে?
ভাগুরা (ভারতীয় উগ্রবাদী ছাগল – ভারতীয় গু) এবার (২০২৫) দূর্গা পূজায় প্রফেসর ইউনুস ও ডোনাল্ডRead More
Comments are Closed