Saman_Gunan

Thailand Cave Rescue

সবার উপরে মানুষ, মানুষের জন্য মানুষ

এই কয়দিন আমি অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম থাইল্যান্ডের গুহা ট্রাজেডি নিয়ে। ১২ জন কিশোর ও তাদের কোচের ১০ কিলোমিটার লম্বা গুহার অন্ধকারে ১৭ দিন আটকে থাকা অবং অবশেষে সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া মানবতার একটা বড় সাফল্য।

২০১০ সালে চিলির একটি খনির প্রায় ৭০০ মিটার গভীরে ৩৩ জন শ্রমিকের আটকে পড়ার ৬৯ দিন পর তাদের উদ্ধারের লোমহর্ষক ঘটনাটি নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। ঘটনাটি তখন সারা বিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সারা বিশ্বের মানুষ শুভকামনা করেছিলো, আর গণমাধ্যমগুলো একটানা ৩ দিন নিদ্রাহীন নজর রেখেছিলো প্রথম থেকে শেষ খনিশ্রমিকটি কিভাবে পাহাড় ভেদ করে সুস্থভাবে উপরে উঠে আসে ছোটো ক্যাপসুল লিফ্ট দিয়ে – সেই অসাধারণ উদ্ধারকাজের দিকে। কঠিনপ্রাণ শ্রমিকেরা সেদিন বেঁচে উঠেছিলো।

প্রায় একই রকম দুর্ঘটনা ঘটলো এবার থাইল্যান্ডে। ১২ জন কিশোরের একটি ফুটবল দল আর তাদের কোচ ২ সপ্তাহ ধরে আটকা পড়ে ছিলো একটি গভীর গুহায়। বাচ্চাগুলোর পরিবার, আপনজনসহ সারা বিশ্ব গত ক’দিন উদ্বিগ্ন হয়ে ছিলো এই ১৩ জন বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য। তারা বেঁচে আছেতো? সুস্থ আছেতো? কিন্তু আশা ছিলো। এই আশা জাগিয়েছিলো ২ ব্রিটিশ ডুবুরি। তাদের হারিয়ে যাওয়ার ৯ দিন পরে গুহার মুখে সাইকেল ও জিনিসপত্র দেখে তারা ধারনা করেছিলো হারিয়ে যাওয়া দলটি গুহায় আটকা পড়েছে। ( আমাদের দেশ হলে ততক্ষনে সাইকেল ও ফেলে যাওয়া জিনিসগুলো চুরি হয়ে যেতো ) তারা ২ জন অসীম সাহসিকতা নিয়ে ভিনদেশে ১৩ শিশু ও তাদের কোচের সন্ধানে নিজেদের জীবন বাজি রেখে চলে যান গুহার ভিতরে। পেয়ে যান সেই দলটিকে। এরপর ?

মানবতার এক অসাধারণ ইতিহাস রচিত হলো আজ থাইল্যান্ডে। বেশ কিছু অভিজ্ঞ ব্রিটিশ ডুবুরী, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশের উদ্ধার বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক দল আর প্রায় ১ হাজার থাই সেনা/নৌ/বিমান বাহিনীর দক্ষ সদস্যদের টানা ১৭ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম, অসীম আন্তরিকতা আর সীমাহীন ঝুঁকি নিয়ে আজ মানুষ সফলভাবে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ১৭ দিন সময় ধরে গভীর গুহায় আটকে থাকা ১২ জন কিশোর ফুটবলার আর তাদের কোচকে।

তবে, ইতিহাসের এই স্মরণীয় উদ্ধার কাজের সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায় হয়ে গেলেন একজন অসীম সাহসী আর বিশাল হৃদয়ের মানুষ- থাই নৌ-বাহিনীর প্রাক্তন সার্জেন্ট সামান গুনান। ১০ কিলোমিটার গভীর গুহাটির ৪ কিলোমিটার গভীরে পানির নীচ দিয়ে সাঁতরে আটকে পড়া কিশোরদেরকে সর্ব প্রথম অক্সিজেন সিলিন্ডার আর বেঁচে থাকার জন্য কিছু প্রয়োজীয় উপকরণ পৌঁছে দেন ৩৮ বছর বয়সী এই ডুবুরী। অথচ নিজে ফিরে আসার মতো পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিলোনা যার সিলিন্ডারেই। জীবন নিয়ে গুহা থেকে আর ফিরে আসা হয়নি এই মহান ডুবুরীর। সামান গুনান গভীর পানির নীচেই অমরত্ব পেলেন থাই জাতি আর মানবিক বিশ্বের কাছে এক মহান বীর হিসেবে। তিনি নিজের মৃত্যু দিয়ে অন্যদের সতর্ক করে গেলেন অক্সিজেনের বিষয়ে।

থাইল্যান্ডের এই অসাধারণ ও মানবিক উদ্ধারকার্যটি যতোদিন ইতিহাস থেকে মুছে না যাবে, ততোদিন এই মহান আত্মত্যাগী বীর সার্জেন্ট সামান গুনানকেও বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

এই উদ্ধার অভিযান মানুষের মানবিক শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সারাবিশ্বের মানুষ যে দেশ, কাল, সমাজ, ধর্ম, বর্ণ সবকিছুর উর্দ্ধে উঠে মানবিক ইতিহাস রচনা করতে পারে তার প্রামান হয়ে গেলো থাইল্যান্ডে। তবে আমার চোখ সবার আগে সামান গুনানের দিকে। সেই মহান আত্মত্যাগী বীর মানুষটির প্রতি। #Saman_Gunan

Related Posts

15 February 1996 Election

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন – বি এন পি যেভাবে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছিল

২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভভুত্থানের আগে ১৯৯০ সালে ছাত্র জনতার ত্যাগের বিনিময়ে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের যেRead More

This Religious Frenzy Must End Now – Walk the Path of Civilization

Bangladesh’s society has changed dramatically over the past 20–30 years. One of the most destructiveRead More

Fascist Sheikh Hasina

স্বৈরাচার যখন দানব হয়ে যায় তখন মানুষের লাশের গন্ধ তাদের কাছে প্রিয় হয়

আমি আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের কমিটির কখনোই কেউ ছিলাম না, এখনো নেই। আওয়ামী লীগ বাRead More

Comments are Closed