
DUCSU Election 2025
ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের এই অপ্রত্যাশিত বিজয় কি প্রত্যাশিতই ছিল?
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শিবির ভোট পেয়েই জিতছে, এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট কিছু না কিছু ভুল করে, অদক্ষতা দেখায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনেও তেমনটা কিছু হয়েছে বটে, তবে মোটের উপরে নির্বাচনটা ভাল হয়েছে।
ঢাকা ইউনির্ভার্সিটির ভিসি প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ খান একজন দক্ষ শিক্ষক, সৎ, ভদ্রলোক। উনি সরাসরি আমার শিক্ষক ছিলেন এক বছর, এজন্য উনাকে জানি। ভদ্রলোক প্রচন্ড ধার্মিক, উনি জামাত করেন বা কোন রাজনীতি করেন সেটা আমি জানিনা, তিনি জানিয়েছেন উনি কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও দায়িত্ব পালনের সময়ে যে উনি নিরপেক্ষ থাকবেন, এ কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। অন্তত, উনার ব্যক্তিত্বটা এমনই।
ডাকসুতে যেটি হয়েছে – বুয়েট এবং মেডিকেলে সেটি আরো প্রকট হবে, শিবির ভূমিধ্বস বিজয় পাবে! অন্য বিশ্ববিদ্যায়গুলোতেও একই ফল হবে। শিক্ষার্থীদের গালমন্দ করে লাভ নেই। গত ৩ দশক ধরে শিবির রাজনীতি করছে ওয়ান টু ওয়ান, ম্যান টু ম্যান। এরা শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে, সময় দেয়, সম্মান করে। পড়াশুনার জন্য প্রয়োজনমত সহায়তা করে। ১২-২০ বছরে একজন মানুষের মনস্তত্ত্বে ব্যাপক পরিবর্তন, বিকাশ ঘটে। এই সময় আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই তাকে গঠন করতে পারবেন। তাদের রাজনীতি/আদর্শ পেছনে ফেলেই এগুলো করে আসছে।
ছাত্রলীগ যদিও এখন প্রাসঙ্গিক না, তবে তারা তো এদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অংশ। তারা কী করতো? শিবিরের কর্মকান্ডের প্রতিযোগীতার বিপরীতে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ কী করেছে? এরা শিক্ষার্থীদের পঙ্গপাল মনে করে। এরা মনে করে, ডাকলেই চলে আসবে। গনরুম, গেস্টরুম করে ছাত্রদের নির্যাতন চালানোর জ্বলজ্বলে রেকর্ড আছে এদের। জোর করে মিছিলে নেয়ার, মারামারিতে টেনে নেয়ার উদাহরণ এদের সামনে। বড় নেতার মিছিলে লোক বেশী দেখাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এরা জোর করে নিয়ে যায়। গ্রামের দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ছাত্ররা এদের দাসে পরিনত হয়, বিনিময়ে হলে একটু জায়গা পায়, কিছুটা প্রভাব দেখাতে পারে। এদের রাজনীতি করে মেধা, জ্ঞান চর্চার সুযোগ নেই। একজন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে, ভালো রেজাল্ট করবে, প্রয়োজনে টিউশনি করবে, এর পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি করবে, এই সুযোগ ছাত্রদল বা ছাত্রলীগে নেই। সারাদিন অমুক ভাই, তমুক ভাই, তমুক গ্রুপ, এ নেতা, ঐ নেতা, এভাবে চলতে পারে না।
ছাত্রলীগের উদাহরণ ছাত্রদের চোখের সামনে, ছাত্রদলের অতীত কর্মকান্ডও সবাই জানে, ২০০১-২০০৬ এর সময়ের ঘনটাপ্রবাহ তো ডিজিটাল আর্কাইভে আছে, এরা জেনে যায় সবই। এরপরে গত এক বছর সারাদেশে বি এন পি, যুবদল, ছাত্রদলের টেম্পুস্ট্যান্ড দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, খুনোখুনি এসব দেখে কার মনে ছাত্রদলের জন্য ভালবাসা জন্মাবে? জেন জি নেপালে যে অভ্যুত্থান ঘটালো এটাও বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের সঙ্গে মিল। প্রযুক্তির দুনিয়ায় তারা দেখে বিশ্বের অন্য প্রান্তের দেশগুলোর আইন, বিচার, রাষ্ট্রযন্ত্রের সিস্টেম কিভাবে চলে। সেখানে যদি তারা দেখে নিজ দেশে ঘুনে ধরা, বস্তাপঁচা, প্রাগৈতিহাসিক রাজনৈতিক ভাঁড়েরা তাদের সেই ঘৃনাচাষ ধরে রেখে দেশ চালাতে চায় – তবে জেন জি কি সেটা মানবে? মানবে না।
