Suicide is not a Solution
একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষের জীবনে আত্মহত্যা করার মতো কোনো কারনই থাকতে পারে না
একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষের জীবনে আত্মহত্যা করার মতো কোনো কারনই থাকতে পারে না। আত্মহত্যাকে সমর্থন বা সহানুভূতি দেখানোর কোন সুযোগ নেই।
যে কারণগুলো দেখিয়ে গতকাল আত্মহত্যা করে এক ব্যক্তি আলোচিত হয়েছেন, এর কোন একটা কারণকেই আমার কাছে আত্মহত্যার জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয়নি।
☘ একাকীত্ব আত্মহত্যার কারণ হতেই পারে না। কারন বর্তমান চরম পুঁজিবাদী বিশ্বে প্রতিটি মানুষই একা এবং কারো জন্যই অন্য কারো সময় নেই, এটাই স্বাভাবিক। বরং একাকীত্বের সুবিধা হচ্ছে – পরিবার পরিজন বা আত্মীয় স্বজনদের সবার ঝামেলা বা দায়িত্ব আপনার ঘাড়ে এসে পড়বে না, এবং আপনি সম্পুর্ন স্বাধীনভাবে নিজের জীবন যাপন করতে পারবেন। একাকীত্বকে উপভোগ করতে শিখুন। একাকীত্ব অনেক সময় অনেক সুযোগ তৈরি করে দেয় জীবনে।
☘ অভাবে অনেকে আত্মহত্যা করেন। একজন মানুষের দরিদ্র হয়ে জন্মগ্রহণ করার অপরাধ বা ভুল তার পিতা মাতার, তবে দরিদ্র থেকেই মৃত্যু বরণ করার অপরাধ তার নিজের। চেষ্টা করলে সৎপথে থেকেই দারিদ্রকে জয় করা যায়।
☘ লেনদেন নিয়ে ঝামেলা? বন্ধুরা টাকা পয়সা নিয়ে বিশ্বাসঘাতকা করেছে?
বন্ধুবান্ধবকে টাকা পয়সা ধার দেয়া এক বিরাট বোকামি। সম্ভব হলে বন্ধু বান্ধবকে টাকা পয়সা বিনাশর্তে দিয়ে সাহায্য করুন, কিন্তু টাকা ধার দেবেন না। বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা-বানিজ্য করার ক্ষেত্রে মেনে চলুন লিখিত চুক্তি আর যৌথ ব্যাংক একাউন্ট। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ লক্ষুলজ্জার ভয়ে কাউকে বিশ্বাস করে তার হাতে তুলে দিবেন না, দিতে হলে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরন করেই দিন। তারপরও বন্ধু লক্ষ লক্ষ টাকা মেরে দিয়েছে?
নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে, বা মানসিকভাবে এতোটাই ধনী বা সম্পদশালীতে পরিনত করুন, প্রতারিত হবার পর যেনো মনে হয় – আপনার সম্পদের সমুদ্র থেকে কেউ একগ্লাস পানি খেয়ে গেলো। তবে প্রতারককে আর দ্বিতীয়বার সুযোগ দেবেন না।
☘ বাংলাদেশে বা ভারতীয় উপমহাদেশে একজন ষাটোর্ধ মানুষকে বৃদ্ধ বলে মনে করা হয়। এই সমাজকে লাথি মারুন। ষাটেই আসল তারুণ্য শুরু। এটা পার্টিতে যাবার বয়স। শিল্পচর্চা, খেলাধুলা, নাচ-গান আর প্রেম করার বয়স। বিশ্ব ভ্রমনে বের হবার বয়স। জীবনের সকল পরিশ্রমের ফল উপভোগ করার বয়স। বয়সের কারণে নিজেকে বৃদ্ধ ভেবেছেন, তো প্রতিদিন মরেছেন। আপনি ষাট বছর বয়সে প্রেম করলে, লিভ-ইন করলে, বিয়ে করলে সমাজের মানুষ টিপ্পনি কাটবে, ফেসবুকে গাড়লেরা ট্রল করবে। হু কেয়ারস, আপনার মতো করে আপনাকে ভাল থাকতে হবে। সমাজ আপনার জন্য কি করে ? তাদের টিপ্পনি, ট্রলে আপনার কি যায় আসে ? ষাট বছরের এক মানুষের সঙ্গে বিশ বছরের কেউ স্বেচ্ছায়, সম্মতিতে বিয়ে করলেও সেটা তাদের ইচ্ছা, তাদের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার। অন্যরা কি বলে সেদিকে তাকানোরই দরকার নেই।
