Society, Culture, Religion and Humanity
সমাজ, সংস্কৃতি এবং ধর্ম কিভাবে একসূত্রে গাঁথা হয়, যদি মনুষ্যত্বের মতান্তর ঘটে ?
সমাজ, সংস্কৃতি এবং ধর্ম কিভাবে একসূত্রে গাঁথা হয়, যদি মনুষ্যত্বের মতান্তর ঘটে ?
কাউকে এভাবে অপমান করাটা শোভন নয়, শোভন হলো কোন অপরাধীকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা। অন্যদেশগুলোতে আপনি অনেক যৌন নির্যাতনের মামলার সংখ্যা দেখবেন, অথচ সেসব দেশে ধর্ষনের মতো গুরুতর অপরাধ কম। কারন সেখানে কেউ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণ একটা কথা বললেও, এমনকি অনুমতি ছাড়া ইচ্ছাকৃত হাত স্পর্শ করলেও যৌন নির্যাতনের অপরাধে মামলা হতে পারে।
বাংলাদেশের একটা বড় অংশের ছেলেরা মেয়েদের সম্পর্কে জানারই সুযোগ পায় না, কারন তাদের কো-এডুকেশানের সুযোগ হয়নি, ছোট থেকেই ছেলে-মেয়ে আলাদা আলাদা করে চলতে হয়েছে। এতে মেয়েরাও যে মানুষ, তাদের অনুমতি বা সম্মতি দেয়ার পূর্ণ অধিকার আছে, সেটা যে নিতে হয়, কাউকে যে ভদ্রভাষায় প্রেমের এমনকি যৌনতার প্রস্তাবও দেয়া যায় – এই শিক্ষাগুলো তারা পায় না। তাদের ধারনা মেয়েরা মনে হয় সারাক্ষন ছেলেদের সংস্পর্শ না পেয়ে হট হয়ে থাকে, ছেলেরা তাদের পাশে গেলেই, তাদেরকে পেতে চাইলেই তারা সানন্দে রাজী হয়ে যাবে, রাতে পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে থাকলে মনে হয় ঘুমের ভিতরে তার বুকের উপরে উঠে যাবে!
ইম্পালার বাচ্চা জন্মের কয়েক মিনিটেই জেনে যায় তাকে সিংহ থেকে দৌঁড়ে পালাতে হবে। এই শিক্ষা সে জেনেটিক্যালি পায়। মানুষেরও নৈতিকতার ভীত গড়ে দেয় তার জেনেটিক্স; সামাজিক শিক্ষা, পারিবারিক মূল্যবোধ, স্কুল-কলেজের শিক্ষা সেই নৈতিকতাকে শানিত করে। তার সঙ্গে কোন ধর্মের সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও সে নৈতিকতার পাঠ পেয়ে যায়। এজন্য যারা বলেন ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে বা ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে মানুষের নৈতিকতা কমে যাচ্ছে, অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে – কথাটা ঠিক না। অনেক দেশ আছে যেখানে বেশীরভাগ মানুষের কোন ধর্ম নেই তাদের নৈতিকতার যে মান আমরা তা থেকে কয়েক সহস্র দূরে।
এই লোকটিকে ধর্মীয় বেশের কারনে আমি আলাদা করে দেখার পক্ষপাতি নই। উনিও সমাজের মানুষ। এসব এই সমাজে ঘটে বলেই, এমন ঘটনার বিস্তার আছে বলেই অনেকে তার সুযোগ নিতে চায়। উনি আলাদা কেউ নন। দরকার সবার জন্যই শিক্ষার প্রসার, প্রত্যেকটা ছোট্ট ছোট্ট যৌন হয়রানিকেও প্রচলিত আইনে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পরিবারে, সমাজে, দেশের সর্বত্র মেয়েদের মানুষ হিসাবে গণ্য করে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা দূর করতে হবে সম্মিলিতভাবে।
ধর্মহীন মানুষের দেশ নেদারল্যান্ডে ৫ টি কারাগার এখন কয়েদির অভাবে শূণ্য খাঁ খাঁ করছে। ২০০০ কারারক্ষীর কোন কাজ নেই। আবার অন্যদিকে যেসব দেশের মানুষ ধর্ম ধর্ম করে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আক্রমন করে, দেশছাড়া করে, ঐতিহাসিক উপাসনালয়ে আগুণ দেয় সেসব দেশের জেলখানায় ধারন ক্ষমতার চেয়ে অনেকগুণ কয়েদি। এমনই তাদের নৈতিক মূল্যবোধ। ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে নাকি অপরাধ বাড়ে।
২০১৭ সালের হিসাবে নেদারল্যান্ডের ৫০.৭% মানুষ প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে বলে তারা কোন ধর্মে নেই। এই সংখ্যা এতোদিনে ৫৫% হয়েছে মনে হয়। বাকী যারা আছে তাদেরও বড় অংশ নামকাওয়াস্তে জন্মসূত্রে ধর্ম পেয়েছে বটে কিন্তু কোন প্রাকটিস করে না।
