Every Child is Beautiful

Every Child is Beautiful

এই মানব শিশুটির মৃত্যুর জন্য আপনিও দায়ী। সম্পূর্ণ লেখাটা পড়বেন দয়া করে

[ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী হলে সন্তানের জন্ম দেন। লোকলজ্জার ভয়ে শিশুটিকে ট্রাংকে লুকিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে শিশুটি মারা যায় হাসপাতালে। মেয়েটি ও শিশুটির বাবা দাবী করা এক ছাত্র বলছে তারা বিবাহিত ছিলেন। সংবাদ লিংকঃ https://goo.gl/YyoqUY ]

উক্ত মেয়েটি এবং ছেলেটি বিবাহিত হোক বা না হোক যে মানব শিশুটি পৃথিবীতে এসেছে সে কেন সামাজিক প্রথার এই ভয়ংকর দর্শনের বলি হয়ে মৃত্যুবরন করবে ? আমাদের সমাজ এই সন্তানদের পোষাকী নাম দিয়েছে অবৈধ বা জারজ। এটাকে আমরা গালি হিসাবে ব্যবহারও করি, যেনো ঐ মানুষটির বাবা-মা’র ভালোবাসার ফসল হয়ে সে মস্ত বড় অপরাধী।

মানব শিশু সে যে কারনে, যেভাবেই পৃথিবীতে আসুক কখনো জারজ হতে পারে না, অবৈধ হতে পারে না। প্রত্যেক মানব শিশুই সুন্দর এবং সমান অধিকার নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আমরা কাউকে অবৈধ সন্তান বা জারজ বলি। আসলে আমাদের মাথার ঐ সমস্ত চিন্তাটাই নোংরা, অবৈধ ও জারজ। একজন মা কত শত প্রতিকূলতা, সীমাবদ্ধতা, কষ্ট পেরিয়া একটি শিশুকে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। পুরুষের এই কষ্ট অনুভব করার সুযোগ নেই। কিন্তু একজন পুরুষের পরিচয় নেই বলেই একজন মায়ের এই ত্যাগ স্বীকার কে অবৈধ ও জারজ বলতে হবে ? যে সমস্ত রীতি নীতি এইসব চিন্তার যোগান দেয় সেই রীতি নীতি যেখান থেকেই সমাজে আসুক তা পরিত্যাগ করার সময় এসেছে। আপনি যদি সমাজের এই নিয়ম, রীতি, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না চান তাহলে এই সমস্ত প্রত্যেক শিশুর মৃত্যুর জন্য আপনিও দায়ী।

যে বিশাল ভারতবর্ষ বা ভারতীয় উপমহাদেশের অধিবাসী আমরা, সেই ভারত নামকরণ হয়েছিল যার নামে তিনি রাজা ভরত। রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার শুধুমাত্র “আংটি বদল” সম্পর্কের ফসল ছিলেন রাজা ভরত। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক ক্ষনজন্মা মানুষ আছেন যাদের আপনি আপনার নোংরা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেই ‘জারজ’ বলতে পারেন।

এ্যাপলের আইফোনের জন্য কিডনি বিক্রি, মৃত্যু কতকিছু ঘটছে আজ। আপনি কি জানেন, এ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস আপনার ভাষায় ছিলেন একজন ‘জারজ’ ? পৃথিবীকে বদলে দেয়া অন্যতম এক মানুষ তিনি। তার মা ছিলেন একজন অবিবাহিত তরুণী, পড়ালেখা শেষ হয়নি তখনও। তিনি পৃথিবীতে এসে পড়েন অনেকটা অসময়েই। বাধ্য হয়ে তার মা তাকে দত্তক দিয়ে দেয় অন্য এক পরিবারের কাছে।

পাপ যদি আমি করি তো পাপের সাজা আমারই পাওয়া আবশ্যক, ন্যায়বিচারের ধারণা তো সেটাই বলে । তাহলে আমার কৃত্য পাপের সাজা কেন নিষ্পাপ কাউকে ভোগ করতে হবে? বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেও কোন মেয়ে যদি সন্তানের মা হয়ে পড়েন তাহলে তো সেই সন্তান অবৈধ বা জারজ হওয়ার সুযোগই নেই । মায়ের পেট থেকেই তো বের হয়েছে শিশুটি, কোন পশুর পেট থেকেতো নয় । তাহলে তাকে অবৈধ বলি কি করে ! বিয়ে ? সেটাতো মানবসমাজের উষালগ্নেও এর অস্তিত্ব ছিলনা । তাহলে কি সেই সময়কার সবাই অবৈধ আর জারজ ছিলেন?

আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বাধ্য করে আমরা কি করবো, কি মানব, কিভাবে চলবো । বৈবাহিক সম্পর্ক বহির্ভূত নারীর সন্তান প্রসবের বিষয়টি আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে চাইনা বলে এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটাও মারাত্মক কঠোর । এজন্য কত শত নবজাতক ডাষ্টবিন বা নর্দমায় শিয়াল কুকুরের আহারে পরিণত হয় তার হিসাব কে রাখে ? সামাজিকভাবে বদনামের ভয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে ধর্ণা দিয়ে, এ্যাবরশন করাতে গিয়ে কত নারী অকালে মৃত্যূর কোলে ঢলে পড়েন তার পরিসংখ্যানও পাওয়া যাবেনা কোন অধিদপ্তরেই । সেটা রাখাও যেন আরেক বিরাট অপরাধ, লজ্জার ব্যাপার । বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের শিকার গর্ভবতী মায়েরা এ্যাবরশন বা গর্ভমোচন করে ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটান । যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে কাজটি করতে পারেন নি, তারাই শুধু অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও শিশুর জন্ম দেয় এবং অনেকেই এই সব অনাকাঙ্খিত শিশুদের পরিত্যাগ করে ।

একটা শিশুর জন্ম সবসময় আমাদের সমাজে আনন্দের সংবাদ হওয়া দরকার ছিল । অসংখ্য নারী কি করে বিয়ের পূর্বেই মাতৃত্বের সাধ নিচ্ছেন বা নিতে বাধ্য হচ্ছেন কোন পরিস্থিতিতে তা আমরা কখনোই বিবেচনায় রাখিনা, রাখতে চাইনা । বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক যতই ঘৃণিত হোক না কেন পারবেন কি এই সমাজের আড়ালে আবডালে যে ঘটনাগুলো ঘটে থাকে তার সবগুলোকে রুখে দিতে ? পারবেন কি বিয়ের আগে নারীর প্রতি পুরুষের টান কিংবা পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষিত হওয়ার মত কারণগুলোকে স্থিরভাবে আটকে রাখবার কোন ব্যবস্থা করতে ? জানি এটা কখনোই সম্ভব নয় । একটা বিষয় সম্ভব, তা হলো মানষিকতা আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।

এই লেখায় কোন ভাবেই বৈবাহিক রীতিনীতি আর দাম্পত্যের সম্পর্ককে অনুৎসাহিত করতে চেষ্টা করা হয়নি । আধুনিক সমাজব্যবস্থার প্রয়োজনেই বিবাহের মত একটি সামাজিক পারিবারিক বন্ধনের সৃষ্টি হয়েছিল যাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা । ঠিক একই ভাবে আধুনিক জীবনধারায় বিবাহপূর্ব নারী-পুরুষের মেলামেশাও আটকে রাখা বা অস্বীকার করার সুযোগ নেই । জন্মদাতা-দাত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক নেই বলে একটি শিশুকে কোন ভাবে আমরা বঞ্চিত করতে পারিনা তার প্রাপ্য অধিকারগুলো থেকে । ডিভোর্সড বাবা-মায়ের সন্তানের মত তারও অধিকার আছে বেঁচে থাকবার, সমাজে বড় হবার, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার । আমাদের সমাজের অবিবাহিত মায়েদের মাথায় যদি পরনিন্দার ভার, শাসন, লোকলজ্জা আর সমাজপতি শ্রেণীর প্রদত্ত গুরুদন্ডের কঠিন প্রয়োগের ফলে পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার মত অবস্থা তৈরী না হতো তবে হয়তো তারা কখনোই তাদের নবজাতক শিশুটিকে পরিত্যাগ করতেন না । হয়তো শিশুকে ঠেলে দিতেন না রাতের আঁধারে মৃত্যূর দুয়ারে । আর তখন এই সমাজ হতে পারতো আরো অনেক অনেক বেশী শিশুবান্ধব ও সভ্য।

মানবতা মুক্তি পাক, সকল অপসংস্কৃতি নিপাত যাক ।

Related Posts

No Profession is Small

Do not belittle anyone’s profession – ensure their rights instead

Look at the narrative pushed by the so-called elite Bangu media and society! This isRead More

No Profession is Small

কারো পেশাকে ছোট করবেন না, বরং তার অধিকার নিশ্চিত করুন

বাঙ্গু সুশীল মিডিয়া ও সমাজের ন্যারেটিভ দেখেন! এটা বাংলাদেশের মানুষের খুব বড় একটি দৈন্য। এরাRead More

attacks over blasphemy claim in Bangladesh

How much longer will the Muslim extremists in Bangladesh continue to oppress Hindus?

Ever since I became aware of the world around me in Bangladesh, I’ve witnessed violenceRead More

Comments are Closed