☘ সন্তানদের জন্য জীবনের সর্বস্ব দিয়ে দিবেন না কখনো। সন্তানের বয়স ১৮ বছর হয়ে গেলে তাকে পড়াশুনা, প্রশিক্ষনের পাশাপাশি কাজ করে টাকা উপার্জনের জন্য উৎসাহিত করুন। কোন কাজই ছোট নয়, নিজের কষ্টের উপার্জন দিয়ে সন্তানের দাবীমতো অপ্রয়োজনীয় গ্যাজেট কিনে দিয়ে বৃদ্ধ বয়সে তার দোহাই দিয়ে মন খারাপ করবেন, সেটা ঠিক না। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়েরাও ১৮ বছর বয়স হওয়ার পরে রেস্টুরেন্টে কাজ করে নিজেরা অর্থ রোজগার করা শিখেছে। এই কাজ করা যাবে না, এই পরিবার/বংশের ছেলে এই কাজ করলে মান থাকবে না – এসব বলে সন্তানকে মানসিকভাবে বিকালঙ্গ করবেন না। এসব কাজের উঁচু-নীচুর নোংরা মানসিকতার জন্য অনেকে তার কৌলিন্য ধরে রাখার কাজ করতে না পেরে বছরের পর বছর বেকার থেকে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যান। এভাবে সন্তান আপনার উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, আপনি বৃদ্ধ বয়সে এই করেছি, ঐ করেছি বলতে পারবেন কিন্তু নিজের অসহায়ত্বকে দূর করতে পারবেন না।
☘ পরিবার, সমাজের উপরে নির্ভরশীল না হয়ে নির্ভরশীল হোন নিজের উপরে। ভাবতে শিখুন দুনিয়ার সকল মানুষ আলাদা, কেউ অন্যের দায়িত্ব নিতেও পারে, নাও নিতে পারে, তবে নিতে বাধ্য নয়। এজন্য নিজের প্রয়োজনে সময়, অর্থ, সম্পদ সবটাই রাখুন,
নিজের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সাজিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের জন্য করুন। বিদেশে অনেক বাবা-মা তার সন্তানদের শিশু সন্তানদের দেখাশোনা করার জন্য পারিশ্রমিক নেন। আপনি ভাবতে পারেন এটা অমানবিক বা বৈসদৃশ কিন্তু তারা অনেক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে এই পর্যায়ে গেছে। একে অমানবিক ভাবার কোন কারন নেই।
☘ কল্পনা করুন, আপনি বৃদ্ধ বয়সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, আপনার চারিপাশে যারা আছে কেউ আপনার সেই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশিক্ষিত না। আপনার চাহিদা, প্রয়োজন তারা বোঝে না। ব্যস্ত জীবনে আপনাকে দেওয়ার মতো সময়ও তাদের কম। সুতরাং মানসম্মত বৃদ্ধাশ্রম হতে পারে উত্তম বিকল্প যেখানে আপনাকে দেখাশুনার জন্য আছে প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী। আপনি আপনার সমমনা, সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিশে আড্ডা দিতে পারবেন, হাসিখুশীতে থাকবেন। আপনার বৃদ্ধ বয়সেও ইচ্ছা হতে পারে একদিন হট মুভি দেখার, রসালো আড্ডা দেয়ার – পারিবারিক পরিবেশে সেটা পাবেন না।
আমাদের দেশে অনেকে মনে করেন বৃদ্ধাশ্রম কনসেপ্ট মনে হয় খুব খারাপ। বাস্তবে তা নয়। মানসম্মত বৃদ্ধাশ্রম আমদের দেশে আছে কিনা জানিনা তবে উন্নত দেশে যেগুলো আছে সেগুলো বৃদ্ধদের জন্য স্বর্গ বলতে পারেন। উন্নত বিশ্বের বৃদ্ধদের রাষ্ট্র ভাতা দেয়, সেই টাকায় তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারেন। আপনি আপনার পরিবারে তাদের রাখতে চাইলেও তারা থাকবেন না। অনেকে থাইল্যান্ড, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া এসব দেশে গিয়ে দীর্ঘদিন থেকে তাদের শরীরে খায়েশও মেটায়। এটা হাসিঠাট্টার বিষয় নয়।