নীচের লেখাটা ২০১৮ সালের
এশিয়ার বৃহত্তম কারাগার বাংলাদেশে। নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার তৈরির পর এ খবর শুনে হয়ত আপনি গর্ব করা শুরু করেছিলেন। হতেও পারে। আমাদের দেশে এমনিতেই কারাগারের ধারন ক্ষমতার চেয়ে কয়েদি অনেক বেশী। আর সব অপরাধী যদি আইনের আওতায় আসত তবে হয়ত বর্তমানের ১০ গুণ কারাগারের প্রয়োজন হত আমাদের।
অন্যদিকে ইউরোপের অনেক দেশ যেগুলো বিশ্বে সবচেয়ে বেশী শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে পরিচত যেমন সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, জার্মানি এসব দেশে অপরাধী না থাকার কারণে এক এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সব কারাগার। এমনকি কর্মচারীদের কাজ সচল রাখতে বিদেশ থেকে তারা কয়েদি আমদানিও করেছে। আশ্চর্য মনে হলেও এমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ইউরোপের এই দেশগুলো।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত এমন দেশগুলোতে নতুন নতুন কারাগার তৈরি করেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না কয়েদির। কিছুদিন আগের এক পরিসংখ্যানে জানা যায় বর্তমানে আমাদের দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৭৯৬ জনের বিপরীতে ৬৯ হাজার ৭৭৪ জন বন্দী রয়েছে। তবে তা প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। সাম্প্রতিক বিশেষ অভিযানগুলোতে বেশ কয়েক হাজার নতুন বন্ধীর জায়গা হয়েছে আরও কারাগারে। ইউরোপ ও বাংলাদেশের উল্লিখিত এই একটি মাত্র পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, দেশে অপরাধ প্রবণতা কতটা সামাজিক ক্ষত হিসেবে জায়গা দখল করে আছে! আমরা কতটা সভ্য ও উন্নত হয়ে এখানে জীবনের স্বাদ গ্রহণ করছি। আমাদের নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গাটা কতটা নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল ও সমাজের অন্যান্য সংগঠন আমরা কতটা আমাদের গড়ে তুলছি সুসভ্য মানুষ হিসেবে।
ইউরোপের ঐ দেশসমূহ এখান থেকে দেড় দুইশ বছর আগে অপরাধের দিক থেকে অনেক খারাপ অবস্থায় ছিল। তারা তখন সমুদ্রে দস্যুতা করত, বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ স্থাপন করে লুটতরাজ করত। তার মানে দাঁড়ালো আমাদের তাদের বর্তমান সভ্যতার স্তরে পৌঁছাতে আরো দেড় দু’শো বছর লাগতে পারে।
আর একটি মজার বিষয় হল আমরা প্রায়ই বলি অপরাধ কমানোর জন্য মানুষ কে সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে। কিন্তু ইউরোপের ঐ দেশগুলোর ৯০% মানুষ কোন প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসই করে না বা মানে না। তাহলে তাদের নৈতিক, মানবিক, সামাজিক সভ্যতার মান এত উঁচুতে পৌছাল কিভাবে ?
Related Posts
What is the main purpose of people coming to Earth?
Many people are confused by this question. In the swing of this wandering, they tryRead More
নবী মোহাম্মদ কি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ?
Is Prophet Muhammad the Best Person in the World? কিছু মুমিন দাবী করে বিধর্মী বড়Read More
কোরান কি আসলেই নির্ভুল? বৈজ্ঞানিকরা কি কোরান নিয়ে গবেষণা করেন?
পাকিস্তানের এক তথাকথিত স্কলার একবার জীন দিয়ে বিদ্যূৎ উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন নাকি! মোল্লা তারিকRead More
Comments are Closed