Being a mother is the most beautiful thing in the world
একটি ধর্ম-আশ্রয়ী সমাজে মা ও তার গর্ভের সন্তান কেউ নিরাপদ নয়
মায়ের গর্ভে সন্তান ও সেই ছবিটি হতে পারতো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ফটোগ্রাফি কিন্তু এখানে উল্টো!
কয়েকদিন আগে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোকের কথা জানলাম। তিনি আবার তথাকথিত এক বড় ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের পরীক্ষিত নেতা। মানুষকে বিশেষ করে তার পরিবারের উচ্চশিক্ষিত নারীদেরও বিভিন্নভাবে চলাফেরার ব্যাপারে সবক দেন। ভদ্রলোকের মোবাইলে নাকি সব পর্ণ সার্চ আর পর্ণ ভিডিও/ইমেজে ভরা। আমি বললাম বয়স হলেও তার একটু আধটু খায়েশ থাকতে পারে, তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না, অন্য কারো ক্ষতির কারন না হলেই হলো।
বাংলার তথাকথিত জনতার আসলে ‘নারীর পেট’ বিষয়ে কোনো অরুচি নাই। তবে সে পেট হতে হবে সানি লিওনির ফর্সা পেট, অথবা নোরা ফাতেহীর চিকন পেট। এসব দেখেই ওনারা প্রতিরাতে ঘুমাতে যান।
বাংলাদেশে এমন একজন উনি (যাদের নাম নিলে হয়তো অনুভূতিতে আঘাত পাবেন) পাবেন না, যিনি সানি লিওনিকে চেনেন না। আমাদের তমুকও ওনার ৯০ বছর বয়সে সানি লিওনিকে চিনতেন।
বাংলার উনারা আর তাদের সাগরেদরা নিয়মিত নারীর পেট ঠিকই দেখেন, তবে গর্ভবতী মায়ের বড়সড়ো পেট ওনারা দেখে অভ্যস্ত নন। গর্ভবতী মায়ের পেট ওনাদের কাছে অশ্লীল, অপবিত্র, অপসংস্কৃতি, অবাস্তব। ওনারা গর্ভবতী মায়ের পেট থেকে জন্মাননি।
গর্ভবতী মায়ের খোলা পেট দেখানো বাঙালি সংস্কৃতি নয়। তবে,-
“বাচ্চা নেওনা কেনো?”
“বাচ্চা নেও, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
প্রতিবেশীকে এই কু-পরামর্শ দিয়ে একটা ছোট্ট আর দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা ২০ কোটিতে উন্নীত করা অসাধারণ এক বাঙালি সংস্কৃতি।
অন্যদিকে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া সব অসভ্য মহাদেশ। এইসব মহাদেশ এতোটাই অশ্লীল যে সেখানকার নারীরা তাদের গর্ভধারণের খবর সবাইকে বলে বেড়ায়, সবাইকে দেখিয়ে বেড়ায়। গর্ভবতী নারীরা তাদের বড় খোলা পেট উন্মুক্ত করে রোদে শুয়ে থাকে, পানিতে সাঁতার কাটে, বাসে ট্রামে ঘুরে বেড়ায়। গর্ভবতী নারীর বড় পেটে তার পরিবারের সবাই, এমনকি পুরুষেরাও হাত বুলিয়ে শিশুটির সঙ্গে কথা বলে, নারীর পেটে চুমু খেয়ে শিশুটিকে আদর জানায়। কি অশ্লীল! ছিঃ ছিঃ।
এইসব মহাদেশের পুরুষেরাও অসভ্য। পুরুষেরা গর্ভবতী নারী দেখলে বাসে ট্রামে সীট ছেড়ে দেয়, রাস্তা-ঘাটে, হাটে-মাঠে বড় পেটওয়ালা নারী দেখলে অভিনন্দন জানায়, একটা সুস্থ শিশুর জন্মের জন্য শুভকামনা করে। গর্ভবতী নারী তার নিজের এলাকার হলে কোনো সামাজিক বিষয়ে সাহায্য লাগবে কিনা, ভারী কাজের জন্য শ্রম-সহযোগিতা বা গাড়ি ধার লাগবে কিনা, অনাগত শিশুর জন্য পোশাক বা খেলনা লাগবে কিনা, এসব জিজ্ঞেস করতে করতে বিরক্ত করে ফেলে।
পরিবারের সবাই গর্ভবতী নারীকে সকল কাজে, পুষ্টিকর খাবারে আর অতিরিক্ত সেবা শুশ্রূষা করতে করতে অতিষ্ঠ করে তোলে। কি যন্ত্রণা!

