Disability
Is Bangladesh a Failed State

Is Bangladesh a Failed State?

বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র! উন্নয়নের বুলিতে তা ঢাকা যাবে না

বিশ্বের কোন জাতি কতটা সভ্য তা নির্নয়ের একটা মাপকাঠি হলো তারা তাদের প্রতিবন্ধী ও দুর্বল নাগরিকদের কিভাবে আগলে রাখে সেটার মান। সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি দেশের পুলিশ কিছু দাবী নিয়ে করা প্রতিবন্ধীদের সমাবেশে লাঠিপেটা করে। একজন অসহায় প্রতিবন্ধীকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জোরে আঘাত করলে, তাদের হাজার হাজার বছরের সভ্যতার ভিত শিশমহলের মতো ঝরঝর করে ভেঙে পড়ে, সব অর্জন শেষ হয়ে যায়, ১০ টি পদ্মা ব্রীজ, ৫ টি মেট্রোরেল মূল্যহীন দেখা যায়।

আমি একজন গরীব ছা-পোষা মানুষ, নিজের কোন গাড়ি নেই। যে শহরে আছি সেই শহরের মেট্রো সিস্টেমে চলি। বাস, ট্রেন সবখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা অনেক সীট, হুইল চেয়ার যাত্রী আসলে ড্রাইভার নিজে নেমে এসে বাসের র‍্যাম্প নামিয়ে তাকে তুলে নেয়। সবখানেই তাদের বাড়তি সমাদর। এটাই সভ্যতার নিয়ম, সমাজের নিয়ম। আমার সঙ্গে প্রায় দিনই এক বৃদ্ধ ভদ্রলোকের দেখা হয়, তার দুই পা হাঁটু পর্যন্ত আছে, কিন্তু নীচে রডের পা লাগানো, আমি অপেক্ষায় থাকি উনি আমাকে বলুক কোন হেল্প লাগবে কিনা, কিন্তু উনি দেখি নিজেই স্বয়ং সম্পূর্ণ। লোকটিকে দেখে আমি অনেক অনুপ্রেরনা পাই। প্রতিবন্ধীরা সমাজের গিফটেড পিপল, তাদেরকে যত্ন করে আগলে রাখতে হয়।

শাহবাগ থেকে তারা যাচ্ছিলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিতে, যে প্রধানমন্ত্রীর নিজেরই জনগণ থেকে বৈধতা নেই। পুলিশ কি করলো, লাঠিপেটা করলো। বাংলাদেশের পুলিশ চোরের সঙ্গে হাত মেলায়, খুনও করে, অপরাধ ঘটে যাওয়ার পরে জায়গায় পৌঁছায়, ঘুষ-দুর্নীতি তো ডালভাত। তবে একটা জিনিস তারা খুব ভালভাবে পারে, সরকারের নির্দেশে লাঠিপেটা করতে। বাংলাদেশের পুলিশের এই লাঠিপেটা করতে বেজায় আনন্দ, হাত নিশপিশ করে। অথচ দেখেন, আমাদের এখানে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে গেলে যদি তার হাতে কোনরকম ব্যাথা দেয় তবে সেই পুলিশকে জবাবদিহি করতে হয়। এতো হোমলেস আছে, তারা অনেক নোংরা করে রাখে রাস্তাঘাট, বাস, ট্রেন, পুলিশ কিছু বলতে পারে না, বুঝিয়ে শুনিয়ে কাজ না হলে ঐ পর্যন্তই, বাংলাদেশের মতো লাঠিপেঠা করে, ঠ্যেঙ্গিয়ে দূরে সরায় না। এটাই সভ্যতা আর অসভ্যতার পার্থক্য করে দেয়।

police's action against disabled persons

মানুষের সভ্যতা কিভাবে শুরু হয়েছিলো? চাকা আবিষ্কার? ব্যাবিলন শহর? না, মানুষের সভ্যতা ঠিক তখনই শুরু হয়েছিলো যখন মানুষ অন্য একজন মানুষকে প্রয়োজনে আগলে রাখতে শিখেছিলো। ধরেন, একটি হরিনের এক পা ভেঙ্গে গেলো, হরিনটি নিশ্চিত বাঘের পেটে যাবে বা খাবারের অভাবে মারা যাবে , কারন সে দৌঁড়াতে পারবে না, খাবার খেতে যেতে পারবে না, মানে তার জীবন শেষ। যদি ঐ হরিনটি একটানা ১০ দিন বিশ্রাম নিতে পারতো, অন্য হরিনেরা তার নিরাপত্তা দিতো, খাবার সরবরাহ করতো তাহলে একদিন হয়তো তার পা ঠিক হয়ে যেতো, তার বাঁচার সুযোগ তৈরি হতো। মানুষ ঠিক এখানেই সফল, এখানেই তার সভ্যতার সূচনা। মানুষ অন্য একজন পিছিয়ে পড়া বা পঙ্গু মানুষকে আগলে রাখে, তাকে নিরাপত্তা দেয়, খাবার দেয়, সেবা দেয়।

