Development of Human Quality
অবকাঠামোর চেয়ে বেশী জরুরী মানবসম্পদ উন্নয়ন, মানুষের মানের উন্নয়ন
বাংলাদেশের সরকার, আমলা, কামলারা দেশের বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করে প্রচার করে দেশের কত উন্নয়ন হয়েছে! অথচ যদি দেখেন, এমন অবকাঠামো বিশ্বের প্রায় সব দেশে হয় আগেই আছে, না হয় তারাও বানাচ্ছে, বাংলাদশের আলাদা কোন কৃতিত্ব নেই। বরং বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্পগুলো নেয়ায় হয় হরিলুট বা লুটপাটের টার্গেটে, মাঝ দিয়ে যদি জণগনের একটু উপকার হয় – এই হিসাবে! এজন্য দেখবেন বিল্ডিং হওয়ার আগেই যন্ত্রপাতি কিনে বসে থাকে, দুই চার বছর পরে বিল্ডিং হওয়ার পরে যন্ত্রপাতি হয় অকেজো হয়ে পড়ে না হয় সেগুলো রাখার জায়গা হয় না। এমনই উন্নয়ন।
ওদিকে দেখেন আফ্রিকার রাইজিং স্টার রুয়ান্ডা! কয়েকটি গৃহযুদ্ধ পিছনে ফেলে তারা এখন সিঙ্গাপুর হওয়ার পথে। সেটা তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান। এই সুযোগে বলে রাখি – বাংলাদেশে যাদের অনেক টাকা অলস পড়ে আছে তারা রুয়ান্ডায় বিনিয়োগ করতে পারেন, ভবিষ্যৎ ভালো। এমনকি দেখে শুনে আফ্রিকার অন্য দুই একটি দেশেও বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম কারন বাংলাদেশ মানবসম্পদ উন্নয়নে কোন মনোযোগ দেয় না, বিনিয়োগ করে না। করলেও নামকাওয়াস্তে।
অবকাঠামোর চেয়ে বেশী জরুরী মানবসম্পদ উন্নয়ন। কোয়ালিটি সম্পন্ন মানুষ যে কোন দেশের জন্য আশীর্বাদ ও সবচেয়ে বড় সম্পদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্বের মোড়ল ছিলো গ্রেট ব্রিটেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রিবাহীনীর জয়ের পরে ব্রিটেন তার শ্রেষ্ঠত্ব হারায়, আমেরিকা সেই স্থানে চলে গিয়ে এখনো বহাল আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানি ছিল জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু আর সেটা হয়েছিল জিউস বিজ্ঞানীদের কারনে বা অন্যকথায় সর্বক্ষেত্রে জিউসদের মেধার কারনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ইহুদীদের অধিকাংশই আমেরিকাতে চলে যায়। তার ফলে আমেরিকা মানবসম্পদে রিচ হয় এবং অন্য অনেক সহায়ক ভূমিকার পাশাপাশি তাদের কারনেও জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রে পরিণত হয়, ফলে আমেরিকাই হয় সুপার পাওয়ার। ইতিহাস ঘেটে দেখুন, তাই পাবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় জার্মানি ও জাপান। বলতে পারেন ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয় দেশ দুটি। অথচ তারা কয়েক বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, আজ তাদের অবস্থান দেখুন, বিশ্বের শীর্ষতম দেশগুলোর ভিতরে তাদের অবস্থান। এটা সম্ভব হয়েছিলো কারন তারা মানব সম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছিলো। আজও বিশ্বের ভদ্র, সভ্য, বিজ্ঞানমুখী, জ্ঞানী-গুণি মানুষদের দেশ বললে সবার আগে মাথায় আসে জার্মানি ও জাপানের নাম। তাদের দেশের সভ, ভদ্র, মার্জিত, জ্ঞানী-গুণি, কর্মঠ মানুষেরাই তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
দক্ষিন এশিয়ায় সবচেয়ে উন্নত মানব সম্পদের দেশ শ্রীলংকা। তাদের দেশের সামাজিক ব্যবস্থা, আচার, ভদ্রতা, আইন মেনে চলা, মানুষের নিরাপত্তা এসব বিবেচনায় নিলে তাদের মানুষেরা দক্ষিন এশিয়ার সেরা। ঠিক এই কারনেই গত বছর তাদের দেশে ভয়ংকর অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিলেও তারা আজ ঠিকই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, আবারো তাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে তারা মরিয়া। কারন তাদের দেশের মানুষ এ অঞ্চলের মধ্যে উন্নত, তাদের শিক্ষা, রুচি, জ্ঞান, ভদ্রতা, শিষ্ঠাচার, কর্তব্যনিষ্ঠা, একাগ্রতা, দেশপ্রেম তাদের ড্রাইভিং ফোর্স।
Comments are Closed