ছাত্রদল, ছাত্রলীগ ফোকাস, রেটিনার মতো কিছু না ডেভেলপ করে মেধাবী পোলাপান দিয়ে করাতে চাইছে কোন এক রাজনৈতিক ভাঁড়ের প্রোটোকল আর শোডাউনের রাজনীতি। ছাত্রদল, ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় সব মুখই বর্তমান ছাত্রদের আংকেল সমতুল্য। সেখানে শিবিরের ফেসগুলো বেবী ভাইভ ক্রিয়েট করে, কারন তারা রেগুলার ছাত্র। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এক বছরের এক কমিটি সাত-দশ বছর টেনে নিয়ে যায়, দুই, তিন দশক ধরে এক জায়গায় নেতা হয়ে এক একজন চুল দাঁড়ি পাকিয়ে ফেলে। নিজেদের মাঝে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি করার চেষ্টা করে মারামারি, খুনোখুনি করার অনেক রেকর্ডধারী তারা। মেধাবী ছেলেটারে দিয়ে করাতে চাইছে পেশী শক্তির রাজনীতি। সো এক সময় না এক সময় এই দুষ্ট চক্র কলাপস করা অনিবার্য ছিলো। ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পরে একটা ভালো কাজ হয়েছে, এখন অন্তত কিছু পোলাপান বুদ্ধি বৃত্তিক রাজনীতি করছে। এরা ডিপ স্টেট সহ অনেক কঠিন বিষয় নিয়ে ধারণা রাখে, আন্তির্জাতিক রাজনীতি নিয়ে জানে, প্রতিবেশী দেশের চোখ রাঙানিকে তোয়াক্কা করে না।
দুনিয়ার সব বখাটে, ইয়াবাখোর, ইভটিজার দিয়ে ছাত্রলীগ ভর্তি ছিলো। ভালো মেধাবী ছেলেদের ছাত্রলীগ কাছে টানতেই পারেনি। ছাত্রদলের অতীত রেকর্ডও ভাল না। শুধু ধর্ম দিয়ে শিবির কখনো সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এতো জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি। ধর্ম দিয়ে এতো জনপ্রিয়তা অর্জন করা সম্ভব না। শিবির নিজেদের ভেঙ্গে গড়েছে। তারা গবেষনা করেছে, ছাত্রদের সম্মান করেছে, তাদের প্রয়োজনের গুরুত্ব দিয়েছে। কোচিং সেন্টার, সামাজিক সংগঠন, ইনফ্লুয়েন্সার, মেধাবীদের পেছনে ইনভেস্ট – সব করেছে । ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের রাজনীতিতে এমন কোন ম্যাজিক নেই যেটা কোন মেধাবীকে আকর্ষণ করবে। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সেখানে কোন ছাত্র রাজনীতি ছিল না। তবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছুদিন থাকার কারনে দেখেছি, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের দুই রাজত্বের আমলই দেখেছি, তাদের সীমাহীন সন্ত্রাস দেখেছি, চাঁদাবাজি দেখেছি, পেশীশক্তি দিয়ে সাধারন ছাত্রদের তাদের দাস বানাতে দেখেছি। শিবির সেখানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেভাবে রাজনীতি করেছে, বর্তমান যে পজিশনে তারা চলে গেছে সেখানে ছাত্রদল, ছাত্রলীগের কয়েক প্রজন্ম লাগবে শিবিরকে পেছনে ফেলতে। এটাই বাস্তবতা।
বাংলাদেশে সর্বশেষ গ্রহনযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হয়েছে ২০০৮ সালে, এর আগে ২০০১ ও ১৯৯১ সালে। এর মাঝে পুরো একটা জেনারেশান জন্ম নিয়ে ভোটার হয়েছে। সাবেক আমলের রাজনৈতিক গাড়লগুলো যদি ঐ সময়ে কোন দলের কতো ভোট ছিল, সেই হিসাব করে সামনের দিনে রাজনীতি করতে চায় তবে এভাবে সবখানে ধরা খেতেই থাকবে। মানুষ দুর্নীতি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, অদক্ষতা, মেধাহীনতা, ঘৃনাচাষ এসবকে নিরবে বিদায় জানাতে চাইবে ভোট দিয়ে। তাদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই, একবার দেখার সুযোগ হলেও তারা চাইবে আওয়ামী লীগ, বি এন পি’র বাইরে অন্য কাউকে ভোট দিতে। কারন ৫০ বছর ধরে এই দুই দল ক্রমাগত ব্যর্থ হয়েছে! মানুষের তো কিছু করার নেই, তারা কী করবে? সেজন্য সবখানে এমন অবাক হতে থাকবে হয়তো এলিট লোকজন।
Related Posts

Was this unexpected victory of Shibir in the DUCSU election actually expected?
At Dhaka University, Shibir is winning simply by securing votes – that’s the reality. AcrossRead More

Israel’s Minority Religious Communities: Hatred, Reality, and Rights
When people hear the name Israel, the first reaction many have is – hatred. ThisRead More

ইসরায়েলের সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ঃ ঘৃণা, বাস্তবতা ও অধিকার
ইসরায়েল নাম শুনলে অনেকের মনে প্রথমেই যে প্রতিক্রিয়া আসে তা হলো – ঘৃণা। বিশেষ করেRead More
Comments are Closed