আর তাদের পরিবারের বুড়োরাও অসভ্য। পরিবারের দাদা দাদী বা নানা নানীরা তাদের পরিবারের নতুন অতিথির জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার জমিয়ে রাখেন, যেনো তাদের বংশধরকে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে না হয়। কি মূর্খ এরা, ভেবে দেখেছেন?
নারীর গর্ভধারণ আর মাতৃত্বের জন্য সবচেয়ে সভ্য, শ্লীল, আর আদর্শ ভূমি হচ্ছে বাংলাদেশ। বছরে একবার আজান শুনে বুঝতে পারা যায় যে, পাশের বাড়ির আপা, ভাবি বা খালা গর্ভবতী ছিলেন। কি শিক্ষিত, আধুনিক আর সভ্য পরিবার রে বাবা, গর্ভধারণের খবরটা আমরা কেউ জানতেই পারি না। এখানকার সংস্কৃতিটাই এমন যে গর্ভবতী নারীর পেট একবার দেখা গেলে মানুষের মাথায় প্রথমেই একটি ফুটফুটে শিশু ও তার মমতাময়ী মায়ের চিন্তা না এসে তার মাথায় ভর করে কেমন দেখতে তার পেটের উপরের অংশ বা নীচের অংশ !
নেন, আজকে নীচের গর্ভবতী পেটের অংশ বাদ দিয়ে ক্রপ করে উপরের ছবি দিলাম। আজ নিশ্চয় সমালোচনা করার কিছুই থাকলো না। আপনারা যা দেখতে চান, ফ্রন্টলাইনেই আছে তা, একবারেই চোখ আটকে যাবে।
এই ধর্ম-আশ্রয়ী সমাজে মায়েরাও কুৎসার শিকার!

গর্ভবতী পরীমনি ও তাঁর সঙ্গীর একটা ছবি, ছবিটা আপনারা দেখেছেন। যতবার ছবিটা দেখি, মুগ্ধ হই কেবল। কি মিষ্টি কি সুন্দর কি পবিত্র একটা ছবি! সমুদ্র সৈকতে একজন নারী ও পুরুষ, সবকিছু ছাপিয়ে এমনকি বিশাল সমুদ্রকেও ছাপিয়ে যেটা আপনার দৃষ্টি কাড়বে সেটা হচ্ছে নারীটির স্ফীত গর্ভ। মানুষের প্রেম, ভালবাসাবাসি ও একটি নতুন মানুষের আগমনী বার্তা সব মিলিয়ে এই ছবিটা তো একটা মহান শিল্পকর্ম হয়েছে।
যে ফটোগ্রাফার এই ছবিটা তুলেছেন (আলোকচিত্র শিল্পীর নাম চোখে পড়লো না কোথাও) সেই শিল্পীর প্রতি আমার একটু ঈর্ষাও হচ্ছে। কি পবিত্র একটি শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন তিনি! এইটা হচ্ছে সেইসব চিরায়ত শিল্পের একটা যেসব শিল্পকর্ম সকল যুগেই আধুনিকের চেয়েও আধুনিক।
কিছু বামন ধরনের দাসসুলভ লোকের কটু বক্তব্যও চোখে পড়েছে। বেশ জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব করে কটু কথা বলছে এইরকম লোকেরা। এরা যুগে যুগে বিরাজ করে। ওদেরকে নিরাপদেই উপেক্ষা করতে পারেন। এদের একেকজনের আনুগত্য ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বটে, কিন্তু চিন্তার দিক দিয়ে এরা হচ্ছে কুয়োর তলায় আটকে থাকা সেইসব মণ্ডূক যাদের জন্যে আপনি কেবল একটু মায়া ও করুণা করতে পারেন আর কামনা করতে পারেন ওদের যেন দাসদশা থেকে মুক্তি হয়।
চমৎকার ছবি একটা। ছবির মডেল পরীমনি নাকি চারুমনি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মেহেরবানী করে নিজের প্রতি দয়া করুন, চোখ খুলে ছবিটা দেখুন- দৃষ্টি উম্মোচন করে দেখুন। পবিত্র ছবি পরিষ্কার চোখে দেখতে হয়, আপনার মস্তিষ্কের নোংরা ময়লাগুলি যদি দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে রাখে তাইলে সৌন্দর্য দেখতে পাবেন না।

*ফটোগ্রাফারের নাম জানতে পেরেছি। তাঁর নাম আরিফ আহমেদ। গুড ওয়ার্ক আরিফ আহমেদ।
[Imtiaz Mahmood]
Related Posts
In the Shadow of Famine: Bengali Food Habits – History, Practice, and Bodily Burden
About 10-12 days ago.I went to a large wholesale store, where products are usually soldRead More
দূর্ভিক্ষের ছায়ায় বাঙালির খাদ্যাভ্যাসঃ ইতিহাস, অভ্যাস ও শরীরের দায়
প্রায় ১০-১২ দিন আগের ঘটনা। একটি বড় বিপণিবিতানে গিয়েছিলাম, যেখানে সাধারণত বক্স ধরে পণ্য কিনতেRead More
Are religion, country, race, patriotism, and nationalism all racist concepts?
The only uncontacted human tribe left in the world today are the Sentinelese of NorthRead More

Comments are Closed