আপনাকে ভাল থাকতে হবে। সমাজের মানুষ কি বলবে এ নিয়ে ভাবার চেয়ে বেশী জরুরী অন্যের অধিকার খর্ব না করে নিজের ভাল থাকার জন্য পথ খুঁজে নেওয়া। সেফুদাকে দেখেন, একা একজন মানুষ, ভিনদেশে নিজের মতো করে ভাল থাকছেন। অনেকেই আছেন রাস্তায়, দোকানের আড্ডায়, একাকী বাসায়, কিংবা কোন পাহাড় বেয়ে চলা পর্যটক বেশে। আমরা যখন অন্যের কাছ থেকে বেশি কিছু আশাকরি তখন নিজের কাছে চাওয়ার যেন আর বিশেষ কিছু থাকে না। এরকম ইমোশনাল ডিপেন্ডেন্সি থেকে বের হতে পারা একটা সফলতা। এতে জীবনটা কিছুটা লাল রঙ হারাবে ঠিক, তবে অনেক কষ্ট থেকে বেঁচে যাবে, কিছুটা গোলাপী বা সবুজ নিজেই যুক্ত করে নেবে। শুতরাং ইমোশন খান, তবে আসক্ত হওয়াটা এড়িয়ে চলাই উত্তম।
‘দৃষ্টিশক্তি থাকা, কিন্তু জীবনে লক্ষ্য না থাকা অন্ধত্বের চেয়েও খারাপ’ – হেলেন কেলার
চক্ষু, কর্ন, জিহবা, নাসিকা, ত্বক – মানুষের এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সব কয়টিই আপনার শরীকে সক্রিয় তো ? ভাল করে দেখুন। এর পরও আপনি হতাশ ? সফল হতে না পারার যন্ত্রনায় মন খারাপ করে বসে থাকেন ? তাহলে একজন মানুষের গল্প শুনুন। যার এই ৫ ইন্দ্রিয়ের ৩ টি কাজ করত না। তিনি ছিলেন অন্ধ, বধির ও বোবা। তিনি কি করেছিলেন জানেন ? তিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, লেকচারার, সমাজ সেবক এবং একজন ভ্রমনকারী। তিনি চোখে দেখা, কানে শুনা, এবং কথা বলার শক্তি হারান মাত্র ১৯ মাস বয়সে এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ৷ তিনিই ছিলেন পৃথিবীর প্রথম অন্ধ, বধির এবং বোবা মানুষ যিনি ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন ৷ তিনি ৪০ হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমন করে রেকর্ড করেছিলেন । তার নাম হেলেন কেলার। হেলেন প্রায় ৯টি ভাষা জানতেন। গায়কের গলায় হাত রেখে গানের কথা বুঝতেন।
আর বর্তমানে আমাদের কথা চিন্তা করলে বিষয়টা কেমন হয়? কোনকিছুর অভাব, ছোটখাট কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য আমরা হাল ছেড়ে বসে থাকি ৷ জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে। কিন্তু একবার যদি আমরা হেলেন কেলারের কথা চিন্তা করি, তিনি হাজারও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এমন অনেক কিছু করে গেছেন যার জন্য মানুষ তাকে মনে রাখবে সারা জীবন ৷ আপনার সাফল্যের জন্য প্রতিবন্ধকতাটা ঠিক কোথায় ? সেটা কি আসলেই প্রতিবন্ধকতা নাকি আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাবই আপনার মূল প্রতিবন্ধকতা ? তাই, আজ থেকেই আত্মবিনাশী আলসেমী, হতাশা পরিহার করে আত্মবিশ্বাসী জীবন গড়ার কথা চিন্তা করুন।
[Helen Keller, Pic Credit: Wikipedia ]
Related Posts
এই ধর্মীয় উন্মাদনা এখনি থামাতে হবে, সভ্যতার পথে হাঁটুন
বাংলাদেশের সমাজটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে বিগত ২০/৩০ বছরে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে জঘন্য অনুঘটক ছিলRead More
Under the cover of development, the real image of India, Pakistan, and Bangladesh
India has sent a spacecraft to the moon and successfully landed there. There is noRead More
উন্নয়নের আড়ালে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের প্রকৃত করুন চিত্র
ভারত চাঁদে নভোযান পাঠিয়েছে এবং সেটা সেখানে সফল অবতরণও করেছে। ভারতের এতে গর্বের সীমা নেই,Read More
Comments are Closed