Bangladesh police is torturing a disabled person for demanding rights

মানুষের সভ্যতার প্রথম প্রমাণ হচ্ছে এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ১৫ হাজার বছর আগে পাওয়া ভাঙা ফিমার হাড়। ফিমার মানুষের শরীরের সবচেয়ে বড় হাড় যা নিতম্ব থেকে হাঁটু পর্যন্ত সংযোগ ঘটায়। প্রাচীন সমাজে, যেখানে আধুনিক যুগের মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না, সেখানে এই হাড় ভেঙে গেলে জোড়া লাগতে অন্তত ছয় সপ্তাহ লাগত। উপরিউক্ত হাড়টি গবেষণা করে দেখা যায়, তা একবার ভেঙে জোড়া লেগেছে। ফিমারের মতো হাড় ভেঙে যাওয়ার পরও জোড়া লাগার ব্যাপারটা নিশ্চিত করে, আহত ব্যক্তিটিকে কেউ একজন পাশে থেকে যত্ন করেছিলেন, সুরক্ষা দিয়েছিলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি সুস্থ না হন, কোনো একজন মানুষ বা অনেকজন মানুষ মিলে তাঁকে আগলে রেখেছিলেন। আমাদের সমাজে আরেকজনকে এভাবে আগলে রাখাটাই অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে আমাদের আলাদা করে। মানুষ তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়ে দুনিয়ার বহু ক্ষতি করেছে, কিন্তু সেই শ্রেষ্ঠত্বের গর্বটা আসলে আসে এই সহমর্মিতা থেকেই। এই ভ্রাতৃত্ববোধ কেবল তাঁকে প্রচণ্ড দুরবস্থায় টিকে থাকাই শেখায় না, একতার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে শক্তিশালী করে তোলে।

Bangladesh police has kicked him for demanding rights

ধারনা করা হয় মানুষের চেয়ে আরো শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও একই রমক প্রজাতি নিয়ার্ন্ডার্থালরা হারিয়ে গেছে এই মানবিক গুণটি না থাকার কারনে। স্যাপিয়েন্সদের থেকে বড় শরীর আর মস্তিষ্কের নিয়ার্ন্ডার্থালরা খাবারের অভাব বা অন্য সমস্যায় শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুদের মেরে ফেলতো, যাকে ইনফ্যান্টিসাইড বলা হয়। ধারণা করা হয়, তাঁদের বিলুপ্তির পেছনে এই চর্চা ভূমিকা রেখেছে। মানুষের মানুষ হয়ে উঠা, সমাজ এবং এরপর শক্তিশালী রাষ্ট্র বা সভ্যতা গড়ে তোলার মূল গল্পটা এই সহমর্মিতার। শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি যত্ন আমাদের সভ্যতারই মেরুদণ্ড।

পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মে প্রতিবন্ধী মানুষকে সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আদরের বলে উল্লেখ করা হয়। যাদের পরম আদরে আগলে রাখাই আমাদের ধর্ম আর সভ্যতার ভিত্তি, তাঁদের দাবি জানাতে দেখলে আমাদের রাগ হয় না? তাঁদের মেরুদণ্ডে আঘাত করতে আমাদের দয়া হয় না? তাদের আলাদা করে দাবী জানাতে হয় কেন? একটা সমাজ, রাষ্ট্র কি অন্ধ? একমাত্র বাংলাদেশের মতো ব্যর্থ, অন্ধ রাষ্ট্র আর তাদের অপদার্থ রাষ্ট্রপ্রধানরা থাকলেই এমনটা ঘটতে পারে। যে সমাজ তাঁর সবচেয়ে দুর্বল সদস্যদের সবচেয়ে ভালো সুরক্ষা দিতে পারে সেটাই সবচেয়ে ভাল সমাজ। রাষ্ট্রের জবাবদিহি প্রদর্শনের একদম মূল শর্তই এই। এর জোরেই রাষ্ট্র তাঁর সমস্ত কার্যকলাপের বৈধতা দেয়। যে রাষ্ট্র তার সবচেয়ে দুর্বল সদস্যদের সুরক্ষা দিতে পারে না, সে ব্যর্থ রাষ্ট্র। সে তাঁর সব ধরনের বৈধতা হারায়। আর সুরক্ষার বদলে যদি দাবি-দাওয়া চাইতে আসা প্রতিবন্ধীরা বাঁধার শিকার হন, রাজপথে উলটে পড়ে যান, সেই রাষ্ট্রের পেটোয়া পুলিশ যদি তাদের লাঠিপেটা করে সেই ছবিগুলোই বলে দেয় রাষ্ট্রটি একটি পুরোপুরি ব্যর্থ রাষ্ট্র।

Related Posts

Famine and Food Habit

In the Shadow of Famine: Bengali Food Habits – History, Practice, and Bodily Burden

About 10-12 days ago.I went to a large wholesale store, where products are usually soldRead More

Famine and Food Habit

দূর্ভিক্ষের ছায়ায় বাঙালির খাদ্যাভ্যাসঃ ইতিহাস, অভ্যাস ও শরীরের দায়

প্রায় ১০-১২ দিন আগের ঘটনা। একটি বড় বিপণিবিতানে গিয়েছিলাম, যেখানে সাধারণত বক্স ধরে পণ্য কিনতেRead More

North Sentinelese

Are religion, country, race, patriotism, and nationalism all racist concepts?

The only uncontacted human tribe left in the world today are the Sentinelese of NorthRead More

Comments are Closed