
The War on Ukraine
ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও পুতিনের নৈতিক পরাজয়
গতকাল ঢাকার এক লোকাল বাসে যাচ্ছিলাম পল্টন। আমার পাশে বসা এক তরুণ। সে রাজনৈতিক আলাপ করতে খুবই আগ্রহী। ঢাকার মেট্রোরেল কেন মানুষের কাজে লাগবে না এসব নিয়ে সে বিশ্লেষণ শুরু করে দিলো। আমি নিজের কোন মতামত না দিয়ে তার ধারনাটা শুনছিলাম মনোযোগ দিয়ে। সে মাঝে মাঝে রাজবাড়ি থেকে মেঘনা যায় ঢাকার উপর দিয়ে, খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ। দেশ, দেশের নানান সমস্যা নিয়ে সে খুবই উদ্বিগ্ন। আমি অপরিচিত মানুষের সঙ্গে নিজের সামান্য জ্ঞান-গরিমা কখনো জাহির করার চেষ্টা করি না। আমি তেমন কিছু বুঝি না এমন ভাব করে তাদের মতামত শুনি, তারাও তাদের চেয়ে কম জানা একজনকে নিজের ভিতরের ক্ষোভ, জ্ঞান জানাতে পারছে ভেবে আনন্দ পায়। সে একপর্যায়ে প্রশ্ন করে বসলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমি কার পক্ষে। আমি বললাম আমি যুদ্ধের বিপক্ষে, কোথাও কোন যুদ্ধ হোক, সেখানে মানুষ মারা যাক আমি তা চাই না। সে তখন পুতিন কত শক্তিশালী সেগুলো বর্ননা করা শুরু করলো।
রাশান অঞ্চলের মানুষদের আমি একটু বেশীই চিনি। আমার প্রফেশনাল কাজের ক্ষেত্রে যত আজাইরা সময় যায় তার বেশীরভাগই যায় এদের ডিল করতে। এরা হ্যাকিং, ফিশিং, স্প্যামিং, ডি-ডস এ্যটাক এসবে বেশ সিদ্ধহস্ত। সেজন্য দেখবেন ভাইরাস বানিয়ে ছড়ায় তারা আবার বেশীরভাগ এন্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোও তাদের। আমার প্রফেশনাল জীবনে রাশান অঞ্চল থেকে ১০০০ ডলারও এসেছে কিনা সন্দেহ কিন্তু তাদের অপকর্ম থেকে সুরক্ষা দিতে ২০/৩০০০০ ডলার মূল্যের কর্মঘন্টা যে চলে গেছে তা নির্দিধায় বলতে পারি।
ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে যারা পুতিনকে সমর্থন দিচ্ছে তারা কেন দিচ্ছে নিজেরাও হয়তো ক্লিয়ার না। এরা সারাদিন আমেরিকা, পশ্চিমা বিশ্বকে গালি দিয়ে সেখানে মাইগ্রেশান করার জন্য আবার এক পা বাড়িয়ে থাকে। অপশন দিলে দেখবেন কেউ পুতিনের রাশিয়া যেতে চাইবে না, এমনই হিপোক্রেট এরা। ইউক্রেন কোন জোটে যোগ দিবে সেটা সম্পূর্ণ ইউক্রেনের জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। সেখানে পুতিন জোর খাটাতে পারে না।
বাংলাদেশের উন্নয়নের পিছনে এখন পর্যন্ত রাশিয়া কি অবদান রেখেছে ? সামান্য করোনার টিকাও সেখান থেকে কেনা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে আমেরিকা ৫ কোটিরও বেশী টিকা ফ্রিতে দিয়েছে, আরো দিবে। অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেও তাদের ও পশ্চিমা বিশ্বের দৃশ্যমান অবদান আছে। অথচ বাংলাদেশের অনেক মানুষ পুতিন, পুতিন করে মাথা খারাপ করে ফেলছে।
এই যুদ্ধে পুতিনের ভয়াবহ নৈতিক পরাজয় ঘটেছে গতকাল ইউক্রেনের একটা মা ও শিশু হাসপাতালে বোমা মারার মাধ্যমে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা গর্ভবতী মা আর শিশুদেরকে বোমা মেরে হত্যা করেছে পুতিন। যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই পুতিন মূলত ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের উপরই বোমা হামলা করে যাচ্ছে। এমনকি শিশুদের স্কুল এবং খেলার মাঠও বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে পুতিনের সৈন্যরা। তারা হত্যা করেছে শিশুদেরকেও। পুতিনের এই যুদ্ধ এই সভ্য সময়ে এক ভয়াবহ অনৈতিক, অন্যায় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ। গায়ের শক্তিতে সে যাচ্ছেতাই করছে। ইউক্রেন সে সময় তার কাছে থাকা পারমানবিক অস্ত্র ধ্বংস না করলে আজ সে এই সাহস পেতো না। পুতিনের এই ছাগলামি বিশ্বে অস্ত্র, বোমার খরচ বাড়াবে যা মানুষের কল্যান ব্যায় থেকে কর্তিত হবে।
আপনি যদি ভিয়েতনামে, আফগানিস্তানে, ইরাকে, সিরিয়ায় বোমা মেরে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলে থাকেন, তাহলে ইউক্রেনের জনগণের উপর পুতিনের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেও কথা বলুন। তা না হলে একদিন নিজের কাছেই নিজে লজ্জা পাবেন।
[ Image, CC BY-SA 4.0 ]
Related Posts

Was this unexpected victory of Shibir in the DUCSU election actually expected?
At Dhaka University, Shibir is winning simply by securing votes – that’s the reality. AcrossRead More

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের এই অপ্রত্যাশিত বিজয় কি প্রত্যাশিতই ছিল?
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শিবির ভোট পেয়েই জিতছে, এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট কিছু না কিছু ভুলRead More

Israel’s Minority Religious Communities: Hatred, Reality, and Rights
When people hear the name Israel, the first reaction many have is – hatred. ThisRead More
Comments are Closed